কুয়াশা মাখা এক শীত এর সকাল এর সাথে আপনাদের সাক্ষাৎ করাতে চলে এলাম নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। আজ কের সকাল এর ছবি এটা। সকাল ৬ টায় ঘুম ভেঙে দেখি তখনও আকাশ অন্ধকার। চারিদিকে কুয়াশা য় পরিপূর্ণ। সদর দরজা খুললেই আমাদের এই রাস্তা। চারিদিকে তখন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আমি ছবিটা তুলেছি তখন ৮:৩০ মতো বাজে। তখন ও এইরকম। তাহলে ভাবুন ভোর বেলা কতটা বেশি ছিল। ঠান্ডাটাও ছিল খুব। আমি যখন ছবি তুলছিলাম একটা ছোট কুকুর বাচ্ছা ও দাঁড়াচ্ছিল। তাই ওর ও একটা ছবি নিলাম। ওরা চার ভাই বোন। এখানেই আশে পাশে থাকে।
একদম ভালো ভাবে বাচ্ছা টার ছবি তুলতে পারছিলাম না। কারণ ওর পাশে মা ছিল। ওর মা তেড়ে আসছিল। ভাবছিল আমি হয়তো বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি এলাম। আর পাশে আমার ছেলেও ছিল। আমি ও আঁচড়ে দেওয়ার ভয়ে আর বেশি বাড়াবাড়ি করলাম না। আর ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর জন্য তাঁরাও ছিল তখন। তাই চলে এলাম। আজ ছেলের জন্য খুব সাধারণ কিছু সবজি দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে দিয়েছিলাম। সাথে একটা ডিম সিদ্ধ। এই ডিম সিদ্ধ নিয়ে আবার একটা গল্প আছে। সেটা শেয়ার করবো। আমি মটরশুঁটি, বিন্স, চাল, ডাল দিয়ে একটা খিচুড়ি করে দিয়েছিলাম। এখানে শীতকালে এইগুলো খুব পাওয়া যায়।

এই দেখুন ডিম টা সিদ্ধ করে এইরকম হয়েছে। মানে বেশি সিদ্ধ হয়ে গেছে। ছেলে কে গল্পের চলে খাওয়াতে খাওয়াতে বললাম ডিম টা ফুটে মুরগি বেরিয়েই যাচ্ছিল তাই এইরকম এই ডিম টা। ও তো এইরকম অদ্ভুত গল্প শুনে অবাক হয়ে খেয়ে নিল। আমি জানি ও এই কথাটা বিশ্বাস করিনি। কারণ ওর বয়স ৭.এখন বুদ্ধি হয়েছে একটু একটু। তবু বললাম।
ছেলে স্কুল এ বেরিয়ে পরার পর আমি বিছানা গুছাতে আসি। তার আগে হুটপাতি করে সময় হয় না। জানি অনেকেই বলবেন এটা করা উচিত নয়। কিনতু বিশ্বাস করুন আমার ছেলে স্কুল যায় ৯ টায়। আর বর অফিস বেরোয় ৮ টায়। তাদের খাবার দাবার বানাতে, রেডি করাতে সেই ফাঁকে ছেলেকে একটু পড়াতে বসতে বসতে আর টাইম হয়ে ওঠে না। ওরা বেরিয়ে পরলে ধীরে সুস্থে করি কাজ। এখন বিছানাটা এইরকম অবস্থা তো ? এবার দেখুন .....
এখন কেমন লাগছে দেখতে? একটু ভদ্র লাগছে কি? আমি ঠিক পরিপাটি নয়। যেমন পারি তেমন গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাই। আজ যেহেতু কুয়াশা পরেছে সবাই বলা কওয়া করছে বেলায় রোদ উঠবে খুব। তাই বালতিতে জামাকাপড় ভিজতে দিলাম। সার্ফ এ দিয়ে। কাঁচবো বলে। আমাদের ওয়াশিং মেশিন নেই। তাই হাতই ভরসা।
জামা কাপড় ভিজতে দিয়ে একটু টিফিন মানে জল খাবার খেয়ে নিলাম। মুড়ি, আলুর তরকারি, ডাল মুট। বাঙালিবাড়ির খুবই সাধারণ খাবার এটা।
জামা কাপড় কেচে ছাদে রোদে শুকোতে দিতে এলাম। আমার দুটি শাড়ি, ছেলের দুটো প্যান্ট জামা। ছাদে ভীষণ রোদ। জানেন তো ছাদ আমার এই বাড়ির খুব প্রিয় জায়গা। মন খারাপ লাগলে, আবার মন ভালো থাকলেও আমি ছাদেই একলা সময় কাটাতে খুব ভালোবাসি। ছাদে জামা দিতে এসে একটু বসেছিলাম। হটাৎ পাশের বাড়ির একজন ফোন করে বলল সম্পর্কে আমার জা , গাজর নেবে? বললাম দাও। ছাদে দুটো গাজর ছুড়ে দিল। দেখাচ্ছি।

এই দেখুন। এই দুটো। এখনো আমাদের পাড়া গাঁয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি রান্না, সবজি দেওয়া নেওয়া চলে। আপনাদের চলে? জানি ওসব এখন উঠে গেছে। কিন্তু এখানে এখনো চল আছে।
