নীরবে ভালোবাসি পর্ব - ২২
শ্রী আর শ্রেয়া দুজনে হাঁট তে হাটতে আবার বাড়ির দিকে এগুলো।
- দেখ শ্রেয়া তোর ই বল আর আমারই বল দুজনেরই বাড়ির আর্থিক অবস্হা খুব একটা ভালো নয়। বাবা, মা রা কত কষ্ট করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন তা তো জানিস ই। তাই বলছি প্রেম করলে এমন ছেলে দেখে করা উচিত যাকে বিয়ে করলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় যাতে না পড়তে হয়। তাই অভি দার ব্যাপারে সব কিছু জেনে তারপর এগোতে চাইছি।
- সবই তো বুঝলাম শ্রী। কিন্তু শুভ্র যে অভি দার ব্যাপারে অন্য কথা বললো। ও তো বললো অভি হয়তো অন্য কারো সাথে...
শ্রেয়া কে পুরোটা বলতে না দিয়েই শ্রী বললো, তুই থাম তো। সেটা আমি ঠিক জিজ্ঞাসা করে নেব অভি দা কে।
শ্রেয়া আর কিছু না বলেই হাট তে থাকলো। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকলো। আবার শ্রী জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা শ্রেয়া তোদের কেস টা কবে মিটমাট করবি ? নাকি এইভাবেই চলবে। শ্রেয়া , শ্রী এর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিল আমি এইভাবেই বেশ আছি। ওকে পাওয়া , না পাওয়ার ঠিক এই মাঝা মাঝি জায়গা টার অনুভূতি টাই আলাদা রে। দুচোখ ভোরে তো ওকে প্রতিদিন দেখতে পাই। আমার কাছে এটাই যথেষ্ট। শ্রেয়ার কথা শুনে শ্রী যেন হেসে গড়িয়ে পরে।
- আচ্ছা, শ্রী তুই যে প্রেম করার কথা বলছিস তোর বাড়ি থেকে কেউ একবার জানতে পেরে গেলে কি হবে বল তো?
- আরে, কি করে জানবে ? আমি তো লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করবো। হটাৎ ই কথার মাঝে শ্রী এর ফোনটা বাজতে শুরু করলো। ব্যাগ টা খুলে ফোন টা হাতে নিয়েই বুঝতে পারলো অভি দা ফোন করছে।
শ্রী এর আনন্দে , উত্তজনায় চোখে মুখে একটা হাসির পরশ এসে পড়ল। কিন্তু ফোন টা তুলতে ও একটু ইতস্তত বোধ করছে।
- কি হলো কে ফোন করছে ? ফোন টা তুলবি তো?
- অভি দা ফোন করছে রে।
- সে কি রে? ধরবি তো ফোনটা।
ফোন টা কেটে যাওয়ার কিছু মুহুর্ত আগে শ্রী ফোন টা রিসিভ করলো। ও প্রান্ত থেকে ভেসে এলো হ্যালো, শ্রী কানে ফোন টা নিয়ে থাকলেও কিন্তু মুখে কিছু বললো না। বার কয়েকবার হ্যালো, হ্যালো বলে ওপ্রান্ত থেকে ফোন টা দিলো কেটে।
- কি হলো কথা বললি না যে?
- কি বলবো? আনমনা হয়েই শ্রী জিজ্ঞাসা করলো শ্রেয়া কে।
যা বাবা! এইদিকে এত পাকাপাকা কথা আর ফোন করছে যেই অমনি কথা কি হারিয়ে ফেলেছিস নাকি?
ওদের কথা বলার মাঝে আবার ফোন টা বেজে উঠলো। এই বার একবার রিং হতেই শ্রী ফোনটা রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, হ্যালো।
অপর প্রান্ত থেকে সুদর্শন গলায় বলে উঠলো , কি হলো প্রথম বার ফোন রিসিভ করে কোনো কথা বললে না যে?
শ্রী কিছু না বলে পুনরায় চুপ করে থাকলো।।
- হ্যালো, ম্যাডাম আমি কিছু বলছি। শুনতে পাচ্ছ?.
- শ্রী মৃদু গলায় বলল, হ্যা পাচ্ছি। বলুন।
- আমায় আপনি বলে কথা বলছো কেন তুমি বলো।
- হ্যা বলো শুনতে পাচ্ছি।
- বলছি আজ কে স্কুল যাওয়ার সময় স্কুলের গেটের বাইরে একটু দাঁড়িও। তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
- কি কথা?
- গেলেই শুনতে পাবে। এখন রাখছি।
শ্রী ফোন টা রাখতেই শ্রেয়া জিজ্ঞাসা করলো কার ফোন ছিল রে? অভি দা বুঝি?
শ্রী মুচকি হেসে বললো, হ্যা।
- কি বললো?
