অকৃতজ্ঞ পর্ব - ৪
কিছুক্ষন পরেই ফোনের আওয়াজে নীল বিছানা ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো , ফোন টা রিসিভ করতেই...
- জিজু, কেমন আছো?
- আরে, উষা কোথায় তুমি ? আমি আনতে আসছি তোমায়। বলো কোথায় আছো?
- থাক আর কষ্ট করে তোমায় আনতে আসতে হবে না। আমি প্রায় চলেই এসেছি তোমাদের বাড়ির কাছে।
- ওহহ! উষা তুমি তো এয়ারপোর্টে নামার আগেই আমায় একটা কল করতে পারতে আমি ই নিয়ে আসতাম। বাই দ্যা ওয়ে তুমি ঠিকঠিক চিনে আসছ তো? মানে বলতে গেলে এই তো প্রথম বার। তাই বলছি।
- একদম ঠিক বাড়ির সামনে এসে ই দাঁড়িয়েছি। স্বপ্ন ভিলা। কি ঠিক বলছি তো জিজু?
- হ্যা । তুমি তো তাহলে এসেই গেছো।
নীল রুম থেকেই কাচের জানালা খুলে দেখলো একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়িয়ে আছে। নীল ফোন টা কেটে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতে নামতে বললো, নিশা, এই নিশা .... উষা এসে গেছে।
নীলের গলা শুনতে পাওয়া মাত্রই পায়েস টা ঢাকা দিয়ে নিশা খুশি হয়ে দরজা খুলতে গেল।
- উষা , তোকে কত দিন দেখি নি বোন, কেমন আছিস?
- ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
- ভালো রে...
তোমরা এখানেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করবে নাকি বোন কে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাবে?
নীল এর কথায় নিশা ভারী লজ্জা পেল। ঊষার হাত ধরে বলল চল ঊষা ভিতরে চল। মিনু পিসি তোর লাগেজ গুলো নিয়ে যাবে। তুই আমার সাথে আয়।
ঊষা এতক্ষন অনেকদিন পর দিদি কে পেয়ে আনন্দে শুধু ওর সাথেই কথা বলতে মত্ত ছিল । নীলের দিকে সেভাবে ও খেয়াল করে নি। নিশাকে ছেড়ে এবার সে নীল এর দিকে এগিয়ে এলো। উষা কিছু বলার আগেই নীল হাত বাড়িয়ে বললো,
- হ্যাপি বার্থ ডে ঊষা।
- থ্যাংক ইউ জিজু। এই বলে ঊষা , নীলকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। এবং জড়িয়ে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ঊষা চোখ বুজে নীলের শরীরের ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করলো। বেশ কিছুক্ষণ আঁকড়ে থাকার পরেও যখন নীল কে ছাড়ছে না ঊষা, নীল তখন অপ্রস্তুতে পড়লো। নিশার দিকে একবার তাকিয়ে ঊষাকে ছাড়িয়ে বললো রুমে চলো ঊষা।
- বাহ! জিজু তোমার ফিগার টা কিন্তু খুব সুন্দর। বেশ আকর্ষণীয়। বিয়ের পরেও চেহারা টা কে এত সুন্দর ধরে রেখেছো আমি তো তোমায় যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি জিজু।
ঊষার মন্তব্যে নীল কিছু না বলে একটু হেসে কথাটা এড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। নিশা , ঊষার কথা গুলোকে জাস্ট শালী- জামাই বাবুর ইয়ার্কি বলেই মনে করল।
কিন্তু রিতা দেবী দরজার সামনে থেকে ঊষার এ- হেন ব্যবহার দেখে মনে মনে বেশ ক্ষুণ্ন হলেন। প্রথম থেকেই ঊষার প্রতি তার আচরণের জন্য তার মনে খারাপ মনোবৃত্তি র সৃষ্টি হলো। রুমে ঢোকার মুখেই রিতা দেবীকে দেখে ঊষা, জড়িয়ে ধরে বলল, কেমন আছেন আন্টি? চিনতে পারছেন ?
