কাগজের নৌকায় ভাসিয়ে দিলাম আমার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, দিগ দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক আমার মনের গল্প( self introduction blog)

 

Hill


15 মার্চ , 2024


রাত নামে যখন গোটা শহর জুড়ে...
আমার ইচ্ছেরা তখন স্বপ্নের পাহাড় গড়ে।


( ছবি : নিজস্ব , স্হান : দার্জিলিং)



সুপ্রভাত বন্ধুরা। একটা মিষ্টি মধুর নতুন সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে  আবার একটা নতুন ব্লগ নিয়ে সকাল সকাল আপনাদের কাছে চলে এলাম।  আজকের ব্লগটা আমি খুব সকালে লিখতে বসেছি। এখন বাজে সকাল ৬ টা ১৫ মিনিট। ঘুম থেকে উঠেছি ভোর ৫:৩০ নাগাদ। ভাবলাম এখনই একটা ব্লগ লেখা যাক। তাই শুরু করে দিলাম। ব্লগ লেখা,  মানে লেখার কি কোনো সময়জ্ঞান থাকে নাকি মানুষ সিগ্ধ মেজাজে থাকলে লেখে, আনন্দে লেখে, কষ্টে লেখে, অভিমানে লেখে মানুষ বলতে গেলে প্রত্যেকটা পরিস্থিতি তেই লেখে। লিখে তার মনের ভাবটা প্রকাশ করে, সুখ দুঃখ টা ভাগ করে নেয় অচেনা অজানায়। এতে এক অনন্ত সুখ আছে। যে একবার এই সুখ টা পেয়ে গেছে তার কাছে আর বন্ধুর অভাব হয় না। তখন এই লেখনী ই তার সই হয়ে যায়। সারাক্ষণ এর সাথী হয়ে যায়। আমিও ঠিক তাই। গতকাল আমার জন্মদিন ছিল। জন্মদিনের একটা ব্লগও দিয়ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে কেউই আমায় একটাও উইশ করে নি। কেন আমার সাথেই এইরকম টা হয় কি জানি। মনে তো একটু দুঃখ পেয়েছি। যাক, আমার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন না একদিন ঠিক আপনারা কমেন্ট করবেন।


আপনারা সকলে কেমন আছেন? ভালো আছেন তো? সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আপনাদের সার্বিক সুস্থতা কামনা করি। 


গতকাল আমি রাতে ভাবছিলাম অনেকেই আমার ব্লগে আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমি আজকে নিজের সম্পর্কে কিছু  বলতে চাই। যার মাধ্যমে আমার  সম্পর্কে আপনাদের একটু হলেও ধারণা জন্মাবে।


আমার পরিচয় : 


আমি তনুশ্রী দাস। আচ্ছা , আমি বিবাহিতা, গৃহবধূ। আমার বয়স একত্রিশ বছর।


Singur


( সিঙ্গুর স্টেশন এর ছবি দুই দিন আগে তোলা ছবি। সন্ধ্যা বেলার )

আমার জন্ম : আমার ১৪ মার্চ  এ জন্ম। বিবাহের পূর্বে আমার বাড়ি ছিল সিঙ্গুর এ। অর্থাৎ আমার বাবার বাড়ি সিঙ্গুর। আমি সিঙ্গুর রুরাল হাসপাতালে হয়েছি। আমি আমার বাবা , মা যের একমাত্র সন্তান। 


প্রথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়:




