মুড়ি ( মুড়ির সাথে প্রেম )

 মুড়ি



আয়নার সামনে নিজেকে যখনই দেখি খুব মুগ্ধ হই। কি সুন্দর ধবধবে সাদা গায়ের রং আমার। একটু হেলদি হওয়ার জন্য আমার রূপ , লাবণ্য যেন আরো বেশি ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের কাছে। আর হবে নাই বা কেন আমি তো আর রুটির মতো পোড়া, সেকা নই। আর ভাতের মত সেদ্ধ টাইপের এরও নই। আমায় নিয়ে এত জ্বালাও নেই। আমি ইন্সট্যাট মানুষের কাছের পরিবেশিত হতে পারি। ইস স !!! আমার রূপের কাছে সবাই কুপোকাত।


 মুড়ি ও জলের প্রেম

 : জল তো আমার গায়ে পড়ার জন্য একদম উঠে পরে লাগে। বড্ড গা ঘেঁষা। বাপ রে বাপ। অবশ্য আমিও ওকে দেখে কেমন জানি নেতিয়ে পরি। কি জানি ওর মধ্যে কি এমন জাদু আছে! আমি তো মনে মনে নিজেও এটা অনেক বার স্বীকার করেছি জলকে ছাড়া আমি হয়তো বাঁচতেই পারবো না। ওর শরীরে নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে আমার বেশ ভালো লাগে। শরীরের  যত ক্লান্তি, যত ভুল ভ্রান্তি যেন আলিঙ্গনে আমার শরীর থেকে ধুয়ে যায়। 

--- তাই তো আমিও তোমার প্রয়োজন এ বারবার ছুটে আসি মুড়ি। তোমায় সিক্ত করবো বলে। কখনো কখনো আমি নুন, চিনি কেও নিয়ে আসি তোমায় আরো বেশি খুশি করার জন্য। বলো মুড়ি-- নুন, চিনি আমার সাথে আসলে তোমার কি ভালো লাগে না? (জল)

--  (মনে মনে বলে)ভালো লাগে তো জল। ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে। 

 শুধু তোমাকে নিয়েই আবেগে ভেসে চললে আমি এই সমাজে কখনোই উঁচু লেভেলে যেতে পারবো না জল। সেহেতু তোমায় সবসময় পাত্তা দিলে আমি কোনোদিনও জাতে উঠতে পারব না। তখন ঐ মুখ পোড়া রুটি , সিদ্ধ ভাত এরই জয়জয়কার শুনতে হবে। এ আমি কোনো দিনও মেনে নিতে পারবো না। কখনও ই নয়। 


 দুধের সাথে মুড়ির প্রেম : 

মুড়ি মাঝে মাঝে দুধ এর সাথে সঙ্গ খোঁজার ও খুব চেষ্টা করে। কারণ দুধ তো স্বাদে , গন্ধে, রং এর তুলনা অতুলনীয়। কিন্তু মুড়ির ওর সংস্পর্শে আস্তে মাঝে মধ্যে বেশ ভয় লাগে। বিশেষ করে দুধ যখন খুব গরম থাকে সেই সময় মুড়ি ওর সাথে থাকলে মুড়ির চেহারা এক নিমিষেই নিমিয়ে যায়। বরঞ্চ দুধ যখন ঈষৎ উষ্ণ থাকে সেই ছোয়া মুড়ির খুব ভালো লাগে। বেশ মানায় তখন দুটিতে। বিশেষ করে বাচ্ছাদের খাবারের জন্য এটা মানুষ রা বেশি প্রেফার করে। তখন মুড়ি নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করে। আহা দুজনকে কি সুন্দর ই না মানায়। আর দুজনের কম্বিনেশন এর স্বাদ যখন খেয়ে সবাই বলে দারুন দারুন তখন মুড়ি র নিজেকে খুব লাকি মনে করে। দুধ আর মুড়ি যেন ঠিক রাজজটোক। তাই যত নতুনত্ব খাবারই বাজারে আসুক না কেন দুধ মুড়ি ঠিক তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে তাদের নিজস্ব রূপে গুনে। 


চানাচুর ও মুড়ির মাখো মাখো স্বভাব : 


চানাচুর আর মুড়ির যেন আজীবন একটা মাখো মাখো স্বভাব। যা জল একদম পছন্দ করে না। এক জন আর একজন কে ছাড়া যেন পৃথিবী অন্ধকার দেখে। এদের মাখো মাখো প্রেম দেখলে অনেকেরই গা জ্বলে। চানাচুর কখনো একাই চলে আসে সন্ধের আসরে মুড়ি র সাথে ভাব জমাতে আবার আড্ডা যাতে আরো বেশি মজবুত হয় তাই আবার পেঁয়াজ, শসা, গাজর কেও ইনভাইট করে। ওহ !!! কি হুল্লোড় টাই না করে । তাদের মাখামাখির যেন শেষ নেই। মুড়ি তো একদম ওদের সাথে মিলেমিশে এমন থাকে জল যে বোতল এ বন্দি অবস্থায় একপাশে বসে আছে তা যেন ওদের খেয়াল ও পরে না। জল নিজেকে খুব অসহায় বোধ করে। এক কোনে চুপ করে বসে থাকে আর চোখের সামনে ওদের মাখো মাখো আড্ডা দেখে চোখের জল ফেলে । ভাবে মানুষ যে বলে জল ই জীবন। কিন্তু কৈ ওদের তো আমার কথা মনে ই পড়ছে না। চানাচুর আর মুড়ির নীরব প্রেম কাহিনী এই ভাবেই দিনের পর দিন জল মেনে নেয়। 


