নীরবে ভালোবাসি পর্ব ৯

 

love silently part 9


আগের পর্ব পড়ুন 

নীরবে ভালোবাসি পর্ব ৯

চৈতির এইধরণের কথা গুলো দীপক বাবু একদমই সহ্য করতে পারেন না। শ্রী এর মুখ থেকে একথা শুনে তিনি কিছুক্ষন চুপ হয়ে থাকলেন। মনে মনে চৈতি কে উদেশ্য করে বললেন, সারাদিন শুধু মেয়ে টাকে কবে বিদায় করবে এইসব চিন্তা তেই কি বিভোর হয়ে থাকে নাকি!  অবশ্য মুখে কিছু শ্রী এর সামনের বললো না। 
- বাবা, কি হলো অন্যমনস্ক হয়ে কি অতো ভাবছো?
শ্রী এর গলার শব্দে দীপক বাবু চৈতির জন্য হওয়া মনের একগুচ্ছ বিরক্তি কে মন থেকে সরিয়ে সহাস্যে বললেন, তোর মায়ের কথাই ছাড় তো। ওসব কথায় একদম কান দিতে হবে না তোকে। সে আমি না হয় তোর মা কে বুঝিয়ে বলবো পরে। 
অপত্য স্নেহে ভরপুর একটা কণ্ঠে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললেন, হ্যা রে মা, অফিস থেকে এসে তোকে ঐভাবে বললাম বলে তুই কি রাগ করেছিস? 
রাগ না হলেও অভিমান তো হয়েছিলোই ষোল আনা। আর বাবার বলা কথা গুলো বুকের মধ্যে শেলের মত বিধেও ছিল। তবু শ্রী সেইসব রাগ- অভিমানের কথা প্রকাশ না করে মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো সে রাগ করে নি। 
- আচ্চা মা, আমি আর কোনোদিন তোকে পড়াশোনার ব্যাপার এ জোর পূর্বক আমার সিদ্ধান্ত গুলো তোর ওপর চাপিয়ে দেব না।  এ কথা শুনে শ্রী বাবার মুখের দিকে বিস্ময় ভরা চোখ দুটো নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলো। 
- আমি মোটেই রাগ করে বলছি না। তবে কি বলতো মা, এ বছর নাইনে উঠলি। পরের বছর মাধ্যমিক। সে কথা মাথায় রেখে মন দিয়ে পড়বি। তুই ভবিষ্যতে যে সাবজেক্ট নিয়েই পড়তে চাস পড়বি। আমি বাধা দেব না। বরঞ্চ আমার থেকে সব রকম সাহায্য তুই পাবি। আমি এতদিন ভুল করেছিলাম। শুধু নিজের ইছেটুকুই তোর ওপর চাপাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরজন্য তোর যে কত টা চাপ পড়ছে তা বুঝতে চেষ্টা করি নি। একরকম অপরাধীর মতো কথা গুলো বলছিলেন দিপকবাবু। 
-না বাবা। তোমায় কষ্ট দিতে আমি সত্যি ই চাই না। আসলে আমার অংকের প্রতি ভালোবাসা টা প্রথম থেকেই কম । তাই নম্বর ও কম পাই। 
-তোকে আমি যতই বকাবকি করি মা রে, আসলে তুই যে আমার জীবনের কতটা জুড়ে বিরাজ করিস তা শুধু আমি ই জানি। আমি মুখে তীক্ষ্ণ কথা বলি তোকে, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে নীরবে খুব ই ভালোবাসি।
কাঁদো কাঁদো গলায় শ্রী বললে, ওভাবে কেন বলছো বাবা। পৃথিবীর সব বাবা রাই তার সন্তান কে বকে, শাসন করে, আবার ভালোও বাসে। তুমি যে আমায় কতটা ভালোবাসো তা কি আমি জানি না? তুমি বলবে তারপর জানব? আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো। এমনকি মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসো। 
আসলে তোকে তখন দু-চার কথা শোনালাম। সেই থেকে মনটা বড়োই অস্থির লাগছিলো রে মা।  এবার বুকটা হালকা হলো। তবে ও কথা যেন আবার তোর মায়ের সামনে বলিস না যেন কখনো। তাহলে কিন্তু লঙ্কা-কান্ড করে বসবে। ঈষৎ ভ্রু বেকিয়ে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল শ্রী কোন কথা টা বাবা? ওই যে তুই এই মাত্র বললি আমি নাকি তোর মায়ের থেকেও তোকে বেশি ভালবাসি। এই কথাটা বলে দেখনা তোর মায়ের সামনে একবার। এই বার শ্রী উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো, তা যা বলেছ বাবা। তাহলে সত্যিই দক্ষ যজ্ঞ করে ছাড়বে। শ্রী কে সচেতন করে তিনি বললেন, আসতে হাসাহাসি কর। পাশের ঘরেই শুয়ে আছে মা। উঠে পড়বে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে শ্রী এতক্ষন এ নিজেকে সংযত করে নিয়েছে। তবু যেন তার হাসি দমছে না। 
-আচ্ছা শ্রী, অনেক রাত হলো। শুয়ে পর। আমিও শুতে চললাম এই বলে দীপক বাবু বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
-ঠিক আছে বাবা। গুড নাইট।
শ্রী বাবার বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত টার দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো। দীপক বাবু বেরিয়ে যাচ্ছিলেন আবার কি মনে হতে দরজার সামনে থেকেই ঘুরে এসে বললেন, শ্রী কাল তাহলে রবীন স্যার এর কাছে দেখা করতে যাবি তো?
-হ্যা বাবা, শ্রেয়াও যাবে বলেছে। 
-তোরা দুজনেই যাবি নাকি আমায় নিয়ে যেতে হবে? আমার সাথে গেলে অবশ্য সন্ধের দিকে যেতে হবে।
-না, বাবা তোমায় না গেলেও হবে। ওই রথ তলার মোড়ে বাড়ি তো? শ্রেয়া চেনে বলছিলো । 
-আচ্ছা বেশ। ওহ... হ্যাঁ, মনে করে রেজাল্ট টাও নিয়ে যাবি।
মুখে একটা প্রশান্তির হাসি এনে শ্রী বললো, আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল আবার তোমায় অফিস বেরোতে হবে। শুয়ে পড়ো।
দীপক বাবু শ্রী এর মাথায় একবার হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেলেন।


