প্রথম দেখা ( ছোট গল্প)

  

Love at first sight


আমি পিয়ালী। বি.এস.সি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। কলেজ থেকে সবে বেরিয়েই বড় রাস্তাটার কাছে এলাম । মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর দুটো বাজে। ক্লাস শেষ হয়েছিল দেড় টা নাগাদ। কলেজ এর গেট এর সামনেটা তেই বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম তাই খেয়াল করি নি কটা বাজে। আমার বন্ধু বলতে বিদিশা, নিশা, কোজাগরী। আমরা এই কজন খুব ভালো বন্ধু। আমাদের এখনো কারো কোনো বয়ফ্রেন্ড হয় নি। বেশ কয়েকটা প্রপোজাল পেয়েছি বটে কিন্তু সেগুলো ঠিক মনের মতো নয়। প্রেম করার যে ইচ্ছা নেই,ঠিক তা নয়। আসলে তেমন কাউকে এখনো মনের মতো পাই নি।

বিদিশা, কোজাগরী র দুজনে একই দিকে বাড়ি। তাই কোজাগরী র স্কুটি তে চেপেই বিদিশা চলে যায়। আমি আর নিশা বাস এ করেই কলেজ আসি। আজ ও দুজনে এই ভর দুপুরে বাস স্ট্যান্ড এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। ভাদ্র মাস। কাঠ ফাটা রোদ। তার উপরে গুমসুমি গরম। সপ্তাহ খানেক ধরেই বৃষ্টি বাদলের বালাই নেই। ঘামে , সানস্ক্রিন বহুক্ষণ আগেই গোলে গেছে। চোখের নিচে কাজল গেছে লেফটে। সানগ্লাস পরে চোখের এই খুঁত টাকে ঢাকার চেষ্টা করলাম। ব্যাগ থেকে ছাতা টা বের করে আমি আর নিশা বাসের জন্য ওয়েট করতে থাকলাম।

- ওহ! পিয়ালী বাস তো এখনো আজকে এলো না। ঐদিকে কোজাগরী, বিদিশা  কে দেখ গে বাড়ি পৌঁছে খেয়ে দিয়ে ঘুম দিচ্ছে। আর আমরা শালা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই রোদে পোড়া বাঁদর হচ্ছি।

- ওটা বাঁদর নয় নিশা , বাদরী হবে।

- উফফফ ! তোর এই গরমেও খুঁত ধরতে ভালো লাগছে তো পিয়ালী?

- আরে বিরক্তি তো আমারও লাগছে। কার ভালো লাগে বল তো এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে? তোর যদি একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তার বাইকে বসে দুজনে ফোকটে বাড়ি চলে যেতাম।


মুখ বেকিয়ে নিশা বললো আর ঢং করিস না। এই তো সেইদিন প্রতুষ তোকে প্রপোজ করলো। তুই কিছু না ভেবেই না বলে দিলি কেন? এতক্ষনে ওর বাইকেই আমরা বাড়ি চলে যেতাম।

আমি মুচকি হেসে বললাম, ওই প্রতুষ কে আমার কেমন যেন দেখলেই ভাই, ভাই মনে হয়। যখন প্রোপোষ করেছিল ভীষণ হাসি পেয়ে গিয়েছিল।


দুজনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য বোর ফিল করছিলাম। এমন সময়...

- ও দিদি ভুট্টা খাবেন ? খান না! গরম গরম পুড়িয়ে নুন, লেবু ঘষে দিচ্ছি। একদম কচি ভুট্টা । খুব নরম। 

বাচ্ছা ছেলে বছর তেরো কি চোদ্দ বয়স হবে, এক হাতে ঝিকের উনুন, ও আর এক হাতে ভুট্টা ও কিছু সরঞ্জাম নিয়ে বিক্রি করছে ।

নিশা আর আমার ছেলে টাকে দেখে কেমন  জানি মায়া হলো, তাছাড়া দুপুর বেলা একটু কিছু না খেলে পেট টাও টনটন করে, কিনে ফেললাম দুজনে দুটো। 

