দয়ারাম আর প্রীতরাম ছিল দুই ভাই। দয়ারাম ছিল খুবই গরীব। আর প্রীতরাম এর অবস্থা ছিল বেশ স্বচ্ছল। প্রীতরাম তার দাদাকে ঠকিয়ে তার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছিল। তাছাড়া প্রীতরাম এর ছিল বিশাল বড় কাঠের ব্যবসা। প্রীতরাম তার স্ত্রীকে নিয়ে কোঠা বাড়িতে বসবাস করত। বেশ আয়েশে, বিলাসিতায় তার জীবন অতিবাহিত হত। অন্যদিকে দয়ারাম এর তেমন কোনো রোজগার ছিল না। বোন জঙ্গলে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে কোনো ক্রমে সংসার চালাত। কোনোদিন আধপেটা, কোনদিন ফ্যান, ভাত খেয়ে সংসার চলত দয়ারাম ও তার বউ এর। দাদার এইরকম আর্থিক শোচনীয় তায় পাশেও দাঁড়াত না প্রীত রাম। কিনতু দয়ারাম এর যখন বছর দশেক বয়স, তখন ই ওর বাবা এক অসুখে মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় দয়ার বাবা প্রীতরাম এর ভালো মন্দ সব দায়িত্ব তাকে দিয়ে যায়। দয়ার বাবারই ছিল কাঠের গোলাটা। সেটা তখন ছোট ছিল। এখন প্রীতরাম এর আমলে পিতৃদত্ত এই ব্যবসা ফুলে ফেলে ওঠে। দয়া কথা রেখেছিল। মাত্র দশ বছর বয়স এই দয়া কাঠের কাজ আস্তে আস্তে শিখে নিয়েছিল কর্মচারী দের কাছ থেকে। ছোট থেকেই হাল ধরেছিল সংসারের। এরপর আস্তে আস্তে প্রীতরাম বড় হতে থাকে। অন্যদিকে দয়া রাম বিয়েও করে নেয়। বেশ চলছিল । কিন্তু প্রীতরাম বড় হতেই দাদার থেকে ব্যবসার সব কিছু বুঝে নিতে চায়। দয়ারাম কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই ব্যবসার খুটিনাটি সম্পকে সব কিছু জানায় প্রীতরাম কে। দয়া রাম এর সময় ব্যবসার তেমন কিছু উন্নতি হয়নি। তবে বাবার কথা টুকু রেখেছিল দয়া। অভাব আসুক, বিপদ আসুক তবু বাবার ব্যবসা টুকু জিইয়ে রেখেছিল।
প্রীতরাম ব্যবসার গদিতে বসা মাত্রই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। প্রীতরাম দু নম্বরি করে অসৎ উপায়ে টাকা ইনকাম করতে শুরু করে। দয়াকে ভুল বুঝিয়ে তার প্রাপ্ত অংশটুকুও না দিয়ে তাকে দূর করে দেয়। এবং নিজে বিবাহ করেন। কোঠা ঝকঝকে নতুন বাড়িতে প্রীতরাম বউ নিয়ে আসে। এইভাবেই প্রীতরাম এর হেসেখেলে আর দয়া রাম এর কোনোমতে দিন কাটে।
একদিন সকাল বেলা দয়ারাম গিন্নিকে বলে, - কোয় গো বউ ঘরে যা কিছু দানা পানি আছে দাও দিকইন। আমি খেয়ে দিয়ে একটু জঙ্গলে যাব কাঠ কাটতে। দেখি আজ ভাগ্য সহায় হয় কিনা।
দয়া র বউ গঙ্গারানী তখন হাতপাখার অনবরত হওয়া করে কাঠের উনুন ধরাতে চেষ্টা করছিল। তার গলা শুনে গঙ্গারানী মেজাজ হারিয়ে সপ্তম এ সুর ছড়িয়ে বলল- আদিখ্যেতা র কথা কোয় নি তো.... নিজের সাজানো ব্যবসাটাকে খুইয়ে ভাইকে বিলিয়ে দিয়ে উনি জঙ্গলে চললেন কাঠ কাটতে। ঘরে কিছুটি নেই। আমার হয়েছে যত জ্বালা। দু বেলা দু মুঠো মুখে যোগান দিতে হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে। ওই দিকে দেখো ওনার আদরের ভাই ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং তুলে দুধ দিয়ে পাকা আম দিয়ে মুড়কি মেখে খাচ্ছে।
