অকৃতজ্ঞ পর্ব - ৭

 ungrateful part 7


আগের পর্ব পড়ুন 

অকৃতজ্ঞ পর্ব - ৭


রিতা দেবী ঊষার মতিগতি বুঝতে পারে।

সকাল বেলা ডাইনিং এ নীল, নিশা, রিতা দেবী একসঙ্গে এসে সকালের জল খাবার খাচ্ছিল। ঊষা তখন ও ঘুম থেকে ওঠে নি। মিনু পিসি ব্যস্ত ঘর দোর সাফ করতে।

রিতা দেবী চা এ চুমুক দিয়ে বললেন , বউ মা তুমি কিছু মনে করো না, ঊষার আচরণ গুলো একদম ঠিকঠাক নয়। তুমি তো দেখলে পায়ে হাত দিয়ে গুরুজন দের প্রনাম করতে হয়, সেটাও ও জানে না। নিশা লজ্জিত হয়ে বলল, আসলে মা ও বাইরের পরিবেশে বড়ো হয়েছে...

-থামো বৌমা, বাইরে বড় হলেই কেউ যে রীতি নীতি, সংস্কার বোধ জানবে না তা হয় নাকি ? ও তো সেখানে পড়াশোনা করতেই গিয়েছিল। সেখানে তো আর খারাপ কিছু শেখায় না। 

ওদের কথা বলার মাঝেই ঊষা ঘুম থেকে উঠে নীচে নামলো। সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে ই ঊষা ফুরফুরে মেজাজে জিজ্ঞাসা করলো, - কি আন্টি আমার নামেই কথা হচ্ছে বুঝি? 

রিতা দেবী মুহূর্তের মধ্যেয়েই প্রসঙ্গ বদলে বলেন, তোমার ঘুম থেকে উঠতে এত দেরি হলো কেন ঊষা? অন্য জায়গা বলে কি রাতে ঘুম হয় নি ঠিক ঠাক? 

- ঘুম কেন হবে না আন্টি! আমি তো বিন্দাস ঘুমালাম। আসলে আমি এই সময়ই ঘুম থেকে উঠি। 

নীল আলগা হেসে ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়িতে তখন সোয়া আট টা বাজে। 

ঊষাও ওদের সাথে একসাথে বসে চা খেলো। 

- বোন তুই এখন থাকছিস তো কয়েকদিন এখানে? 

- অফকোর্স। কেন তোর কি কোনো প্রবলেম হচ্ছে? 

- না না!  তা কেন হবে। তোর যত দিন খুশি তুই থাকতে পারিস।

ঊষা এক ঝলক হেসে ব্রেড এ কামড় দিলো। 

- এটা তো খুবই ভালো কথা। ঊষা চটপট স্নান সেরে এসো। আমরা ঠাকুর ঘরে যাবো। একসঙ্গে পুজো করবো। একটু নাম - গান করবো। শান্ত গলায় বললেন রিতা দেবী। 

- কিন্তু আমি কেন যাব? 

- তোমার দিদি এখন প্রেগনেন্ট, এই সময় সৎ সঙ্গ করা, ভালো ভালো বই পড়া, খুবই ভালো। এতে মা, হবু সন্তান দুজনেই ভালো থাকে। সুস্থ থাকে। তুমি গেলে তোমার মন টাও ভালো থাকবে। 

ঊষা মুখ কুচকিয়ে বললো আমি যাব না। আমি রুমে চললাম।মোবাইলে গেম খেলি গিয়ে। 

রিতা দেবী হতাশ হয়ে নিশার দিকে চাইলেন। নিশা করুন হেসে বললো, মা চলুন ঠাকুর ঘরে।

নীল উপরে গেল তৈরি হতে অফিস যাওয়ার জন্য। ঊষা নিজের রুম থেকেই নীল কে পাশের রুমে ঢুকতে দেখলো। ঊষা এইরকমই কিছু সুযোগ খুঁজছিল। নীল অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল আচমকাই নীল এর রুমে ঢুকে পড়লো ঊষা।

- জিজু? তুমি কি ব্যস্ত আছো? 

- নীল চুল এ চিরুনি চালাতে চালাতে বললো, কেন কি হয়েছে? 

- আসলে মাথাটা সকাল থেকেই খুব ধরেছে। যদি কোনো বাম থাকে...

- ও ... শিওর।

নীল বাম টা নিয়ে ঊষার হাতে দিয়ে আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েই পারফিউম বার করে লাগালো। 

নীল আয়না দিয়েই দেখলো ঊষা তখন ও যায় নি। হা করে তাকেই দেখছে। 

- আর কিছু বলবে ঊষা?

ঊষা চমকে গিয়ে বলল কই কিছু না তো। 


নীল অফিস বেরিয়ে গেল। ঊষা রুমে গিয়ে খোশ মেজাজে শুয়ে পড়লো। নিজের মনেই নানা প্যাচ কষতে থাকলো। 

- ঊষা তুই আবার শুয়ে পড়েছিস? হা কর।

- কেন?

- পুজোর প্রসাদ এনেছি। হা কর।

- পুজোর প্রসাদ টা মুখে নিয়ে ঊষা বললো, দিদি তোর বর কিন্তু তোকে ভীষণ ভালোবাসে তাই না রে? 

