অকৃতজ্ঞ পর্ব ১
সকাল বেলার মিঠে আলোটা কাচের জানালা ভেদ করে নীলের চোখে মুখে এসে পড়ল। ওই এক চিলতে আলোটা থেকে নিজের মুখ টা আড়াল করতে নীল আবার পাশ ফিরে বা পাশে ঘুরে পা বালিশ টার উপর পা দিয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো। না, এই দিকেও সেই একই সমস্যা। এই দিকেও সকালের ঝল মলে আলো তার চোখে মুখে এসে খেলতে শুরু করলো। নীল নাক - মুখ সিট কিয়ে চোখ বুজেই ওর পাশের জায়গাটা হাত দিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বললো,
নিশা তুমি সকাল সকাল জানালার পর্দা গুলো কেন সরিয়ে দিয়েছো বলো তো ? তোমায় না কত করে বলেছি , এই সময় সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার কোনো দরকার নেই?
কিন্তু কিছুক্ষন হাত দিয়েও যখন কারো অস্তিত্ব সে অনুভব করতে পারলো না, তখন নীল চোখ খুলে দেখলো ওর পাশে নিশা নেই। সে আরো বেশি অবাক হয়ে গেল। কারণ ইদানিং নীল ই নিশার আগে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে। এবং নিজের হাতে হেলথ ড্রিংক তৈরি করে তবে সে নিশাকে ঘুম থেকে ডাকে।
বিছানা ছেড়ে ধড়মড় করে উঠে নীল ডাকতে ডাকতে প্রথমে ওদের রুমের সাথে আটর্চ বাথরুম টার দিকে যায়। কিন্তু দেখে বাথরুম খোলাই আছে কেউ নেই।
এবার সে চেয়ারে থাকা টিশার্ট টা গলিয়ে চোখ রগড়াতে রগড়াতে নীচে নেমে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ও বেশ অবাক হয়ে যায়। চরিদিকে এত সুন্দর গন্ধ , নানারকম, নানা রং এর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের বাড়ির নিচটা। সিঁড়ির রেলিং ধরে নামতে গিয়ে হঠাৎই নীলের হাতে ঠেকলো ফুলের মালা।
- আরে, নীল । দেখে আয়। তোর হাতের চাপে ফুল গুলো নাহলে চিপসে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে তো।
রিতা দেবী অর্থাৎ নীলের মায়ের গলার আওয়াজে নীল দেখে রেলিং গুলোতেও বাহারি ফুল দিয়ে সাজান হয়েছে।
ও বেশ হতবাক হয়ে মা কে জিজ্ঞাসা করে, আজ কি মা? আজ কি কোনো বিশেষ দিন?
রিতা দেবী একটু হেসে বলেন , বিশেষ দিনই বটে। তোর পাগল বউ কে জিজ্ঞাসা কর কি আছে আজ।
ওকেই তো খুঁজছি। কোথায় নিশা?
এই তো একটু আগেই এখানেই ছিল। খুব ব্যস্ত আজ ও। দেখ হয়তো বাগানের দিকে গেল।
- মা , তুমি ওকে এখন এই অবস্থায় বাগানে যেতে দিলে?
- আমার কথা শুনলে তো বারণ করবো । এই বলে রিতা দেবী হাসি হাসি মুখ করে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
নীল আবার নিশাকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানের দিকে এলো। সকাল বেলায় বাগানের পরিবেশ টা বেশ সুন্দর লাগে। নানা রং এর ফুল ফোটে। গোলাপ ফুলই আছে চার রং এর সাদা, লাল, গোলাপি, বেগুনি । তাছাড়া ডালিয়া , সূর্যমুখী, কৃষ্ণচূড়া, রঙ্গন নানা জাতের ফুল গাছের মেলা বাগানে। এই সব ফুল গাছই নিশার অনুরোধ এ লাগানো হয়েছে। আগে নিশা নিজের হাতেই এইসব গাছ মাটিতে লাগতো, জল দিত। এখন অবশ্য দিতে পারে না। তাই এই সব গাছ দেখাশোনার জন্য একজন লোক রাখা হয়েছে।
নীল নিশ্চিত ছিল নিশ্চই বাগানেই তার দেখা মিলবে। কিন্তু এইদিক- সেদিক উকি মেরে ওর দেখা না পেয়ে, ব্যর্থ হয়ে নীল যখন আবার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো তখনই হটাৎ ওর চোখে পড়লো দুই জন ছেলের সাথে নিশা কথাবার্তা বলছে। তাদের কি যেন বোজাচ্ছে। নীল প্রথমে হতভম্ব এর মত ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দূর থেকে ওদের কথা বলা দেখতে থাকলো। দূর থেকে দেখেই নীল বুঝতে পারলো নিশাকে সকাল বেলাতেই বড্ড ক্লান্ত লাগছে। চুল গুলো এলোমেলো ভাবে ক্লিপ দিয়ে আটকানো। সকাল বেলাকার হলুদে আলো তে নীল শাড়ি পরিহিতা নিশার গায়ের রং টা যদিও ঠিকরে পড়ছিল তথাপি নীল আর রোমান্টিক না হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সামনের দিকে পা বাড়ালো। মনে মনে সে বললো, আজ কি এমন দিন যে নিশা আমাকেও না বলে একা একাই সব টা এরেঞ্জ করলো। আর যদি সারপ্রাইজ দেওয়ার ই থাকে, এখন কি এইভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার সময়। তাছাড়া নিশাও খুব ভালো ভাবে জানে এইভাবে সারপ্রাইজ পেতে এই মুহূর্তে নীল ঠিক পছন্দ করবে না। মনে হাজার একশ টা প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে নীল হাজির হলো নিশার সামনে। ততক্ষণে নিশার সাথে কথা বলতে থাকা ছেলে গুলো বাড়তি ফুল গুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। আচমকাই এখানে নীল কে দেখে নিশা চমকে যায়।
- উফফ ! তুমি? আমি তো জোর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমায় না ডেকে পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?
- পিছনে দাঁড়াই নি নিশা। আমি এই জাস্ট এলাম। তুমি এদিকে হটাৎ ঘুরলে তাই তোমার ঐরকম মনে হলো।
- কক ব্যাপার নিশা? সকাল সকাল আমায় না বলেই উঠে পড়েছ। বাড়ি ,ঘর, সুন্দর ভাবে ডেকোরেটর দিয়ে সাজিয়েছ ব্যাপার কি ? আমায় পর্যন্ত বলো নি। আজ তো আমাদের বিবাহ বার্ষিকী, কিংবা তোমার বা আমার কিংবা মায়ের জন্মদিন নয়। তাহলে এতকিছু আয়োজন কিসের জন্য?
নীলের দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে নিশা বললো বলব। তবে একটু পড়ে। আগে রুমে যাই চলো। বেশ ক্লান্ত লাগছে।
- সে তো তোমার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আগে শরীর বুঝলে নিশা, তার পর অন্যসব। চলো এখন রুমে চলো। এই অবস্থায় কেন যে এত ঝক্কি নিচ্ছ জানি না। মা তোমায় ঠিক ই বলে তুমি একটা পাগল।
- আচ্ছা, বেশ।
নিশা আর নীল গল্প করতে করতে রুমের দিকে এগুলো।।
চলবে....
ছবি : সংগৃহিত
0 মন্তব্যসমূহ