নীরবে ভালোবাসি পর্ব ১৩
অবস্থা পন্ন বাড়ি থেকে সন্মন্ধ আসায় মা, বাবার মনে একটুও যে অস্বস্তির সঞ্চার হয় নি তা নয়। পাত্র পক্ষের কাছেই মা সেদিন স্পষ্টই বলেন, দেখুন আপনাদের আমার মেয়েকে অর্থাৎ আশা কে পছন্দ হয়েছে। এটা তো আমাদের কাছে খুব সৌভাগ্যের কথা। কিন্তু আমাদের পরিবারিক অবস্হা তো দেখে বুঝতেই পারছেন, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে চলে যাচ্ছে। তার ওপর খাওয়া - দাওয়া যেমন তেমন, আমার স্বামী সুগারের পেশেন্ট। ওনার ডাক্তার খরচ, ওষুধ খরচেই অনেক গুলো টাকা শেষ হয়ে যায়। আমরা কিন্তু দেন-পাওনা বিশেষ দিতে পারব না। ললিতা কাকিমা তৎক্ষণাৎ মা কে আস্বস্ত করে বলেন, তুমি ওতো উতলা হয়ো না আশার মা। দুর্গাবলা দেবীকে আমি তোমাদের অবস্হা সম্পর্কে বলেকয়েই নিয়ে এসেছি। উনি তো বলেইছেন পাত্রী পছন্দ হলেই হলো। টাকা- পয়সা, আসবাবপত্র এসবের কোনো প্রয়োজন নেই, ঠিক বললাম না? এই বলে ললিতা কাকিমা একগাল হেসে পাত্র পক্ষের দিকে উৎসুক হয়ে তাকালেন।
- হ্যা, সে তো আমি ললিতা কে বলেই ছিলাম, পাত্রী পছন্দ হলে আমি আমার নিজের গহনা দিয়ে তাকে সাজিয়ে দেব। আমার কোনো কিছুই দরকার নেই। ভগবানের আশীর্বাদে আমার কোনো কিছুরই অভাব নেই। আমার ছেলে, জ্যোতির্ময় এর বাবা আজ স্বর্গীয়। উনি আজ বেঁচে থাকলে আশা কে দেখে নিশ্চই পছন্দ করতেন। এই বলে উনি আঁচলে চোখ মুছলেন।
আমার মা অতি উৎসাহে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে আপনার ছেলে কী করে?
মায়ের এরূপ প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয়ে আমার শাশুড়ি মা ললিতা কাকিমার দিকে তাকালেন। যেন মুখের ভাব খানা এমন , - এটা হয়তো তিনি নিজে বলতে ইচ্ছুক নন। তাই ললিতাকে আগেই বলে রেখেছিলেন সে কেন আগে পাত্রী পক্ষ কে এই প্রশ্ন সম্পর্কে বিশদ এ জানিয়ে রাখে নি তাই ঈষৎ রাগান্বিত হয়ে ললিতার পানে চেয়ে রইলেন।
ললিতা কাকিমা একবার কাস্ট হাসি হেসে হাত কচলিয়ে মা কে বলল, আসলে কি বলো তো আশার মা, দুর্গাবালা দেবীর অনেক পৈত্রিক সম্পত্তি। ৫০ বিঘা জমি, বাঁশ বাগান, চারটে পুকুর। এই সব আয় থেকেই ওনাদের খুব ভালো ভাবে চলে যায়।
মুখে একরাশ বিস্ময় এর ঘোর নিয়ে মা জিজ্ঞাসা করেন শাশুরিমা কে একটা কথা জানতে চাইব দিদি ভাই আপনি যদি মনে কিছু না করেন।
- চেয়ারে খানিকটা নড়েচড়ে শাশুড়ি মা অমায়িক ভাবেই বললেন, হ্যা বলুন
- বলছি আমি তো ললিতার মুখে শুনেছিলাম , আপনার স্বামীর নাকি কলকাতায় বিশাল বড় ব্যবসা ছিল। তা উনি গত হওয়ার পর অপনার ছেলে ওই ব্যবসা টা আর দেখে না বুঝি?
- না, উনি যখন কলকাতায় ব্যবসা করতেন , তখন আমরা ওখানেই থাকতাম। উনি হঠাৎই আজ থেকে পাঁচ বছর আগে হার্ট আটক করে মারা যান। তারপর আমরা কলকাতার ওই বাড়ি বিক্রয় করে দিয়ে, আর কারখানার কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়ে, আমার বাপের বাড়ির এলাকায় জমি জায়গা কিনে এখানেই বসতি শুরু করি। আর কলকাতার বাকি কারখানা টুকুর দায়িত্ব আমি আমার এই ভাই টাকে দিয়েছি। কারণ আমার পক্ষে ওইসব দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব।
- তা তো ঠিক ই। পুরুষ মানুষের মতো একটা মেয়ে মানুষ কারখানা চালাতে পারবে তা ভালোই করেছেন।
- তবে, ঈশ্বরের আশীর্বাদে যা জমি- জায়গা আছে আমার, আপনার মেয়ে আমার বাড়ি গেলে হলফ করে বলতে পারি অপনার মেয়ের কোনো অভাব হবে না।
- কিন্তু আপনার ছেলে কি তাহলে ঐ জমি ই দেখা শোনা করে?