গঙ্গারানীর মুখ ঝামটা খেয়ে দয়া রাম বড্ড মুষড়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো, বলছি তো বউ আজ কাঠ কেটে শহরে বেচে আসবো। বেশ অনেকগুলি টাকা হবে। কাল সকালে পবন জেলের থেকে এক খান টাটকা পুকুরের মাছ কিনবো। দেখবে কাল আমাদের ভালো খাওয়া দাওয়া হবে। দেখবে গঙ্গা একদিন আমাদেরও সুদিন ফিরবে গো। এই আমি বলে রাখলাম। তোমার চোখের জল আমি মুছিয়েই ছাড়বো।গঙ্গারানী মুখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল খাবার আনতে।
Bangla golpo| rupkothar golpo| Bengali story
যা হোক দুটো খানি ফ্যান ভাত খেয়ে দয়া বেরিয়ে পড়ল। কোচড়ে বেঁধে নীল দুটো খানি শুকনো মুড়ি। ফিরতে বেলা হলে খিদে পেলে খাবে বলে। জঙ্গলের দিকে চলল দয়া। হাঁটতে হাঁটতে দয়া শুনতে পেল একজন বৃদ্ধা বুড়ির কান্না। সামনে এসে দেখলেন বুড়ি মা টি একটি বাটি নিয়ে বসে আছেন। দয়া দেখা মাত্রই কাঁপা কাঁপা গলায় তার অর্তি জানাল, - বাবা, বড় খিদে পেয়েছে। কাল থেকে কিছুটি খাই নি। একটু কিছু খেতে দেবে বাবা.... ভগবান তোমার মঙ্গল করবে। দয়ার মনটা কেমন করে উঠলো। তার কোচড়ে থাকা মুড়ি খানি বুড়ি মা কে দিয়ে দিল সে। দয়া আবার হাটতে লাগলো , দেখলো এক কাঠুরিয়া গাছের নিচে বসে কাঁদছে। তাকে ডেকে দয়া জিজ্ঞাসা করলো , তুমি কাঁদছো কেন?
সে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমার কুঠার টা ওই জঙ্গলের ঐখানটা রেখেছিলাম। রেখে আমি সামনের ওই পুকুরটায় একটু জল খেতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি সেটি আর নেই। এখন আমার কি হবে! আমার গরিবের সংসার। এবার আমি কি দিয়ে কাঠ কাটবো। দয়া ভেবে দেখলো ওর চার- চারটে কুঠার আছে । একটা ওকে দিলে দয়ার কোনো অসুবিধা হবে না। ওদিকে এই বিপদগ্রস্ত লোকটির উপকার হবে। এই ভেবে দয়া তার কাছে থাকা কুঠার টি তাকে দিয়ে দিল।
দয়া দেখলো আজ আর কাঠ কাটা হবে না। কুঠার না থাকলে তো আর কাঠ কাটা যাবে না। ও তখন বাড়ির দিকে আবার রওনা দিল। ফিরতে ফিরতে দেখলো একটি লোক গাছ তলায় বসে বসে কাঁপছে। দয়ার মনে বড্ড দুঃখ হলো। সে এগিয়ে গিয়ে তার পরনের জামা খানি তাকে দিয়ে এলো। এবং সে নিজে একটি গামছা গায়ে জড়িয়ে বাড়ি ফিরল। অসময়ে দয়াকে দেখে গঙ্গারানীর চক্ষু ছানা বড়া।
- কি হলো গো। তোমার এই অবস্থা কেন গো?
গঙ্গার চিৎকারে র আওয়াজ পেয়ে পাশের বাড়ি থেকে প্রীতরাম ও তার বউ উকি মেরে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো।
দয়া ভয় মিশ্রিত গলায় বলল, আমি আমার পরনে থাকা জামা খানি এক ভিক্ষুক কে দিয়ে এসেছি। উনি ঠান্ডায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। আর শুকনো মুড়ি গুলো এক অসহায় বুড়িকে। উনি কাল থেকে কিছু খান নি।
- আর কুঠার খানি কাকে বিললে শুনি।
-এক কাঠুরিয়ার কুঠার হারিয়ে যায়। তাকে দিয়ে এসেছি। আমার তো আছে অন্য তাই...