ছাদ থেকে নেমে ছেলেকে সকাল বেলা যে গুলো লিখতে দিয়েছিলাম সেই গুলো চেক করছিলাম। আর শাখা আলু, কুল খাচ্ছিলাম। আমি কিন্তু রান্নার ছবি দিতে পারললাম না। আমি সকাল বেলা তাড়াহুড়ো করে করি। অফিস যাবে বলে তাই আর ছবি তোলা হয় নি। রান্না করেছি সিম, ঝিঙে, কাঁচকলা, আলু দিয়ে ঝোল। ডিমের কালিয়া । সাথে আলু সিদ্ধ। আর ছেলের তো বললাম খিচুড়ি। আর টিফিন এর আলুর তরকারি।
এরপর চলে এলাম ঘর মুছতে। ঘর মোছার ডান্ডা হাতে আমার ছবি। ছবি তুলে দেওয়ার মতো কেউ নেই। নিজেই সব। ঘর মোছা শুরু হলো। সারাদিনে একা একা নিজের মনে একটু একটু করে কাজ করি । আর ছবি তুলে রাখি। আপনাদের শেয়ার করবো বলে। আমায় কেমন খেপি খেপি লাগছে তাই না? আমি আসলে টিপটপ থাকতে পারি না। ভীষণ অগোছালো আমি। যাই হোক, মোছা হয়ে গেলে আর একটা ছবি দেব।
দেখুন কি সুন্দর পরিস্কার করে মুছেছি। আমাদের টাইলস বসানো বাড়ি নয়। আগে কার দিনের মতো লাল মেঝে। এই আমার স্বর্গ। এই ঘর, এই বাড়ি, এই উঠোন, এই ছাদ ঘিরেই আমার পৃথিবী। আমার কোনো সপ্ন নেই যে আমার অনেক ভালো বাড়ি হইবে গাড়ি হবে। বর মাঝে মাঝে বলে একটা সুন্দর বাড়ি করবো। আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে। আমি ই বারণ করি। বলি কি দরকার। এতে তো দিব্বি কেটে যাচ্ছে। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সুন্দর বাড়ি শুধু করলেই হয় না তার মেন্টেন্স দরকার। আমি বাপু অতো পারবো না। সময় একটু খামখেয়ালি, উদাসীন। কোন দিন প্রচুর কাজ করি। কোনোদিন ল্যাদ খাই। ও বাড়ি নোংরা হয়ে যাবে। তার থেকে আমার এই ভালো।
স্নান সেরে পুজো দিলাম। ফুল তুলেছিলাম। সেই ছবি আর দেওয়া হলো না। তুলে রেখেছিলাম। অপরাজিতা ফুল গুলো গাছে অসম্ভব সুন্দর ফোটে। এটা আমার ঠাকুর। আমি সেবা দিই। শুশুড়ি মা যেমন বলেছেন সেই ভাবে। স্নান সেরে পুজো করে জল তুললাম। তারপর খেতে বসেছিলাম। দুপুরে একটু রেস্ট নিয়ে আবার ৪ টের দিকে উঠে ছেলেকে খাইয়ে বাসন থালা ধুয়ে একটু হাঁটতে বেরোলাম। ওই আধা ঘন্টা মতো। মাঝে দুপুরের দিকে ছেলের কিছু হোমওয়ার্ক দিয়ে রাখলাম। যাতে ও বাড়ি এসে করতে পারে। আর কি.... এই ভাবেই চলছে আমার গতানুগতিক জীবন। সন্ধ্যের রান্না এখনো হয় নি। রুটি করবো।
আপনারা একটু আমায় সাপোর্ট করলে একটু এগোতে পারি। আমি একজন সাধারণ গৃহবধূ। আমার লেখা গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন।
বিকালের দিকে একটু হাঁটতে বেরিয়ে পড়ি রোজ। আজ ও ছেলে স্কুল থেকে আসার পর ওকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। এটা আমাদের গ্রামের কাঠের ব্রিজ। এটা দিয়েই আমরা যাতায়াত করি। আজ এখনে এসেছিলাম। তাই ছবি দিলাম।
শীতকালে নদীর জল শুকিয়ে গেছে।
বাড়ি এসে ই চট করে রাতের খাবার করে নিলাম। সন্ধেয় ৬ টা থেকে ছেলেকে পড়তে বসাতে হবে যে। এর টাইম এর কোনো নোরচরহয় না আমার। সন্ধেয় বেলায় একটা রুটি দিয়ে চা খেয়ে পড়াতে বসলাম। ছেলের ৮ টা নাগাদ চোখে ঘুম এসে গেল। খাইয়ে শুইয়ে দিলাম। সকাল ৯ টায় স্কুল যায় ফেরে বিকেল ৪ টে। সারাদিন যা ধকল যায় তাই ঘুম এসে যায়। খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিই তাড়াতাড়ি। আবার পরদিন সকালে ৬:৩০ তে তুলি ওকে।
এটা আমার ছেলের ডিনার। রুটি আর খেজুরের গুড়। শীতকালের বাঙালির সেরা খাবার। এবার সত্যি সত্যিই আজকের মত ব্লগ শেষ করলাম। ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি। এখন সময় রাত ৯:৩০ । এখনই ব্লগ পোস্ট করে দেব।
0 মন্তব্যসমূহ