আলু সিদ্ধ ও মুড়ির প্রেম : 


এদের প্রেম এর কদর সচরাচর কেউ করে না। একমাত্র সংসারের খুব ব্যস্ত দিন গুলোয় কালে ভদ্রে এই জুটিটার দেখা মেলে। আজকাল কার দিনে এদের একসাথে দেখা খুব মুশকিল। কিন্তু এদের কম্বিনেশন টা যে খুব খারাপ তা নয়। তবু তাদের কদর নেই বিশেষ। তেলে, নুনে, লঙ্কায় আজ ও অনেক বাড়িতে খুঁজলে এদের দেখা মিললেও মিলতে পারে। স্বাদে এরা খুব একটা খারাপ না হলেও যুগের সাথে সাথে এদের কদর টা কমতেই বসেছে। 


আলুর দম ও মুড়ির সাথে ভালোবাসার গল্প : 

এ এক অনন্ত প্রেমের কাহিনী। যাদের প্রেম কাহিনী যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজ ও মানুষের হৃদয়ে তারা শ্রেষ্ঠ আসনে বসে আছে। আলুরদম এর সাথেই মুড়ি কে সবচেয়ে বেশি মানায়। তাই তো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, অতিথি আপ্যায়ন এ এর জুড়ি মেলা ভার। এই জুটি টাকে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এই ভাবেই একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাক মুড়ি আলুরদমের প্রেম। যুগ যুগ ধরে মানুষের স্বাদে অটুট থাকুক এর মেল বন্ধন। 


ঘুগনি ও মুড়ির প্রেম : 

ঘুগনির সাথেও মুড়ি কে বেশ মানায়। মুড়িও খুব পছন্দ করে ঘুগনিকে। ঘুগনি নিজ স্বাদে, গন্ধে মুড়ি কে আরো জাতে তুলে দিয়েছে। তাই মুড়ি মনে মনে ঘুগনিকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানায়। ঘুগনির জন্যই মুড়ির কদর আজ ও ছোটখাটো দোকানে। বেশ রমরমার সাথে চলে মুড়ি ঘুগনি বিক্রি। এই ঘুগনির জন্যই ব্যবসায়িক দিক থেকে মুড়ির কদর বেড়েছে। সকালের হালকা জল খাবারের জন্য এই কম্বিনেশন টা খুব কাছের অনেকের কাছেই। তাই ঘুগনি ও মুড়ি এই যুগল বন্দি মানুষের খুব পছন্দের। 


ঝাল মুড়ি : মুড়ি যে নিজেকে কোন লেভেলে মানুষের কাছে  নিয়ে গেছে তা সবাই জানে মানেও। যতই নতুনত্ব খাবার আসুক না কেন বাঙালি আজ ও ঝালমুড়ি অন্ত প্রাণ। ঝাল মুড়ি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম । কাঁচা সরসের তেল, মশলা, বাদাম, ঝুড়ি ভাজা, চানাচুর, সেদ্ধ আলু, টক ঝালের মিশ্রনে এই ঝাল মুড়ির স্বাদ সত্যিই অনবদ্য। 


চপ মুড়ি বা ভাজার সাথে মুড়ির প্রেম : 

স্ট্রিট ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভাজা আর মুড়ি। এই ভাজা গুলি হলো - আলুর চপ, সিঙ্গারা, বেগুনি, কুমরি, টমেটোর চপ, ধোনে পাতার চপ, পিয়াজি, ডালের বড়া, আরো কত কি... এই ভাজার সাথে মুড়ি খেতে খুব ভালো লাগে। সাথে যদি থাকে একটা লংকার বড়া। তাহলে তো আর কথাই নেই। এই ভাজার সাথে মুড়ি খাওয়ার সময় মানুষ ডায়েট এর কথা ভুলেই যায়। আমার ব্যক্তিগত ভাবে চপ দিয়ে মুড়ি খেতে বেশ ভালো লাগে। আপনাদের কি দিয়ে মুড়ি খেতে ভালো লাগে কমেন্ট বক্সে জানাতে একদকম ভুলবেন না।


চা ও মুড়ি : 

টুকটাক খিদেতে চা ও মুড়ি খুব ভালো একটি খাবার। চা সকলরেই প্রিয়। চা এর সাথে অল্প মুড়ি সাথে বাদাম কিংবা চানাচুর দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে। তাই মুড়ি র সাথে অনেক খাবার এরই প্রেম আছে। আর মুড়ির সাথে সব মানুষের ই ভালোবাসা আছে।



এবার আপনারাই বলুন মুড়ির সাথে কোন কোন কম্বিনেশন গুলো আপনা দের বেশি ভাল লাগে? আমার মুড়ি আলুরদম, ঝাল মুড়ি এই গুলো খুবই ফেবারিট। আমার ছেলে দুধ, মুড়ি খেতে খুব ভালোবাসে। আজ হঠাৎ লিখতে বসে ভাবলাম মুড়ি নিয়ে লেখা যাক। মুড়ি তো সকলেই খায়। এই সব ছোটখাটো জিনিস নিয়ে লিখতে আমার খুব ভালোলাগে। জানি না আমি ঠিক মতো আমার মনের ভাব বোঝাতে পারলাম কিনা। তবু চেষ্টা করলাম। একটা খাবার মুড়ির যদি সত্যিই এত এত গুন থাকতে পারে বলে আপনাদের মনে হয় তাহলে সকলে অবশ্যই আমার এই পোস্ট টি শেয়ার করতে পারেন। আবার আসবো নতুন ব্লগ নিয়ে।











একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