মোহের মায়াজালে


moher mayajale মোহের মায়াজালে

মোহের মায়াজালে

আমাদের পাড়ার পুলক কাকু,  বয়স বছর চল্লিশের আশেপাশে হবে। তা মানুষটি এককথায় বেজায় কৃপণ। তবে অর্থ, সম্পত্তি যে কোনো অংশে কম ছিল তা নয়। পুলক কাকুর বাবা ছিলেন সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মচারী। নিজের মামার বাড়ির কিছু সম্পত্তিও পুলক কাকু পেয়েছিলেন। বাবা, মা মারা যাওয়ার আগেই একমাত্র সন্তান পুলকের বিয়ে টা সেরে দিতে চেয়েছিলেন। দুঃখবশত সেটা আর হয়ে ওঠে নি। ডায়াবেটিসে কাবু হয়ে পুলক কাকুর বাবা মারা যাওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই হঠাৎই স্টোক হয়ে তাঁর মাও চলে যান। 
এমনিই অবস্থায়, পুলক কাকুর একলা সংসারে একজন ঘরোয়া বউ এর খুবই দরকার হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত পুলককাকুও একটি নামি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরীরত। স্বভাবতই ঘটক ধরে বেশ কয়েকটা দেখাশুনা ও আসে।  কিন্তু পাত্রী পক্ষকে প্রতিবার উনি নকুলদানা দিয়ে মিষ্টিমুখ আর শেষে র-চা আর মুড়ি সহযোগে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন। সুতরাং এমন ঘরে বা পাত্রের সাথে কোনো পক্ষই মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হতেন না।
 কিন্তু মানুষের ভাগ্যের চাকা কখন যে বদলায় কেউ কি বলতে পারে। তেমনই পুলক কাকুর জীবনেও সকল নিরাশার আলোয় জল ঢেলে প্রেম এলো এক সময়। সেই ঘটনাটাই বলতে চলেছি আজকে। পুলক কাকু নাকি প্রেমে পড়েছে এই কথা টি আমাদের মতো সদ্য কলেজ পাস করা ছেলে দের কানে আসতে বেশি দিন সময় লাগে নি। আজকে সাতসকালে রবি হটাৎ ফোন করে বললো "আমাদের পাঁচ মাথার মোড়ে সিনেমার শুটিং চলছে। দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি আয়।" ঘুম চোখে পড়িমরি করে যাহোক করে ফুলপ্যান্টটা পরে, জামাটা পরতে পরতে সাইকেলটা  বার করেই দিলাম দৌড়। 
যেতে যেতে ভাবলাম আমাদের মতো মফস্বল এলাকায় আবার শুটিং! কোন পরিচালকের এমন মতিভ্রম হলো। যাক গে কোনোদিন ও তো এত কাছ থেকে শুটিং দেখি নি । আজ ভাগ্যে জুটবে। 
মোড়ের সামনে টায় এসে পৌঁছাতেই রবির সাথে দেখা হয়ে গেল। আর দেখলাম পাঁচ মাথার মোড় টায় সত্যি ই অনেক জটলা, হৈ-হুল্লোর হচ্ছে। রবিকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে ভিড় ঠেলে দেখলাম- 
