নীরবে ভালোবাসি পর্ব - ২১
প্রবাল স্যারের বাড়ি পড়তে যাওয়ার পথে শ্রী এর হটাৎ ই চোখে পড়লো অভিকে। অভি ওর বয়সী কয়েকজন বন্ধুদের সাথে প্রবাল স্যারের বাড়ির দিক থেকে আসছে। দূর থেকে অভি কে দেখা মাত্রই শ্রেয়া চিনতে পারলো অভি আসছে। কারণ শুভ্র দের সাথে অভি কে শ্রেয়াও আগে দেখেছে। শুধু নাম টা জানতো না। অভিকে দেখে শ্রী এর চোখ- মুখের কি রূপ পরিবর্তন ঘটে তা দেখার জন্য শ্রেয়া গভীর আগ্রহে শ্রী এর দিকে তাকালো। শ্রী একবার শ্রেয়ার দিকে আর একবার অভির দিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করলো। তা দেখে শ্রেয়া বললো,
- কি রে, ডেকে দেব নাকি কথা বলবি ?
শ্রেয়ার হাতে একবার চিমটি কেটে ঠোঁট এলিয়ে শ্রী বললো, ফালতু বকিস না।
অভি দের দল টা শ্রী এ দের ক্রস করে এগিয়ে গেল। অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে এইসময় টা শ্রী কে দেখে নিলো। শ্রী ও একবার তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেল। ওরা ক্রস করার পরে ও শ্রী পিছন ফিরে একবার তাকালো। ওদিকে অভিও ততক্ষণে পিছন ফিরে তাকিয়েছে। আবার দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। শ্রী চোখে মুখে এক অদ্ভুত ভালোলাগার রশ্নি উপছে পড়লো। শ্রেয়া তা দেখে বললো, তোদের দুজনেরই তো মন ভালোই একে অপরের ওপর গোলেছে। তাহলে আর দেরি কেন শুরু করে দে।
- কি শুরু করবো?
- কি শুরু করবো মানে? প্রেম শুরু করবি।
- তা তো করবোই। তোর আর শুভ্র মতো তো আমি ওতো হ্যাবলা নয় যে চোখে চোখে দেখেই সারাবেলা কাটিয়ে দেব। তার আগে আমার শুভ্র র সাথে কথা বলটা খুব প্রয়োজন।
পড়ার ব্যাচ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রায় মিনিট দশেক পর আজ শ্রী ও শ্রেয়া পড়তে ঢুকেছে। প্রবাল স্যার মুখে কিছু না বললেও তিনি যে অসন্তুষ্ট হয়েছেন তার বাঁকা চাওনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। পড়তে বসার শুরু থেকেই শ্রী ইশারায় শুভ্রকে ডাকার চেষ্টা করছে। শুভ্র বুঝতে পারলেও প্রথম বার টা ওর মনে হলো হয়ত তার এটা মনের ভুল। কিন্তু দ্বিতীয় বারেই সে নিশ্চিত হলো সত্যিই শ্রী তাকে কিছু বলতে চাইছে। এবার শুভ্র র হার্টবিট বাড়তে শুরু করে দিলো। প্রবাল স্যারের ডিস্কাস করা কোনো আলোচনাই আজ তার কান এর ভিতর দিয়ে মগজ অবধি পৌঁছেছে না। তার মন তখন উতলা। শ্রী আর শুভ্রর এই ইশারাটা হঠাৎই রক্তিম এর চোখে পড়ে গেলো। অঙ্ক করতে করতে সে ফিসফিস করে শুভ্রর কানের কাছে মুখ দিয়ে বললো , কি ব্যাপার বলতো? কেস টা কি?
শুভ্র প্রত্যুত্তরে জবাব দিলো তুই ও যেখানে আমি ও সেখানে। তবে রক্তিম কে এ কথা বললেও শুভ্রর মনে এখন অন্য এলোপাথাড়ি প্রশ্নের বান বার বার এসে বিধছে তার মস্তিষ্কে, মনে । তবে কি? তবে কি শ্রী বুঝতে পেরে গেছে। কি জানি এইসব ভাবতে ভাবতে শুভ্র অনেকটাই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল
-শুভ্র এত কেয়ারলেস ভাবে পড়তে এলে চলবে না। পড়ায় মন দে। আমি অনেকখন ধরে তোকে লক্ষ্য করছি তুই আজ খুবই আনমনা। কি ব্যাপার বল তো?
প্রবাল স্যারের ধমক খেয়ে শুভ্র মুখ কাচুমাচু করে কোনো দিকে আর না তাকিয়ে অংকের খাতায় মনোনিবেশ করলো।
- শ্রী, তোর কি কথা বলার সময় পার হয়ে যাচ্ছে নাকি ? দিলি তো শুধু শুধু শুভ্রকে বকা খাইয়ে স্যারের থেকে। ফিসফিস করে শ্রেয়া বললো শ্রী কে।
মুচকি হেসে শ্রী বললো, তোর বুঝি তাই জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে? আহা কি প্রেম, কি প্রেম! এই রকম চোখে দেখা যায় না।
শ্রেয়া জবাবে কিছু না বলে বিরোক্তিসূচক ঘাড় নাড়িয়ে পুনরায় লিখতে শুরু করলো।
-তু... ই ...তুই...আমায় ডাকছিলিস শ্রী লতা?
