হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে , ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায়।)
আজ 13.11.2025 বৃহস্পতিবার
এই নিশ্চুপ অপরাহ্নের মতোই যেন আমার জীবনটাও থমকে গেছে। এমনটা তো নাও হতে পারতো ! একটা ঝলমলে দুপুরের মত আমার জীবন টাও তো গতিময়তা র সাথে এগিয়ে যেতে পারতো। আমিও তো পারতাম আর পাঁচজন সুখী মানুষের মতো সফল হতে। কিন্তু পরিস্থিতি, সমাজ, পরাধীন তা আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরেছে। দায়িত্ব, কর্তব্য এর যাঁতাকলে নিজেকে কখনো আয়নায় সফল হতে দেখতে পেলাম না। নিজের সুখ , স্বাচ্ছন্দ্য গুলো অন্যের সুখে বিলিয়ে দিলাম। আজ এই জীবনের অপরাহ্নে এসে এই নির্জন দুপুর টাকে ও আমার মতই ব্যর্থ দেখাচ্ছে। যেন এক আকাশ অভিমান, অবহেলা সমস্ত দুপুরটাকে গ্রাস করে রেখেছে।
জন্মের পর থেকেই সবার জীবনই একটা ছন্দের মাধ্যমে এগোয়। আমার জীবনও সেই ভাবেই এগোচ্ছিল। কিন্তু এখানে নিত্য দিনের অভাব, অনটন ছিল প্রবল। শিক্ষা আর অর্থ আমার ছোটবেলাটাকে একই সুতোয় বেঁধে ফেলেছিল। অর্থাৎ পড়াশোনার পাশাপাশি ও আমায় অর্থ এর সীমাবদ্ধতা টাও খুব করে ভাবাতো। খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, খুব মেপে বুঝে লিখতাম। কারণ খাতা শেষ হয়ে গেলেই যে চট করে আবার একটা নতুন খাতা চলে আসবে এমন টা নয়। আর এটা আমি ঐ ক্লাস থ্রী / ফোর থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম। আমার কাছে একটা মেরিগোল্ড বিস্কুট খায়াও ছিল বিলাসিতা।
অভাবের সংসারে মেধাবী হয়ে জন্মেছিলাম। আর জন্মলগ্ন থেকেই ভীরু, দায়িত্ব কর্তব্য পরায়ণ ও অজ্ঞাবাহি ছিলাম। মানে গুরুজন রা যা বলতেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। সেই সূত্রেই অবহেলা, লাঞ্ছনা, অপমান আমার পুরস্কার হিসেবে জীবনে প্রাপ্তিলাভ করেছিল। যা এখন ও আমার জীবনে প্রবাহ মান। খোলসা করলে বুঝতে পারবেন এর অন্তর্নিহিত কাহিনীটা। আমায় যা বলবে তাই শুনবো এই ছিল নীতি আমার। তাই বড় রা আমায় দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন। সারাদিন পরিশ্রম করেছি। নিজের দিকে ভাবার সময় পাই নি। একান্ন বর্তি পরিবারে এক বার এনার কথা তো পরে ওনার ফরমাশ। বিয়ের পরেও সেম। একে ওষুধ খায়াও। তার জল এনে দাও। ওনার বাসী জামা কাপড় ধুয়ে দাও। তার সুগার আলাদা তরকারি করে দাও। এই সব এর ভিতরে আমার যে কখন যৌবন টা শেষ হয়ে গেল খেয়াল ই করলাম না।
আজকের নির্জন দুপুরের ছবি
বই খাতা ছেড়ে ডিগ্রি র সার্টিফিকেট আলমারি তে তুলে মুখ পরে রইলাম সংসারে। বিনিময়ে অনেক কটু কথা শুনেছি। সহ্য করেছি। আবার যারা কষ্ট দিয়েছে কটু কথা শুনিয়েছে তারাই পিছে বলেছে এই মেয়ের সহ্য ক্ষমতা প্রবল। তাহলে বুঝুন । কোথায় পরে আছি। তাহলে বলবেন কেন পরে আছি। কেন জানেন? আমার অর্থনৈতিক কোন ভীত নেই। আমার বাবার টাকা নেই। এবার বঝলেন।
অনেকেই ভাববেন আমি তো কিছু করতে পারি। নিজের জন্য । কখন করবো? কারোর দায়িত্ব ই যে ফেলতে পারি না। কঠিন শিক্ষায় শিক্ষিত আমি। আমার কর্তব্য ছেড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি না। আমি কিছু করলে ওই টাইমেই তাদের আমায় কোন না কোন কাজে দরকার। আমি উপেক্ষা করতে পারি না। এটাই আমি। বোকা আমি। সরল আমি। এই সমাজে সবচেয়ে হাস্যকর ক্যারেক্টার আমি। আমার ত্যাগ ই আমার শিক্ষা। আমার সহ্য শক্তি ই আমার ডিগ্রি।
(ব্লগ টা লেখার পর নির্জন দুপুরে প্রকৃতির সাথে একান্তে আমি )
মাঝে মাঝে তাই একা সময় পেলে ভাবি সব কিছুই কালের নিয়মে চলছে। আমিও কোন দিন এইসব দায়িত্বের মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলবো চিরতরে। কোন কিছুই কি আমার রঙে তাহলে আমার জীবনটাকে আলোকিত করতে পারবে না? মন বলল পারবে। একটা উপায় আছে। এটা থেকে তোকে কেউ সরিয়ে নিতে পারবে না। বললাম কি সেটা!! মনের দরজায় নাড়া দিয়ে বললাম বলো না... সেটা কি ?যার মাধ্যমে আমি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবো। নিজেকে জিইয়ে রাখতে পারবো। নিজের শখ, আহ্লাদ, ইচ্ছে, অনিচ্ছে গুলোকে বন্দি রাখতে পারবো। মন বললো -- তোমার লেখনী। এর মধ্যেই তুমি এই জন্মের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব লিখে রেখো। ইচ্ছে গুলোকে বুনতে থেকো। পর জন্মে তা সব পূর্ণ হবে।
আমি তাই করি। এই লেখনী ই আমার মুক্তি, আমার শক্তি। আমার স্বাধীনতা । আমার প্রাণখোলা হাসি। আমার পূর্ণতার সবকিছু। একেই অবলম্বন করে আমার সব কিছু অপূর্ণতা গুলোকে আমি পূর্ণ করে ফেলি। এই লেখনী ই আমায় আবার একটা নতুন সূর্যের আহ্বানের প্রেরণা যোগায়। একটা রাতের অবসান ঘটায়। আমায় সুখী রাখে।
আজকের দুপুরটা সত্যি ই নির্জন হলেও আমার নীরব মন আবার লেখনীর মাধ্যমে আবার সতেজতা ফিরে পেল। গুমরে মরিস না রে অপরাহ্ন। আসছে সাঁজ এর সময়। সিগ্ধ চাঁদের আলোয় তোর প্রানেও সঞ্চার হবে আগামীদিনের এক ঝলমলে দুপুরের আনন্দ।
আজকের ব্লগ টা এত টুকুই। আবার ফিরবো আগামীকাল। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।




0 মন্তব্যসমূহ