পুলক কাকু শুধু একখানা গামছা, আর হাওয়াই চটি পরে আছে। সারা গা বস্ত্রহীন। মুখখানা বেশ করুন দেখাচ্ছে।  আর চারপাশের ক্ষুব্ধ পাড়া প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে রেখে নানা রকম প্রশ্ন করছে। কেউ কেউ বলছে"দেখে নেব ওই মেয়েছেলেটাকে "।কেউ আবার চেঁচাচ্ছে "ওই মহিলার উপযুক্ত শাস্তি চাই।" কারো মন্তব্য "পুলক বাবু থানায় একটা ডায়রি করে আসুন।" কারো মুখে" ওরে- পুলক কে আগে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা ওকে একটু জল-ফল দে। " আমি তো সিনেমার শুটিং দেখবো বলে এলাম কি দেখতে এসে কি দেখছি কিছুই প্রথমে মাথায় ঢুকছিল না। তারই মধ্যে রবির মিথ্যে খবরে ওর জন্য মাথাটাও গিয়েছিল গরম হয়ে। অনেক্ষন পর বুঝতে পারলাম ঘটনাটা হলো--
পুলককাকুর  মাস দুয়েক আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানে  ফেসবুক এ একজন মহিলার সাথে আলাপ হয়। তারপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম অবধি গড়ায় ব্যাপার টা। মহিলাটির স্বামী যে পুলকবাবুর পরিচিত তা তিনি জানতেন না। মহিলাটি তাকে বলেন যে সে অবিবাহিত। এই পুরো কেসটাই ছিল ওই মহিলার স্বামীর সাজানো। ওই মহিলা ও তার স্বামী যুক্তি করে গত রাতে পুলক কাকু কে ডেকে তার থেকে নগদ ২লাখ টাকা, কাকুর মায়ের ভরি আটেক সোনা, দামি মোবাইল হাতিয়ে নেয়। এখনেই শেষ নয় তাকে নিয়ে তারা তামাসা করতেও ছাড়ে নি। মহিলাটির স্বামী তার জামা প্যান্ট খুলে নিয়ে হাতে ২০ টাকা দিয়ে তাকে ভোরের বাসে তুলে দেয়। 
পুলককাকুর এমন মর্মান্তিক অবস্থাতেও এলোপাথাড়ি প্রশ্নবানে সে আরো নাজেহাল হয়ে যায়। এমনই সময় পাড়ার সনাতন জেঠু তাকে জিজ্ঞাসা করে বসলো- "হ্যাঁ রে পুলক ১০ টা টাকা তোর হাত দিয়ে গলে না, আর তুই ওতো টাকা, গয়না দিয়ে দিলি? "পুলক কাকু কাঁদো কাঁদো হয়ে প্রত্যুত্তরে বললো "সোনালী বলেছিল ওর মা বাবা মানবে না। তাই পালিয়ে গিয়ে ওকে বিয়ে করতে। আমায় গত কাল রাতে রথ মন্দিরের কাছে দাঁড়াতে বলেছিল। আসার সময় ২লাখ টাকা ,আর গয়না আনতে বলেছিল। সোনালী বললো "বিয়ের পরই সরাসরি তোমার বাড়ি যাবো না। তাহলে মা বাবা ঠিক খুঁজে পেয়ে যাবে। কয়েকটা দিন হোটেলে থেকে হানিমুন সেরে এসে তারপর বাড়ি এলে ওরাও আর আমাদের ফেলতে পারবে না"। তাই বেশ অনেকগুলো টাকা লাগবে। তারপর আমার এই অবস্থা।

কাকু আরোও বলেন" ওখানে পৌঁছে দেখি আমার অফিসের একজন কলিগ আর তার বউ মিলে প্ল্যান করে এই কাজ টা করেছে। সোনালী কে দুমাস পরিচয়ে কোনোদিন সামনে দেখি নি তো। ফেসবুকে অন্য ছবি দেয়া ছিল। ভেবেছিলাম আমার ছবি দেখে ও যখন পছন্দ করেছে তাহলে ওকে নিয়েই সুখী হবো। কিন্তু সে যে আমার অফিসের কলিগের বউ সোনালী টের পাই নি মোটেও। প্রাণে আমায় ভাগ্গিস মেরে ফেলে নি। এই আমার ভাগ্য ভালো। বলতে বলতে পুলক কাকু প্রায় কেঁদেই ফেললো।
সত্যিই তো পুলক কাকুর মতো অসহায় আর সোনালী আর তার বরের মতো সব মানুষই আমাদের চারপাশে  কতই না আছে। খুবই কষ্ট হলো আজ পুলক কাকুর এমন করুন মর্মান্তিক রূপ দেখে।

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