মিনুর কথা শুনে প্রণব বাবু ও কণিকার মা রীতিমতো হা হয়ে একে অপরের দিকে চেয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ।
মিনু : তোমরা একে অন্যের দিকে ওইভাবে চেয়ে আছ কেন? কনি দিদি তো যাওয়ার সময় বলে গেল মা-বাবাকে বলেই যাচ্ছি।
প্রণব বাবু : চলো তো কনিকার রুমে গিয়ে দেখে আসি ।
ওপরে কণিকার রুমে তারা ঢুকে দেখে বইপত্র সবকিছু গুছানোই আছে, বিছানা ভর্তি অগোছালো পরে আছে কনিকার জামাকাপড়। কনিকা নেই। রুমের আলমারি টাও খোলা। অজানা আতঙ্কে কণিকার মায়ের বুকটা কেঁপে উঠলো।
হঠাৎই প্রণব বাবু দেখতে পেলেন কনিকার স্টাডি টেবিলে ভাঁজ করা একটা পেপার। সেটা হাতে নিয়ে পড়তে পড়তেই প্রণব বাবুর সামনে যেন ঘোর অন্ধকার নেমে এলো পেপারে লেখা -- " মা বাপি আমি জানি এই লেখাটা তোমরা যখনি পড়বে খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু কি করবো আমি তো তরুণকে খুব ভালবেসে ফেলেছি । হয়তো তরুণের জায়গায় আমার বয়সী অন্য কারো সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলে তোমরা মেনে নিতে । কিন্তু কী করবো মনের অজান্তেই ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি তরুণকে। তোমরা জানতে পারলে এই সম্পর্ক কোনদিনও মেনে নিতে না। বিশ্বাস করো তোমরা, আমি প্রথম প্রথম এই সম্পর্কে জড়াতে চাইনি । কিন্তু তরুণের সাথে স্কুলে যাতায়াতের সময় ওর সাথে টাইম কাটানো মুহূর্তগুলো আমার খুব ভালো লাগতো। হলেই বা বয়সের বিস্তর ফারাক-- ভালোবাসা যে আর ধর্ম, বয়স কিছুই মানে না। মন যে শুধু আমি একাই দিয়েছিলাম তা কিন্তু নয়। আমার তরুণের প্রতি সুপ্ত ভালোলাগা ভালবাসায় পরিপূর্ণতা পেয়েছিল তরুন যেদিন আমার প্রতি তার ভালোবাসার কথা আমায় জানায়।
দুজনেরই মন যখন দুটি প্রাণ কে চায় তখন তো সেটা অন্যায় নয়। প্রেম তো সবসময় বয়স মেনে চলে না তাই আমার মনে হয় তরুণকে ভালোবেসে আমিও কোন অন্যায় করিনি । হ্যাঁ, আমাদের ভালোবাসার মধ্যে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তরুণ এর স্ত্রী ও ছেলের উপস্থিতি। আমি তরুণ কে বলেছিলাম যে সম্পর্কের মধ্যে কোনো পারস্পরিক মন দেয়া-নেয়া, অন্তরের মিল নেই -- সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভালবাসার পূর্ণতা পেতে গেলে অবশ্যই তরুণের ডিভোর্সের দরকার ছিল। সে দিক থেকে কিন্তু আমি লাকি। আমি কারো সংসারে ভাঙ্গন বাঁধিয়ে নিজের সর্বসুখী হতে চাইনি। ইদানিং তরুণের ব্যবসায় মন্দার জন্যই ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিরাপত্তার অভাব বুঝতে পেরেই তরুণ এর স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেয়। যদি মন থেকে তার স্ত্রী তাকে ভালবাসত তাহলে কখনোই বিপদের সময় তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করত না।
