খানিকটা লজ্জা পেয়ে) সোহিনী বলল-- আমি ফোন রাখলাম এখন। মেসেজে রিপ্লাই দিয়ে দিচ্ছি এখনই।
--- আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে দেরি করো না কিন্তু ।
এরপর সোহিনী ফোন কেটে দিয়ে মেসেজে রিপ্লাই করল। সোহিনী আর সোমের মধ্যে এবার সম্পর্ক আরো গাঢ় হলো। মহানবমীর সকালটা সোহিনীর জীবনে একটা বিশেষ দিন। যদিও সকাল থেকে সোমের সাথে তার দেখা হয়নি। ঐদিন সহিনীরা নবনিতাদের বাড়ি গিয়ে ছিল । ওদের বাড়ি ঠাকুরের ভোগ খেতে যাওয়ার নেমন্তন্ন ছিল। সন্ধ্যের দিকে সেই প্রথম সোম আর সোহিনী এত কাছাকাছি এলো।
সোম বলল সহিনীকে আমি পড়াশোনা সূত্র ব্যাঙ্গালোরে থাকি। পরের বছরই কমপ্লিট হলেই চলে আসবো। তারপর এখানেই জব করব। ততদিনে আমায় ভুলে যাবে নাতো সোহিনী? ওরা দুজন দুজনকে না ছেড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে একে অপরের হাতে হাত রেখে শান্ত গঙ্গার ধারে শীতল হওয়ায় বসে থাকল। কিছুক্ষণ দুজনেই কোন কথা বলল না। তারপর দুজন দুজনের দিকে চেয়ে একসাথে বলে উঠল খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। এই ভাবেই দুটি প্রাণের ভালোলাগা পরিপূর্ণতা পেল ভালোবাসায়।
দশমীর দিন একটি বিশেষ চিত্র সোহিনীর নজর কাড়লো । যখন মাকে বিদায় এর জন্য সকলেই সিঁদুর খেলা , বরণে ব্যস্ত সেখানে কেয়া আর রিতম সকলের সামনেই নিজেদের মধ্যে কথা বলাতে মগ্ন।সোহিনী রিতমকে ভালো ভাবেই চেনে। ও রায় কাকিমার ছেলে । সোহিনীকে অবাক করে দিয়ে সোম পাশ থেকে বলল-- ওদের কথা বলা দেখে হা হয়ে যাওয়ার কি আছে সোহিনী ? দুবাড়ি থেকেই ওদের বিয়ের কথাবার্তা তো ফাইনাল। কেয়ার ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট হলেই ওদের বিয়ে হয়ে যাবে ।ওদের সম্পর্কটা ছোটবেলা থেকেই। সোহিনীর মনে পড়ল তাই অষ্টমীর দিন সকাল বেলায় রায় কাকিমার সাথে কেয়া এই জন্যেই নিচুস্বরে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলছিল । এতবড়ো কথাটা সম্পূর্ণ চেপে যাওয়ায় সহিনীর কেয়ার ওপর খুব রাগ হলো। আবার খুশিও হলো বটে । কেয়াও তাহলে বিয়ের পর এই পাড়াতেই থাকবে এই ভেবে।
লক্ষ্মী পূজার পর দিনই সোম চলে গেলো ব্যাঙ্গালোরে। এরপর প্রায় দীর্ঘ একটা বছরের অপেক্ষা। নিয়মিত ফোন, ফেসবুক এইসব এর মাধ্যমেই তাদের লং ডিস্টেন্স লাভ এগিয়ে চলো তর তড়িয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই সোম বাড়িতে সহিনীর কথা তার মা কে জানাল। তাতে উনি কোনো আপত্তি করেননি। বরং খুশী হয়েছিলেন।কিন্তু সহিনীরা যেহেতু ব্রাহ্মণ , তাই এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে প্রভাদেবী তুমুল আপত্তি তোলেন । রজতবাবুর অমত না থাকলেও প্রভাদেবী জাতের বিচার কে সামনে রেখে দুটি প্রাণের মিলনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও প্রেম থেমে থাকেনি। এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় একটা বছর কেটে যায়। ওদিকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার আগেই রিতমের সাথে কেয়ার বিয়ে হয়ে যায় ।