হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে , ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায়।)
14. 11.2025. শুক্রবার
(এই সেই আমার বন্ধু । যে মহা জাদু জানে)
আমার বন্ধু মহা জাদু জানে।
মানুষের ভিড়ে হাজার সম্পর্ক ঘুরে বেড়ায়, কেউ আসে আবার কেউ হারিয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন এক-আধজন মানুষ আসে, যাদের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়— কোন জিনিসগুলো জীবনে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আমার জীবনে সেই মানুষটা হলো ও— যে মহা জাদু জানে।
জাদু মানে তুমি হয়তো ভাবছো— কোন হাতের কৌশল, কোন চোখের মায়া, কিংবা কোথাও নাকি শেখা আছে এমন কোনো অদ্ভুত বিদ্যে। না, আমার সেই বন্ধু এমন কিছুই করে না। তবু ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত শক্তি আছে— অস্ফুট, অঘোষিত, কিন্তু ভীষণ গভীর।
যা আমাকে প্রতিবারই অবাক করে দেয়।
অনেক সময় আমরা অজান্তেই কারো ওপর নির্ভর করে ফেলি। হয়তো ঠিক বুঝতে পারি না কখন সেই মানুষটাকে নিজের দিনের অংশ বানিয়ে ফেলেছি। আমি ঠিক তেমনটাই করেছিলাম। ধীরে ধীরে, না বলা অনুভবের মতো, ও আমার প্রতিদিনের ক্লান্তির মাঝে একটা নরম আলো হয়ে উঠেছিল।
নরম মানেই দুর্বল নয়…
নরম মানেই শক্তির প্রান্তে দাঁড়ানো এক নিরাপদ ছায়া।
ওর সাথে পরিচয়টা সেইভাবে স্মরণীয় নয়।
কোনো সিনেমার মতো দৃশ্য ছিল না, কোনো আশা ছিল না, কোনো প্রতিশ্রুতিও না।
তবু যেন অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা ছিলাম দু’জনেই।
আলো-অন্ধকারের মাঝের সেই লাজুক বন্ধুত্বটাই ধীরে ধীরে আমার জীবনে এক টুকরো শান্তি হয়ে উঠেছিল।
তুমি জানো, মানুষ কখনো কখনো নিজের জীবনের গল্পটা অন্য কারো চোখে দেখতে পায়।
ও আমার কাছে ঠিক তেমনটাই—
একটা আয়না, যার মধ্যে আমি নিজের ক্লান্তি, স্বপ্ন, ব্যর্থতা আর আশা— সব একসাথে দেখতে পাই।
ও যখন বলে—
“তুই লেখ, তোর লেখায় সত্যি শব্দের থেকে বেশি অনুভূতি থাকে”—
তখন মনে হয় আমার ভেতরের হারিয়ে যাওয়া লেখকসত্তাটা আবার বেঁচে উঠলো।
আমি যে লিখতে পারি, আমারও একটা ধারা আছে, একটা নিজস্বতা আছে— এসব যে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
ওর এক লাইনের কথাই সেই ভুলগুলো ভেঙে দিল।
অনেকদিন এমন গেছে, যখন আমি নিজেকে মনেই করতে চাইনি।ব
নিজেকে মাত্রার চেয়ে কম ভেবেছি, কম মূল্য দিয়েছি।
মন খারাপ হলে কারও সাথে কথা বলা তো দূর, নিজেদের জানলাটা পর্যন্ত খুলতে ইচ্ছে করতো না।
সেখানে ওর একটা ভরসার মতো উপস্থিতি ছিল—
যে আমাকে বোঝাতো,
“সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এমন একটা বাক্য, যা সস্তা মনে হয়, কিন্তু ঠিক মানুষের মুখের ওপর দিয়ে বেরোলে তার মধ্যে অদ্ভুত শক্তি থাকে।
ওর কাছে আমার সব কথা বলা হয় না।
বসব ব্যথা বলা হয় না।
কারণ সবটা বলা যায় না।
তবু যেন ও বুঝে যায়।
না বলা কথার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকা ক্লান্তি, ভয়, রাগ, অভিমান— সবই ওর চোখ এড়িয়ে যায় না।
তুমি বলো, এটা কি জাদু নয়?
আমার বন্ধু মহা জাদু জানে—
কারণ ওর নরম গলায় উচ্চারিত “কিছু হবে না, আমি আছি”—
এই কথাটুকু আমাকে বেঁচে থাকার আরেকটা কারণ দেয়।
জীবনে অনেকেই আসে, অনেকেই যায়।
কেউ থাকে না।
রইলে ও সেই আগের মতো থাকে না।
মানুষের স্বভাবটাই তো পরিবর্তনশীল।
তবু আমার এই মানুষটা, এই বন্ধুটি—
একটা অদ্ভুত স্থিরতার মতো।
যেন ওর হাসি, ওর স্বর, ওর নিজের মতো করে বলা একটা ছোট্ট লাইন—
আমাকে ভরসা দেয়, নিরাপদ বোধ করায়।
আমি কখনো কখনো ভাবি, কেন হয়?
কেন ওর কথায় আমার এত শক্তি আসে?
কেন ওর উপস্থিতিতে আমার বুকের ভিতরের ঝড় থেমে যায়?
কেন ওর নামটা শুনলেই মনে হয়—
"এই তো, কাকে ভাবছিলাম এতক্ষণ?"
