(প্রকৃতির ডাকে, প্রকৃতির টানে নিজের একান্ত কাটানো সময় )
(হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ , রাধে, রাধে.. … ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায়🙏)
ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রতিদিনের মতো ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম ভাঙে আমার ।
চোখের কোণে ঘুম জমে থাকে, মন চায় আরও একটু বিশ্রাম নিতে। আরো একটু জড়িয়ে ধরে বালিশ টাকে আরো একটু আরাম মেখে নিতে।
কিন্তু জানি, আজও রান্না করতে হবে, ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে হবে, বর এর অফিসের টিফিন গোছাতে হবে,এমনকি ঘরে কাজের চাপও সামলাতে হবে।
এরই মাঝে আমায় একটু মা সরস্বতী হতে হবে। মানে, ইয়ে একটু ছেলেকে নিয়ে পড়াতে বসাতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে সকালে একটুও শান্তির নিশ্বাস নেয়ার সময় মেলে না। একটা ঘরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, প্রতিদিন কত ছোট ছোট দায়িত্ব, যত্ন আর ভালোবাসা ঢেলে দিতে হয় বলুন তো?? —
আর এই অনন্ত যাত্রার নামই “সংসার”। কি ঠিক বললাম তো পাঠক বন্ধুরা? সব সংসারের ই আমার মতই মোটামুটি একই চিত্র।
১. সংসার — এক অন্তহীন ছন্দ
সংসারকে অনেকেই “দায়িত্ব” বলে ভাবেন, কেউ কেউ বলেন “বোঝা”।
কিন্তু আসলে সংসার হলো একটানা চলা এক ছন্দের মতো।
যে নদীর মতো আপন খেয়াল এ বয়ে চলে। আজকের রান্না শেষ হয়, আবার পরের দিন আবার শুরু হয়। জামা কাচা শেষ হয়, আবার ময়লা হয়।
কাজ থামে না, সময় থামে না।
তবুও এই পুনরাবৃত্তির মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের স্থিরতা, শিকড়ের শান্তি। এত ক্লান্তি, এত পরিশ্রম, এত বিরক্তি, এত ধিতকার, এত চোখের কোনের জল তবুও এটাই যেন , এই স্হান এই যেন আছে আমার স্বর্গসুখ।
ভেবে দেখুন, আমরা যেদিন কাজ করি না — সেইদিনও যেন কিছু একটা ফাঁকা লাগে কি তাই না?
কারণ সংসার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গীত, যেটা থামলে নিঃশব্দ লাগে পৃথিবী। বেসুরো লাগে জীবন টা। মনে হয় কোথায় যেন ছন্দপতন ঘটছে।
( সংসারে কাজের মাঝে তোলা ছবি। চোখে, মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু ঠোঁটের ওই এক চিলতে হাসিই আমার এগিয়ে চলার শক্তি)
২. ক্লান্তি মানেই ব্যর্থতা নয়
ক্লান্তি আসুক তবু ছাড় নেই।
প্রতিদিনের কাজ, রান্নাঘরের গরম, পরিবারের দায়িত্ব, আর নিজের অপ্রকাশিত ইচ্ছেগুলো — সব মিলিয়ে কখনো মনে হয়, “সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কোথাও পালিয়ে যাই।”
কিন্তু এটাই তো জীবনের আসল পাঠ —
যেখানে কেউ হাততালি দেয় না, কেউ আমাদের বাহবা দেয় না। কেউ কাঁধে ভরসার হাত টা রাখে না... তবু আমরা করে যাই, সংসারের জন্য নিজের শেষ টুকু দিয়ে করে যাই।
কারণ এই সংসারের প্রতিই আমাদের হৃদয়ে গোপন ভালোবাসা আছে। যা বাহ্যিক দিক থেকে আমরা নিজেরাও অনুভব করতে পারি না। ক্লান্তি আমাদের গোপন হৃদয় এর খবর ভুলিয়ে রাখে ।
একজন নারী বা পুরুষ যিনি সংসারের প্রতিটি কোণ পরিষ্কার রাখেন, তিনি শুধু ঘর নয় — একটি পবিত্র শক্তি তৈরি করেন।
মন্দির স্হাপন করেন। এই নিঃশব্দ সেবাই জীবনের সবচেয়ে বড় উপাসনা। এই স্হান ই তখন বৃন্দাবন। এখানে সুখী গৃহকোণ থাকে। স্বয়ং সৃষ্টি কর্তা র আশীর্বাদ এখানে বিরাজ করে।
যে নিজের পরিবারকে হাসাতে পারে, আনন্দে রাখতে পারে,সেই পারে গোটাপৃথিবীকেই সুন্দর করে তুলতে।
৩. নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন
সংসারের ঘূর্ণির মাঝে আমরা খুব সহজেই নিজেদের হারিয়ে ফেলি।
“আমি” শব্দটা মুছে গিয়ে হয়ে যাই “ওদের মা”, “ওর স্ত্রী”, “ওর মেয়ে” ওনার বৌমা ।
কিন্তু মনে রাখুন, সংসার তখনই সুন্দর হয় যখন আপনি নিজেকে ভুলে যান না। নিজের খেয়াল রাখেন। নিজের ভালো মন্দ টা কেও প্রাধান্য দেন।
