আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এই সুন্দর মুহূর্ত গুলো আসে। ( The beautiful moments of our life) যা আমাদের বাঁচার প্রেরণা যোগায়

 



Good morning
( ভোরের আকাশ এর ছবি। দেখছেন ভোরের আকাশ কত টা স্নিগ্ধ, কতটা শান্ত। সুপ্রভাত সকলকে।)
ছবি : নিজস্ব

16 মার্চ 2024


নমস্কার বন্ধুরা, আমি তনুশ্রী। এসে গেছি আবার একটি নতুন ব্লগ নিয়ে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এর কাছে আপনাদের সুস্থতা কামনা করি। আজ নতুন একটা সকাল, নতুন একটা জীবন নতুন কর্মদক্ষতা নিয়ে আমরা প্রত্যেকে আজকের দিনটা যাপন করছি। চলার পথের কিছু গল্প, অনুভূতি, আবেগ নিয়ে আমার ব্লগ শুরু করলাম। 


আজকেই আমার বাবার বাড়ি থেকে আমি শশুর বাড়ি চলে যাব। ছুটি শেষ। আবার ব্যস্ত জীবনে প্রবেশ করতে হবে। ডেলি রুটিন মেনে কাজ করতে হবে। সেখানে সময় খুব মূল্য বান। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ টা না করতে পারলেই, কাজ আর করে শেষ করা যাবে না। এখানে যেমন মায়ের কাছে এই কটা দিন শুয়ে, গড়িয়ে , আনন্দ করে হুল্লোড় করে কাজ না করে দিন কাটিয়েছি এখন ভয় হচ্ছে কি জানি ওখানে গিয়ে কাজ করতে পারবো তো নাকি কুঁড়েমি লাগবে কি জানি! আপনাদেরও বাবার ঘর থেকে যাওয়ার পর প্রতিবার ই এইরকম মনে হয় তাই না? আসলে আমাদের যত বছর রেই পুরানো বিয়ে হোক না কেন প্রত্যেক বারেই বাবার বাড়ি থেকে যাওয়ার পর খুব মন কেমন করে। শশুর বাড়ী পৌঁছে প্রথম দু তিন দিন তো কেমন কেমন লাগে । এদিকে মা বাবার মন টাও খুব খারাপ লাগে। কি আর করা যাবে এটাই তো নিয়তি! মেয়েদের জীবন। 


আজ কের দিন টা তাই আমার মন খারাপের দিন। আবার আমরা যতই বলি বাড়ি ফিরে অলস লাগবে আসলে কি তাই হয়? বাড়ি ফিরে ঘর দোর এর অবস্থা দেখলে আমাদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। সঙ্গে সঙ্গে ঘর দোর মোছা ঝুল ঝাড়া , জামা কাপড় ক্লিন করা কাজের যেন কোনো শেষ নেই। আর আমাদের তো গ্রামে ঘরে না আছে ওয়াশিং মেশিন, না আছে ভ্যাকুম ক্লিনার , ডিশ ক্লিনার, এমনকি হেল্পিং হ্যান্ড ও পাওয়া যায় না। সবই নিজের হাতে করতে হয়। তাই, আপনা হাত জগ নাথ। লেগে পরি কাজে। 


গত কাল রাতে বিরিয়ানি রান্না করেছিলাম। খুব একটা ভালো হয় নি। তাই ছবি ও তোলা হয় নি। তাই আজ সকালে ব্রেকফাস্ট এ মুড়ি তরকারি খেলাম।

Muri, fulkopir torkari


এটা আর্য্যর থালা। মুড়ি আর ফুলকপি আলুর তরকারি। 

আমি এখন ব্লগ করছি ছেলে এখন আঁকছে। ও খুব আঁকতে ভালোবাসে। ওর মনে যা আসে তাই আকে। ছবি দিলাম।