- বললো স্কুল যাওয়ার পথে একবার দেখা করবে।
শ্রেয়াও হেসে বললো , ভালোই তো।
শ্রী কিছু না বলে তাড়াতাড়ি হাঁটা দিলো।
আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরোবি শ্রেয়া নাহলে দেখা করা যাবে না।
- তুই দেখা করবি, তা আমি কি করবো।
- তুই আমার পাশে থাকবি।
- না বাবা, আমি ওইসব কেসে নেই। তোমার কেস তুমি হ্যান্ডেল করো।
- আচ্ছা, বেশ একসাথেই বেরোব। তুই নাহয় ক্লাসে চলে যাবি। আমি কথা বলা হয়ে যাওয়ার পর তারপর ঢুকবো।।
- ওকে।
- মা, তাড়াতাড়ি ভাত বেড়ে রাখো। যাতে বেশি গরম না থাকে। খেতে নাহলে লেট হয়ে যায়।
চৈতি দেবী ভাত বাড়তে বাড়তেই বললেন, আমি ভাত ঠান্ডা হওয়ার জন্য থালায় চারিয়ে রেখেছি। তুই আগে স্নান তো কর।
- হ্যা, এই তো যাচ্ছি।
- তুই পড়তে থেকে ফিরে এসেই স্কুল যাওয়ার জন্য হুড় মুড়ি লাগিয়ে দিয়েছিস কি ব্যাপার বলতো?
- ও কিছু নয়। প্রতিদিন লেট হয়ে যায় যেতে প্রায় ঘন্টা পড়ার আগের মুহূর্তে গিয়ে হাজির হই। তাই এখন তাড়াতাড়ি যাবো ঠিক করেছি। এই বলে শ্রী বাথ রুমে ঢুকলো।
যদিও স্কুল যাচ্ছে , তবু শ্রী যতটুকু সম্ভব একটু সাজার চেষ্টা করলো। নিজেকে পরিপাটি করে গুছিয়ে আয়নায় ভালো করে দেখে নিলো । কোথাও কোনো খুত আছে কিনা।
- ওরে, আর কতক্ষন ধরে আয়না দেখবি। এবার খাবি যায়।
মায়ের ডাকে শ্রী একবার চমকে ওঠে।
- কি ব্যাপার বল তো ? আজ কাল এত সেজে গুজে স্কুল যাচ্ছিস?
- কোথায় মা? নিজেকে একটু পরিপাটি করে রাখলে তুমি অমনি বলবে আমি কত সেজেছি।
চৈতি দেবী আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।
শ্রী আর শ্রেয়া স্কুলের সামনাসামনি আসতেই দেখতে পেল অভি দা দাঁড়িয়ে আছে।
শ্রী অভিদা কে দেখা মাত্রই বললো, কি হ্যান্ডসাম লাগছে দেখ শ্রেয়া। অফ হোয়াইট কালারের শার্ট আর জিন্স টা পরে বেশ স্মার্ট লাগছে কিন্তু। সানগ্লাস টাও বেশ সুন্দর মানিয়েছে।
- বাবা, তুই তো দেখছি হেব্বি প্রেমে পড়ে গেছিস। তোরা কথা বল আমি চললাম ক্লাসে। বেশি দেরি করিস না কিন্তু।
- শ্রী তোমার জন্য আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
- শ্রী আবার মৃদু কণ্ঠে মাথা নিচু করে বললো সরি। কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। এখানে বেশিক্ষন দাঁড়ালে অসুবিধা আছে।
- বেশ তো কোথায় ওয়েট করবো তোমার জন্য বলো। আমার তোমার সাথে অনেককথা আছে শ্রী।
স্কুল ছুটির শেষে একবার আমার সাথে বেরোতে পারবে?
বেশিক্ষণ নয়। দশ থেকে পনেরো মিনিট সময় দিলেই যথেষ্ট।
শ্রী ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি কথা, এখনই বলো না।
- না এখন বলা যাবে না।
- স্কুল শেষে তোমার জন্য ওয়েট করবো। এখন স্কুলে যাও।
শ্রী এক ছুট্টে স্কুলে ঢুকে গেলো।
- কি হলো রে, কথা হয়ে গেল? চলে এলি যে?
- বললো, ছুটির পর দেখা করতে।।
শ্রী কোনো ক্লাস ই ভালো ভাবে করতে পারলো না উত্তেজনায় সারাটা বেলা ছটফট করতে থাকলো। ছুটির ঘন্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এসে স্কুলের বাইরে এসে দেখলো অভিদা দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে।
শ্রী এর কোনো বন্ধু বান্ধবী রা যাতে দেখে না ফেলে তাই ও তাড়াতাড়ি বেরিয়েছিল।ওকে দেখেই বাইক টা ঘুরিয়ে নিয়ে অভি বললো নাও, উঠে বসো।
- না, না আমি বাইকে বসবো না।
- আরে, কিছু হবে না। আমি তোমায় ফেলে দেব না। নিশ্চিন্তে বসো।
শ্রী উঠে বসলো। অভি র কাঁধে হাত রাখল। এই প্রথম শ্রী , অভির শরীর স্পর্শ করল।
চলবে...
ছবি : সংগৃহীত
1 মন্তব্যসমূহ
927A5CF1D0
উত্তরমুছুনkiralık hacker
hacker arıyorum
belek
kadriye
serik