( সকাল বেলার মিষ্টি ছবি। আমার রোজকার জীবনে যা ঘটে, যা অনুভব করি তাই লিখি ব্লগে। তেমনি আমিও আমার লেখার মতো খুব সাধারণ। এইরকম সাদামাটা ই থাকি)
(হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ... রাধে রাধে... ওম নমঃ শিবায়)
আজকের তারিখ 27.10. 2026
আজ সোমবার। সপ্তাহের একদম শুরু।
বাইরে হালকা
কুয়াশা। অক্টোবর মাস তো শীতের একদম প্রথম সূচনার পরশ শরীরকে স্পর্শ করে যাচ্ছে। জানালার ধারে বসে আছি আমি — হাতে গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা।
ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৬টা ২০।
বাড়ির বাকি সবাই এখনো ঘুমের রাজ্যে। শুধু আমি আর আমার চায়ের কাপ, আর জানালার বাইরের পাখিদের ডাক। কি অসাধরণ একটা শান্ত পরিবেশ। কি নির্মল বাতাস মন টাকে যেন শান্ত করে রেখেছে। চা এর কাপ খান নিয়ে একবার বাইরে গেলাম। বাইরের দৃশ্যের সাথে আমার ছবিটা ফ্রেম বন্দি করে রাখলাম। ছবিটা কেমন দেখে বলুন তো পাঠক বন্ধুরা? একদম ঠিক ধরেছেন বন্ধুরা এমন শস্য শ্যামলা মাঠের মাঝেই আমার বাড়ি। আমার স্বর্গ। এখন দেখুন মাঠের ধান পেকে গেছে। সোনালী হলুদ বর্ণের হয়ে গেছে। একদম মাঠ ময় সকালের সূর্যের আলোর ছটায় ধানের শীষ গুলো সোনার মতো চিকচিক করছে।
( যতদূর চোখ যায় সোনায় সোনা... এ এক প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য)
কখনও কখনও মনে হয়, এই কয়েকটা নিঃশব্দ মিনিটই আসলে আমার নিজের সময়।
দিন শুরু হবার আগে, সংসারের ভিড়ে ডুবে যাওয়ার আগে,
এই ছোট্ট চা আর এই সময়টাই যেন আমাকে আবার ভিতর থেকে সাজিয়ে নেয়। আবার নতুন করে কাজ শুরু করার উৎসাহ জোগায়।
( যখন মেয়েবেলার কথা মনে পড়ে যায়....)
চায়ের গন্ধে ভেসে আসে মায়ের রান্নাঘরের পুরনো স্মৃতি।
বাবা সকালে উঠেই খবরের কাগজ খুলে বসতেন, মা বানাতেন দু’জনের জন্য দুধ চা।
আমি তখন স্কুলে যাবার আগে রান্নাঘরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতাম,
“মা, আমাকেও একটু দাও না!”
আর মা হাসতেন — “তুই বড় হলে তোকে দোবো!”
আজ আমি বড় হয়েছি, চা খাই, রান্না করি, সংসার সামলাই,
কিন্তু সেই ছোট্ট মেয়েটার সকাল এখনো মনের ভেতর বসে আছে।
চায়ের প্রথম চুমুকটা যেন ওকেই মনে করিয়ে দেয় প্রতিদিন। বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেইসব দিন গুলোতে। কয়েক মিনিটের জন্য চায়ের কাপ নিয়ে যেন শৈশব এর রাজ্যে ফিরে যাই।
আজকের সকালটা একটু অন্যরকম ছিল।
চা বানাতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো —
আমরা যেন শুধু দৌড়োচ্ছি! কাজ, দায়িত্ব, ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া, রিলস, পোস্ট —এই সব কিছু যেন আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। বাচ্চাদের শৈশব গুলো আটকে যাচ্ছে এই সব এর মাঝে। কি বিভীষিকাময় এই জেনারেশন।
কিন্তু কটা মানুষ সময় নিয়ে বসে চায়ের কাপে নিজের জীবনটাকে দেখে?