আমাদের জীবনে যেমন কিছু মুহূর্ত খুব কষ্টের, খুব দুঃখ এর, তেমন এমন কিছু মুহূর্ত আছে যা আমাদের জীবনে চির স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমাদের বয়স যতই বাড়ুক না কেন এই মুহূর্ত গুলো আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না।


১: জীবনে প্রথম কাউকে ভালোলাগা : ( the beautiful moments of our life)


আমরা যতই একটা বয়সের পর পরিণত হয়ে যাই না কেন কিন্তু প্রথম জীবনের ভালোলাগা আমরা কখনোই ভুলতে পারি না। সেই সদ্য কিশোর বয়সের প্রেম , তাতে না ছিল সেই ভালোলাগার প্রাপ্তি, না ছিল কোনো চাহিদা। শুধু সেই ভালোলাগার মানুষ টাকে একবার চোখের দেখা দেখার জন্য আমাদের কত উন্মাদনা কাজ করত। যে পথে সে স্কুল কিংবা, টিউশন যাবে তার যাওয়ার সময় জেনে অন্তত আধ ঘন্টা আগে থেকে সেই দাঁড়িয়ে থাকা, তাকে একপলক দেখতে পেয়ে বুকের ভিতর এর হার্টবিট যেন বেড়ে যেত। ভাগ্য ভালো থাকলে একবার যদি দুজনের চোখ এ চোখ মিলিয়ে যেত সেই দিনটা হয়ে থাকতো স্বপ্নের মতো। আর সেখান থেকেই উৎপত্তি হত কবিতার। পাতার পর পাতা লেখা হত তাকে নিয়ে। আর বাবা ভাবতেন কি ভালো পড়াশোনা করছি আমরা। লেখায় খুব মন দিয়েছি। কি তাই তো? জীবনের প্রথম ভালোলাগার সময় কাল টা আমরা এই ভাবেই ফাঁকি দিয়ে ফেলি পড়াশোনায়। বলবো কি বলবো না করে বলেও হয়ে ওঠে না নিজের ভালোলাগার মানুষ টাকে নিজের মনের কথা গুলো। কালের নিয়মে দিন এগিয়ে চলে, এইভাবেই না বলা অব্যক্ত কথা গুলো মনেই রয়ে যায়। জানতে পারে না ভাললাগার মানুষটা। হয়তো সেইদিনগুলোতে পাগল এর মত কেন দাঁড়িয়ে থাকতাম সে বুঝতো হয়তো বা বুঝতো না। প্রথম ভালোলাগার সময়ক্ষন, মানুষটা একসময় স্মৃতির পাতায় এসে আবদ্ধ হয়। সেই প্রথম জীবনের  ভালোলাগায় কোনো ঠকবাজি থাকে না, কোনো শারীরিক চাহিদা থাকে না। থাকে শুধু মিষ্টি মধুর কিছু স্মৃতি। তাই এই গুলি আমাদের জীবনের সুন্দর মুহুর্ত হয়ে গেঁথে থাকে। যা কখনো ভোলার নয়। মনে পড়লে খুব নস্ট্যালজিক হয়ে পরি।


টিপটিপ বৃষ্টির দিনগুলোতে একা থাকার মুহূর্ত গুলো : 

মেঘলা দিনে সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টি , স্কুল যাওয়ার মজাটাই ছিল অন্য লেভেল এর। আমাদের গ্রামের মাটির রাস্তা গুলো পুরো জলে ভোরে যেত। এক হাটু জল এ স্কুল থেকে ফেরা, কচু পাতা মাথায় দিয়ে ছাতা বানানো একে ওকে সে তাকে জলে ঠেলে দেওয়া উফঃ! সেই সব স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। আজকাল তো গাড়ি তে সবাই স্কুল যাতায়াত করে। এই সব মুহূর্ত গুলো উপভোগ করার সুযোগ ই নেই। 


