একটা মেয়েকে তার মা, বাবা অনেক যত্নে অনেক কষ্ট করে মানুষ করে। পড়া লেখা শেখায়। নাচে, গানে, আবৃত্তি এই সব এ পারদর্শী করে তোলে। একটা ছেলে সন্তান কে নিয়েও তার বাবা, মা যে স্বপ্ন দেখে একটা মেয়ে সন্তান কে নিয়েও একই স্বপ্ন দেখে।
বাপের বাড়িতে মেয়ের আবদার এর শেষ থাকে না। বরঞ্চ মেয়েরা একটু বেশিই আহ্লাদে বড়ো হয়। শীতের সকালে বাবার ঘরে আলালের ঘরে দুলালিনি বেলা আট টার সময় ঘুম থেকে উঠে। বাবার আশকারা তেই। মেয়ে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও মা যতই গজগজ, ফোঁসফস করুক বাবা বলবেই - আহা সারাদিনের যা ধকল যায় একটু বেলা অবধি ঘুমাক ই না। মা ভয় পায় ভবিষৎ এর কথা ভেবে। না জানি বিয়ের পর এই বাজে অভ্যাস এর জন্য শশুর ঘর থেকে কথা শুনতে হয়। ঘুম থেকে উঠেই রাজকন্যা তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে কলেজের জন্য। টিফিন , জলের বোতল কিছুই ভরতে হয় না। মা রেডি করে দেয়। তার ওপর পছন্দ সই টিফিন মা করে না দিতে পারলে মেয়ে ঘ্যানঘ্যান করে। বাবার যত কমই সামর্থ থাকুক না কেন মা কে লুকিয়ে ঠিক ই সে মেয়ের হাতে টাকা গুঁজে দেয়। যাতে বাইরে বেরিয়ে বন্ধু দের সামনে অপ্রস্তুতে না পড়তে হয়।
মেয়ে কলেজ যাবে। ট্রেন ,বাসের তাড়া। তাই অষ্টাদশী মেয়েকে মা ই খাইয়ে দেয়। আর মনে মনে বলে আদিখ্যেতা! না জানি বিয়ের পর কোন বাড়ি তে গিয়ে পরবে তখন কি যে হবে মেয়ের হাল। এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেতে চায় না, সে কি করে শশুর ঘরে গিয়ে কাজ করবে কি জানি।
সেই মেয়েটি ই বিয়ের পর সব কিছু শিখে যায়। নিজে ভাত বেড়ে পরিবারের সকলকে খাওয়ায়। তারপর নিজে খায়। যে মেয়ে বেলা আট টার আগে ঘুম থেকে উঠতো না সে এলার্ম ছাড়াই ভোর বেলা উঠে বাসী কাপড় ছেড়ে রান্না চাপায়। যে মেয়েটি কলেজে পড়াকালীন ও নিজের টিফিন করা তো দূরে থাক, নিজের টিফিন টা পর্যন্ত তার মা কে গুছিয়ে দিতে হতো সে স্বামীর জন্য ভাত , তরকারি রান্না করে সকাল ৭টার মধ্যে গুছিয়ে দেয়। বাচ্চাকে টাইম টু টাইম খাওয়ায়। কিন্তু সংসারের জাতাকলে নিজের খাবার সময় টুকু পায় না। পরিবারের অন্যের যত্ন নিতে নিতে নিজের যত্নের কথা ভুলে যায়। বাবার আলালের দুলালী এখন আর খাবার নিয়ে বায়না করে না। যা ঘরে থাকে তাই খায়। কারণ এখানে ওই ডুব চলবে না। বাবার কম সামর্থ থাকলেও বাবার থেকে বায়নার তার শেষ থাকতো না। আর এখানে বর এর থেকে বায়না করতেও কিন্তু বোধ হয়। বাবর থেকে টাকা চাইলেই পাওয়া যেত। বর এর থেকে টাকা চাইলে তার কৈফিয়ত দিতে হয়।
বাবার বাড়ি তে থাকাকালীন ফুচকা এগরোল খেতে মন চাইলে বন্ধুদের সাথে যেতে পারা যেত। আর এখানে বাড়ির বাইরে এক পা বেরোলে বাড়ির লোকের মুখ খারাপ হয়ে যায়। উপরন্তু নিজের সব কাজ করে বেরোতে হয়।
হ্যা, আমাদের এই খান টা এখনো এইরকমই। যখন ইচ্ছা একটু বেরোনো ও যাবে না। অদ্ভুত জায়গা।
এই সংসারে কোন ছুটি নেই। ছাড় নেই। চোখের জল এর কোনো দাম নেই। তবু মেয়েরা প্রানপন চায় একটা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে। সারাদিন বেগার খাটলেও দিন শেষে শুনতে হয় সারাদিন করো টা কি ...
সংসারের গভীরতা য় জড়িয়ে মেয়েটা একসময় সংসারী হয়ে যায়। নিজের শখ, সাধ এর কথা ভুলে যায়। জড়িয়ে পড়ে সংসারের মায়ায়। মেয়েটা সংসার কে অনেক কিছু দিয়েছে । কিন্তু শেষ মেষ দেখা যায় সংসার মেয়েটাকে শুধু অবহেলা দিয়েছে। তার যৌবন কেড়েছে, তার মেধা কেড়েছে, তার ক্রিয়েটিভিটি কেড়েছে। কেড়েছে তার বাপের বাড়ির প্রতি তার আসা যাওয়ার পরিমান কমানোটা।
মাঝে মাঝে ভাবি মেয়ে হয়ে জন্মানটাই পাপ। শুধু স্যাক্রিফাইস আর কম্প্রোমাইজ করেই মেয়েদের জীবন টা শেষ হয়ে যায়। এখন দিনকাল পাল্টালেও অনেক গ্রামাঞ্চলেই এখনো মেয়েদের অবস্থা ঠিক এইরকম।
আমার ও জীবনে অনেক শখ ছিল নিজে কিছু একটা করবো। কিন্তু সংসারে থেকে একটুও সময় পাই না। আমার ছেলে আছে। সময় ভীষণ ভাবে চাই আমার বৌমা যেন এই রকম সংসারের জালে আটকে না পড়ে। সে স্বাবলম্বী হোক। প্রতিষ্ঠিত হোক। নিজের জীবন পথে এগিয়ে যাক।
আর কি বলবো। আজকে আমার মন টা সত্যি ই খুব খারাপ। আসলে কয়েকদিন হলো আমার বাবার শরীর খারাপ। তাই মন টাও একদম ভালো নেই। আজকের ব্লগ টা এইখানেই শেষ করছি। আমার ব্লগে ভিউ হয় মোটামুটি। কিন্তু কিছু আয় কেন করতে পারি না কি জানি। আপনারা আমায় একটু সাহায্য করতে পারেন আমার ব্লগটি শেয়ার করে যাতে আমার ব্লগ গুলো অন্যরাও দেখতে পায়। বাড়ি বসে যাতে আমিও কিছু আয় করতে পারি। সকলকে অনেক ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি।
1 মন্তব্যসমূহ
524917B090
উত্তরমুছুনhacker kirala
hacker bulma
tütün dünyası
hacker bulma
hacker kirala