অষ্টমীর অঞ্জলি (পঞ্চম পর্ব)

anjali of ashtami fifth part



 অষ্টমীর অঞ্জলি (পঞ্চম পর্ব)

সোমের মুখে নিজের এইরূপ প্রশংসা শুনে সহিনীর গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মাথা নিচু করেই সে সোমকে থ্যাংক ইউ বলল। 

 ততক্ষনে সোমের বন্ধুরা মণ্ডপে চলে এসেছে।  তাই সোম উঠে পড়ল । বলল পরে কথা হবে।

 এরপর কিছুক্ষন গল্প করে, সামনাসামনি কয়েকটি ঠাকুর দেখে সোহিনী আর কেয়া রাস্তায় দাঁড়িয়েই মোমো আর ফুচকা খেলো। ওরা দুজনেই স্ট্রিট ফুডের খুব ভক্ত। তারপর বাড়ির উদ্যেশে রওনা দিলো দুজনে। বাড়ি ফেরার সময়  কেয়া বললো রাতে ঘুমানোর আগে একবার আমায় কল করিস।  কিছু কথা বলার আছে তোকে।

--  কি বলবি? এখনি বল না।  

---সামনাসামনি বলতে পারবোনা । যা বলার আছে  ফোনেই বলবো। 

--- ধুর ! তোর  যেন যতো ঢং।  আচ্ছা ঠিক আছে।  ফোন করব । এখন বাই।  গুড নাইট।


 বাড়ি ফিরে ডিনারে তেমন কিছুই খেলোনা সোহিনী।  শুতে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন দিয়ে রোমান্টিক গান শুনতে থাকলো।এখন ওর মেজাজ টা খুব মুডে আছে ।  চার পাঁচটা গান শোনার পর সহিনীর খেয়াল পড়লো কেয়ার কথা।  দুই বার মাত্র রিং হতেই কেয়া ফোনটা রিসিভ করল।

--- ঘুমিয়ে পড়েছিলি?সরি  রে।  গান শুনতে শুনতে ফোন করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাই ফোন করতে একটু দেরি হয়ে গেল। 

--- হম। এখন গান শুনবি।  ধেই ধেই করে নাচবি  আরও কত কিছু করবি।


---আবার !আবার ... তুই শুরু করলি তো? কি জন্য ফোন করতে বলেছিলিস  সেটা এবার বল। 

--- তোকে একটা কথা বলা হয়নি । কথাটা আমি তোর কাছে বেমালুম চেপে রেখেছিলাম। ওটাই বলবো বলে ফোন করতে বলেছিলাম। সামনাসামনি বললে  আমার প্রতি তোর কি  রিঅ্যাকশন হতো তা আমি জানি না । হয়তো আমাদের সুন্দর বন্ধুত্ব টা নষ্ট হয়ে যেতে পারত । তাই বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। 

--- স্টুপিড কোথাকার । এরকম বাজে কথা মুখে একদম  আনবি না ।  তোর জন্যই তো আমি একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে এসে অনেক বন্ধুর সান্নিধ্য  পেয়েছি। তোর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কি করে সবসময় হাসিখুশি থাকতে হয়,  লাইফটাকে  কিভাবে এনজয় করতে হয়।  যাক, সে সব কথা বাদ দে।  এ বার ঝেড়ে কাশ  তো।  ব্যাপারটা কী সেটা বল। 

---মানে,  সোম দা  তো আমার জেঠুর ছেলে।  তাই দাদার সাথে আমার যোগাযোগ বরাবরই ভালোই ছিল। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ  ছাড়াও কখনো কখনো ফোন এও দাদার সাথে কথা বলতাম। দাদা আমার ফেসবুকে তোর সাথে আমার একসাথে  অনেক ফটো দেখেছিল আগে । তখন থেকেই ওর তোকে  ভালোলাগতো।  আমায় ফোন করে তোর বাড়ি কোথায়, তোর নাম এইসব বৃত্তান্ত জানতে চেয়েছিল । এইটুকুই শুধু তোর সম্পর্কে  আমি বলেছিলাম দাদা কে। দাদা বলেছিল তোকে আগে থেকে ওর ব্যাপারে তোকে কিছু না জানাতে। বলেছিল  পুজোর ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে তোর সাথে  ও মিট করবে।  সেই মতই কথা এগোচ্ছে।  ঠিক এতো টুকু অবধি আমি ইনভোলভ ছিলাম। এবার তোরা যা পারিস কর। আমার এটা তোকে বলার কর্তব্য মনে হলো এখন তাই বললাম।

