নীরবে ভালোবাসি পর্ব - ১৭

love silently part 17


আগের পর্ব পড়ুন 

নীরবে ভালোবাসি পর্ব - ১৭

- কি সুন্দর জ্যোতির ময় এর মেয়েটা কে দেখতে হয়েছিল। ঠিক যেন সত্যিকারের একটা পুতুল। মাথা ভর্তি চুল, গায়ের রং টা একেবারে টুকটুকে ফর্সা। তাই না গো? তোমার মনে পড়ে আশা বৌদির কথা? 

- মনে আবার পড়বে না? আশা যে  শুধু দুর্গা কাকিমার বৌমা হিসাবে আমার কেবল সম্পর্কে জা ছিল তা নয়। আমরা দুজন - দুজনের খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম। শুভ্র তো আশার মেয়েটার থেকে মাত্র তিন মাসের বড় ছিল। আদর করে ওর ঠামমি মানে দুর্গা কাকিমা বাচ্ছাটার নাম রেখেছিল তরী। 

একটা আলগা নিঃশাস ছেড়ে রেণুকা দেবী বললেন, আমরা দুই জা এ মিলে ঠিক করেছিলাম বুঝলে বড়ো হলে আমার শুভ্র র সাথে তরীর বিয়ে দেব। 

বিয়ের কথা শোনা মাত্রই শুভ্র ভয়ানক কাশতে শুরু করে দিলো। মুখের ভিতরে চালান করা একটুকরো রুটির সাথে ঘুগনির দানা গুলো যেন গলার কাছে আটকে এলো। সঙ্গে সঙ্গে জল খেলেও চোখ লাল হয়ে জল পড়লো দু ফোটা।

কোনো ক্রমে নিজেকে সামলে নিলো শুভ্র।পাশ থেকে বিকাশ রঞ্জন বাবু ঠোঁট এলিয়ে রেণুকা দেবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার তরী বৌমা ই এখন তোমার ছেলের কথা ভাবছে হয়তো দেখো। নাহলে আর খেতে বসে এই বিপত্তি ঘটে। 

রেণুকা দেবী মুখে কিছু না বলে চোখের ইশারায় শুভ্রর চোখ কে ফাঁকি দিয়ে বিকাশরঞ্জন বাবুকে আলগা ধমক দিলেন। তিনি আবার মুখ নিচু করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। শুভ্রর মনে গেঁথে বসলো তরী নামটি। 


আজ সারা সন্ধে শুধু শ্রেয়া বালিশে মুখ গুজে শুভ্রর কথা ভেবেছে। এই প্রথম ওর মনে কোনো ছেলেকে নিয়ে এতটা আবেগ তৈরি হলো। আগে কখনো শুভ্র কে নিয়ে ও এইসব মাথা তেও আনে নি। ইনফ্যাক্ট কিছুদিন আগেও যখন শুভ্র কে নিয়ে ওর বন্ধুরা ওকে খেপাত ওর খুব রাগ হত। মাঝে মাঝে একা থাকার সময় ব্যাপারটা মনে পড়লে খুব কান্নাও পেত। কান্নার কারণ টা অবশ্যই শ্রী। শ্রেয়া মনে করতো আর বন্ধুরা যা বলে বলুক কিন্তু শ্রী ও তাকে রাগিয়ে বেশ আনন্দ পায় এটা মনে পড়ললেই মনটা বড় অশান্ত হয়ে যেত। মাঝে মাঝে শুভ্র র বদলে ওর বন্ধুদের ওপরই ওর বেশি রাগ হত। কারণ শুভ্র খুবই সাধারণ কথা বার্তা তার সাথে বলতো। যদিও সেটা যেচে। কখনো অংকের ব্যাপার এ,  কখনো কোনো ইম্পরট্যান্ট নোটস এর গ্যাপ জায়গা টা ফিল আপ করার জন্য ওর থেকে খাতা চাইতো। এতেই সবাই শুভ্র আর শ্রেয়া কে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা শুরু করে দিত। খাতা চাইলেই শ্রী পাশ থেকে শ্রেয়া কে ফিসফিস করে বলতো দেখবি আজ খাতা নিয়ে যাচ্ছে তো , কাল হয়ত খাতার পিছন পাতায় শুভ্রর লেখা প্রেম পত্র পাবি। দেখ তোর থেকে খাতা নেওয়ার সময় তোর পাগল প্রেমিক আমার দিকে কেমন বোকা বোকা ভাবে তাকাছে।  যেন মনে হয় ও আমার থেকে হেল্প  চায়। শ্রেয়া চিমটি কেটে শ্রী এর মুখ টা বন্ধ করার চেষ্টা করতো। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ হত। শুভ্র খাতা নিয়ে চলে যাওয়ার পরই শ্রী বলতো যাই বলিস শ্রেয়া , শুভ্র মানে আমার জিজু কে কিন্তু খাস দেখতে। লম্বা, ফর্সা চেহারা।মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল, ফর্সা মুখের সাথে ম্যাচ করা কালো দুটো চোখ, জোড়া ভ্রু, গোলাপি ঠোঁট সব মিলিয়ে জাস্ট অসাম। তাছাড়া শুভ্র র ড্রেসিং সেসন্স ও খুব ভালো। আমার তো মোটের ওপর বেশ ভালোই লাগে। তাহলে তুই ই তো প্রেম করতে পারিস। শ্রেয়ার কথায় খানিক হেসে শ্রী বলতো আরে, পাগলা, আমার মতো অংকে অগা নম্বর পাওয়া মেয়ের ধারে কাছে ঘেঁষতে চায় না শুভ্র , বুঝলি। নাহলে তো ওআমার থেকেও খাতা নিতে পারতো। তোর থেকে নেওয়ার কোনো দরকার ছিল কি? তুই পড়াশোনায় ভালো, দেখতে ভালো তাই তোর প্রেমেই ওর মজেছে মন। 

