ওয়ার্ক ফ্রম হোম বনাম রোম্যান্স

 Work from home vs. romance



ওয়ার্ক ফ্রম হোম বনাম রোম্যান্স (Work from home vs. romance)


শুনছো , তোমায় একটা প্রশ্ন করব-- তার ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারবে? 

 ল্যাপটপ  এর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই ব্যস্ততার কণ্ঠস্বরে জিত বলল-- " ও তো  ভণিতা না করে কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।" 

 মুহূর্তেই অনুর প্রাণোচ্ছল মুখটায় ঘন মেঘের অন্ধকার নেমেএলো। যে প্রেমের আবেগ, উচ্ছ্বাস নিয়ে সে  তার স্বামী  জিতের কাছে এখন এসেছিল এই বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় একটু রোমান্টিকতায় সময়টা উপভোগ করতে তা আর হয়ে উঠলো না। 

অনু জানে জিত বরাবরই একটু সিরিয়াস টাইপের ছেলে।  তবে এতটাও বোরিং নয় যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে তার হৃদয়ে প্রেম জাগে না। ছুটির দিনে বাড়িতে থাকলে  জিতও  অনুর সাথে গল্প ,হাসি ঠাট্টা করত আগে। কিন্তু ইদানিং জিত এর  ব্যবহার এত টাই উগ্র  হয়ে গেছে যে,  অনুর প্রতিটা কথায় সে রীতিমত ঝাঁঝি দিয়ে কথা বলে।

 কাঁদো কাঁদো স্বরে অনু বললো--" তোমায় কোন কথা বললেই তুমি ঐভাবে কেন   আমার সাথে কথা বলো? মুখে একগাদা বিরক্তি নিয়ে"। জিৎ বলে--"  কাজের এখন প্রচুর প্রেসার। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আর কিছু না বলার থাকলে এখান থেকে এখন যাও। কাজ শেষ হলে শুনে নেব।" 

খুব রাগ হয় অনুর । সাথে অভিমানও। যে প্রশ্ন নিয়ে অনু গিয়েছিলো জিত এর ঘরে সেটা বলার আগেই তার কথায় জিত জল ঢেলে দিল। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সোজা বেডরুমে গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে, বালিশে মুখ গুঁজে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেললো  অনু। আর সেই সময়ই কাঁদতে কাঁদতে  মিনিট দশেক স্মৃতি বিচরণও করে নিল সেই সময়।

 কাঁদতে কাঁদতেই  অনু মনে মনে ভাবল -- " ফেসবুকে প্রথম আলাপ হয়েছিল যখন  কত কত মেসেজ করত তখন যেন কথা ফুরোতেই চাইতোনা উদগান্ডু  টার। রাত ফুরিয়ে যেত, ফোন গরম হয়ে  চার্জ রেড সিগনাল দেখাতো তবু সোহাগে জর্জরিত কথা তার শেষ হতো না।  আর এখন কাছে গিয়ে দু'দণ্ড একটু পিরিতের কথা কইতে গেলেই  সব সময় বিরক্তি প্রকাশ করবে শালা। যেন কি পাপ করেছি  এটাকে বিয়ে করে। 

 ওদিকে অন্যদের সাথে মানে, অফিসের ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার সময় বাবা!! -মুখে গদগদ ভাব,  কত হাসাহাসি। হাসতে হাসতে আবার কিসব ভয়ানক কাশি। ঢং , দেখলে তখন গা জ্বলে যায়। সারাদিন ল্যাপটপের দিকে হা  করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর কি বোর্ডটা নিয়ে অনবরত খটাখট খটাখত টেপাটিপি। যেন  ইচ্ছে করে  ল্যাপটপের গায়ে দুটো হাতুড়ির ঘা  দিয়ে  ল্যাপটপ টাকে বলি--  ওই তোর  মধ্যে এমন কি আছে রে যার জন্য আমার বর আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তোর  পানে সবসময় চেয়ে থাকে। আমার বরের হাত দুটো আর আঙ্গুল গুলো শুধু আমায় স্পর্শ করবে ঠিক আছে?  ওই কীবোর্ড টেপাটিপির  জন্য ওই আঙুলগুলো আমি রোজ সকালবেলা টেনে টেনে আঙ্গুল মুটকিয়ে  মেসেজ করি না বুঝলি। আমার ইচ্ছে করে আমার হাসব্যান্ডে র আঙ্গুল গুলো কিবোর্ড না ছুঁয়ে সবসময় আমায় স্পর্শ করুক।