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুঝেছি—
জাদু বলে সত্যিই কিছু আছে।
বইয়ে পড়া জাদু নয়।
মানুষের ভেতরে থাকা সেই কোমলতার জাদু
যা শুধু বিশেষ মানুষরাই ব্যবহার করতে জানে।
আমার বন্ধু জানে—
• মন খারাপের দিন কিভাবে কথা বলতে হয়
• খুব শক্ত না হয়ে, খুব নরম না হয়ে
• সবকিছু ঠিক করার ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও পাশে দাঁড়ানোর সাহস
• অশ্রু লুকানো চোখের ভিতরের ব্যথা পড়ার বিদ্যা
• অকারণে হাসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা
• আবার ভরসা ফেরানোর অদ্ভুত শক্তি
যদি এটা জাদু না হয়, তাহলে আর কী?
অনেক রাত ছিল, যখন নিজেরই মনে হতো—
আমি আর পারবো না।
সবকিছু থেমে গেছে, আমিও যেন থেমে গেছি।
চেষ্টা করছি, লিখছি, বাঁচছি—
কিন্তু কোথাও যেন নিজের ধারাটা হারিয়ে ফেলেছি।
ওইসব রাতে আমার সেই বন্ধু চুপচাপ একটা লাইন পাঠাতো—
“তুই ঠিক আছিস, না?”
এই প্রশ্নটাই আমাকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে এনেছে।
আমি জানি, আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে হাজার সীমাবদ্ধতা আছে।
সময় কম, কথা কম, সাক্ষাৎ নেই, অনেক দূরত্ব আর না বলা অনেক কথা।
কিন্তু তবুও এই সম্পর্কটার গভীরতা কেউ বুঝতে পারবে না।
কারণ এটা কথার নয়—
এটা অনুভবের সম্পর্ক।
একদিন ও বলেছিল—
“তুই নিজের মতো করে লেখ, ট্রেন্ড দেখে লিখবি না। তোর শব্দের ভেতর যে সত্যিকারের তীব্রতা আছে সেটা অনেকের মধ্যেই থাকে না।”
এই একটা লাইনই আমাকে আবার লেখায় ফিরিয়ে এনেছে।
শুধু লেখাই নয়।
নিজের উপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছে।
নিজেকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।
নিজেকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছে।
তুমি জানো, পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ থাকে—
এক দল কথা বলে, কিন্তু কিছু বোঝায় না।
আরেক দল কিছু না বলেও সব বলে দেয়।
আমার বন্ধু দ্বিতীয় দলের।
আমার জীবনের ক্লান্তি, রাতের অশ্রু, ভোরের দুশ্চিন্তা— সব কিছু ওর কাছে শব্দে না বললেও, ও বুঝে যায়।
বলার আগেই উত্তর রেখে দেয়।
টালমাটাল মনটা আগেই পড়ে ফেলে।
এই ক্ষমতা কি জাদু নয়?
আজকের এই ব্লগটা লিখতে লিখতে বারবার মনে হচ্ছে—
জীবনে যদি এমন একজন মানুষ থাকে
যার সাথে কিংবা যার জন্য
তুমি নিজের সেরা রূপটা হয়ে উঠতে পারো,
সেটাই তো জীবনকে সুন্দর করে।
হয়তো ও আমার জীবনে চিরকাল থাকবে না।
হয়তো থাকবে।
হয়তো আমরা কোনোদিন মুখোমুখি দেখা করবো না।
হয়তো দূরেই থেকে যাবে।
তবু ওর থানটা আমার জীবনে চিরস্থায়ী।
কারণ কিছু সম্পর্ক থাকে, যা নাম দেয়া যায় না,
কিন্তু গুরুত্ব কমানো যায় না।
আমার বন্ধু মহা জাদু জানে—
কারণ সময় না দিয়েও মন দেয়।
দূরে থেকেও কাছাকাছি রাখে।
এক ফোঁটা আলো দিয়ে অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে দেয়।
জীবনটা কখনো কখনো খুব একা লাগে,
খুব দীর্ঘ লাগে,
খুব প্রশ্নে ভরা লাগে।
আর সেই সব প্রশ্নের মাঝে
একটা মানুষ যদি নীরবে তোমাকে বলে—
“তুই আছিস আমার কাছে”—
তাহলে সেই কথাটুকু পুরো জীবনের অর্থ বদলে দিতে পারে।
আজ তাই মনে হচ্ছে,
আমি সত্যিই ভাগ্যবান।
কারণ আমার জীবনে এমন একজন আছে
যে আমাকে আমার থেকেও বেশি জানে।
যে আমার শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কম্পন পড়ে দেয়।
যে আমাকে নিজেকেই চিনতে সাহায্য করে।
হয়তো ও নিজেও জানে না—
ওর জাদু কত দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
হয়তো ও জানেই না
আমি কতটা ভরসা রাখি ওর কথায়।
কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না।
কারণ সব সম্পর্ক বলা যায় না,
সব অনুভব প্রকাশ করা যায় না।
আজ তাই আমার লেখার শেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই—
হ্যাঁ, আমার বন্ধু সত্যিই মহা জাদু জানে।
ওর জাদুর নাম—
বোঝা।
ভরসা।
আলো।
আর এমন এক নীরব ভালোবাসা,
যা ব্যাখ্যা করা যায় না,
কেবল অনুভব করা যায়।
আজকের ব্লগ এতটুকুই। আবার আসবো আগামী কাল।

0 মন্তব্যসমূহ