অশোক ষষ্ঠীর প্রচলিত ব্রত কথা

the common vows of ashoka shashti

 


অশোক ষষ্ঠীর প্রচলিত ব্রত কথা


বাসন্তি পূজার শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন  অর্থাৎ চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন এই অশোক ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের প্রচলিত কাহিনী কি তা নীচে রইলো।

 অশোক ষষ্ঠীর প্রচলিত ব্রত কথা : 

প্রাচীনকালে অশোক বনে বাস করতেন এক মুনি। তিনি একদিন এক অশোক গাছের তলায় একটি শিশু কন্যাকে হাত - পা ছুড়ে কাঁদতে দেখলেন। আসে পাশে কেউ না থাকায় তিনি কন্যা শিশু টিকে তার আপন কুটিরে নিয়ে আসেন। এবং পরে ধ্যান যোগে জানতে পারেন শিশুটিকে একটি  হরিণী প্রসব করেছে। যথারীতি তাঁর কুটিরেই শিশুটি বড়ো হতে থাকলো। অশোক গাছের নিচে থেকে তাকে পাওয়া গিয়েছিল বলে মুনি তার নাম দেন অশোকা।  মেয়েটি ছিল অপূর্ব সুন্দরী। মুনি মনে মনে চিন্তা করলেন এই কন্যাকে আর বেশি দিন তার কুটিরে রাখা ঠিক হবে না। ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বেশকিছুদিন চেষ্টা করার পরেও উপযুক্ত পাত্র না পেলে মুনি মনে মনে বড়ই বিরক্ত প্রকাশ করেন। এবং নিজেই স্হির করেন পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই যার মুখ আগে দেখবেন তার সাথেই তিনি ওই কন্যার বিবাহ দিবেন। 


পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙেই তিনি দেখেন , তাঁর কুটিরের সন্নিকটে একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। মুনি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন , তিনি একজন রাজপুত্র। মৃগয়া শিকারে বনে এসেছিলেন। কিন্তু আগের দিন রাত্রে জল, ঝড় হওয়ায় পথ ভুলে এখানে এসেছেন। মুনির তাকে দেখে খুবই পছন্দ হয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে অশোকার সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন। রাজপুত্রও অশোকার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে সম্মত হন এবং তাকে বিবাহ করেন।

চার হাত এক করে মুনিও চিন্তা মুক্ত হন। অশোকা কে শশুর ঘর পাঠানোর সময় মুনি তার আঁচলে কিছু অশোক ফুল আর অশোক ফুলের বীজ বেধে দিলেন। বললেন, চৈত্র মাসের শুক্ল ষষ্ঠীর দিন ওই শুকনো অশোক ফুল গুলি জল দিয়ে খেতে। এবং ঐ দিন অন্ন না খাওয়ার আদেশ দিলেন।  আর শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার দুই ধারে এই অশোক বীজ গুলি ছড়াতে ছড়াতে যাবি। যখনই কোনো বিপদে পড়বি যাতে ওই অশোক গাছের সারি বরাবর আমার কুটিরে আসতে পারিস।

অশোকা মুনির কথা মতো সেই বীজ মুনির কুটির হইতে রাজবাড়ী অবধি রাস্তার দুই ধারে ছড়াতে ছড়াতে শশুর বাড়ি পৌঁছালেন। এর পর তার শশুর শাশুড়ি তাকে বরণ করে ঘরে তুললেন। তারপর  কেটে গেছে বেশ অনেকগুলো বছর। অশোকার সাতটি পুত্র সন্তান  ও একটি কন্যা হয়েছে। তাদের বিবাহ ও হয়েছে। এইদিকে শশুর, শাশুড়িও মারা গেছে।


এক চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে অশোকার শশুরের শ্রাদ্ধ ছিল। অশোকা সন্ধে বেলা বউদের ডেকে বলেন, আজ অশোক ষষ্ঠী। আজ আমি অন্ন মুখে দেব না। 

শাশুড়ি মায়ের আদেশ মতো, বৌমারা অশোকার জন্য মুগকলাই রাধেতে থাকেন। কিন্তু ঘুটেতে একটা ধান ছিল। তা কিভাবে মুগকলাই এ পরে ফুটে খই হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই সেই খাবার খেতেই অশোকার জীবনে নেমে আসে ঘোর সর্বনাশ।  অনেকের মতে অশোকা নিজেই ভুল করে অশোক ষষ্ঠীর দিন অন্ন খেয়ে ফেলেছিলেন। তার স্বামী, পুত্র, পুত্র-বধূ রা মারা যান। অশোকা মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মুনির আশ্রমে যান ওই গাছের সারি বরারবর। ততদিনে গাছ গুলি বিশাল হয়ে গেছে। মুনি মেয়ের মুখ থেকে তার কষ্টের কথা শুনে ধ্যান যোগে জানতে পারেন, ওই মুগকলাই এ খই থাকায় এই বিপত্তি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার ঘটি থেকে মন্ত্রপুত জল দিয়ে বলেন, যা এই জল মরা গুলোর গায়ে ছিটিয়ে দিবি। তাহলে আবার তারা প্রাণ ফিরে পাবে। আর চৈত্র মাসের ষষ্ঠীর দিন মা ষষ্ঠীর পূজা দিয়ে মুগকলাই, আর দই সহযোগে অশোক ফুল খাবি। ওই দিন অন্ন খাবি না। তাহলেই সংসারে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।


অশোকা মুনির কথা মতো সেই কুমণ্ডলের জল নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে ছুটতে রাজবাড়ী এসে মরা গুলির গায়ে ছড়ালে তারা জীবিত হয়ে ওঠে। এবং অশোকা তাদের সব টা খুলে বলেন। তারা অবাক হয়ে যান। এবং এই ভাবেই রাজবাড়ী থেকে বাইরেও এই অশোক ষষ্ঠীর মাহাত্ম ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এবং এই ব্রত সকলে ভক্তি ভোরে পালন করেন।

তথ্যসূত্র : মেয়ে দের ব্রত কথা গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত প্রকাশক নির্মল কুমার সাহা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