আজ শ্রী এর ইয়ার্কি গুলো একাকী ঘরে মনে পড়ে বেশ লজ্জিত হল শ্রেয়া। সত্যিই শুভ্র কে সে অতটা গভীর ভাবে লক্ষ্য করে নি আগে। শুভ্রর সম্পর্কে  বলা  শ্রী এর বর্ণনা গুলো মনে পড়ায় শ্রেয়া নতুন করে দু চোখ বুজে শুভ্রকে দেখার চেষ্টা করলো। সত্যিই শুভ্র ওতোটাই সুন্দর যতটা শ্রী বর্ণনা করেছে। দু চোখ বুজলেই এখন শুভ্রর গভীর উপস্থিতি শ্রেয়া ভীষণ ভাবে টের পাচ্ছে। আবেগে, উৎকণ্ঠায় ও বার বার চোখ বুঝছে আর মুহূর্তের মধ্যেই শুভ্র র অবয়ব ওর চোখের সামনে ফুটে উঠছে। শ্রেয়া অন্ধকার ঘরে নিজের অজান্তেই হেসে উঠছে। শ্রেয়া এবার বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে নেমে আয়নার সামনে এলো। এলোমেলো চুল গুলো আলগা খোঁপা করলো। আয়নায় সেটে রাখা লাল টিপটা তুলে নিয়ে নিজের ভ্রু জোড়ার মাঝে বসালো। আয়নার সামনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চুড়ি গুলো তুলে নিয়ে হাতে পড়লো। চুরিদারের ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টানলো। তৎক্ষণাৎ সামনের কয়েকটা চুল এলোমেলো ভাবে ওর কপাল স্পশ করে ঠোঁটে আলগা ভাবে এসে লাগলো। লাজে রাঙা  নিজের চোখ দুটির দিকে শ্রেয়া অপলক দৃষ্টি তে আয়নায় দেখতে থাকলো । মুখ থেকে অসস্পট কয়েকটা শব্দ বেরিয়ে এলো - আমি প্রেমে পড়েছি। হ্যা, শুভ্র আমি তোর  প্রেমে পড়েছি। আমি তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।   শ্রেয়ার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসা কথা গুলোয় শ্রেয়া নিজেই এবার খুব ভয় পেয়ে গেল। এই রে, মা শুনে ফেললো না তো? এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য শ্রেয়া পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে গেল এমনই সময়,

- কিরে তোর ঘুম হলো? আমার রান্না হয়ে গেছে । খেয়ে নিবি চল। এখন এতক্ষন অবধি ঘুমলি এবার আর রাতে ঘুম হবে তোর?

- তুমি চলো। খাবার বারো। আমি আসছি। 

- এ কি ? রাত- দুপুরে গোছা গোছা চুড়ি কেন পরে বসে আছিস? 

কিছু ভেবে না পেয়ে আমতা আমতা করে শ্রেয়া জবাব দিলো এমনি।

- এমনি মানে? এই বললি ঘুমবি, আবার এখন এইসব টিপ পরে, চুড়ি পরে তোর ব্যাপার টা কি বলতো? 

- ও কিছু নয় মা। শ্রী একটু আগে ফোন করে বলছিল ওর কাল কোথায় বিয়ে বাড়ি আছে আমার চুড়ি গুলো চাইছিল। আমি পরে একটু দেখছিলাম এগুলো আমার হাতে আর হয় কিনা। 

- তা আবার হবে না। যা চেহারা করে রেখেছো কচি বেলাকার চুড়ি গুলোও হয়ে যাবে। ঠিক আছে খাবি আয়।এই বলে আশা দেবী বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, আবার ঘুরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন টিপ টা কেন এই অসময়ে কপালে শুনি?

- বা রে... টিপ গুলো একটা করে পড়বে আর আয়নায় লাগিয়ে রাখবে ওটা নষ্ট হয়ে যাবে না টিপের আঠা লেগে। চুড়ি নেওয়ার সময় দেখতে পেলাম। তাই একবার পড়লাম।

চলবে...

পরের পর্ব পড়ুন

ছবি : সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