প্রতারক

fraud cheater fraud


প্রতারক


"রিচা, আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ করে দেওয়া উচিত'- নদীর পাড়ে বসে উদাসীন, নির্বিকার চিত্তে অকপটে কথা গুলো বললো অয়ন। না, এত বড় কথাটা বলতে তার ওষ্ঠ যুগল একটুও কম্পিত হলো না। অয়নের মুখমণ্ডলেও কোনো কষ্টের লেশমাত্রও পরিলক্ষিত করতে পারলো না রিচা। এইরূপ ভাবলেশহীন অয়নকে দেখে রিচার মনে একটা শীতল হওয়া বয়ে গেল। তাহলে কি এত তাড়াতাড়িই আমি হেরে যাব?মনে মনে সে ভাবলো। কিন্তু রিচা ওরফে কাঁকন ওরফে রিজিয়া তো কোনোদিন ও কোনো কেসে হারে নি। তাহলে এইবারটা কি তার অভিনয়ের কোনো খামতি থেকে যাচ্ছে! মুহূর্তেই নিজস্ব ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিজের মধ্যে একটু কনফিডেন্স এনে ঠোটের কোণে একচিলতে হাসির রেশ টেনে অয়নের হাতখানি নিজের করতলের মধ্যে আবদ্ধ করে বললো - তোমার কিসের এত চিন্তা অয়ন? তোমার তো চাকরি- বাকরি না করলেও চলবে। তোমার বাবার তো বিশাল বড় ব্যবসা। তুমি সেখানেই সময় দাও। ফালতু  দু-পয়সার চাকরির জন্য রাত-দিন এক করে মুখ গুজে বইয়ের মধ্যে পড়ে থাকার কি দরকার? বাবার ব্যবসার হাল ধরলেই তো তোমার লাইফ সেটেল ড হয়ে যাবে। তখন অনায়াসেই আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে পারবো। রিচার গলা থেকে ধেয়ে আসা 'বিয়ে' নামক একটি পরিপূর্ণ সম্পর্কের কথা অয়নের কানে বেঁধা মাত্রই সে মুখ নিচু করে একটু আপন মনে হাসলো।

খানিকটা তাচ্ছিল্য র স্বরে অয়ন বললো তোমার মত মেয়েরা বইয়ের মর্ম  যেমন বুঝবে না তেমনই বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্কের বন্ধন এর সারমর্মও বুঝবে না।

অয়নের কথায় রিচা চমকে উঠলো। এলোমেলো চুলের আড়ালে নিজের ভয়ার্থ মুখটাকে ক্ষীণ সময়ের জন্য অন্তরালে রাখার চেষ্টা করলো। তারপর একগাল অভিমানের সুর টেনে ঠোঁট বেকিয়ে বললো - তুমি কিন্তু আজ আমায় খুব হার্ট করছো অয়ন। বোধ হয় তোমার মুড টা আজ ঠিক নেই। ডোন্ট- ওরী! চলো আমরা সামনেই ওই রেস্টুরেন্টটায় একটু বসি। দেখবে এক- কাপ কফি খেলেই দিল খুশ হয়ে যাবে। অনেক কাপল রাই এখানে আসে। মন দেওয়া নেয়া পর্ব চালায়।

- তুমিও বুঝি কখনো ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোনো পুরুষের মন চুরি করেছিলে? 

আমতা আমতা করে রিচা বললো তা কেন? আমার বন্ধুরা এখানে আসে মাঝে মাঝে। তাদের থেকেই শুনেছি। তুমি কি ওতো ফোন এ টাইপিং করছো বলো তো? আজ দেখছি আমার ওপর তোমার কোনো মন ই নেই। 

-আজ মামারা আসবে তো তাই মনটা একটু সেদিকেই বেশি ঝুকে আছে।

-ওহ! রিয়েলি! তাঁরাও নিশ্চই তোমার বাবার মতো রিচ ম্যান? 

রিচার কথা শেষ হতে না হতেই...

- আপনি ই মিস্টার অয়ন বিশ্বাস?

- হ্যাঁ, স্যার। আমিই আপনাদের ম্যাসেজ করে এখানে আসতে বলেছিলাম। আমার সামনে যে মহিলাটি বসে আছে উনি একজন প্রতারক। ওনাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার আর্জি জানাচ্ছি।

রিচার চোখে- মুখে তখন চতুরতার ছাপ স্পষ্ট। সে যেভাবেই হোক তখন পালানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। চোখের চাওনি ক্রমাগত উলটো দিকের টেবিলে উপবেশন করা পুরুষটির দিকে ধাবিত হচ্ছে। 

- মিস্টার বিশ্বাস, এইভাবে বিনা প্রমানে তো আমরা কাওকে গ্রেফতার করতে পারিনা। আপনার কাছে কি কোনো জোরালো প্রমান আছে? 