গরম ভুট্টায় কেবল একবার কামড় দিয়েছি, হটাৎ রাস্তার উল্টো দিকে একটা ছেলের দিকে নজর গেল। এক ঝলকেই যেন আমার চোখ টা ঐদিকে আটকে গেল। আমি যেহেতু সানগ্লাস পড়েছিলাম তাই ওকে ইচ্ছামতো ভালো করে দেখতে থাকলাম। ছেলেটাকে দেখে মনে হলো বয়স মোটামুটি পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে। ফরম্যাল ড্রেস পরে আছে। ফুল হাতা শার্ট টা গোটানো। হাইট ৫'১০ মতো হবে। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ। একটু রোগাটে গড়ন। গালে হালকা দাড়ি। বেশ স্মার্ট। হাতে স্টাইলিস্ট স্মার্ট ওয়াচ, চোখে লাইট কালার এর সানগ্লাস। যেন কারো জন্য অপেক্ষা করছে। আমার ওকে দেখেই বুকের ভিতর টায় এত গরমেও ঠান্ডা হওয়া খেলে গেল। যেন আমার স্বপ্নের রাজপুত্র আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে টাও কয়েকবার আমাদের দিকে দেখেছে। 

- এই পিয়ালী, ওই দিকে কি দেখছিস বলতো?

  নিশার গলায় আমার আমেজ টা কাটলো। আমতা আমতা করে বললাম, কিছু না। 

  - কিছু না বললে তো হবে না। আমি লক্ষ্য করেছি ব্যাপারটা। তোর যদি পছন্দ হয় তো চল না কথা বলি।

  - ধুর! একটা অচেনা অজানা ....

  - আরে, চেনা জানা কাউকে তো মনে ধরলো না ... দেখাশোনা করে যখন বিয়ে হয় তখন অচেনা ব্যক্তিটাই একসময় এ তার জীবনের সবকিছু হয় যায়। তাই নয় কি! 

  কি জানি নিশার কথায় কি ভাবলাম, শুধু বললাম আমি মেয়ে হয়ে আগে কিছু বলাটা কি ঠিক হবে? 

  - আরে, পিয়ালী যুগ পাল্টেছে এখন মেয়েরাও প্রপোজ করে। 

সাতপাঁচ না ভেবে সামনে এগোলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম রাস্তায় তেমন কোনো ভিরভাট্টা নেই। শুধু পাশের ওষুধ এর দোকান টায় ভিড় হয়ে আছে।


- এই যে শুনছেন, ছেলেটা পিছন ঘুরে তাকাতেই আমি কাগজ টা হাতে দিলাম।

নিশা ততক্ষনে কাগজে লিখে দিয়েছিল আমার নাম্বারটা। 

আমার হাত তখন কাঁপছে। তখন আমার মনে হচ্ছে কি করতে কি ছেলে মানুষী করে ফেললাম। মনে হচ্ছিল এক ছুটে কোথাও চলে যাই। 

ছেলেটি কাগজ টি দেখে

- নানা, ম্যাডাম এইদিকে তো এই ঠিকানাটা নয়। 

ওর কথা শুনে আমরা দুজনে তো থ।

একটা কাগজে কি যেন লিখে দিল তারপর বলল এতে লিখে দিয়েছি পড়ে নেবেন।

কি পড়বো! কি লিখে দিয়েছে! সেই সব আর কিছু না দেখেই কাগজ টা নিয়ে আমি আর নিশা রাস্তা পার হয়েই বাসে উঠে বসলাম। একটু ধাতস্থ হয়ে কাগজ টা খুলে দেখলাম।

- আমার বাবা পাশের দোকান টায় ওষুধ কিনেছিলেন। তাই অপেক্ষা করছিলাম। তোমাকেও দেখছিলাম। এতে আমার  নাম্বার দিলাম। আমারও তোমায় খুব ভাললেগেছে। বাবা ছিল বলে বলতে পারি নি। লিখে দিলাম । কন্টাক্ট করে নিও। 


সমাপ্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