নিশা খুশি হয়ে বলল, হ্যা রে আমি সত্যিই খুব লাকি। তোর জিজুর মতো বর পাওয়া সত্যিই খুব ভাগ্যের ব্যাপার। 

- আমারও জিজুকে খুব পছন্দ। জিজু কত হ্যান্ডসাম। কি দারুন দেখতে।

- ঊষা ভদ্র ভাবে কথা বলো। রিতা দেবী রুমে প্রবেশ করা মাত্রই এই কথা গুলো শুনে রেগে গিয়ে ঊষা কে বলল।

রিতা দেবী কে আকস্মিক এই রুমে দেখে ঊষার মাথার মধ্যে রাগ চেপে বসলো। মুখে কিছু বললো না। 

রিতা দেবী আর কথা না বাড়িয়ে নিশা কে বললেন, বউ মা ঊষা কে নিয়ে খেতে চলো।

খাবার টেবিলে ঊষা গোজ হয়ে বসে রইল। কিছুই খেলো না। 


অফিস ঢোকার মুখে নীলের ফোনে নিশার বাবা ফোন করলো। প্রিয়জিত বাবু কিন্তু এইসময় এ সচারচর ফোন করেন না নীল কে। তিনি খুবই দায়িত্বশীল মানুষ। উনি খুব ভালো ভাবেই জানেন এই সময়ে নীল এর অফিস টাইম। ওকে এখন বিরক্ত করা উচিত হবে না।

নীল পকেট থেকে ফোন টা বার করে আশ্চর্য্য হয়ে কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকালো।

- বাবা কেন ফোন করছেন এখন? তবে কি কিছু...

নীল ফোন টা রিসিভ করতে যাবে এমন সময়ই ফোন টা কেটে গেল। নীল আর সময় নষ্ট না করেই সঙ্গে সঙ্গে কল ব্যাক করলো। কিন্তু নম্বর টা ব্যস্ত আছে শোনালো। অর্থাৎ ওই প্রান্ত থেকে প্রিয়জিত বাবু আবার ফোন করছেন, আবার এই মুহুর্তেই নীল ও কল ব্যাক করছিল তাই এই বিপত্তি। নীল বুঝতে পেরে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো। সে আর অফিসের ভিতর ঢুকলো না। ফোন টার জন্য ওয়েট করলো। নীল যেন আর উত্তেজনা চেপে রাখতে পারছে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেয়েই ওর মনে নানা রকম কুচিন্তা এসে নাড়া দিতে থাকলো। ফোন আবার রিং হতেই সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করেই...

- হ্যা বাবা বলুন কোনো সমস্যা? 

প্রিয়জিত বাবু ভারী লজ্জায় পরে গেলেন। একটু গলা ঝেড়ে বললেন,  না বাবা, তেমন কিছু নয়। আসলে তোমার সাথে আমার কিছু আর্জেন্ট কথা ছিল।

- কৌতূহলী হয়ে নীল বললো, হ্যা বাবা বলুন। 

 - শোনো না নীল বাবা, আমি বড়ো বিপদে পরে তোমায় ফোন করলাম। আজ একবার আমার এখনে আসতে পারবে? 

 -  কেন কি হয়েছে বাবা? মানে সিরিয়াস কিছু? 

 -  হ্যা, নীল। ঊষা কে নিয়ে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল। 

 নীল একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো অলরেডি কথা বলতে বলতে পনেরো মিনিট লেট হয়েই গেছে। কিছুক্ষন  কথা বলতে বলতেই ভেবে প্রিয়জিত বাবু কে বললেন, আচ্ছা, 

বাবা আমি তাহলে আজ অফিসে না গিয়ে সরাসরি আপনার ওখানে যাচ্ছি। 

একটু লজ্জিত হয়ে , প্রিয়জিত বাবু বললেন, ইয়ে... মানে তোমায় বড় অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিলাম। তাই না নীল বাবা? তুমি বরঞ্চ আজ কের অফিস টা সেরেই কাল এসো। আসলে আমি এই সময় টায় ফোন করলাম কারণ এই সময়টায় তো তুমি বাড়ির বাইরে থাকো তাই। আসলে ব্যাপারটা আমি  এখনই কাউকে জানাতে চাইছি না। যাতে নিশা, ঊষা কেউই না জানতে পারে। 

নীল খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, ঠিক আছে বাবা। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আজই আসছি। 

প্রিয়জিত বাবু খুশি হয়ে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে নীল।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। 

ফোন টা কেটে দিয়ে নীল অফিসের গেট থেকে বেরিয়ে রাস্তার সামনে দাঁড়ালো।

যদিও অফিস এ সবাই ঢুকে গেছে। তবু নীল এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশ টা দেখে নিলো। পকেট থেকে  রুমাল টা বার করে মুখটা মুছলো। মনের ভিতর থেকে দুশ্চিন্তা টা কিছু তেই সরাতে পারলো না নীল। এই প্রথম ও নিশা কে না জানিয়ে অফিস ব্যাঙ্ক ( শব্দ টার স্পেলিং কীবোর্ড এ আসছে না তাই ব্যাংক লিখলাম। দুঃখিত)  করলো। খানিকক্ষণ দাঁড়াতেই একটা গাড়ি কে দাঁড় করিয়ে নীল উঠে বসলো।

গাড়িতে বসে নীল নিশা দের বাড়ির এড্রেস বলে আরাম করে পিছনের সিটে বসলো। পকেট থেকে মোবাইল টা বার করেই দেখলো নিশার দুটো মিস কল। নীল পড়লো মহা ফ্যাসাদে। প্রতিদিন অফিস ঢোকার আগে নীল একবার নিশা কে কল করে।  

চলবে...

পরের পর্ব পড়ুন

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