থাক আর আমায় বলতে হবে না। তোমার এ চিরদিন এর বড অভ্যাস। আমি তোমায় একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিলাম কাল যদি ঘরে না চাল, ডাল এনেছ তাহলে আমি যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব।
Bangla golpo| rupkothar golpo| Bengali story
দয়া ও গঙ্গার কথা গুলো শুনে প্রীতরাম বড় খুশি হলেন। বললেন, দাদা বরাবর ই এইরকম ই বোকা। তাই তো দাদাকে ভুল বুঝিয়ে সব সম্পত্তি, ব্যবসা আমার নামে করে নিয়েছি। এবার ওর বসত বাড়িটুকুও নিজের নামে করে নেব। প্রীতরাম এই বলে উচ্চ স্বরে হাসতে থাকলো।
পড়দিন দয়া আবার ভোর ভোর বেরিয়ে পড়লো কাঠ কাটতে। সারাদিন পরিশ্রম করে অনেক গুলো কাঠই ও কাটলো। সেগুলো বোঝাই করে সেগুলি শহরে বিক্রি করলো। বেশ অনেকগুলো পয়সায় হলো। দয়া খুব খুশি। এবার সে গঙ্গার মুখে কাল একটুকরো মাছ দিতে পারবে। কাল বেশ জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে। দয়া সারাদিন কাঠ কেটে সে গুলি বোঝাই করে শহরে বেচে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই হটাতেও পারছিল না। সে মনে মনে ঠিক করলো সামনেই ওই বড় বট গাছটার র তলায় একটু জিরিয়ে নেবে। বট গাছের তলায় বসা মাত্রই সে ঘুমিয়ে পড়লো। সেই সুযোগে একটি বদমাইশ লোক দয়ার পাশে রাখা পয়সার পুটলি নিয়ে দৌড় দিল। দয়া কিছুটি টের পেল না।
Bangla golpo| rupkothar golpo| Bengali story
ওদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। দয়ারাম বাড়ি না ফেরায় গঙ্গারানী উতলা হয়ে উঠলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো। তখনই গঙ্গারানী র ঘরের পাশ দিয়ে প্রীতরাম যাচ্ছিল কাঠের গোলায়। বৌদির কান্নার গলা শুনে ঘরে ঢুকলেন, তখনো গঙ্গারানী প্রীতরাম কে দেখে নি। নিজের মনেই কাঁদতে থাকলো, কেন যে আমি কাল ওকে কড়া গলায় বললাম পয়সা না আনলে, চাল, ডাল না আনলে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব। মানুষটা মনে হয় অভিমান করে ঘরে এলো না। প্রীতরাম এ কথা শুনে বললো, হয়তো তাই হবে বৌদি। দাদা মনে হয় অভিমান করেই চলে গেছেন । আর ফিরবেন না। গঙ্গারানী চমকে উঠলেন। প্রীতরাম কি যেন কি বুঝে ঘর থেকে বেরিয়ে শহরের রাস্তায় দাদাকে খুঁজতে হাঁটা দিল।
Bangla golpo| rupkothar golpo| Bengali story
একটা সাধুবাবার ডাকে দয়ার ঘুম ভাঙল। সামনেই সাধুবাবাকে দেখে দয়া চমকে উঠলো। তাকে প্রণাম করল। সাধুবাবা তাকে আশীর্বাদ করলেন। আর বললেন তোমার পরিশ্রম এর ফল পয়সা গুলো একজন অসৎ ব্যক্তি চুরি করে নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি তোমায় দুটি পুটলি দিতে চাই। ধরে নাও এটা আমার তোমায় দেওয়া আশীর্বাদ। তুমি ফিরিয়ে দিল না কিন্তু। এরপর সাধুবাবা তাকে দুটো পুটলি দিল। এবং তাকে খুলে দেখতে বললো। দয়া দেখলো একটিতে সোনার কয়েন এ ভর্তি। ও একটিতে রুপোর কয়েন। দয়ার চোখে জল। এত অনেক টাকা সাধুবাবা। হ্যা সব তোমার। দয়া বললো সোনার কয়েন ভর্তি পুটলিটা আমি ভাই প্রীতরাম কে দিতে চাই সাধুবাবা।
- সে তোমার ইচ্ছে।এখন থেকে এটা তোমার। তুমি কাকে দেবে নাকি নিজের কাছে রাখবে তোমার ব্যাপার।
আমি রুপোর কয়েন গুলো রাখবো। এতেই আমার ভালো ভাবে চলে যাবে।
সাধুবাবা চলে গেলেন।
প্রীতরাম দূর থেকে সব দেখছিল। তার প্রতি তার দাদার এখনো এত ভালোবাসা দেখে তার চোখে জল চলে এলো। দাদার কাছে এসে তার হিতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইল।দয়া বলল কাঁদছিস কেন পাগল ছেলে একটা। যার শেষ ভালো তার সব ভালো। শেষমেশ তুই তোর ভুল বুঝেছিস এটাই অনেক।
দাদা এবার থেকে আমরা দুজনে মিলে বাবার ব্যবসা সামলাব দাদা।
বেশ তাই হবেখন। এখন ঘর চল। তোর বৌদি কেঁদে কেঁদে পাগল হয়ে যাবে নাহলে।
সমাপ্ত
ছবি : সংগৃহীত
1 মন্তব্যসমূহ
ED88DAB03E
উত্তরমুছুনhacker arıyorum
kiralık hacker
tütün dünyası
-
-