-- ও এই ব্যাপার তাহলে! তুই আমায় আগে কেন বলিসনি? আগে বলেলে যে বন্ধুত্বটা  হয়তো নষ্ট হয়ে যেত । আমি তোর মত বন্ধুকে হারাতে চাইনা সোহিনী। তবে আমি কারো  পক্ষ হয়ে বলছি না। সোম দা কিন্তু খুব ভালো ছেলে।  পড়াশোনাতেওঁ ব্রিলিয়ান্ট । সবচেয়ে বড় কথা ও চরিত্রবান। ওর কথা একবার ভেবে দেখতে পারিস।

--ঠিক আছে। এখন ফোন রাখছি। কাল কথা হবে ।

গুডনাইট বলে ফোন কেটে দিল সোহিনী।সোমের  আগে থেকেই ভালো লাগে সহিনীকে । কেয়ার  কাছ থেকে এই কথাটা শোনার পর সহিনীর শরীরে একটা খুশির আমেজ আসলো।  অদ্ভুত একটা ভালো লাগা সহিনীকে ঘিরে ধরলো। ও কখনো ভাবতেই পারে নি যাকে ও মনে মনে চেয়েছে সে অনেকদিন আগেই ওর ওপর মন দিয়ে বসে আছে।  কিছুতেই ওর রাতে ঘুম আসলো না। শুধু পা বালিশ নিয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকলো।   অবশেষে  বিছানা থেকে উঠে এসে জানলার ধারে এসে দাঁড়াল সোহিনী।  সে দেখল নিশ্চুপ রাতে গোটা আকাশজুড়ে চাঁদের  কি বিশাল অস্তিত্ব। কয়েকটা মাত্র তারা   মেঘের আড়ালে কখনো ঢাকা পড়ছে, আবার কখনও জেগে উঠছে । সোহিনী মনে মনে ভাবল সোম কি তাহলে এভাবেই তার সাথে লুকোচুরি খেলতে চাইচ্ছে। রাত পোহালেই মহানবমী।  আর কয়েকটা দিন বাদেই সোম আবার ফিরে যাবে।  সোহিনী জানলা  থেকে সরে এসে অকারণবশত ই  মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুক অন করল। সঙ্গে সঙ্গে ইনবক্স এ সোমের ম্যাসেজ ঢুকলো । 

" রাত তো অনেক হলো।  এখনো জেগে আছো সোহিনী?"

 এবার সোহিনী সবকিছু জেনে গেছে সোমের ব্যাপারে। তার আর  রিপ্লাই দিতে মনে কোন নেগেটিভ আশঙ্কা থাকল না।  তবু  "হম" এই ছোট্ট কথাটা লিখেই রিপ্ল্যাই  দিল। 

--"আমিও ঘুমাইনি ।ঘুম আসছে না। কিছুই ভালো লাগছে না ।কেন এরকম হচ্ছে আমার বলতে পারো সোহিনী?"

 সোমের এই মেসেজ টা দেখে সোহিনী মনে মনে ভাবলো, আমারও একই অবস্থা। তার কিছু ভালো লাগা, না ভালোলাগা এখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। অজানা এক ভালোবাসার ঢেউ সহিনীর  জীবনকে উথাল, পাথাল করে তুলেছে।  ও  মন থেকে চাইছে সোম  তাকে প্রপোজ করুক। কিন্তু সোম সামনা সামনি যতটাই স্মার্টলি কথা বলুক না কেন--  এসব ব্যাপারে একটু ভীতু বটে। নাহলে তো  অন্য কোনো ছেলে হলে এতক্ষণে প্রপোজ করেই দিত। আবার মেসেজ ঢোকার আওয়াজে সোহিনী চমকে উঠে ফোনের দিকে তাকালো।