আর একটু যখন বড় হলাম কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে উপনীত হলাম, তখন বৃষ্টি আর এক অনন্য রূপ নিয়ে আমার কাছে ধরা দিল। সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টি সাথে এক কাপ গরম চা, আর রবি ঠাকুর। কি দারুন কম্বিনেশন। কখনো শেষের কবিতা , চোখের বালি তে মন প্রাণ রাখতাম ডুবিয়ে। কি অবিস্মরণীয় সে ই মুহূর্ত। এ কি ভোলার? আজ কাল কার ব্যস্ত জীবনে পড়ার সেই ভাবে সময় কোথায় পাই। এখন মেঘলা দিন মানে বৃষ্টির দিনে মানে ইউনিক কিছু রেসিপি করে দাও। বর মশাই, ছেলের মন যোগাও। এটাই এখন বৃষ্টি দিনের রুটিন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু কেমন পাল্টে যায় বলুন। কিন্তু আমাদের জীবনের সব মুহূর্ত গুলো অমলিন হয়ে যায় না স্মৃতিপটে থেকে যায় এইরকম কিছু কিছু মুহূর্ত। থাক না, এই সকল মুহূর্ত গুলো বন্দি। এই গুলোই তো  আমাদের একলা সময়ে কিংবা নিদ্রাহীন গভীর রাতের সঙ্গী হয়ে আমাদের কিছুটা হলেও নিরলস আনন্দ প্রদান করে। 



৩: রঙীন সেই মুহূর্ত : 

সেই দিনটার কথা ভুলি কি করে!-বছর বারো আগের কথা। প্রথম যেদিন আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করতে যাই ও আমার জন্য বই উপহার দিয়েছিল। ছবিটা তোলা ছিল বইটার। কিন্তু বারো বছর আগের তোলা ছবি তো খুঁজে পেলাম না। বই টা ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর লেখা উপন্যাস এর বই । সাথে কয়েকটি গোলাপ আর চকলেট। আমাদের প্রেমালাপ হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। আমরা কেউ ই কাউকে আগে দেখি নি । তাই বলা যেতে পারে আমার প্রেমিক আমি বই উপহার দিয়ে আমার মুখ দেখে ছিল। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার অবশ্যই বই। আর প্রিয়জনের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম উপহার বই এটা কখনো ভোলার নয় 


৪: সেই প্রথম আঙুল ছোঁয়া : 


 আমি তখন নয় মাসের প্রেগনেন্ট। রাত ১১:৩০। আমি যেখানে থাকি ১১:৩০ টা মানে ভালোই রাত। রাতে খেয়ে দিয়ে শুয়েছি। হটাৎ ঘুমের মধ্যে অনুভূত হয় আমার জল ভাঙছে। চোখ খুলে দেখি তাই তো ! কিন্তু আমার ডেলিভারি ডেট তখন নয়। তড়িঘড়ি আমায় নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমি তখন ছিলাম বাবার বাড়ি। আমার বর মশাই বাড়ি। ফোনে ওকে বলতে ও তো খুব ভয় পেয়ে যায়। এত রাতে ! যা হোক করে একটা এম্বুলেন্স করে আমায় এম্বুলেন্স করে আমায় এম্বুলেন্স করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বর মশাইকে ওতো রাতে ওখান থেকে আমার পরিবারের লোকজন আস্তে বারণ করেন। কারণ আমাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। আর ওতো রাতে কেউ ভাড়া আসতে চাইবে কিনা সন্দেহ। আমার বাবা, মা, মামা, জেঠিমা আমার সঙ্গে যান। আমি নার্সিং হোম এ পৌঁছাই রাত ১২: ৫০ এ। ডাক্তাররা এক মুহূর্ত ওয়েট না করে আমায় সিজার করেন। রাত ১:০৮ এ আমার জীবন আলো করে আসে আমার রাজপুত্র। আমার ছেলে। ডাক্তাররা যে মুহূর্তে আমার সন্তানকে আমায় দেখায় সেই মুহূর্ত টা পৃথিবীর সেরা অনুভূতি, ভগবানের দেওয়া সেরা উপহার, । সেই মুহূর্তটা জীবনের অন্তিম কাল অবধি মনে থাকবে যখন আমি আমার সন্তান এর সেই ছোট্ট আঙুল গুলো স্পশ করতে পারলাম। এটাই একটা মেয়ের জীবনের সেরা উপহার। এ মুহূর্ত কখনো ভোলার নয়।