মাত্র তিন বছর বয়সেই আমার বাবা আমায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এখনকার মত তখন এত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছিল না। আই সি ডি এস স্কুলে পড়তাম তখন,  যাকে বলা হয় খিচুড়ি স্কুল। তাছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম যে একদমই ছিল না তা নয়। সিঙ্গুরের মধ্যে তখন খুব কম ছিল। আমার ছোটবেলাকার সময় আমার বয়সী যারা ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়তো তারা শ্রীরামপুরে ভর্তি হত। আর আরো সত্যি কথা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর মতো আমার বাবার সামর্থ্য ও ছিল না। আমার বাবা হলেন পেশায় একজন দর্জি। সায়া অর্থাৎ পেটিকোট তৈরির ছিট বাবা কলকাতা থেকে নিয়ে আসতেন। আর সেগুলো সায়ার মাপে কেটে সেলাই করে বিক্রি করতে যেতেন বর্ধমান এ। ব্যাপার টা বুঝতে পারছেন? আমরা থাকি সিঙ্গুর। এটা হুগলি জেলায়। আর বাবা সায়ার ছিট আনতেন কলকাতায়। আর বিক্রি করতেন বর্ধমান। কাজের সূত্রে বাবাকে তিন জেলায় ঘুরতে হত। এখনো তাই করছেন। বলি এত কিছু আর এই বয়সে করতে হবে না। কিন্তু শোনেন না। নিজের রোজগারে মাথা উঁচু করে উনি বাঁচতে চান। হয়তো আমার উপার্জন এর অর্থ নিতে ওনার ভালো লাগবে। যাই হোক আমার এলাকার ই একটি স্কুলে প্রাথমিক স্কুলে আমি ওয়ান এ ভর্তি হই। তারপর এডমিশন টেস্ট দিয়ে আমাদের এখানকার একটি নামকরা উচ্চবিদ্যালয় এ আমি ভর্তি হই।

এই স্কুল টা সত্যিই নামকরা ছিল। এখনো আছে। আমি পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম। স্কুল জীবন পাশ করে কলেজ জীবনে প্রবেশ করলাম। তখন পড়াশোনামূল্যটা আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারি। আমি মাধ্যমিক পাস করি 2008 আর উচ্চ মাধ্যমিক 2010।


কলেজ জীবন : আমি বাংলায় অনার্স নিয়ে উত্তরপাড়া কলেজে ভর্তি হই। এটা হুগলি জেলায়। আমি প্রথম থেকে চেয়েছিলাম ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করবো। বরাবরই ইতিহাস ই ছিল আমার প্রিয় সাবজেক্ট। একদম ছোট থেকেই আমার ইতিহাস এর প্রতি খুব টান ছিল । আমি ইতিহাস এর রোমাঞ্চকর ঘটনা গুলো কে নিজের কল্পনায় যেন স্বপ্নের মতো দেখতে পেতাম।

চরিত্র গুলো, ঘটনা গুলো সব যেন চোখের সামনে ফুটে উঠত। ভেবেছিলাম বড় হলে ইতিহাস নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাব। কিন্তু সবাই এর সব স্বপ্ন তো পূর্ণ হয় না। আমার ও হয় নি। ভাগ্যের পরিহাসে আমি ইতিহাস এ কম নম্বর পেয়েছিলাম উচ্চ মাধ্যমিক কে। তাই বাংলা নিয়ে পড়া শুরু করি। বাংলার প্রতিও আমার টান ছিল। যাই হোক এইভাবেই এগিয়ে চলছিল জীবন। কিশোরি বয়সে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রেম এলো, ভালোবাসা  এলো। সে সব টেকেও নি। তারপর  গ্রাজুয়েশন দিই। খুব ভালো নম্বর পেয়েই পাশ করি। 2013 তে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়। কিন্তু কোথাও যেন পড়ার এনার্জি টা হারিয়ে ফেলি। মাস্টার্স টা আর করা হলো না। 

শুরু হলো আমার জীবনের নতুন এক অধ্যায়।


আই টি আই : 

এরপর আমি উচ্চ শিক্ষার কথা না ভেবে জীবনের ভুল ভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আই টি আই তে ভর্তি হয়ে যাই। ইলেকট্রনিক স নিয়ে। এবার আর্টস থেকে চলে আসি সায়েন্স এ। আমি তখন নিজেকে সব সময় কাজে ব্যস্ত রাখতে চাইতাম। মাস্টার্স এ ভর্তি হলে তো প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার দরকার পড়তো না। আর বাড়ি তে থাকলে পড়াশোনা কম হবে ফেসবুক ঘাটা বেশি হবে। তাই এই সিদ্ধান্ত। আই টি আই তে সোম  থেকে শুক্র প্রতিদিন যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। আর আমাদের বাড়ি থেকে যেতেও অনেকটা সময় লাগতো। বাড়ি থেকে বেড়াতাম সকাল আট টা। আর ফিরতাম সন্ধেয় ৭ টা। তবে হ্যাঁ ছোট বয়সের ভুল আমার জীবন এ অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি আইটিআই কমপ্লিট করি 2015 তে। ওই বছরই ডিসেম্বর এ আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমি এই কারণেই একটা ভালো চাকরিও পেলাম না। 