--  সোহিনী মেসেজের রিপ্লাই দিলে না যে? তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তোমায় একবার ফোন করতে পারি? যদি উত্তরটা হ্যাঁ হয় তাহলে নাম্বারটা দিও।

সোহিনী মেসেজটা দেখে কিছু না লিখেই শুধু মাত্র নম্বরটা সেন্ড করলো সোমকে। এবার যতক্ষণ না সোম ফোন করছে   ততক্ষণ  উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটাতে থাকলো সহিনী। যদিও সময় টা পাঁচ মিনিটের বেশি নয় । তবু এই পাঁচটা মিনিট ই যেন ওর কাছে একটা যুগ  মনে হতে থাকলো। আবার অন্য একটা চিন্তাও মাথায়  ঢুকলো।  নম্বরটা দিয়ে কি ও কোনো ভুল করলো।   আবার নিজের মনকে নিজেই সান্ত্বনা দিতে থাকলো। অতঃপর ফোনের ভাইব্রেশন এর  আওয়াজে সহিনীর  হার্টবিট আরো ডবল হয়ে গেল ।  তার হাতের চেটো এখন অবিরাম ঘেমে যাচ্ছে। বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে ।ফোনটা একনাগাড়ে কেঁপেই চলেছে । কিন্তু সাহস করে ধরতে পারছে না । মনে সাহস সঞ্চয় করে ফোনটা রিসিভ করতে যাবে এমন সময় ফোনটা কেটে গেল । সোহিনী   ভাবলো যাক , ভাল হয়েছে । সকালে যদি ফোন করে তখন না হয় ফোন রিসিভ করবে। এই ভেবে সে বিছানায় গিয়ে শুল। কিন্তু সোম আবার ফোন করলো।  এবার দুইবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করল।

-- হ্যালো!  সোহানি, এত রাতে ফোন করলাম বলে তুমি  ডিস্টার্ব ফিল করছো না তো? 

মনে মনে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে গলাটা একটু ঝেড়ে  নিয়ে সোহিনী বললো-- না,  কিন্তু এত রাতে ফোন করছ আর্জেন্ট কিছু দরকার নাকি?

---  না, মানে রাত পোহালেই মহানবমী।তাই  উইজ করার জন্য ফোন করলাম। সোহিনী জানে সোম কেন এতো রাতে তাকে ফোন করেছে। সোমের কথা শুনে সোহিনী হেসে ফেললো । একটু জোরেই হাসলো।

--- কি হলো হাসছো যে? মানে ঘুম আসছিল না।  দেখলাম তুমিও ফেসবুকে একটিভ । তাই তোমায় উইস করলাম।

-- তার জন্য তো ম্যাসেজ করে দিলেই পারতে।  ফোন নাম্বারটা চাওয়ার খুব দরকার ছিল বুঝি? 

--  মানে , ইয়ে ...  একটা কথা ও  বলার ছিল। 

-- ওহঃ কি কথা শুনি? 

-- মানে এত রাতে বলাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। বলব?

-- হুম বল। 

--সোহিনী, আমার তোমাকে ভালো লাগে। অনেক দিন থেকেই কেয়ার ফেসবুকে তোমার ফটো দেখেই তোমায় মনে মনে ভালো লেগে গিয়েছিল ।ভেবেছিলাম পুজোর ছুটিতে এখানে এসে তোমার সাথে পরিচয় করবো ।এখন পরিচয়টা হয়ে গেছে তাই মনের কথাটা বললাম। তুমিও কি আমায় লাইক করো?   প্লিজ আমার কথাগুলো ইগ্নোর করোনা । পজিটিভ নেগেটিভ যাই হোক না কেন কিছু তো বলো?  কিছু না বলে ফোন কেটে দিওনা।  তাহলে  কিন্তু বাকি রাতটুকুও আমি ঘুমোতে পারবো না।


চলবে---

পরের পর্ব পড়ুন

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