অকৃতজ্ঞ পর্ব - ৬
ঊষা কে ওই পোশাকে দেখে রিতা দেবী মেজাজ টা হারিয়ে ফেললেন। রেগে গিয়ে বললেন- ঊষা আমাদের বাড়ির কেউ এইরকম উগ্র পোশাক পরে না। তুমি ওটা শীঘ্রই বদলে এসো।
ঊষা ঠোঁট বেকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো, আচ্ছা আন্টি আপনি ই বলুন , আপনাদের কয়জনই বা ফ্যামিলি মেম্বার আছে যে সে এই রকম ড্রেস পরবে? তারপর একবার নিশার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, আর দিদি! দিদির কথা আমি বাদ ই দিলাম। ব্যাকডেটেড । কোনো সাজ পোশাকের কোনো আধুনিকতা নেই। ঘরোয়া বউ দের মতো সর্বক্ষণ ঘুরে বেড়ায়। জিজুর এই হ্যান্ডসাম চেহারার সাথে ওকে পুরো বেমানান লাগে। ঊষা র বলা কথা গুলো তীরের মতো এসে বিধছিলো নিশার কানে। ঊষার স্পর্ধা দেখে রিতাদেবী বিস্ময়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। ভালো মন্দ আর কোনো উপদেশ দিতেই ওনার মন চাইলো না।
ঊষার এই উগ্র কথাবার্তায় সবচেয়ে বড় আঘাত পেলো নীল। নিশা , নীল কখনোই মায়ের অবাধ্য নয়। কোনোদিন তারা মায়ের মুখের ওপর কোনো কথা বলে নি । কিন্তু প্রথম দিন এসে থেকেই ঊষা যেভাবে রিতা দেবী ও নিশাকে হার্ট করছে তা দেখে নীল এর মানসিক অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে পড়ছে। অন্য দিকে ঊষা, নিশার নিজের বোন তাই ওকেও কিছু বলতে পারছে না। নিশাও বোনের নিলজ্যকর ব্যবহারে শাশুড়ি মা ও নীল এর দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।ঊষা কারো দিকে ধ্যান না দিয়েই নীল এর ডান হাত টা প্রায় ওর বুকের কাছে জড়িযে বললো, চলো জিজু আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো?
এইভাবে মা, ও নিজের স্ত্রী এর সামনে একজন অন্য নারী ওকে জড়িয়ে ধরছে দেখে অপ্রস্তুতে পড়লো নীল। ঊষার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ও বললো, তুমি এগোও আমি আসছি।
ঠিক আছে। আমি বাগান টার সামনে দাঁড়াচ্ছি। তুমি এসো। ঊষা বেরিয়ে যেতেই নীল আবদারের সুরে বললো, তুমি আমাদের সাথে যেতে পারতে নিশা আমার যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না।
নিশা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বললো, তুমি যেমন কথা দিয়েছো তোমার শালীকে । এবার তুমি ব্যাপারটা বুঝগে যাও। আমায় এর মধ্যে টানছ কেন?
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নীল দেখলো, মা তখন ও গম্ভীর মুখে বসে আছে। নীল মায়ের গায়ে হাত দিয়ে বললো, তুমি মিছেই রাগ করছো মা। ঊষা একটা বাচ্চা মেয়ে। বাইরে থাকে বাইরে পড়াশোনা করেছে এতগুলো বছর তাই একটু ওর চাল চলন তোমার বেপরোয়া লাগছে। তুমি আর অমত কোরো না মা । আসছি। রিতা দেবী একবার নিশার দিকে তাকিয়ে নীল কে বলল, তাড়াতাড়ি আসবি। বেশি রাত করবি না একদম।
সিনেমা হলে পৌঁছে এইরকম হরর মুভি দেখতে ঊষার মোটেও ইচ্ছা করছিল না। হলে বসে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঊষা বললো, জিজু আমি জানলে এইরকম মুভি দেখতে মোটেও আসতাম না। নীল ইচ্ছা করেই এই মুভি টা দেখতে ঢুকেছিলো।
নীলের ঘাড়ে র কাছে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঊষা বললো, কোথায় একটা রোমান্টিক মুভি দেখবো তা নয়। ভুতের সিনেমা দেখতে হবে এখন বসে বসে।
নীল নিজের শরীরটা একটু সরিয়ে নিয়ে হাসি মুখে বললো,
- কেন তোমার হরর ফ্লিম দেখতে ভালো লাগে না বুঝি?
ঊষা বেশ জোর গলাতেই বললো, না... একদম নয়।
- তোমার দিদি কিন্তু আমার সাথে বসে হরর ফ্লিম দেখতে খুব ভালোবাসে। তুমি হরর ফ্লিম দেখে ভয় পাও না বুঝি?