বাপি, মা আমি যেমন ছোট থেকে তোমাদের ভালোবাসি তেমনি-- বয়সন্ধিকালে পৌঁছে যে প্রেম ভালোবাসা আমার হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেছে তাকেও আমি দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি। দিনের পর দিন তোমাদের আড়াল করেই আমার আর তরুণের ভালোবাসা ধীরে ধীরে আরও গভীর হয়। সেই ভালোবাসা অংশ এখন আমার গর্ভে। আমি মা হতে চলেছি ।আমি চাইনা এই সন্তানকে কোনোভাবে হারাতে। পারলে বাপি , মা আমায় ক্ষমা করে দিও।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা গাড়ি এলো। এবং গাড়িতে থাকা দুজন মধ্য বয়স্ক লোক কণিকাকে বলল তাদের তরুণ বাবু পাঠিয়েছে এবং একজন ফোনটা কণিকার দিকে এগিয়ে দিল ফোনটা কণিকা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে -- "হ্যালো কনিকা, এই গাড়িটাই পাঠিয়েছি। ওদের সাথে চলে এসো। ভয় নেই, চিন্তা করো না। ওরা আমার পরিচিত।। তোমায় বিয়ের মন্ডপে নিয়ে যেতে এসেছে ।যদিও বিয়েটা মন্দিরেই হবে। একটু ছোট করে সাজিয়ে সামান্য কিছু আয়োজন করেছি। কনিকা খুশি হয়ে ফোনটা রেখে গাড়িতে উঠে পরল।
পেপারে লেখা কনি কার কথা গুলো পড়ে প্রণব বাবু অসুস্থ বোধ করতে লাগলেন। তাকে কণিকার মা এবং মিনু কোনমতে চেয়ার থেকে তুলে বিছানায় শোয়ালেন ।
সেইসময়ই বাড়ির ল্যান্ড ফোনে ফোন এলো।
কনিকার মা : ( কাঁদতে কাঁদতে) মিনু দেখ তো কে ফোন করেছে।
মিনু : হ্যালো
তরুণ বাবু : আমি তরুণ বাবু বলছি। ফোনটা প্রণব বাবুকে দাও।
কনিকার মা : তোমায় বিশ্বাস করে, আমার মেয়েকে ভরসা করে তোমার সাথে স্কুলে পাঠাতাম , আর তুমি এত বড় সর্বনাশ করলে আমার মেয়েটার সাথে? তোমার লজ্জা করল না? অতটুকু মেয়ের সাথে ..... ছি ছি !!
(হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে প্রণব বাবু বললেন)
প্রণব বাবু : আমার কণিকা কোথায় আছে আগে বলো? তুমি আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করেছ আমি তোমায় ছেড়ে দেবো না । আমি এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নেব না। আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও তরুণ।
তরুণ বাবু : আরে প্রণব বাবু শান্ত হও। পুরোটা বলি শোনো, আমি কণিকাকে কোনদিনও বিয়ে করব না । তোমার মেয়েকে তোমার কাছেই ফেরত পাঠিয়ে দেবো ।শুধু ওর নরম কোমল মনটা নিয়ে কয়েকদিন একটু খেলা করেছিলাম মাত্র। বেচারা কনিকা, আমায় সত্যিকারে ভালবাসতে শুরু করলো। তাই ওর তুলতুলে শরীরটাকে একটু টেস্ট করে দেখলাম।
প্রণব বাবু : জাস্ট স্টপ তরুণ। তুই আমার মেয়েকে ভালোয় ভালোয় ছেড়ে দে বলছি।
তরুণ বাবু : হ্যাঁ ছেড়ে দেবো বলেই তো ফোনটা করলাম তবে জীবিত ফেরত দেবো না মৃত সেটা ডিপেন্ড করছে তোমার উপর।
প্রণব বাবু : কি চাও তুমি বলো? আমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমার একমাত্র সন্তান কণিকার কোন ক্ষতি তুমি করবে না । ওর যা শরীরের অবস্থা ও নিজেই এখন খুব অসুস্থ। ওর সাথে কিছু খারাপ অত্যাচার আর করোনা।
তরুণ বাবু : না না.. একদম নয় ।কনিকা আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ওর কোন ক্ষতি আমি সহজে করবো না ।তবে তুমি কি জানো তোমার বিশাল -- কনিকা চানাচুর ফ্যাক্টরি অর্ধেক অংশ যেটা কণিকার নাম এ ছিল সেটা কনিকা কিছুদিন আগেই আমার নাম এ টান্সফার করে দিয়েছে।
প্রণব বাবু : না আমি... আমি ...এইসব কিছুই জানিনা। তাহলে ফ্যাক্টরি অর্ধেক অংশের মালিক তো তুমি হয়ে ই গেছো আমার কনিকে তুমি ছেড়ে দাও এবার। না হলে প্রতারণা, কিডন্যাপিং এর অভিযোগ নিয়ে আমি থানায় যাবো।
চলবে ....
to be continued...
0 মন্তব্যসমূহ