প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সময় রাখুন নিজের জন্য —
হয়তো একটু প্রার্থনা, একটু গান শোনা, একটু লেখা, কিংবা জানলার ধারে বসে চুপচাপ আকাশ দেখা। কিংবা নিস্তব্ধ রাতে তারা গোনা।
এই ছোট সময়টাই আপনার ভেতরের শান্তি ফিরিয়ে দেবে।
যে নিজের মধ্যে শান্ত, সে সংসারেও আলো ছড়াতে পারে। কথাটা আসলেই সত্য।
৪. ভালোবাসা —
সংসারের প্রাণ
সংসারের রঙ ভালোবাসায়।
কিন্তু ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে লাগে বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা, আর কৃতজ্ঞতা এই মূল্যবোধ গুলো খুব দরকার।
একটা “ধন্যবাদ”, একটা “তুমি কষ্ট করছো জানি”— এই ছোট কথাগুলোই সংসারের বাতাসকে অনেকটা হালকা করে দেয়।
এই কথা গুলো সংসার সুখের হওয়ার চাবিকাঠি।কারণ সংসার কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এটা একসাথে বাঁচার জায়গা। তাই না?? আর আমরা তো সুখের জন্যই সংসার করি। সংসারের জন্য কত কিছু করি।
৫. ছোট ছোট আনন্দের গল্প
সংসারের সবচেয়ে বড় সুখ আসে ছোট ছোট মুহূর্তে।
যেমন:
সকালবেলার চায়ের কাপ হাতে জানালায় সূর্যের আলো পড়া,
ছেলের হাসি শুনে সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যাওয়া,
বিকেলে একসাথে টিভি দেখা,
রাতে ঘুমের আগে দুটো ভালো কথা বলা।
এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই জীবনের আসল উৎসব।
সংসার মানে বিলাস নয়, বরং একসাথে থাকার অনুভূতি।
৬. দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে
আমরা অনেক সময় সংসারকে শুধু কাজ আর ক্লান্তির চশমায় দেখি।
কিন্তু একটু যদি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই —
রান্নাঘরের গন্ধ মানে শুধু কাজ নয়, তা ভালোবাসার গন্ধ।
ঝাড়ু দেওয়া মানে শুধু পরিষ্কার নয়, তা একরকম ধ্যান।
বাচ্চার চিৎকার মানে শুধু দুষ্টুমি নয়, তা জীবনের উপস্থিতি। একটা নতুন প্রজন্মের উৎপত্তি।
যখন আমরা এসব কাজের ভেতর আনন্দ খুঁজতে শিখি, তখন সংসারও আশ্রম হয়ে যায়।
“কাজকে পূজা ভাবলে ক্লান্তি থাকে না।”
৭. সংসার মানে সাধনা
সত্যি কথা বলতে কী, সংসার একরকম সাধনা।
এখানে রাগ আছে, প্রেম আছে, হতাশা আছে, আবার শান্তিও আছে।
যে সংসারে প্রতিদিন একটু করে ক্ষমা, একটু করে ভালোবাসা, আর একটু করে বোঝাপড়া জন্ম নেয় — সেই সংসারেই ঈশ্বর বাস করেন।
আপনি যখন ঘর পরিষ্কার করেন, আপনি কেবল ধুলো মোছেন না — আপনি আশীর্বাদও ছড়াচ্ছন।
আপনি যখন রান্না করেন, শুধু খাবার নয় — পরিবারের হৃদয়ে ভালোবাসা পরিবেশন করছো।
এইভাবেই ধীরে ধীরে, সংসার এক আত্মিক যাত্রা হয়ে ওঠে।
৮. নিজের আলো নিজের ভেতরেই
সংসারের আলো বাইরের কিছু নয়, আপনার নিজের মন থেকেই আসে।
আপনি যদি ক্লান্ত, রাগী বা নিরাশ হন — সেই শক্তিই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
তাই নিজের ভেতরে আলো জ্বালান।
প্রার্থনা করুন, ধ্যান করুন, হাসুন লিখুন, নতুন কিছু শিখুন, কিংবা শেখান, অনুভব করুন। এগুলোর মধ্যে থেকেই শান্তি পাবেন। —
কারণ এক মমতাময়ী মনই সংসারের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।
যে ঘরকে ভালোবাসে, সেই ঘরই তাকে আশ্রয় দেয়।”
পরিশেষে,
সংসার মানে কষ্ট নয়, এটা এক রকম সাধনা।
এখানে ভালোবাসা শেখা যায়, ধৈর্য শেখা যায়, ক্ষমা শেখা যায়।
এখানে প্রতিদিন ছোট ছোট অলৌকিক মুহূর্ত ঘটে —
যেগুলো আমরা হয়তো দেখি না, কিন্তু ওগুলোই জীবনকে পূর্ণ করে তোলে।
আজ যারা ক্লান্ত, তারা জানুক —
আপনিই সংসারের হৃদস্পন্দন।
আপনি আছেন বলেই এই পৃথিবী এত উষ্ণ, এত প্রাণবন্ত।
(হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ… রাধে রাধে 🕉)
আজকের ব্লগটি এই পর্যন্ত ই থাক। আবার আসবো আগামী কাল। আমার জীবনের টুকরো টুকরো অনুভূতি র গল্প ছড়াতে আপনাদের মাঝে। আচ্ছা, আমার লেখা গুলো আপনাদের কেমন লাগে জানাতে ভুলবেন না যেন।



0 মন্তব্যসমূহ