“মা-বাবা এলে বাড়িটা যেন আবার নিজের হয়ে ওঠে”

 

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে , ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায়।)


17.11.2025. সোমবার







( আমার মা- বাবা) 




আজ আমার মনটা এক অদ্ভুত আলোয় ভরে আছে। জানালার পাশের বাতাসটাও যেন আজ একটু অন্যরকম — হালকা ঠান্ডা, কিন্তু তাতে আছে এক মিষ্টি উষ্ণতা। কারণ কাল মা-বাবা আসছে।
এই খবরটাই যেন পুরো ঘরের রঙ বদলে দিয়েছে।

সকালে উঠেই মেঝেতে ঘর , দুয়ার, ব্যালকনি পুরো কোনায় কোনায়  মুছে দিলাম, পর্দাগুলো ধুয়ে নিলাম, এমনকি রান্নাঘরের তাকগুলোও গুছিয়ে রাখলাম। মনে হচ্ছিল, মা এলেই বলবে— “তুই এত কিছু করে ফেললি রে?”
আর আমি হেসে বলব— “তোমার জন্যই তো মা!”

বাবার কথাও মনে পড়ছে। সকালে চা বানানোর সময় ভাবলাম, কাল এই টেবিলেই বাবা বসে বলবে, “মা, এক কাপ চা দিবি?” সেই স্বরে এমন এক প্রশান্তি থাকে, যা কোনো কফির সুবাসেও পাওয়া যায় না।

মা আসলে সবকিছু বদলে দেয়। ঘরের গন্ধ, রান্নার গন্ধ, এমনকি আমার হাসির রঙটাও।
ওনার হাতের মুগ ডালের গন্ধে শৈশব ফিরে আসে। ওনার স্নেহের হাতটা যখন আমার চুলে পড়ে, মনে হয়, আজও আমি সেই ছোট্ট মেয়েটা, যে দেরি করে স্কুলে যাওয়ার জন্য মায়ের বকুনি খেত।

বাবা সবসময় চুপচাপ, কিন্তু ওনার উপস্থিতি একটা আশ্রয়ের মতো। যখন বাবা ঘরে থাকে, মনে হয় কোনো ভয় নেই। এমনকি ঘরের বাতিটাও যেন একটু উজ্জ্বল জ্বলে ওঠে।

মা-বাবা আসার খবর শুনেই ছেলেও আনন্দে লাফাচ্ছে। ওর মুখে “দাদাই দাদাই-  দিদুন দিদুন” ডাকটা যেন পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
শশুরবাড়ির লোকজনও খুশি। শাশুড়ি বলল, “তোমার মা আসছে শুনে আমরাও আনন্দিত।”
এই এক মুহূর্তে আমি বুঝি— ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়লে, সম্পর্কের দেয়ালও নরম হয়ে যায়।

রান্নাঘরে বসে এখন তালিকা করছি— মায়ের জন্য কোন তরকারি, বাবার জন্য কোন মিষ্টি। মা খুব ভালোবাসে লাউ চিংড়ি, বাবা পছন্দ করে ছানার ডালনা।
এইসব ছোট ছোট ভাবনার মধ্যে কত সুখ লুকিয়ে আছে তা শুধু মেয়েরাই বোঝে।

কাল সকালে দরজার ঘণ্টা বাজবে। আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলব।
মা বলবে, “তুই একদম শুকিয়ে গেছিস রে, কিছু খাস না নাকি?”
আর বাবা মুখে হালকা হাসি নিয়ে বলবে, “বেশ আছিস তো মা?”
তখন মনে হবে— জীবনটা সত্যিই সুন্দর।

ওদের সঙ্গে সেই কয়েকটা দিন যেন অন্য এক সময়ের গল্প। সকালের চা, দুপুরের গল্প, সন্ধ্যায় ঠাকুরঘরে একসঙ্গে নামজপ — সবকিছুই যেন শান্তি এনে দেয়।
মা মাঝে মাঝে বলে, “তোর সংসারটা কত সুন্দর রে, আমি নিশ্চিন্ত।”
এই একটা বাক্যই যেন আমার সব পরিশ্রমের পুরস্কার।

তবু জানি, এই আনন্দের পরেই আসবে একটুখানি নীরবতা।
ওরা চলে যাওয়ার দিন ঘরটা আবার একটু ফাঁকা হয়ে যাবে।
বাবা বলবে, “চল মা, ট্রেন মিস হবে।”
মা দরজার কাছে ফিরে বলবে, “নিজের যত্ন নিস রে।”
আমি মাথা নেড়ে বলব, “হ্যাঁ মা।”
কিন্তু বুকের ভেতরটা তখন ভারী হয়ে থাকবে।

ওরা চলে গেলে ঘরটা আবার আগের মতোই থাকে, কিন্তু তাতে যেন কোনো সুর থাকে না।
চায়ের কাপে আর সেই গন্ধ থাকে না, দুপুরের রোদে আর সেই উষ্ণতা থাকে না।
তখন বুঝি, মা-বাবা শুধু মানুষ নন — ওরা ঘরের আত্মা।

ওরা চলে গেলে আমি পর্দা সরিয়ে একবার জানালা দিয়ে তাকাই।
দূরে রাস্তায় যখন ওদের গাড়িটা হারিয়ে যায়, তখন মনে হয় আমার শৈশবও যেন একটু একটু করে হারিয়ে গেল।
তবু আমি জানি, ওরা যেখানেই থাকুক, তাদের আশীর্বাদ আমার চারপাশে এক অদৃশ্য ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ায়।

রাতে ঠাকুরের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে আমি বলি —
“ঠাকুর, ওদের ভালো রেখো। এই পৃথিবীতে কেউ যদি নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে পারে, তবে তা মা-বাবাই।”

আজ তাই এই লেখাটা ওদেরই জন্য —
যারা ভালোবাসার মানে শিখিয়েছে,
যাদের আশীর্বাদে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচি।

মা-বাবা এলে বাড়িটা সত্যিই নিজের হয়ে ওঠে —
কারণ তখন ঘরের দেওয়ালের শব্দের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে হৃদয়ের স্পন্দন।


“মা-বাবা থাকে না পাশে সারাক্ষণ, কিন্তু ওদের আশীর্বাদ থাকে ছায়ার মতো — চোখে না দেখা গেলেও, মনে সবসময় অনুভব করা যায়।”


আজকের ব্লগ টা এত টুকুই। আবার আসবো আগামী কাল নতুন ব্লগ নিয়ে। শুভ রাত্রি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