কিছু মুহূর্ত সম্পূন্ন নিজস্ব :

নিস্তব্ধ রাস্তায় একা হেঁটেছেন কখনো ? মাথার ওপর খোলা আকাশ, চিকমিক করছে তারা। অনন্ত রাস্তা হাঁটা, কোনো গন্তব্য নেই, শুধু আছে বিচ্ছেদের যন্ত্রনা, না পাওয়ার বেদনা আর তাকে না বলতে পারা কিছুকথা। 

সব শেষ হয়ে যাওয়ার সাথী এই শুনশান রাতের রাস্তা। সেই স্মৃতি গুলো ও সুন্দর হয়। ভাবলেও অবাক লাগে আমিও কষ্ট পেয়েছি একসময়, ঠকে গেছি। হেরে গিয়েছিলাম কখনো না কখনো। এই গুলো ও এক ধরণের সুখেরই স্মৃতি। অন্তত আমার কাছে। কারণ যার জন্য কাঁদা কষ্ট সে তো একদিন ঠকিয়েই গেছে। আমি বেচেঁ গেছি প্রতারক এর হাত থেকে। 


বৃষ্টির দিনে মনের মানুষটার সাথে ঘুরতে যাওয়া কিংবা মুহূর্তটা উদযাপন : 

কোনো এক ঝমঝম বৃষ্টির দিন । সাথে তুমি আর আমি । এইরকম ও এক স্মরণীয় দিন আমার জীবনে এসেছিল। কলেজ কেটে প্রেমিক এর সাথে ঘুরতে গেছি। প্রেমিক এখন বর্তমানে আমার বর মশাই। আর প্রেমিক ও এসেছিল অফিস কাট করে। পার্কে গিয়ে বসেছি। আর ঝমঝম বৃষ্টি। এমনিতেই সেই দিনটা ছিল মেঘলা দিন। বর্ষা কাল। বেলা এগারোটা থেকে বৃষ্টি আরম্ভ । এত ভালো মুহূত কেটেছিল। খুব সুন্দর সে মুহূর্ত। আমারপ্রেমিক ছাতা মাথায় দিয়ে ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন এনেছিল। সামনে চির সবুজ প্রকৃতির দৃশ্য। এর ই মাঝে আমাদের গল্প, আড্ডা, স্বপ্ন বুনন, রাগ অভিমানের খেলা, খাওয়া দাওয়া সব হয়েছিল। রিম ঝিম বৃষ্টি সারা দিন ধরেই চলছিল। সেই দিনের কথাও ভোলা সম্ভব নয়।


এমনই মানুষের জীবনের অনেক মিষ্টি মধুর মুহূর্ত আছে যা সে ভুলতে পারে না । মনের গহ্বর এ যত্ন করে লালন করে। কি আপনাদের জীবনেও আছে তো এইরকম মুহূর্ত। আমি জানি আমার এই ব্লগ পড়তে পড়তে আপনারাও সেসব সুখ এর স্মৃতিতে ডুব দিয়েছেন। ঠিক আছে। আজ এই পর্যন্তই । আবার আগামী  কাল আসবো। ততক্ষণ সুখের স্মৃতি গুলোর সাথে নিজেদের একটু সুন্দর মুহূর্ত গুলো আপনারা উপভোগ করুন। চাইলে শেয়ারও করতে পারেন আমার সাথে। কমেন্ট বক্স এ। 







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