এই একটা বছরে দেখা না হলেও সোম আর সহিনীর ভালোবাসার কোনভাবেই ছেদ পড়েনি । বরং আরও গভীর হয়েছে। দেখতে দেখতে পুজো আবার চলে আসে। সোহিনী তখন সোমের প্রেমে বিভোর। সে এই সম্পর্কের কোনরকম রিস্ক নিতে চাইছিলো না। তাই সিদ্ধান্ত নেয় সোম বাড়ি ফিরলেই গার্জেন দের না জানিয়েই রেজিস্ট্রি টা সেরে ফেলবে। ওর ধারণা ছিল এর ফলে তার মা তাকে বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু সোমের এই সিদ্ধান্তে মত ছিল না। কিন্তু সোহিনী তখন একই জেদ। অগত্যা সোম বাধ্য হয় গোপনে রেজিস্ট্রির জন্য এপ্লাই এর। এবার ব্যাপারটা হল এই যে --রেজিস্ট্রি অফিসার রেজিস্ট্রি করার জন্য ডেট দিয়েছে পুজোর অষ্টমীর দিন সকালবেলা। তাই সোহিনী অঞ্জলি দিতে যাওয়ার নাম করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নতুন বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে সোমের
সাথে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে অফিশিয়াল বিয়েটা সেরে ফেলে।যদিও সহিনীর ইচ্ছা ছিল আগের বছর যেহেতু সোমের মোহে মহিমান্বিত হয়ে অঞ্জলি ঠিকভাবে দেয়া হয়নি তাই এই বছর অঞ্জলিটা সুষ্ঠভাবে দেওয়ার। কিন্তু এই বছর ও রেজিস্ট্রির চক্করে অঞ্জলিটা তার দেওয়া হলো না।
শেষ পর্যন্ত সোম আর সহিনীর বিশেষ কয়েকজন কাছের বন্ধুদের সাক্ষরতার ভিত্তিতে তাদের অফিশিয়াল বিবাহ সম্পন্ন হয় । তবে সোম আর সহিনীর এই গোপন কর্মটি আড়াল থাকেনি বেশিদিন। সোম তার প্রাণ এর অধিক প্রিয় বন্ধু অর্থাৎ তার মা সুলেখা দেবীকে কয়েকমাস পরেই তাদের রেজিস্ট্রির কথা বলে দেয়। এতে ঝামেলা আরো বৃদ্ধি পায় । সোম আর সহিনীর এই হঠকারিতায় তিনি মন থেকে খুবই কষ্ট পান। অতঃপর সুলেখা দেবী তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সহিনীদের বাড়ি আসেন সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। রজত বাবু মানে সহিনীর বাবার প্রথম থেকেই এই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু সোমের বাবা, মায়ের থেকে তাদের গোপন রেজিস্ট্রির কথা জানতে পেরে তাঁর মনেও আঘাত জন্মায়। শেষ পর্যন্ত সোমের বাবা-মা তাদের বাড়ি এসে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় প্রভাদেবী আর আপত্তি তোলেননি। কিন্তু বিয়ের ডেট ফাইনাল হওয়ার সময় প্রভা দেবী আবারও ব্যাঘাত ঘটান। বিবাহের জন্য কাছাকাছি কোন মাসই তাঁর শুভ বলে মনে হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত শ্রাবণ মাসে ভরা বর্ষায় সোম আর সহিনীর বিয়ে ঠিক হয়।
শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে তারা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর স্বাভাবিকভাবেই মধুচন্দ্রিমার ব্যাপারটা এসেই যায়। সে বছর আবার ভাদ্র মাস মল মাস হওয়ায় প্রভা দেবী তাদের মধুচন্দ্রিমাতেও বাইরে ঘুরতে যেতে বাধা দেন ওই মাসে। সদ্যবিবাহিতা সোম ও সহিনীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সুলেখা দেবীও বারণ করেন। তাই তারা আশ্বিন মাসের দুর্গা পূজার সময় মধুচন্দ্রিমায় যায় কাশ্মীর এ। সুতরাং পরপর তিনটে বছর সোহিনী অঞ্জলি থেকে বঞ্চিত হয়। কাশ্মীরে বরফে ঢাকা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতেও সহিনীর মন চলে যায় পাড়ার দুর্গাপূজায়। সহিনীর মনের অবস্থা আঁচ করতে পেরে সোম তাকে বলে --চিন্তা করো না। নেক্সট ইয়ার ডেফিনেটলি তুমি মায়ের অঞ্জলি দেবে ।