কিন্তু আমার মনের অনুভূতির অব্যক্ত কথা গুলো খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারি। নাই বা পেলাম চাকরি। নিজের অনুভূতি গুলো আমি স্বতন্ত্র ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি। আমি আমার এই যোগ্যতার নিরিখেই এগিয়ে যাব।  


আবার ফিরে আসি মূল কথায়, 

এরই মাঝে গ্রাজুয়েশন দেওয়ার সময় আমার জীবনে প্রেম আসে । ভালোবাসা শুরু হয়। বর্তমানে সেই প্রেমিক ই আমার জীবনসঙ্গী। সেই প্রেম কাহিনীও একদিন আপনাদের শোনাবো। 

আর্টস থেকে সায়েন্স গিয়ে যে কি ভুলটাই করেছিলাম আর কি বলবো। 


বর্তমানে আমাদের বিবাহিত জীবন ৯ বছর অতিক্রম করলো। এখন আমি একজন দায়িত্বশীল মা। আমার একটি ছয় বছরের ছেলে আছে। নাম আর্য্য। আমার শশুর বাড়ী তে শশুর মশাই, শাশুড়ি মা আমার বর মশাই ও আমার দুস্টু একটা ছেলে নিয়ে আমার ভরা সংসার। আমার ঠাকুর শাশুড়ি বেঁচে ছিলেন। গত তিন মাস হলো উনি আমদের ছেড়ে পরলোক গমন করেছেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন উনি। 


জীবনে অনেক বন্ধু পেয়েছি। স্কুল জীবনের, কলেজ জীবনের , পাড়ার বন্ধু। এখন তাদের সাথে আর দেখাই হয় না। এখন মানুষের সাথে মানুষ ভালো ভাবে মিশে দুটো কথা বললে ভালো মানুষী র সুযোগ নিয়ে তারা এর কথা তাকে তার কথা ওকে এই ভাবে তিল কে তাল করে বলে ঝগড়া লাগায়। তাই বেশি কথা না বলাই ভালো। তার থেকে অনলাইন এ নিজের অনুভূতি , ভালো লাগা গুলো শেয়ার করা অনেক ভালো। এটা তো খুব ভালো একটা মাধ্যম। আমি নিজেকে খুব লাকি মনে করি নিজের অব্যক্ত গল্প গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে।


সময় যতই খারাপ আসুক ভেঙে পড়বেন না কোনো পরিস্হিতি তেই , শুধু উপরওয়ালার ওপর ভরসা রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

শুধু উপরওয়ালার কাছে ভরসা রাখুন আসল বিচার তো তিনিই করবেন। 

অযথা প্যানিক হবেন না। নিজের ভালো লাগা গুলোকে গুরুত্ব দিন। দেখবেন খারাপ সময় গুলো, খারাপ মানুষ গুলোকে নিয়ে ভাবার সময়ই পাবেন না। 

আর নিজের ভালো লাগা গুলো নিয়ে জীবন কাটালে জীবন তো সুন্দর মনে হবেই, উল্টে আপনার চোখে মুখে সে খুশি ধরা দেবে। দিন দিন আপনি এভারগ্রিন হয়ে যাবেন। 


নিজের ইচ্ছেশক্তি টাই আসল। আমরা কেউই দুর্বল নই। জেদ, অদম্য  ইচ্ছে থাকলে আমরা যে কোনো কিছুই করতে পারি । 


জীবন টা তো একটা ক্যানভাসের মতো। আর প্রতহ নিজেকে নিত্য নতুন রূপে রাঙিয়ে নেওয়াই তো জীবনের বেঁচে থাকার মূল মন্ত্র। 


আমরা শুধু স্বপ্ন ই দেখে যাই, কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সেই স্বপ্নের পিছু ছুটি কয় জন? 


সর্বোপরি নিজেকে ভালোবাসুন। আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে সবচেয়ে দামি। 





আজ এই পর্যন্তই। আবার আগামী কাল আসব নতুন ব্লগ নিয়ে। সুস্থ থাকুন।


(ছবি : নিজস্ব) ( আমার আমি ভীষণ দামি।)






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