ভালোবাসা কি জীবনে একবার ই হয়? প্রেম কি জীবনে এক বারই আসে? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা অনেকেই সঠিক জানি না। কেউ কেউ বলেন হ্যা, ভালোবাসা জীবনে একবারই আসে। যে ভালোবাসায় কোনো খামতি নেই, কোনো চাহিদা নেই , নেই কোনো শারীরিক সম্পর্কের লালসা সেই ভালোবাসাই তো প্রকৃত ভালোবাসা।
সবাই কি অন্তর দিয়ে নিখুঁত ভাবে ভালোবাসলেও কি ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পায়? পায় না। সবাই এর ভাগ্যে তা জোটে না। কেউ কেউ জীবন দিয়ে ভালোবাসার প্রতিদানে পায় অবহেলা, লাঞ্ছনা আর বদনাম।
ভালোবাসা ছেড়ে যায় নানা অছিলায়। সেই স্কুল লাইফের ক্লাস0 নাইনে পড়া ছেলেটা যে ভালোবেসেছিল তারই ক্লাসের একটি সহপাঠিনী কে, যার জন্য সে নিজের পড়াশোনায় গাফিলতি দিয়েছিল, দিন রাত এক করে প্রেমিকার জন্য নোটস তৈরি করে দিয়েছিল, টিফিন এর পয়সা বাঁচিয়ে তার জন্মদিনে একটা সুন্দর ড্রেস গিফট করেছিল, সেই মেয়েটি তো কলেজ এ পা রেখেই ছেলেটিকে ভুলে গেল।
আচ্ছা কি খামতি ছিল বলুন তো ছেলেটার মধ্যে? যে কিনা জীবনের প্রথম পরিক্ষা গুলো নিজের জন্য না ভেবে প্রেমিকার জন্য খেটেছে। তাকে ভালোবেসে তার প্রজেক্ট খাতা তৈরি করে দিয়েছে। প্রেমিকা যাতে রাত এর বেলা উঠে পড়তে পারে তার জন্য জেগে তাকে ফোন করে জাগিয়েছে। কি লাভ হলো বলুন তো ছেলেটার? আপাতদৃষ্টিতে আপনাদের মনে হতে পারে ছেলেটাই তো বোকা, অল্প বয়সে পাকলে .....তার দুঃখ চিরকাল। আসলে তা নয়। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কখনো না কখনো ভালোবাসে আসে। আমরা সেই আবেগ থেকে চাইলেও বেরিয়ে আসতে পারি না। এরই নাম ভালোবাসা।
দেখুন ছেলেটার মধ্যে তো কোনো স্বার্থ ছিল না। কোনো লালসা ছিল না। ছিল প্রাণভরা ভালো বাসা। তবু তাকে ঠকতে হলো। প্রতারিত হতে হলো।
তার জীবনের অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ দিন সে হারিয়ে ফেলল। এরপর তাকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনায় আরো কুঁড়ে কুঁড়ে কষ্ট পেল কয়েকটা রাত, কয়েকটা মাস। মানুষের প্রতি বিশ্বাস টা উবে গেল তার জীবন থেকে। যে হারালো সে তো সব কিছুই হারালো। আর যে ঠকিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিল সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে গেল।
কালের নিয়মে এক সময় ছেলেটা শূন্য হৃদয়ে আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করলো। নতুন কলেজ, নতুন ক্লাস আবার নতুন করে নিজেকে গড়ে নেওয়ার তাগিদে। এক অদম্য জেদে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এর খামতি গুলোকে শুধরে নিল সে। ভালো পজিশন পেয়ে কলেজ পাশ করে গেল।
তার জীবনের ক্ষত গুলো পুরোপুরি না হলেও এখন অনেকটাই সুস্থ। আবার করে সে মানুষকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ভরসা করে হাত বাড়িয়েছে নতুন জীবনে।
আরো কিছুদিন গেল পেরিয়ে। ছেলেটি এখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় বার যার হাত ধরেছিল সে , সে আর তাকে ঠকায় নি। বরঞ্চ তার হৃদয়ের ক্ষত গুলো সে সারিয়ে তুলেছে। ছেলেটি খুব খুব ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটিকে। তার প্রথম ভালোবাসার যন্ত্রনা, সুখের স্মৃতি, কষ্ট কিছুই আর তার মনকে এখন ছুঁতে পারে না। তার হৃদয় জুড়ে এখন ভালোবাসার বর্ষা নেমেছে। এই বর্ষা এই প্রথম তার জীবনে এলো। যেখানে শুধুই বিশ্বাস, ভরসা , আর একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির ঢেউ এ পরিপূর্ণ।
তাই প্রথম ভালোবাসাই যে শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা তাকে কখনোই ভোলা সম্ভব নয় যে কথা ঠিক নয়। বরং দ্বিতীয় ভালোবাসাই হলো সবচেয়ে সুন্দর , সবথেকে প্রকৃত।
0 মন্তব্যসমূহ