এখন কি হবে রে তিয়াসা? আমি এইরকম অবস্থায় বাড়ি ফিরব কি করে? আমি তো খেয়ালই করিনি ভাগ্যিস পেছন থেকে সুমি দেখতে পেল । এ ....ই তিয়াসা, আমার একটুও ভালো লাগছেনা। কিছুতো একটা উপায় বার কর?
ক্লাস এইটে পড়া তেরো বছরের শ্রেয়ার সাদা রঙের স্কুল ইউনিফর্ম এর পিছনে যে পিরিয়ডের দাগ লেগে আছে --- তা নিয়েই চরম অস্বস্তিতে এখন শ্রেয়ার মন। তবে শ্রেয়ার প্রবলেমের কারনটা শুনে তিয়াশার মনে তেমন কিছু ভয়ের উদ্যোগ হলো না।
--- আরে, দূর !! এইসব নিয়ে এত টেনশন কেউ নেয় নাকি? চল ওয়াশরুমে চল জল দিয়ে একটু ধুয়ে এখনকার মতো একটু ম্যানেজ করে নে। বাড়ি গিয়ে কেচে নিবি। প্রবলেম সলভ।
শ্রেয়া : হাদার মতো কেন কথা বলছিস তুই ? জল দিয়ে ধুলে কি এই দাগটা পুরোপুরি যাবে ? আমি যে কি করি এখন ! রাস্তায় বেরোলে সব ছেলেরা এবার আমার দিকে দেখবে আর টোন টিটকারি কাটবে। ধুর আর ভালো লাগেনা। প্রত্যেক মাসের এই কটাদিন যে ভগবান কি শাস্তিতে রাখে তা শুধু মেয়েরাই জানে।
তিয়াশা : শাস্তি নয়, শাস্তি নয়-- এটা ভগবান প্রদত্ত নারীজাতিকে দেওয়া তার শ্রেষ্ঠ দান।
শ্রেয়া : এবার বাড়ি ফেরার সময় কিছু কিছু মানুষ যখন আমায় দেখে মুখের নানান অঙ্গভঙ্গি করে, বাকা ঠোটে ,আড় চোখে তাকাবে -- তখন আর ওপর ওয়ালার দান ধ্যান এর কথা কিছু মনে আসে না রে। কষ্ট হয়। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে।
এই তো সবেমাত্র তেরোয় পা দিলাম। তাই ভাবি এখনো ক... ত ক ...ত বছর এই জ্বালা সইতে হবে। মেয়েদের জীবন সত্যিই খুব কষ্টের। তার থেকে পুরুষ মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়া অনেক ভালো, অনেক সুখের। চাকরি ব্যবসা তো এখন ছেলে , মেয়ে উভয়ই করছে। তাতে আমার কোনো চাপ নেই। কিন্তু মাসে মাসে এই পিরিয়ড হওয়ার টেনশন টা হেডেকে নিতে আর ভালো লাগেনা।
তিয়াসা : ওই.. তুই সামান্য একটু পিরিয়ডের দাগ লেগেছে তাতে রাস্তার লোক কি বলবে , কি ভাববে সেই সব নিয়ে এত ফালতু কেন বকে যাচ্ছিস? আমিতো আছি তোর সাথে কে কি বলে আমিও দেখে নেব। তুই ওয়াশরুম থেকে একটু ক্লিন করে আয়।
এরপর স্কুল শেষে তিয়াসা আর শ্রেয়া একসাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। --- "আরে এ তো দেখছি সদ্য ঋতুবতী" বলে কয়েকজন ছেলের দল শ্রেয়াকে দেখে নিজেদের মধ্যে হো হো করে হাসতে থাকলো । আর একে অন্যের হাতের তালুতে আওয়াজ করে হাততালি দিতে থাকলো। সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায়, অপমানে শ্রেয়ার মুখটা ছোট হয়ে ,করুন হয়ে গেল।ওদের হাসাহাসির বিকট আওয়াজে শ্রেয়ার চোখের কোন ভিজে এলো । ততক্ষণে তিয়াশার চোখে-মুখে এক জ্বলন্ত আগুনের আভা দাউদাউ করে জ্বলছে । সে নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে উদ্যত হলে তাকে বাধা দিয়ে ইশারায় যেতে নিষেধ করল শ্রেয়া। কিন্তু তিয়াশার রাগ তখন সপ্তমে। শ্রেয়ার বাধা অমান্য করেই তার হাত শ্রেয়ার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তা ক্রস করে কুটুক্তি করা ছেলেটার মুখে দিলো সজোরে এক ঘুষি। তারে মারের চোটে তার পাশে থাকা ছেলেগুলো রীতিমতো হকচকিয়ে গেল। সেই মুহূর্তে রাস্তার লোকজনও জমায়েত হয়ে গেছে।
তিয়াশা তাদের উদ্দেশ্য করে বলল--- " হ্যাঁ , ওর পিরিয়ড হয়েছে ।এটা নারীজাতির অলংকার। এটা ঈশ্বর এর অমূল্য দান। এই পিরিয়ডের মূল্য তোমরা বুঝবে না। তা তোমাদের মা, বোন ,দিদিরা ভালো জানবে ।তাদের থেকে জেনে নিও। জেনে রাখবে পিরিয়ড হওয়ার জন্যই তুমি জন্ম নিতে পেরেছে এই পৃথিবীতে । একটা মেয়ের জীবনে এই পিরিয়ডের মূল্যবোধ অনেকটা ।এর মাধ্যমে সে মা হতে পারবে। এই পিরিয়ডের জন্যই পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার হয়। আর যাকে তুমি মা বলে সম্মোধন করো সেই নারী ও এইভাবেই মা হয়েছে। আর সেই জন্যই তুমি পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছ।
এতক্ষণ তিয়াশার মুখে এই কথাগুলো শুনে যে ছেলেগুলো তখন হো হো করে হাসছিল তারা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলো। আর মার খাওয়া ছেলেটা নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জায় অনুশোচনায় শ্রেয়ার কাছে এসে ক্ষমা চাইল । ক্ষমাপ্রার্থী ছেলেটা শেষে এই কথাটা ও শ্রেয়াকে বলে গেল আমি জীবনে এই প্রথম এক চরম সত্যের মুখোমুখি হলাম বোন পারলে আমায় ক্ষমা করো।
সকল বন্ধুদের অনুরোধ রইলো গল্পটি ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন এবং আপনজনদের কাছে শেয়ার করবেন।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