একজন গর্ভবতী মায়ের গল্পকথা

 

the story of a pregnant mother



একজন গর্ভবতী মায়ের গল্পকথা


কিছুক্ষন আগেও যখন প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল মেঘা তখনও তার মধ্যে এইসব ভাবনার উদয় হয় নি। নিজের মনের মধ্যে কখনো বাসাই বাঁধে নি তার সন্তান মেয়ে হবে নাকি ছেলে হবে। পুরো প্রেগনেন্সি জার্নি টা তেই ও খুব নিয়ম মেনে চলেছিল। সাধের টক-ঝাল ফুচকা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে। রাত করে জেগে থেকে ফোন ঘাটার বদ অভ্যাস ত্যাগ করেছে। কিছু কিছু মানুষ জনদের কাছে ও শুনেছে প্রেগনেন্সির সময় সর্বদা হবু মা কে হাসিখুশি থাকা উচিত, ইতিবাচক সব কিছু ভাবা উচিত, ভালো কাজ করা উচিত। এতে নাকি সন্তান এর উপরও শুভ প্রভাব ফলে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় মেঘা যেতে চায় নি। এই সময়ে প্রচুর বই পড়েছে, নিয়ম অনুযায়ী মাত্রারিক্ত টেলিভিশন এর পর্দায় চোখ না রেখে গঠন মূলক, শিক্ষা মূলক আলোচনা গুলোয় মননিবেশ করেছে। হৃদ মাঝারে কোনো কূট কিংবা খারাপ ঘটনাকে আশ্রয় দেয় নি। চার মাস বয়স থেকেই ছোট্ট শরীর টা তার শরীরের মধ্যে একটু একটু করে তার অস্তিত্ব টা জানান দিতে শুরু করে। প্রতিটা গর্ভধারিনী মায়ের মতোই মেঘার মনে-প্রানেও তখন আনন্দের ঢেউ উতাল, পাতাল হয়ে তার জীবনধারায় আছড়ে পড়েছে। প্রতিটি মাসে অল্ট্রাসোনোগ্রাফির সময় দুরু দুরু বুকে ডাক্তারের পরামর্শ মতো রুমে ঢুকতো।  কিছুক্ষন পরেই বেবির হার্টবিট শুনে তার বুকের ধুক পুকুনি টা নিমিষেই উদাও হয়ে ইচ্ছে ডানায় ভর করে এক কল্পনাপ্রসূত মা-মেয়ের ব্যস্ত রোজনামচা দিন গুলিতে মেতে উঠতো। রাস্তায় বেরোলেই সদ্য শিশুদের জামা গুলো দেখলেই কিনতে ইচ্ছে করতো। নিজের অজান্তেই তার সাথে হাসি, কান্না, ভালো লাগা, খারাপ লাগা সারাদিনের নানা গল্প তার জঠরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ধীর পায়ে পায়চারি করতে করতে তার পাখানুপুঙ্খ বিবরণ দিত। তার এক একটা পায়ের গুতো, হাতের ঘুষি  ছিল তার কাছে স্বপ্নময় সুখের মতো।যখন তখন ইনজেকশন নিতেও ভয় হত না। এক বুক সাহস আপনা হতেই নিজের শরীরে অবাধেই প্রবেশ করত। যেসব প্রোটিন যুক্ত, ভিটামিন যুক্ত খাবারে তার অনীহা ছিল, সে গুলো ও পরম তৃপ্তিতে খেত। শুধু মাত্র গর্ভের সন্তানটিকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে জন্ম দেওয়ার জন্য। রাস্তার স্ট্রিট ফুডের লোভনীয় ডাক কেও সে উপেক্ষা করে চলেছিল। বর্জন করেছিল হাই হিল পরা। অবশেষে গতকাল রাতে সে যখন মারাত্মক যন্ত্রণা নিয়ে নার্সিং হোমে ভর্তি হলো তখনও তার চোখে মুখে সহ্য করার কি অসীম শক্তি। আর এই অসীম ত্যাগ, সহ্য ক্ষমতা, বর্জন করা, উপেক্ষা করা,র অগাধ মানসিকতা হয়তো শুধু নারী ই আছে। আর আজ বাচ্চার গলার আওয়াজ এ এই প্রথম তার মনে প্রশ্ন আসলো কে এসেছে মেয়ে নাকি ছেলে! হ্যা, অপারেশন এর সময় বেবির প্রথম কান্নার শব্দ শুনে এই প্রশ্ন টা মায়ের মনে আসেই। কেন বলুন তো? জানতে কাকে সে এত দিন ধরে একটু একটু করে তার মাতৃ জঠরে পালন করেছে। অন্য কিছু চিন্তা ধারার জন্য নয়।

সমাপ্ত


ছবি : সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