রিতা দেবী ভ্রু কুঁচকে , মুখ কাচুমাচু করে বললেন, হ্যা চিনতে পেরেছি। ভালো আছো তো তুমি ?
ঊষা ঘাড় এলিয়ে নিশার হাত ধরে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।
- ওয়াও, কি ব্যাপক সাজিয়েছিস রে দিদি । দারুন লাগছে। জাস্ট ফাটাফাটি। এই বলে ঊষা তার হট প্যান্ট এর পকেট থেকে মোবাইল বার করে কয়েকটা ফটো তুললো বাড়ি টার। তার সাথে নিশা ও নীল কে নিয়েও বেশ কয়েকটা সেলফি নিলো।
- আচ্ছা, অনেক হয়েছে ঊষা এবার একটু বোস। কতদূর থেকে এলি। আগে মিনু পিসি কে বলি একটু কফি করে দিতে। খেয়ে তারপর চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নিবি।
- সে- সব হবে খন। এখন বল তোর পেটের ভিতর পুচকু টা কি করছে? কেমন আছে? দেখি তোর পেটে একটু হাত দিয়ে ... কই তোর পেট টা এখনো বড় হয় নি তো?
- ধুর পাগলী, এত তাড়াতাড়ি কি বোঝা যায় এই তো সবে চতুর্থ মাস। নানা কথার মাঝে তোকে উইস টাই করা হয়ে ওঠে নি ঊষা। শুভ জন্মদিন। এইদিন টা যেন সারাজীবন ফিরে ফিরে আসে আর তুই সর্বদা এইরকমই যেন হাসিখুশি থাকিস।
- থ্যক ইউ দিদি। লাভ ইউ।
কিছুক্ষন গল্প করতে করতে কফি খাওয়া হয়ে গেলে , নিশা বোন কে বলে, চল ঊষা তোকে ওপরে ওয়াশ রুম টা দেখিয়ে দিয়ে আসি।
- সাবধানে আসতে আসতে যেও বৌমা। তাড়াহুড়ো কোরো না।
- আচ্ছা মা।
নিশা আর ঊষা ওপরে উঠে গেলে রুক্ষ গলায় রিতাদেবী নীল কে ডেকে বলে, আচ্ছা নীল , নিশা আর ঊষা তো একই মায়ের দুই সন্তান। কিন্তু দুজনের মধ্যে কি বিস্তর তফাৎ।
- ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকিয়ে চোখ দুটো সরু করে কৌতূহলী হয়ে নীল জিজ্ঞাসা করলো কেন মা?
- ওর জামা কাপড় গুলো দেখেছিস? কি একটা ছোট প্যান্ট আর ওপরে একটা টাইট গেঞ্জি পরে এসেছে। সভ্যতা , ভদ্রতার ছিটে ফোটাও নেই ওর মধ্যে। আসতে না আসতেই তোকে কেমন অসভ্য দের মতো জড়িয়ে ধরেছিল , আমার তো দেখেই গা ঘিন ঘিন করছিল।
- নীল, মা কে আশ্বস্ত করে বললো মা, ঊষা মুম্বই এ থাকে। সেখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে , এখনকার মেয়ে এইসব ড্রেস তো পরবেই। ওইসব নিয়ে তুমি ভেব না।
- নিশাও তো এই যুগের মেয়ে কই ওর তো চাল- চরণ এইরকম ট্যারা ব্যাকা নয়?
জিভ দিয়ে একটা বিরোক্তিসূচক শব্দ বার করে নীল বললো মা সবাই সমান হয় না। তাছাড়া নিশার থেকেও ঊষা দশ বছরের ছোট।
- কাকে ছোট বলছিস নীল? ওই মেয়ের মতো বয়সে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তোর ওপর এমন ভাবে হামলে পরে তোকে জড়িয়ে ধরেছিল যেন মনে হচ্ছিল চুলের মুঠি ধরে...
- কি হচ্ছে মা । চুপ করো। নিশা শুনতে পেলে কষ্ট পাবে।
চলবে ...
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