একজন নার্স ও প্রতারিত মহিলার কথোপকথন
নার্সিংহোমের কেবিনে অর্ধশায়িত অবস্থায় শুয়ে থাকা শ্রুতির গাল বেয়ে তখনও নোনতা জলের ধারা সরলরেখা হয়ে বুক ছাপিয়ে তার গায়ের উপর থাকা পাতলা চাদরটা ক্রমাগত ভিজিয়ে চলেছে।
---মিস, শ্রুতি আমি , আপনাকে বলছি, অতীতের ওইসব ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে রেখে নিজেকে নিজে আর কষ্ট দেবেন না। আমি একজন নার্স। সেবা করাই আমার প্রধান ধর্ম। কিন্তু সর্বোপরি আমি, আপনি আমাদের সকলের একটি চেনা পরিচিতি আছে। আমাদের পরিচয় আমরা নারী। সেই সেকাল থেকে একাল নারী জাতি বরাবরই পুরুষ জাতির কাছে অবহেলিত, অবজ্ঞার পাত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যদিও সব পুরুষ মানুষের মধ্যে সেই জানোয়াররূপী বর্বরতার ছাপ স্পষ্ট নয় । অনেক আদর্শবান পরুষেরও জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা অনেকেই ভাগ্যদোষেই বলুন আর নিজেদের হটকারী সিদ্ধান্তের জন্যই হোক বেঠিক মানুষটাকেই নিজের মন দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করি। অন্ধের মতো তাকে বিশ্বাস করে তার অবহেলা গুলোও সাদরে গ্রহণ করি। কেন বলতে পারবেন ?
শ্রুতি কান্নাভেজা দৃষ্টিতেই নার্সের দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল
--কেন?
---তখন যে আমরা বড্ড বেশি তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরি। তার শত আদেশ, আবদার, বায়না গুলোকে আমরা মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দিতে থাকি। তাই তো তার বন্য ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সাতপাঁচ না ভেবেই অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপিয়ে পরি।
নিজেকে উজার করে দিয়ে ভালোবাসি। আর তার পরিণাম স্বরূপ কখনো কখনো আমরা এইভাবেই প্রতারিত হই।
তবে চোখের জল মুছুন মিস: শ্রুতি। এতে আপনার কোন দোষ নেই। আপনি কোন পাপ করেন নি। যে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করে সমাজের মাঝে মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার এখন শাস্তির পালা। তৈরি হন শ্রুতি। নিজেকে প্রস্তুত করুন। মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিজেকে আরো শক্ত হতে হবে আপনাকে।
সমাজের ভয়ে মুখ না লুকিয়ে রেখে আসল অপরাধীর মুখোশ টা টেনে ছিড়ে ফেলার সময় এসে গেছে । আজকের নারী আর অপমানের তকমা মাথায় নিয়ে অন্ধকারের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখবে না ।
আমাদের এখানে আপনার মতো অনেক পেসেন্টরাই কেউ তার প্রেমিক এর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে কেউবা স্বামীর কাছে অত্যাচারের শিকার হয়ে ক্ষতবিক্ষত শরীরে , রক্তাক্ত অবস্থায় কিংবা শরীরে আঁচড়ানো, কামড়ানোর, দগ দগে কালসিটে দাগ নিয়ে আসে সুস্থ হতে। এরা শারীরিক ভাবে যত না বিপযস্ত ,তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত মানসীক কষ্টের। আর আমাদের মতো নার্সরা আপনাদের মত পেশেন্ট দের শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলার পাশাপাশি আপনাদের মনের শুশ্রূষা টাও করিয়ে দিয়ে থাকি মানসিক দিক থেকে দৃঢ় হওয়ার জন্য।
সো, অল দ্য বেস্ট মিস শ্রুতি। আর দুঃখ করার সময় নয়। এই সময়টা এখন লড়াই করার। এই লড়াই নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ এর। নারীর সম্মানের লড়াই।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