কিছুক্ষন নিজের মধ্যে এইসব বলে রাগ মিটিয়ে  চোখের জল মুছে অনু বালিশ ছেড়ে উঠে বসলো।  চোখ দুটো তার কেঁদে কেঁদে লাল হয়ে গেছে। 

--- "এইরে কেঁদে কেঁদে আবার চোখ দুটো আবার  ফুলে গেলো  না তো!!  তাহলে আবার ঘরের বাইরে বেরিয়ে  শশুর শাশুড়ির মুখোমুখি হতে পারব না। কি জ্বালা , মনের কষ্ট হালকা করতে কাঁদলেও বিপদ।" 

 "আয়নার সামনে গিয়ে একটু মুখটা দেখে আসি তো।  এ বাবা !! সত্যি ই তো চোখ গুলো বেশ লাল হয়ে গেছে।"  নিজেকে আয়নায়  এইরকম অবস্থায় দেখে আবার খানিকটা কেঁদে ফেলল অনু।এবার  আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আবার  সে বকতে শুরু করলো---

" আমাদের  একটা দু বছরের ছেলে আছে বলে কি আমার দিকে তোমার  আর ঘুরেও তাকাতে ইচ্ছে করে না জিত?  আমি কিন্তু মোটেও বুড়ি হয়ে যায়নি এখনো । আগের মতোই সুইট সিক্সটিন আছি। এইতো ছয়মাস  আগেও রাতে অফিস থেকে ফিরেই অফিসের জামা প্যান্ট না ছেড়েই  আমায় জড়িয়ে ধরতে। যদিও আমি তখন  বলতাম -- "ধ্যাৎ  কি হচ্ছে ছাড়ো না .... যতসব আদিখ্যেতা"।  তুমি জানো না । ওগুলো মেয়ে দের ইচ্ছে করেই বলতে হয়। তবুও ওই দিন গুলোই ভাল ছিল সেই সকাল সাতটায় বেরিয়ে রাত দশটায় বাড়ি ফেরা এই অপেক্ষাটাই বেশ ভালো ছিল। এতে প্রেমটা  ভালো আসতো।

 আর এখন অফিস যেতে হয় না সবসময় বাড়ি বসে কাজ তবু আমায় দু দণ্ড সময় দিতে পারেনা। 

হঠাৎই পেছন থেকে অনু কে জড়িয়ে ধরে জিত বললো-- " কি করব সোনা, একেই বলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এখন আবার কাজের এত চাপ হোমের  মধ্যেই  সবসময় আমার হিরোইন ঘুরছে অথচ একটু  আদর করার সময়  হচ্ছে না।" 

--" ছাড়ো আমায় অনেক হয়েছে এর চেয়ে  অফিস যখন চালু ছিল রাতে ফিরে সেই আদর টাই বেশি ভালো ছিল। "

---  আরে সোনা বোঝার চেষ্টা করো। এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম  ব্যাপারটা এমনই জিনিস সামনে  ক্যাটরিনা থাকলেও এখন  তার দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। 

--- এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম  আর যাই করুক ওটাই আমার সতীন  হয়ে গেল এই কয়েকটা মাসেই।এই জন্যই তুমি আমায় ভুলতে বসেছো। আমায় অসহ্য লাগে তোমার।

--  না সোনা তোমায় ভুলতে পারি বলো?  তুমি আছো আমার অন্তরে।  লাভ ইউ সোনা। উ উ উউ ম ম ম আহ.... এবার খুশি তো?

 এক গাল হেসে অনু  বলল -- "খুব খুশি। "জিতের গাল টা টিপে অনু  বলল --"ওদিকে ল্যাপিতে মেসেজ ঢুকছে সেই আওয়াজ টা কানে ঢুকছে? এবার যাও ক্লায়েন্ট এর মন জয়  করো গে যাও। "

--" ওরে বাবা তাই তো ,( এক হাত জিভ বার করে) ভুলেই গেছিলাম। এখন আসলাম সোনা। রুমে যাই আবার কাজে বসতে। দেখা হবে রাত আটটার পর  বাই।" 

অনুর মন এখন আবার জিতের জন্য প্রেম, ভালোবাসায় ভরে উঠলো। সেও কিচেন এর দিকে পা বাড়ালো রাতের ডিনার তৈরি করতে।

(ভালো লাগলে বন্ধুরা অবশ্যই আপনজনদের সাথে শেয়ার করবেন।)

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