- না... পাই না। আমি ওতো ন্যাকা নই।
নীল হাসতে হাসতে বললো, ও...আচ্ছা... তোমার দিদি কিন্তু খুব ভয় পায়।
- ও তো ঐরকম ই সবে তেই ভয়।
এরপর দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা বার্তা হলো না। নীল মন দিয়ে সিনেমা দেখছিল।
ঊষার কাছে সিনেমাটা খুব বোরিং লাগছিলো। হলের মধ্যে অন্ধকারে ও কপালে হাত দিয়ে চুপ করে বসেছিল। নীল তখন ও পরম আগ্রহের সাথে সিনেমাটা দেখছে। নীল এর দিকে তাকিয়ে ঊষার মনে তীব্র রাগ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। চোখ বুজে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল ঊষা। হটাৎ ই ওর মাথায় একটা প্ল্যান জাগে।
মুভি চলাকালীন ই একটা ইটেরেস্টিং মুহূর্তে অশরীরী আত্মা টা যখন দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসবে, সেই মুহূর্তে একটা অস্বাভাবিক ভয়ংকর আওয়াজ এ ঊষা ইচ্ছা করেই নীল এর হাত টা চেপে ধরে।
নীল ও ভীষণ চমকে যায়।
- কি হলো ঊষা?
- সরি... আসলে ওই বিশ্রী শব্দ টায় আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
নীল, এর ঊষার মনের অভিসন্ধি বুঝতে দেরি হলো না।
- ঊষা তুমি ও এই একটু আগে বললে তুমি ভয় পাও না।
- বললাম তো শব্দ টা খুব বিশ্রী , আর আচমকাই এত জোরে শব্দ হলো...
থাক ঊষা তবে আজ আর মুভি দেখে লাভ নেই। এমনি তেও তোমার এইরকম সিনেমা দেখতে ভালো লাগে না বলছো।
ঊষা নিজের জালেই নিজে জড়িয়ে পড়লো। ইচ্ছে না থাকলেও ঊষা নীল এর সাথে হলের বাইরে এলো।
- চলো ডিনার টা সেরে নিই।
ঊষা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, কটা বাজে! সবে রাত সাড়ে আট টা। এখনই ডিনার করে নেবে?
- হ্যা, মুভি তো দেখা হলো না। চলো তাড়াতাড়ি খেয়ে বাড়ি যাই।
- জিজু তুমি কিন্তু একটুও রোমান্টিক নয়।
- ঊষার চোখে চোখ পড়া মাত্রই নীল বুঝতে পারলো ঊষার ভাবগতিক সুবিধার নয়। ও বেশ গম্ভীর হয়েই বললো,
- তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। মা, নিশা খুব চিন্তা করবে। তাছাড়া রাতের ওষুধ ও আমি নিশা কে খাওয়াই। সেটাও টাইম মত দিতে হবে। আর সব থেকে বড় কথা আমি নিশা কে ছাড়া বাইরে কোনোদিন খাই নি। তাই আজও খেতে পারবো না। আমরা খাবার প্যাকিং করে নিয়ে চলে যাব। বাড়ি গিয়ে সবাই মিলে আনন্দ করে খাবো কেমন?
ঊষার আপত্তির তোয়াক্কা না করেই নীল বাইরে থেকে সকলের জন্য খাবার কিনলো। ঊষার জন্য একটা বার্থ ডে কেক ও নিলো।
বাড়িতে এসে সকলে মিলে আনন্দ করে খেলো সকলে। নিশা, আর রিতা খুব খুশি হলো নীল এর এই ডিসিশন এ। শুধু ঊষা মনে মনে ফুসছিলো ।
রাতে প্রিয়জিত বাবু মানে নিশার বাবা ফোন করলো নিশাকে।
- হ্যা, বাবা আসলে আজ ঊষা এলো তো। ওর আজ জন্মদিন ছিল। তাই ওকে নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। তাই ফোন করা হয় নি। সরি বাবা। তুমি ঠিক আছো তো?
- নিশা তুই আমায় বাঁচালি মা।
- কেন? কি হয়েছে বাবা?
- ঊষার তো কলেজ ছুটি হয়ে এখানে আসার কথা ছিল। সারাদিন ফোন করছি। ফোন ই তোলে নি। তোকে ফোন করলাম । তুই বোধ হয় ব্যস্ত ছিলিস তাই ফোন ধরতে পারিস নি।
- ঊষা যে এখানে আসছে তোমায় কিছু জানায় নি?
- না রে মা...
- তুমি কেন তাহলে নীল কে একটা ফোন করো নি?
