অন্নপূর্ণা পুজোর ইতিহাস
হিন্দু পুরান সহ প্রাচীন নানা গ্রন্থে অন্নপূর্ণা পূজার বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে অন্নপূর্ণা দেবীকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী বর্ণিত আছে। অন্নপূর্ণা এক হিন্দু দেবী। তার অপর নাম অন্নদা। তিনি শক্তির এক রূপ। অন্নপূর্ণা দ্বিভূজা, তার দুই হাতে অন্নপাত্র ও দর্বী; তিনি রক্তবর্ণা, সফরাক্ষী, স্তনভারনম্রা, বিচিত্র বসনা, নিরত অন্নপ্রয়াদিনী ও ভবদুঃখহন্ত্রী; তার মস্তকে নবচন্দ্র, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। নৃত্যপরায়ণ শিবকে দেখে তিনি সন্তুষ্ট হন।
দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নাম প্রাপ্ত হন। চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণার পূজা করা হয় এবং নবদ্বীপ ধামে রাস পূর্ণিমা তিথিতে বৌবাজার বারোয়ারী অন্নপূর্ণা পূজা পালন করিয়া থাকে৷ হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্নপূর্ণার পূজা করলে গৃহে অন্নাভাব থাকে না। কোনো প্রাচীন গ্রন্থে অন্নপূর্ণা পূজার কথা উল্লিখিত হয়নি। দক্ষিণামূর্তি সংহিতা গ্রন্থে চতুর্ভূজা এবং পদ্ম, অভয়, অঙ্কুশ ও দান হস্তা অন্নপূর্ণার বর্ণনা রয়েছে। কৃষ্ণানন্দ রচিত তন্ত্রসার গ্রন্থে এই পূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। কাশীতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দির আছে; এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পূজা ও অন্নকূট উৎসব প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে অন্নপূর্ণা পূজার বিশেষ প্রচলন রয়েছে। অন্নপূর্ণা পূজা কালী ও জগদ্ধাত্রী পূজার মতোই তান্ত্রিক পূজা।
রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র দেবীর অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য্য বর্ণনা করে অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে:
“অন্নদামঙ্গলকাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অন্যতম। ... মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে মহারাজের নিজ কীর্তি এবং তাঁহার পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের রাজ্য ও রাজা উপাধি লাভের কাহিনী বর্ণনাই ছিল কবির প্রধান উদ্দেশ্য। দেবী অন্নদা (অন্নপূর্ণা) কীভাবে ভবানন্দ মজুমদারকে কৃপা করিলেন, এবং ভবানন্দ কীভাবে জাহাঙ্গীরের দ্বারা অন্নপূর্ণা পূজা করাইয়া রাজত্ব ও রাজা খেতাব লাভ করিলেন – ইহার বর্ণনাই ছিল কবির প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য। কিন্তু কবি পৌরাণিক অংশ বিশেষ ফলাও করিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।”
কাহিনী :
বিবাহের পর শিব ও পার্বতী কৈলাসে বেশ সুখেই দিন অতিবাহিত করছিলেন। বেশ কিছুদিন পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এরমূলে ছিল অর্থনৈতিক অনটন। আবশেষে শিব পার্বতীর ভৎসনায় ভিক্ষা বৃত্তি করা শুরু করেন। কিন্তু কোন লাভ হয় না। কোথাও তিনি ভিক্ষা পেলেন না। শেষে ব্যর্থ হয়ে তিনি পুনরায় কৈলাসে প্রত্যাবর্তন করেন। পার্বতীর মায়ায় যে ভিক্ষা পারছিলেন না, তা তিনি জানাতে পারেননি। অতঃপর তিনি কৈলাসে ফিরে যান এবং পায়েস, পিঠে খান। এরপর তিনি দেবীর মহিমার বৃদ্ধিতে কাশিতে একটি মন্দির স্থাপন করেন। এটি অন্ন পূর্ণা মন্দির। চৈত্র মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এই মন্দিরে দেবী অবতীর্ণ হন। সেই থেকে দেবীর পূজার প্রচলন আসছে। দেবীঅন্নপূর্ণার মন্দির আছে কাশিতে। এই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব হয়। হিন্দুদের এটি একটি পবিত্র স্থান। কলকাতার সেনবাড়ির অন্নপূর্ণা পূজা বহুল প্রসিদ্ধ।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