তরুণ : তুমি পারবে তোমার বাবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে ?
কনিকা : কি বলছ কি তুমি? পাগল হয়ে গেলে নাকি?
তরুণ : যা বলছি ঠিকই বলছি। তুমি যদি তোমাদের কোম্পানির অর্ধেক অংশ , মানে যেটা তোমার নামে করা আছে --সেটা যদি আমার নামে ট্রানস্ফার করে দাও, তাহলে আমি আবার উঠে দাঁড়াতে পারবো কণিকা। তুমি আমার জন্য এইটুকু করতে পারবে না কণিকা ?
কনিকা তখন প্রেম সাগরে ডুব দিয়েছে। সাথে তার আগত বাচ্চার উপস্থিতি। নিজের মনে কি যেন একটু ভেবেই সে সেই মুহূর্তেই তরুণের কথায় রাজি হয়ে যায়।
আসলে পুরোটাই ছিল তরুণ ও তার স্ত্রী এর প্ল্যান। প্ল্যান করেই তরুণ তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিত। এবং কম বয়সী কণিকার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকত। এইভাবে দিনের পর দিন সে কণিকার শরীর টাকে ভোগ করত। তরুণের স্ত্রী এই শারীরিক সম্পর্কের কথা জানতো না। সে তার স্ত্রী কে বলেছিল সে শুধু কণিকার সাথে প্রেমের অভিনয় করছে সম্পত্তি হাতানোর জন্য। তরুণের স্ত্রী এর ও এতে ষোল আনা সায় ছিল। আর কনিকাকে দেখানো ডিভোর্স পেপার টা ছিল সম্পূর্ণ জাল।
তরুণের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কণিকার গর্ভবতী হওয়ার খবরটা কানে আসা মাত্রই তরুণের স্ত্রী এর সাথে তার ঝগড়া অশান্তি শুরু হয়েছিল তুমুল। কিন্তু তরুণ আশ্বস্ত করে তার স্ত্রীকে জানায় -- সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পর কণিকার দিকে সে ফিরেও চাইবে না।
যথারীতি কনিকা তরুণের কথামতো তার সম্পত্তির দলিল,দরকারি কাগজপত্র বাড়ি থেকে লুকিয়ে এনে তরুণের সাথে দেখা করে । তরুণ আগে থেকেই উকিল ঠিক করে রেখেছিল। তাই সময়মত সম্পত্তি ট্রান্সফারও হয়ে যায়। এরপর তরুণ কনিকাকে কথা দেয় পরের সপ্তাহে বুধবার তাকে বিয়ে করবে। সেই আশাতেই কনিকা বেশ কয়েকদিন খুশিতে কাটিয়ে দেয়। যদিও সদ্য গর্ভবতী কণিকার শরীর এই সময় টা বড়ই ক্লান্ত ছিল। তবুও ভালো বাসার মানুষটার সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্নে সে ছিল বিভোর।
বুধবার ভোর বেলাতেই কনিকা সামান্য কিছু জামাকাপড়, বেশ কয়েক ভরি গয়না গুছিয়ে পাড়ি দেয় নতুন সংসার করার তাগিদে। তরুণের কথামত হাটতলা মোড়ে পৌঁছে যায় সকাল ছটা নাগাদ। কিন্তু আধ ঘন্টা অপেক্ষা করেও তরুণ না আসায় তাকে ফোন করে কণিকা। ফোনে তরুণ জানায় যে-- সে কাছাকাছিই একটি মন্দিরে আছে । বিয়ের সব আয়োজন হচ্ছে সেখানেই সে ব্যস্ত। সে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে তাতেই যেন কনিকা চলে আসে। কনিকা তখনও বুঝতে পারেনি তার জন্য কি বিপদে ওৎ পেতে আছে। আসলে কনিকা সত্যিকারে ভালোবাসলে ও তরুণ বাবুর বরাবরই প্ল্যান ছিল বিশাল "কণিকা চানাচুর ফ্যাক্টরি " মালিক হওয়ার। তরুণ বাবু গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থার কথা বললে কণিকা তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ জাগে না।