দু- পক্ষের কথা বলার ব্যস্ততায় রিচা অকস্মাৎ টেবিল থেকে উঠে রেস্টুরেন্টের বাইরের দিকে ছুটে উদ্ধত হলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।

- আমায় এইভাবে হেনস্থা কেন করছেন? আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমান করতে পেরেছেন কি? 

- তা ঠিকই বলেছেন। কিন্তু অভিযোগ যখন এসেছে আমরা অবশ্যই প্রমান দেখে তবেই গ্রেফতার করবো। তার আগেই যে  আপনি অপরাধীর মতো সরে পড়ছিলেন। আপনার এইরূপ ব্যবহারেই বেশ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তাছাড়া আপনাকে এতক্ষনে আমি চিনতে ও পেরেছি বোধ হয়। 

তাদের কথা কাটা কাটিতে উল্টোদিকের টেবিলে  বসে থাকা  পুরুষ টি ততক্ষনে চম্পট দিয়েছে। 

-স্যার, দীর্ঘ ছয় মাস যাবৎ রিচার সাথে আমার প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল।ফেসবুক এর মারফত ই আলাপ হয়। ওর ফেসবুক প্রোফাইলে থাকা বার্থ ডে ডেট টাই আমার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। 

গত সপ্তাহের রবিবার ছিল   ফেসবুক তথ্য অনুযায়ী  রিচার বার্থ ডে। সেই উপলক্ষে ওকে সারপ্রাইস দিতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওকে না জানিয়েই ওর বাড়ির সামনে গিফট নিয়ে হাজির হব। তারপর ওকে ফোন করে ডেকে গিফট দিয়ে বার্থ ডে উইশ করবো।কিন্তু ওর বলা ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই নামে কেউ সেখানে থাকে না। কিন্তু এব্যপারে কোনো আলোচনাই ওর সঙ্গে আর করি নি। পরে ওইদিনই ওকে বার্থ ডে উইশ করলেও ও বেশ ঘাবড়ে যায়।

মানে ফেসবুকে দেওয়া ওর বার্থ ডে ডেট টাও ছিল ভুল। এরপর থেকে আমি ওকে নজরে রাখার চেষ্টা করি। খেয়াল করি ও দেখা করতে এলেও ওর আশেপাশে একজন পুরুষ থাকে। সেটা আমি যে খেয়াল করেছি ওকে বুঝতে দি ই নি। আজ ও সেই লোকটি এখানে উপস্থিত ছিল। আমাদের একটু গাফিলতির কারণে সে পালিয়েছে। তাছাড়া আমার বলতে দ্বিধা নেই এই কয়েকমাসে আমি ওকে অনেক কিছু দামি গিফট ও দিয়েছি ওর আবদার রাখতে। এমনকি সোনার চেন ও। আসলে আমার বাবা একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তাই হয়ত আমায় টার্গেট করেছিল। আর আমি আর রিচা যখন এখনে বসে কফি খাচ্ছিলাম তখন আমার একটা মোবাইল বুক পকেটে ছিল । ফোনের ক্যামেরা র অংশটা বুক পকেট থেকে খানিক টা বের হয়েছিল। এই দেখুন স্যার  ভিডিওটি তে  রিচা বারবার উল্টোদিকের চেয়ারে বসা ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে। আর ওই পুরুষটি কি সব ইশারা ইঙ্গিত করছে। আমার মনে হচ্ছে রিচা একজন ফ্লট। ওদের হয়তো প্ল্যান ছিল আমায় কিডন্যাপ করে আমার বাবার থেকে অর্থ্ আদায় করা।ওকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।

অনেক  ধন্য বাদ অয়ন। রিচা কে আমি প্রথম দেখা তেই ঠিকই  চিনেছি। কারণ ওর মুখের স্কেচ তো আমাদের থানায় আমি বহুবার দেখেছি। এই রিচা কখনো কাঁকন, কখনো রিজিয়া নাম ভাড়িয়ে অনেক বড়লোকের ছেলেদের থেকে টাকা, গয়না হাতিয়েছে। সম্প্রতি একটা সোনার দোকান লুঠের সাথেও এই মহিলার নাম জড়িত। খুব সম্ভবত পলাতক পুরুষ টি ওনার স্বামী।

- কি মিসেস রিচা আমি কি কিছু ভুল বললাম।

রিচা কিছু না বলে অবনত মস্তকে সম্মতি সূচক ইশারায় জানাল পুলিশ অফিসারের অনুমান নির্ভুল। এবং  নির্দ্বিধায় পুলিশ ভ্যানে চেপে বসলো। 

অয়নও একবার রিচার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বাইক স্টার্ট দিলো বাড়ির উদ্যেশে রওনা আর জন্য।

সমাপ্ত

ছবি : সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