ক্রমাগত ফোনের ভাইব্রেশন এর কাপুনিতে শ্রেয়ার ঘুম টা গেলো ভেঙে। চোখ কচলিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় ফোন টা রিসিভ করে শ্রেয়া বললো, হটাৎ এত সকাল সকাল ফোন করলি যে? কি ব্যাপার।
- আজ রবিন স্যার এর সাথে দেখা করতে যাবি?
রবিন স্যারের কথা শুনে শ্রেয়ার ঘুম ঘুম ভাবটা নিমিষেই উড়ে গেল। খানিকটা থতমত খেয়ে শ্রী কে সে জানাল হ্যা যাব। মানে যেতে তো হবেই। 
-কখন যাবি? সকালের দিকে নাকি বিকালে?
-আমি আজ ফ্রী আছি। যখন বলবি।
শ্রী খানিকটা ভেবে বললো তাহলে বিকালের দিকেই চল।আর মনে করে রেসাল্ট টা নিয়ে বেরোবি কিন্তু।
-আচ্ছা রে, মনে থাকবে।
-তোর তো কোনো ব্যাপারই নেই । নিঃসংকোচে রেজাল্ট খানা দেখাতে পারবি।কিন্তু আমি... যতই উনি আর্টস গরূপের টিচার হন না কেন আমার অংকের নম্বর টা দেখে কি ভাববেন, কি বলবেন কি জানি। আমার তো এখনই খুব টেনশন হচ্ছে। 
-ওতো চিন্তা করিস না তো। স্যার কিছুই বলবেন না। আমি শুনেছি পাশের বাড়ির সৌরভ দার কাছ থেকে উনি খুব ভালো স্যার। গরিব ছেলে মেয়েদের খুব সাহায্য করেন।।মাইনেও নেয় না তাদের। এমনকি বই, খাতা, পেন ও নিজে থেকে কিনে দেন। 
-ঐজন্যই তো বাবা বললেন ওখানে পড়তে যেতে। বাবা নিজেই তোকে আর আমায় নিয়ে যাবে বলছিল। কিন্তু আমি বললাম আর অফিস থেকে তাড়াহুড়ো করে আসতে হবে না। আমি আর শ্রেয়া দুজনেই যেতে পারবো।
-তা একদম ঠিকই বলেছিস। তাছাড়া আমরা তো এখন বড় হয়ে গেছি তাই না?
-হ্যা অনেক বড়। সেই জন্যই তো তুই লুকিয়ে চুরিয়ে একটু আধটু প্রেম ও করছিস তাই না?
-আবার...আবার তুই ফালতু বকতে শুরু করলি তো সকাল সকাল?আমি ফোন রাখলাম।
-আরে, চটছিস যে বড়? আমি কি কিছু মিথ্যে বললাম?
-জানি না।
এটুকু বলেই শ্রেয়া ফোন টা কেটে দিলো। 
শ্রীএর  ফোনটা কেটে দেওয়ার পর শ্রেয়া আবার একবার বিছানায় শুলো। পাশ ফিরে শুতেই হটাৎ শুভ্রর মুখ টা ভেসে উঠলো। ইদানিং কোচিং এর স্টুডেন্ট রা শ্রেয়ার সাথে শুভ্রর কিছু একটা চলছে এই নিয়ে খুবই রাগানোর চেষ্টা করে তাকে।  আজ শ্রী আবার শুভ্রর কথা তুলতে শ্রেয়ার মুখ খানি অজান্তেই লাল হয়ে গিয়েছিল। শ্রেয়া  শুভ্র কে ভালোবাসে না। কিন্তু শুভ্র কে ঘিরে তাকে এই রাগানোর ব্যাপারটা ও মনে মনে বেশ পছন্দ করত। শুভ্র অধিকারী। শ্রী ও শ্রেয়ার মতোই সেও প্রবাল স্যারের কাছে পড়ে।বেশ ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। লম্বা , দোহারা , স্মার্ট চেহারা, গায়ের রং এর সাথে তার নামের হু বহু মিল অর্থাৎ গায়ের রং দুধ সাদা। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো ঈষৎ এলোমেল চুল। সব মিলিয়ে সব তরুণীদেরই হার্ট থ্রব এই শুভ্র।

চলবে ...

পরের পর্ব পড়ুন

ছবি : সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