চা আসলে শুধু একটা পানীয় না —
এটা একধরনের ধ্যান।
হাতে কাপ নিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকা মানে নিজের সাথে দেখা করা।
কাপটা ধরা মানে মনকে থামানো, গন্ধটা টেনে নেওয়া মানে নিজেকে বোঝা।
এই ভাবনা গুলোই আজ মনকে একটু শান্ত করে দিয়েছে।
ভেতরে ভেতরে মনে পড়ল, রবিবার রাতে যত কাজ করেছি —
ঘর মোছা, জামা ধোওয়া, ছেলে কে হোমওয়ার্ক করানো, রান্না…
সবই ক্লান্তির মতো লাগছিল তখন।
কিন্তু আজ সকালে যখন সূর্যের আলো জানালা দিয়ে ঢুকল,
তখন মনে হলো — এই জীবনেরই নাম “ভালো থাকা”।
চায়ের সাথে আজ একটু মুড়ি মাখলাম।
টেবিলের উপর ছোট ফুলদানি তে কিছু গাঁদা ফুল রেখেছি — নিজের হাতে তোলা।
গন্ধে ভরে গেছে ঘরটা।
এমন সকালগুলোতে মনে হয়, সুখ মানে আলাদা কিছু না —
বরং, নিজের তৈরি মুহূর্ত।
আমি এখন বুঝতে শিখেছি, প্রতিদিনের ছোট্ট মুহূর্তগুলোকেই
নিজের মতো করে সাজিয়ে নিলে জীবন সুন্দর লাগে।
একটা সকাল, একটা কাপ চা, একটা মিষ্টি হাসি —
এগুলোই তো আসল লাইফস্টাইল।
চা শেষ করে আমি ছেলের স্কুল ব্যাগ গুছালাম, রান্নাঘরে ঢুকে ভাত চাপালাম।
তাও যেন একরকম শান্তি।
কারণ আমি জানি, এই প্রতিদিনের ছোট কাজগুলোই
আমাকে আরও ধৈর্যশীল করছে, আরও দায়িত্ববান করছে।
কখনো মনে হয়, আজকাল মানুষ “লাইফস্টাইল” বললে শুধু ব্র্যান্ড, পোশাক, ট্রাভেল বোঝে।
কিন্তু আমার কাছে লাইফস্টাইল মানে —
প্রতিদিনের সাধারণতার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নেওয়া।
এক কাপ চা, একটা সকাল, একটা মন ভালো করা গান —
এই তো জীবন।
আমার চায়ের কাপটা শুধু আমায় না,
আরো কাউকে একটু শান্তি দিল।
(হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে… ওম নমঃ শিবায়)
আজকের ব্লগ টা শুধু সকাল বেলার সুরেলা কিছু মুহূর্ত গুলো নিয়ে লেখা। জানেন তো জীবনকে এই ভাবেও উপভোগ করা যায়। গসিপ, পি এন পিসি, ঝগড়া, অশান্তি, কারো উপর ডিপেন্ড করে থাকা এইসব এর চেয়ে নিজেকে ভালোবাসা, নিজের অনুভূতি গুলোকে প্রাধান্য দেয়া, ক্লান্তি লাগলে নিজেকেই নিজে সামলানো এই সব এর মধ্যে একটা অদ্ভুত শান্তি আছে তাই না? কাউকে দোষারোপ নয়। আবার কেউ আপনাকেও দোষ দেবে না। নিজের কাজ, আর কর্তব্য আর নিজের ভালো লাগা খারাপ লাগার জন্য তো ডায়েরি আছেই।
মনের যত অভিযোগ, অনুযোগ, সুখ, দুঃখ সব এতে লিপিবদ্ধ করুন। এই ডায়েরি আর যাই হোক আপনার সাথে বেইমানি করবে না। আপনি লিখেও শান্তি পাবেন মনের দিক থেকে। আর আপনার মন টাও ভালো থাকবে। কি ঠিক বললাম তো পাঠক বন্ধুরা?
আমার সাথে এক মত হলে জানাতে ভুলবেন না। আজ তবে এইটুকুই আবার আসবো আগামী কাল নতুন ব্লগ নিয়ে। সকলে ভালো থাকবেন।


0 মন্তব্যসমূহ