-হ্যা তখন তো কত করে ডাকলাম ...কিন্তু তুই হটাৎ ওমন ভ্যাবলার মতো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলি কেন সেইজন্যই তো স্যারের কাছ থেকে বকা খেলি। তুই কেস খেলি তোর নিজের জন্যই এতে যেন আবার আমায় দোষ দিস না।
-কি দরকার সেটা তো বলবি। চোখে মুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে শুভ্র জিজ্ঞাসা করলো।
-বলছি তোর সাথে মানে তোদের সাথে একজন সিনিয়র ছেলে ঘোরে ওর নাম অভি তাই তো? ওই যে কাঁধে একটা গিটার থাকে বেশির ভাগ সময়।
-হ্যা। ওকে আমরা অভি দা ই বলি আমাদের থেকে বছর চারেকের বড়ো ও। সেকেণ্ড ইয়ার এ পরে। বিএসসি ম্যাথ এ অনার্স।
-ওরে বাপ রে। আবার ম্যাথ। এই ম্যাথ দেখছি আমার পিছু ছাড়বে না। যাই হোক ওর ফ্যামিলি তে কে কে আছে রে?
-হটাৎ ওকে নিয়ে পরলি কেন? কি ব্যাপার বলতো? অবাক হয়ে শুভ্র জিজ্ঞাসা করলো শ্রী কে।
শ্রেয়া লাজুক কণ্ঠে শুভ্র র দিকে তাকিয়ে বলল আসলে শ্রী ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে শুভ্রর বুকের ভিতর টা ধড়াস করে উঠলো। সারা গা কাটা দিয়ে উঠলো। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ও বললো, কিন্তু আমি মানে আমরা যতদূর জানি অভি দার সাথে আমাদেরই পাশের পাড়ার একটা দিদির সম্পর্ক আছে। ওরা তো একই কলেজে পরে। দিদি টার নাম তিতির। আর ওদের সম্পর্কের কথা অভি দা নিজেই আমাদের বলেছে। তাছাড়া পাড়ার অতনু দার ফুচকার দোকানের সামনে ওদের অনেক বার ফুচকা খেতেও দেখেছি।
শুভ্র র কথা গুলো শোনার পর শ্রী এর মনে উতাল পাতাল শুরু হলেও ও শুভ্রর বলা কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারলো না। বা বলা ভালো বিশ্বাস করতে চাইল না।
- মিথ্যে কথা কেন বলছিস শুভ্র? ও আমায় লাইক করে অনেক দিন থেকেই সেটা আমি জানি। ও অনেকদিন থেকেই আমার পিছু নিয়েছে সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছি। তাছাড়া ওর সাথে আমার ফেস টু ফেস কথাও হয়েছে। অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে আমার মন টা নস ভাঙানোর চেষ্টা করে যেটা জানতে চাইছি, শুধু তার উত্তর দে।
শ্রী যেভাবে শুভ্র র সাথে কথা বলছিল তাতে শ্রেয়ার রাগ ক্রমশ বাড়ছিল। শ্রী এর প্রতি বিরক্তও হচ্ছিল ঢের। মনে মনে সে ভাবছিল শুভ্রর ওতকিছু বলার কি দরকার ছিল , যা জানতে চাইছে সেটুকু বলে দিলেই তো ঝামেলা মিটে যায়। খামোকা ওর ব্যাপারে ওতো মাথা গলানোর কি দরকার।
অভিদার বাবা, মা, আর ওর একটা বোন আছে। তবে ওর বোন টার বিয়ে হয়ে গেছে।
- যাক বাবা বাঁচা গেছে। বাবা , মায়ের একটাই ছেলে তাহলে.।
ঘাড়ে একটা চাটি মেরে শ্রেয়া বলে, ও বাবা, মায়ের একটাই ছেলে তাতে কি হয়েছে? একটাই ছেলে শুনে তুই ওতো লাফিয়ে উঠলি কেন?
- ওই যে তোকে বললাম না, আমি কখনো পচা সামুকে পা কাটবো না। প্রেম করার আগে জেনে নিলাম ।
- ব্যাপার টা বুঝলাম না ।
পরে বলছি । শুভ্র কে ইঙ্গিত করে শ্রী বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। তুই এখন যা। তুই কিন্তু আবার অভি দা কে বলে দিস না এই সব ব্যাপার।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
চলবে ...
ছবি : সংগৃহিত

2 মন্তব্যসমূহ
255265E8D5
উত্তরমুছুনhacker bulma
hacker arıyorum
tütün dünyası
-
-
F135FBB469
উত্তরমুছুনTakipçi Satın Al
Footer Link Satın Al
Para Kazandıran Oyunlar
PK XD Elmas Kodu
Call of Dragons Hediye Kodu