আজ রবিবার এর সকাল। অরণ্য আর ওর বোন অর্না বসে লুডো খেলছিল। আর টিভি ও দেখছিল। অরণ্য সবে কলেজ শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করছে। আর অর্না কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। দুই ভাই বোন এর মধ্যে বেশ মিল আছে। অরণ্যর বাবা সরকারি চাকরি করে। মা গৃহবধূ। সারাদিন রান্নাবান্না, পুজো আর্চা নিয়েই তার দিন কেটে যায়। খুবই মিশুকে । তাই অরণ্য কিংবা অর্নার বন্ধু বান্ধবীরা আসলে অর্নার মা সীমা দেবী হরেক রকম রান্না করে তাদের খাওয়ায়। বন্ধু বান্ধবীরাও অর্নার মায়ের কাছে নানা বিধ আবদার করে। এই তো সেই দিন অর্নার বান্ধবী রিচা এসেছিল আবদার করে গেল, আজকের হোম মেড মোমো টা দারুন খেতে হয়েছে কাকিমা। নেক্সট দিন কিন্তু পিজ্জা করে খাওয়াতে হবে কাকিমা। সীমা দেবী মুচকি হেসে - আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ছেলে , মেয়ের মতো তোরাও তো আমার নিজের সন্তান এর মতোই। সন্তান এর আবদার কি কোনো মা ফেলতে পারে?
আজ রবি বার এর ছুটির দিন অর্না আর অরণ্য খেলায় মত্ত। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। অরণ্য খেলতে খেলতে বললো মা কে এসেছে দেখোতো?
রান্না ঘর থেকে বিরক্তিমাখা স্বর উড়ে এলো, - আমার হাত জোড়া। রান্না করছি। তোরা কেউ খোল না!
অর্না চোখ- মুখ কুঁচকে একবার অরণ্যের দিকে তাকিয়ে খেলা থামিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতে গেল।
যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে গিয়ে বললো, - এই একদম চিটিং করবি না। ঘুটি সরাবি না। আগেরবারটা আমি জিততে পারি নি। এবার এ আমি ই জিতবো।
- আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই যা!
দরজা খুলতেই অর্না দেখলো অরন্যর বন্ধু প্রদীপ এসেছে।
ওকে দেখেই অর্নার মুখে কালো মেঘ এর ছায়া নেমে এলো। অরণ্যর সব বন্ধুরাই ওকে বোনের চোখে দেখলেও এই প্রদীপ ছেলেটাকে অর্নার একদম ভালো লাগে না। কেমন যেন অর্নার দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি , নজর একদম ভালো নয়। ওকে দেখে অর্না নিজের ওড়না টা ভালোভাবে নিলো।
দরজার সামনে প্রদীপ কে দেখে অর্না মাথা নিচু করে সাইড হয়ে দাঁড়ালো।
- অর্না তোমার দাদা অরণ্য আছে বাড়িতে?
- হ্যা আছে।
এইটুকু বলেই অর্না তড়িঘড়ি রান্নাঘরে পা বাড়ালো।
- কি রে, কে এলো রে- রান্না করতে করতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলো সীমাদেবী।
- প্রদীপ এসেছে
- ইসস ! তোর দাদার বন্ধু হয় না! দাদা বলতে হয় না?
- ছাড়ত
- ছাড়ত মানে ? তোর থেকে কত বড় জানিস?
- জানি। আনমনে অর্না বললো ওই ছেলেটা একদম ভালো নয় মা। আমার একদম ভালো লাগে না। কেমন জানি করে তাকায়। কই দাদার আর বন্ধুরা তো এমন নয়। আমি ওতো কথায় আর যেতে চাই না। আমায় এখন স্নানে যেতে হবে, এখুনি গানের স্কুলে যেতে হবে।
সীমা দেবী কি যেন একটু ভেবে চটপট কয়েকটা এগ রোল করার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
ঐদিকে অর্নার স্নানে যাওয়ার আগেই প্রদীপ একবার ওয়াশ রুমে ঢুকলো । কিছুক্ষণ ওয়াশ রুমে কাটানোর পর প্রদীপ বেরোলো।
এইদিকে অর্না স্নানে যাবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশ রুম ও বন্ধ । তাই ও রেগেও যাচ্ছিল।
প্রদীপ ওয়াশ রুমে যাওয়ার বাহানায় বাথরুমের ভিতর ক্যামেরা সেট করে আসলো গোপনে।
প্রদীপ বেরিয়ে যেতেই অর্না স্নানে ঢুকলো।
প্রদীপ ও অরণ্য সেই সময় এগ রোল খেতে খেতে লুডো খেলতে থাকলো।
কিন্তু অরণ্য দেখলো প্রদীপ এর খেলার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। বার বার কেমন যেন ও বাথরুম এর দিকে তাকাচ্ছে, আর পকেট থেকে রুমাল বার করে ঘাম মুচ্ছে। অরণ্য র ব্যাপার টা সুবিধার মনে হলোনা।
- কি রে এত ঘামছিস কেন প্রদীপ? ফ্যান টা কি জোর দেব?
- না, ভাই। আমি ঠিক আছি।
অরণ্য কে ফ্রী মাইন্ড করার জন্য মোবাইল বার করে ফেসবুক খুলে কয়েকটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বললো, কেমন বলতো মাল গুলো? হেভি ফিগার তাই না?
- ধুর! ওই সব তুই দেখ।
ইতিমধ্যে অর্না ওয়াশ রুম থেকে বেরোলো। বাথরুম খোলার শব্দে প্রদীপ আরো যেন চনমনে হয়ে উঠলো। হাত ধোয়ার বাহানায় ওয়াশ রুম এর দিকে এগোলো।
- আরে! বেসিনে হাত ধুয়ে নে না?
- আমার একটু ইয়েও পেয়েছে।
অরণ্য বুঝতে পারলো গতি খারাপ। ও প্রদীপ কে চোখে চোখে রাখলো।
প্রদীপ বাথরুম থেকে বেরোতেই ওর হাতে কি যেন ছোট মতো লক্ষ করলো অরণ্য।
ওকে দেখে প্রদীপ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলো।
- তোর হাতে ওটা কি প্রদীপ?
- ক....ই কিছু না.... তো!
-তুই পকেট এ লুকিয়ে ফেললি। তোর পকেট টা দেখি!
-বলছি কিছু না।
অরণ্য জোর করে ওর পকেটে হাত দিয়ে দেখলো একটা ছোট্ট ক্যামেরা।
সপাটে একটা চড় কষিয়ে বললো, তোর লজ্জা করে না তুই আমার বোন এর স্নানের ভিডিও ক্যামেরা করলি?
আমার মা তোকে নিজের সন্তান এর মত দেখে। আসলে ভালো ভালো রান্না করে দেয়। তুই আমার বন্ধুত্বের এই মর্যাদা দিলি। এতটা ছোটলোক তুই। নিলজ্জ!
- মাথা নিচু করে - সরি ভাই।
- কিসের সরি ! আর কোনো দিন আমার বাড়ি আসবি না। ক্যামেরা টা ওর থেকে কেড়ে নিয়ে অরণ্য প্রদীপকে তাড়িয়ে দিল।
আর নিজের বোনকে জড়িয়ে ধরলো।
সমাপ্ত
1 মন্তব্যসমূহ
39A3ACEB78
উত্তরমুছুনTakipçi Satın Al
Footer Link Satın Al
Erasmus
Danone Sürpriz Kodları
Whiteout Survival Hediye Kodu