- ঠিক তা নয়।
- ও ওকালতি নিয়ে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু ও এখন একটু অসুস্হ। তাই ওকে কোনো কাজ কর্মে সাথে ব্যস্ত রাখতে চাই না। বাড়ি তেই থাকে।
- অসুস্হ মানে?- চোখ বিস্ফারিত করে মা, একবার ললিতা কাকিমার দিকে, আর এক বার আমার শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকালেন। আমি এতক্ষন এই সব কথোপকথন ঘর থেকে কান খাড়া করে বিছানায় বসে শুনছিলাম। শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার আড়ালে দাঁড়ালাম। ললিতা কাকিমা সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর একটু উঁচিয়ে হাসি জড়ানো কণ্ঠে বললো, তেমন কিছু গুরুতর রোগ নয় গো দিদি। ছেলে কী না ওকালতি নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তাই বিস্তর বই নিয়ে দিন- রাত থাকে। তাই একটু মাথার গন্ডগোল....
কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার শাশুড়ি মা ললিতা কাকিমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি তে তাকালেন,
- না, মানে এই একটু মানসিক সমস্যা আর কি। আঁচলের খুট কচলিয়ে আমার শাশুড়ি মা কে আস্বস্ত করার জন্য বললো ললিতা কাকিমা।
- মা, এর মনটা বিষাদে ভোরে গেল। বাবা বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তার ওপর তিনি ছিলেন অসুস্থ। অযথা মানসিক চাপ আরোপ করাও ছিল নিষেধ। তাই সমস্ত দায়- দায়িত্ব মা কেই নিতে হত। বাবা শেষের দিকটায় কাজেই বেরোতে পারেন নি। যে হোক করে জমানো টাকায় মা যে কি ভাবে যে সংসার চালাতেন মা ই জানেন, আর ভগবান ই জানেন। তোর দিদা সাক্ষাৎ অন্ন পূর্ণা রে।
- মা, সে তুমিও যে কি কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছ তা কি আমি দেখতে পাচ্ছি না বলো? আমার খুব কষ্টও হয়, আবার খুব ভয় ও করে, জানো তো?
- ভয়ের কি আছে? এই তো আর মাত্র কয়েকটা বছর। তারপর তুই একটা কিছু চাকরি পেলেই আমার ছুটি।
- সে তো এখনো ঢের দেরি মা
- দাঁড়া, দাঁড়া চাকরি পাওয়ার পর তোর একটা উপযুক্ত পাত্র ও যে আমায় খুঁজতে হবে ছুটি বললেই তো আর ছুটি নয়। আশা দেবী মুচকি হেসে শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
- ধুর, তুমি না সব সময় অবাস্তব কথা বার্তা য় চলে যাও। তারপরের ঘটনাটা বলো। আমি আজ ই পুরো টা শুনতে চাই।
আশা দেবী গম্ভীর হয়ে বললেন, এরপরের কাহিনী এখন নাই বা শুনলি অন্য একদিন বলবো পরে। এখন বলতে গেলে রাত হয়ে যাবে আমার রান্না করাই হবে না।
- নাই হোক মা। একদিন আলু সিদ্ধ মুড়ি খেলে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
- আজ কে কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু শ্রেয়া। হাত টা ছাড়।
- না ছাড়বো না । একবার যখন বলতে শুরু করেছিলে মাঝ পথে থেমে গেলে কেন?
- ওসব ঘটনা মনে পড়লে আমার খুব কষ্ট হয় ভালো লাগে না। কেন তবে বার বার শুনতে চাস অভিমানি গলায় বললেন আশা দেবী।
আলতো ভাবে মায়ের হাতে আবার হাত রেখে চোখে চোখ রেখে শ্রেয়া বললো, যাতে তোমার কষ্টটা একটু লাঘব হয় আর আমার কৌতূহল টা একটু মেটে। আচ্ছা, মা, দিদুন তো আমায় প্রায়ই ফোন করে বলেন, ওখানে যেতে তোমায় নিয়ে আসতে তুমি যেতে চাও না কেন? এখানে এত গুলো টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকার কোনো মানে আছে তুমি বলো? তাছাড়া মামার বাড়িটা সেকেলে হলেও বেশ বড়। জায়গা ঠিকই হয়ে যেত। ছোট মামাও তো কত বার করে আস্তে বলে। তুমি সেই একই গো ধরে রেখেছ। ভাঙবে তবু মোচকাবে না।
- মেয়েদের বিয়ের পর বাপের বাড়িতে থাকা শোভা পায় না রে, তাই ও সব ভেবে লাভ নেই। এত গুলো বছর তোকে নিয়ে যখন একাই লড়তে পেরেছি। বাকি টুকুও নিশ্চই পারবো। তাছাড়া তুই তো যখন ছোট ছিলিস ওই সময় টা বেশি পরিশ্রম করতে হত আমায়। এখন তো বড় হয়ে গেছিস। আমায় তো তুই নিজেই কত হেল্প করিস। আমার কোনো অসুবিধা হয় না।
- মেয়েদের বাপের থাকা শোভা পায় না এ কথা তোমায় কে বলল ? যত সব আজে বাজে কথা। কত ডিভোর্সি মেয়েরা বাপের বাড়ি থেকে রোজগার করছে। আমি জানি তুমি অন্য কোনো কারণে ও বাড়ি যাও না।
আশা দেবী উত্তেজিত হয়ে বললেন, হ্যাঁ কি কারণে যাই না বল।
- আসল কারণ টা তো আমি জানি না। তবে নিশ্চই একটা ঘোরতর কারণ আছে এটা নিশ্চিত।
- সে সব কারণ তোকে বলা যাবে না।
- কেন?
- বড় হ। পরে পরে সব জানতে পারবি। আমায় আর এখন বকাস না।
- এই তো একটু আগে নিজে মুখে বললে আমি বড় হয়ে গেছি। প্লিজ আজই আমি সব শুনতে চাই । প্লিজ বলো।
চলবে ...
ছবি : সংগৃহিত

1 মন্তব্যসমূহ
305E59A07C
উত্তরমুছুনGörüntülü Sex
Görüntülü Sex
Görüntülü Show Uygulamaları