কিন্তু সোহিনীকে দেওয়া সোমের কথা মিললো না । বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সোহিনী সন্তানসম্ভবা হলো। ভাগ্যবশত অষ্টমীর দিনই সহিনীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হল পৃথিবীতে। সোম ও সহিনীর সব বন্ধুরা মিলে তাদের কন্যা সন্তানের নাম ঠিক করল অঞ্জলি। নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে এইবার ও সোহিনী সোম কে বলে এই বারেও অঞ্জলি মিস হলো সোম।সহিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে সোম বলে ডোন্ট ওরি সোহিনী। মায়ের অঞ্জলি মিস হয়েছে তো কি হয়েছে? তোমার আমার কাছে সর্বক্ষণের জন্য থাকলো তোমার আর আমার প্রান আমাদের কন্যাসন্তান ।যার নাম অঞ্জলি। এই নিয়ে পরপর চার বছর হল অঞ্জলিতে ব্যাঘাত পরছে সহিনীর। সে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকল পরের বছর মায়ের অঞ্জলি সে দেবেই।
সেইমতো নেক্সট ইয়ার ছোট্ট অঞ্জলীকে পরীর মত সাজিয়ে , নিজে লক্ষ্মী প্রতিমার মত সেজে মণ্ডপে পৌঁছে দেখল ততক্ষনে মায়ের অঞ্জলি কমপ্লিট। প্রসাদ বিতরণী হচ্ছে। বারবার এই ব্যর্থতায় তার বন্ধুবান্ধব রা এমন কি সোমের বন্ধুরাও খুব মজা পেত।সোহিনী সেই বছর গিয়েছিল বেজায় চোটে। তার এই ব্যর্থতার জন্য সে সোমকে দায়ী করছে ।
-- তুমি আমায় কেন দোষারোপ করছো?
-- কেন দোষ দেব না তোমায় শুনি? যে বছর থেকে তোমার দর্শন পেয়েছি সে বছর থেকেই এই সুযোগটা আমার হাতছাড়া হচ্ছে।
--ও আচ্ছা আচ্ছা । খানিকটা আদুরে ভঙ্গিতে সোম, সহিনীর কাছে এসে বলল-- সাজগোজ করতে একটু কম টাইম নাও সুন্দরী । তাহলে নেক্সট ইয়ার তুমি অঞ্জলি দিতে সফল হবে মিলিয়ে নিও আমার কথা।
--ফালতু কথা বলো না। তোমার কথা একটাও বিশ্বাস হয়না।
কিন্তু এই বছরও সহিনীর স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছিল। এই বছরে অঞ্জলীর বয়স দুই বছর ছিল। দুষ্টুমিটা ও একটু কমই করে। তাই সহিনীর ইচ্ছে ছিল ছোট্ট অঞ্জলীকে নিয়ে একসাথে মায়ের অঞ্জলি দেবে। ও যে চিৎকার করে কান্নাকাটি জুরে মাঝপথে অঞ্জলি দেওয়া থেকে সহিনীকে উঠে আসতে বাধ্য করবে সেটা ওকল্পনা তেওঁ ভাবতে পারে নি। সোহিনী এই বছর খুব রেগে গেছে। তার ওপর এই বছরও এই ব্যাপারটা নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা তাকে ভালোই খেপিয়েছে।তাই সোহিনী মেয়েকে কোলে নিয়ে রাগে গড়গড় করতে করতে সোমের কোলে দিয়ে বলল তোমার মেয়ে পুরো তোমার মতোই হয়েছে। সামনের বছর অঞ্জলির সময় তোমরা বাপ বেটি তে অন্য জায়গায় ঘুরতে যেও । আমি সেই সময় সুষ্ঠ ভাবে মায়ের অঞ্জলি দেবো।
ছবি : সংগৃহীত

2 মন্তব্যসমূহ
10B94596D3
উত্তরমুছুনTakipçi Satın Al
Whiteout Survival Hediye Kodu
Telegram Coin Botları
Azar Elmas Kodu
Brawl Stars Elmas Kodu
0B573B8174
উত্তরমুছুনÜcretli Şov
Whatsapp Ücretli Show
Görüntülü Seks