একটি সাধারণ মেয়ের গপ্প
মেয়ে হয়ে জন্মালেও বেকারত্বের জ্বালা আমাকে পিছু ছারে নি।
যখনই পেতেছি হাত হতাশ হয়েছি বারবার।
না! তা বলে সন্তান স্নেহের অভাব থেকে কখনো বঞ্চিত আমি হয় নি।
খাওয়াতে, পরাতে, অধ্যয়নেও কোনো ত্রুটি তারা রাখেন নি।
অষ্টাদশী ছিলাম তখন। সদ্য কলেজে রেখেছি পা।
ক্লাশমেটদের নিত্য নতুন পোশাক দেখে আমি তো রীতিমতো হা।
বাড়ি ফিরে বায়না ধরতাম, খুব ইচ্ছে হতো মেলে ধরতে নিজেকে ..
ওসব পোশাকে- লাল, হলুদ, নিলে।
বাবা ছিলেন বড্ড সেকেলে। স্টেট কাট বলতেন -
ওসব ব্যভিচারী, বেলেল্লাপনা চলবে না আমার সংসারে।
মায়ের কাছে ফুঁপিয়ে কাঁদতাম যদিও অভাব টা মেটাতে পারতো না সে,
শোনাতো মধ্যবিত্তের বাঁধাধরা কাব্যকথা।
বলতেন শখ, আহ্লাদ থাকতেই পারে।
হাতে গোনা টাকায় তা মেটানো মুখের কথা না।
নিত্যনতুন পোশাকের মোহ, আধুনিক প্রসাধনীর হাতছানি, আর কলেজ যাওয়ার পথে স্ট্রিট ফুডের সমাহার-
আমায় শিখয়েছিলো নিজের খরচ টা নিজেকেই চালিয়ে নিতে।
অগত্যা কলেজ ফিরে পাঁচ সাতটা টিউশন পড়িয়ে মাসের শেষে কয়টা আর টাকা-
তাতে নাকি কিনবো ঝলমলে ড্রেস, আর ফাউন্ডেশন?
সেটা আর শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না।
ফেস ওয়াশ, ক্লিনজার , টোনারে মা-বাবার চিরকালেরই অভক্তি।
"কি হবে এইসব ছাইপাশ মেখে?"-বলতেন ঘরোয়া টোট কায় আছে উজ্জ্বলতার শক্তি।
এসব নাকি ফালতু খরচা।করতো কতই লাঞ্ছনা।
তাই ফেসিয়াল ছাড়াই দেখাশোনায় বসলেই জুটত পাত্রপক্ষের গঞ্জনা।
গরীব ঘরের মেয়ে দেরও ইচ্ছে থাকে, স্বাদ জাগে-
তথাকথিত কাজল, লিপস্টিক ছাড়াও নতুন ছাঁচে নিজেকে সাজাতে।
তার জন্যও তো অর্থ লাগে, সেইটুকু অভাব মেটাতেও,
মেয়ে দের হাটতে হয় স্বাবলম্বী র পথে।
নতুনত্বের আঙ্গিকে এখন যতই চলেছি এগিয়ে-
প্রাইমার, এসেনশিয়াল অয়েল, সিটমাস্ক, সিরাম আরো কত কিছুর মাঝে হারিয়ে ফেলেছি নিজস্বতা কে।
পরিশ্রমের পুঁজি তলিয়ে যাচ্ছে মেকি স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ারের ভীড়ে।
সত্যি ই যেন এগুলোর কোথাও শেষ নেই - একটার পর আর একটা প্রোডাক্ট - যেন তলিয়ে যাচ্ছি আরো গভীরে।
রাস্তার ধারে বসে থাকা খেপি শেফালী কে লাগছে আজ অপরূপ সুন্দর।
কই ওর মুখে নেই তো কোনো ক্রিম। লাল,নীল আইশ্যাডোর নেই কোনো আরম্ভর।
মায়াবী চাওনি, মুক্ত হাসি, এলোমেলো চুল, শ্যামলা হাতে কাঁচের চুড়ি লাগছে ওকে বেশ।
সত্যি ই বাবা ঠিক ই বলতেন দুধ, হলুদেই আছে আসল রূপের সমাবেশ।
মা-এর উপদেশ আজ পরছে মনে "পারু নিয়ম মেনে গরম জলে লেবু মধু টা খেয়ে নিস, তাতেই ফিরবে তোর জৌলুস, থাকবি সদা সতেজ।
গাঁটের কড়ি অনেক খুইয়েছি।অনেক করেছি অপচয়।
এখন পিম্পল, র্যাশএর যদিও বা হয় আমদানি- এবার ঘরোয়া উপায়ে ই করবো তার পরাজয়।

4 মন্তব্যসমূহ
'কবিতার সঙ্গে কিছুক্ষন' এ আপনাকে কবিতা শোনার আমন্ত্রণ রইলো। আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগলো। আপনার কবিতা আমাদের ইউ টিউব চ্যানেলে প্রচারিত করতে পারেন।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ,আমার অন্য পোস্ট গুলি দেখার অনুরোধ রইলো।
মুছুনHii v nice
উত্তরমুছুনধন্যবাদ,আমার অন্য পোস্ট গুলি দেখার অনুরোধ রইলো।
মুছুন