কনিকা বরাবরই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এটা তার ছোট থেকে নিত্য দিনের অভ্যাস ।সকাল ছয়টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে রুমের মধ্যে ত্রিশ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে তবেই নিচে নেমে আসে ব্রেকফাস্টের জন্য। কিন্তু সাড়ে সাতটা বেজে গেলেও সে ব্রেকফাস্ট টেবিলে না হাজির হলে প্রণব বাবুর স্ত্রী নিচ থেকেই প্রথমে কণিকাকে ডাকতে থাকে। প্রণব বাবু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন-- " কোন কলেজে ভর্তি হবে, কি নিয়ে পড়বে এই সব আলোচনাই হয়তো সারারাত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে করেছে তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠতে লেট হচ্ছে।"
কনিকার মা : কিন্তু পরীক্ষার সময় মাঝ রাত অব্দি পড়াশোনা করলেও কিন্তু কণিকা ঠিক সকালে উঠে পড়ত। কিগো শরির টরির খারাপ হলো না তো মেয়েটার? বেশ কয়েকদিন ধরেই অবশ্য লক্ষ্য করছি ওর শরীরটা বেশ দুর্বল। এইতো গত পরশু ওর ফেভারিট চিকেন চাপ, নান রান্না করেছিলাম। খাবার টেবিলে রান্নাগুলো রাখা মাত্রই টেবিল ছেড়ে ওয়াস রুমে চলে গেল বমি করতে। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে বলল ওর নাকি এসব খাবারের গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে।
প্রণব বাবু : কনিকা আমার একরত্তি মেয়ে। এই কয়েক মাসে পরীক্ষার টেনশনে ,পড়াশোনার চাপে ঠিকমত খাওয়া ঘুম কিছু হয়নি মেয়েটার তাই শরীরটা হয়তো বেশ দুর্বল ।তুমি আমায় আগে বলনি কেন? ডক্টর সেন কে তাহলে কল করতাম বাড়ি এসে কণিকাকে চেকআপ করে যেতেন।
কনিকার মা : তা তুমি আজ ই তাহলে একবার ফোন করে আসতে বলে দিও ডাক্তারবাবুকে। দেখিয়ে নেওয়াই ভালো।
প্রণব বাবু : কিন্তু মিনুকে যে দেখছি না সকাল থেকে কোথায় গেল?
( মিনু কনিকা দের বাড়ি দীর্ঘদিন কাজ করে। সেই সূত্রেই এখানেই থাকে।)
কনিকার মা : আমিও ঘুম থেকে উঠে থেকে ওকে দেখতে পাইনি । গত কাল সন্ধ্যেবেলা বাজারের লিস্টি দিয়ে রেখেছিলাম। বলেছিলাম সকাল সকাল আনাজপাতি , মাছ এইসব কিনে আনতে। তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়েছে।
(মুখের কথা শেষ হতে না হতেই খালিহাতে মিনুর প্রবেশ। )
:মিনু : ওমা না না !! আমিতো বাজারে যাইনি এখনও । বাগানে গাছে জল দিচ্ছিলাম। ভোর বেলায় উঠে মাটির সমান করছিলাম সেই সময় তো দেখলাম কনিকা দিদি ভোরবেলা উঠে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করতেই কনি দিদি বলল কলেজের কি জানি বাবু কি ফরম বেরোবে। সেটাই তুলতে যাচ্ছে বন্ধুদের সাথে। সেখানে নাকি অনেক ভিড় লাইন দিতে হয় । তাই ভোর বেলায় যাচ্ছে। এইটুকু বলেই তো হন হন করে তাড়াতাড়ি কনি দিদি গেট খুলে চলে গেল।
চলবে....
( বন্ধুরা গল্পটি পড়তে কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট বক্স এ জানানোর অনুরোধ করছি। এবং ভালো লাগলে আপনজনদের কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।)
নিচে ফলো অপশন এ গিয়ে আমায় ফলো করবেন।
1 মন্তব্যসমূহ
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক টা দেবে।
উত্তরমুছুন