- সকালের দিকে আর ওকে ফোন করি নি। ভাবলাম ও অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়তো। কিন্তু সন্ধের সময় ফোন করেছিলাম। ফোন রিসিভ করে নি।
ফোনে কথা বলতে বলতেই নিশা একবার নীল এর দিকে তাকালো। নীল , নিশার পাশেই পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল । কথা গুলো শুনতে পেয়ে পকেট থেকে বার করে দেখল শশুর মশাই এর তিনটে মিস কল।
মুখ থেকে একটা আফসোস সূচক শব্দ বার করে নীল পাস থেকে ফিসফিস করে নিশা কে বলল, তখন সিনেমা হলে ছিলাম। তাই বুঝতে পারি নি।
- আচ্ছা, মা ঠিক আছে রাখছি।
- হ্যালো, বাবা। ঊষা এখন আমার পাশে আছে। ওকে ফোন দিচ্ছি একবার কথা বলো।
ঊষা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন টা কানে নিলো।
- শুভ জন্মদিন ঊষা।
- ঠিক আছে। বাবা রাখছি। আমি আজ খুব ক্লান্ত।
- তুই দিদির বাড়ি গেছিস। এটা তো ভালো কথা। কিন্তু একটা ফোন করেও তো আমায় জানাতে পারতিস। বয়স হয়েছে তো আমার চিন্তা হয়।
- বাবা, আমি এখন বড় হয়ে গেছি। কোথায় যাবো না যাবো সব কি তোমায় বলতে হবে?
ঊষার কথা শুনে প্রিয়জিত বাবু ফোন কেটে দিলেন।
রিতা দেবি বললেন, ঊষা মা, বড় দের সাথে ওভাবে কথা বলতে নেই। বাবার মন । কষ্ট হবে না? কত কষ্ট করে তোমায় মানুষ করছেন বলতো তো তুমি?
- শুধু টাকা পাঠিয়ে দায় সারলেই হয় না আন্টি বুঝলেন? যদি ওতোই কষ্ট হত তাহলে আমায় ছোট থেকে বাইরে কেন রেখে দিয়েছে?
- তোমার মা ছিল না। তাছাড়া তোমার বাবা ব্যবসার কাজ সামলে তোমায় দেখতে পারতেন না। তাই..
ঊষা মুখ ভার করে। ওপরে চলে গেল।
নীল আর নিশার পাশের ঘরটায় ঊষা শুয়েছে। অনেক রাত অবধি তার ঘুম এলো না। কি মনে হতে মাঝ রাতে ঊষা বিছানা ছেড়ে উঠে নীল এর ঘরের কাছে এলো পা টিপাটিপে। জানালা খোলা। ভিতরে জিরো লাইট জ্বলছে। সেই আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল নীল আর নিশা পাশাপাশি শুয়ে আছে। ঊষা জানালা থেকে চোখ সরিয়েই দেখলো সামনে রিতা দেবী। অন্ধকারে হটাৎ রিতা দেবীকে দেখে ঊষা চমকে গেল ।
- এই মেয়ে, তুমি এত রাতে এখানে কি করছিলে? নীল এর ঘরে উকি দিয়ে কি দেখছিলে।
ঊষা তৎক্ষণাৎ কি বলবে মনে করতে পারলো। না। আমতা আমতা করে বললো, জল... ঘরে জল নেই। তাই দিদি কে ডাকতে এসেছিলাম। দেখলাম দিদি অঘোরে ঘুমোচ্ছে। তাই আর বিরক্ত না করে চলে যাচ্ছিলাম।
রিতা দেবী ও ঊষার গলার আওয়াজ পেয়ে নীল রা উঠে পড়েছে ততোক্ষনে টিউব লাইট টা জেলে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসেই নীল বললো
- মা তুমি এখানে? কি হয়েছে? আমায় তো নিচ থেকে একটা ফোন করতে পারতে। আমি যেতাম ।
আর পাশে ঊষা কে দেখেও সে অবাক হয়ে গেল।
- আমি একটা ওষুধ খেতে ভুলে গিয়েছিলাম। দেখাতে আসছিলাম তোকে ওষুধ গুলো। এসে দেখছি ঊষা দাঁড়িয়ে
।
- নিশা হাই তুলতে তুলতে বললো, ঊষা তুই এত রাতে কি বলতে এসেছিলিস?
- জল খেতে নিচে যাচ্ছিলাম দিদি।
- জল তো তোর ঘরে টেবিলেই রাখা আছে। মিনু পিসি রেখে গেছে।
ঊষা ঢোক গিলে বললো, ও আচ্ছা। আমি খেয়াল করি নি।
- যা ! ঘরে যা।
রিতা দেবী ওষুধ গুলো নীল এর থেকে বুঝে নিলো। যে যার ঘরে চলে গেল ।
রিতা দেবী বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলো। ঊষা মিথ্যে কথা কেন বললো। একবার বললো জল আনতে নীচে যাচ্ছিল। একবার বললো জল এর জন্য দিদি কে ডাকতে এসেছিল ।
চলবে...
ছবি : সংগৃহীত
2 মন্তব্যসমূহ
7DD4142D0E
উত্তরমুছুনkiralık hacker
hacker arıyorum
kiralık hacker
hacker arıyorum
belek
C0C9B5DF28
উত্তরমুছুনkiralık hacker
hacker arıyorum
tütün dünyası
hacker bulma
hacker kirala