অসমবয়সী প্রেম ( প্রথম পর্ব)
প্রথম যৌবনে পাওয়া ভালোবাসার ছোঁয়া হয়তো অনেকেই ভুলতে পারেনা। তেমনি ভুলতে পারিনি কনিকাও। কনিকা এখন বছর পঁয়ত্রিশের মধ্য বয়স্ক মহিলা। এখনো অবিবাহিতা। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরতা। সংসারে বিধবা মা আর তার একমাত্র কন্যা ছাড়া আর কেউ নেই। অবস্থাপন্ন পরিবারেই কণিকার জন্ম হয়েছিল। বাবা ছিলেন প্রতিষ্ঠিত নামকরা " কণিকা চানাচুর ফ্যাক্টরির " মালিক। তবে সেই সব আজ অতীত। কারণ ফ্যাক্টরিটা এখন তাদের আর নেই। এই ফ্যাক্টরি মালিকানা হারানোর পিছনে রয়েছে কণিকার অবৈধ অসমবয়সী প্রেমের কাহিনী ।
ঘটনার সূত্রপাত ষোল বছর আগে। কনিকা তখন সদ্য মাধ্যমিক পাস করে ইলেভেনে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে সদ্য যৌবন বতী কণিকার জীবনে এলো ভালোবাসা। তবে এ ভালবাসা সাধারণ প্রেম , ভালোবাসার মতো নয়। এক অবৈধ ভালোবাসার জালে আটকা পড়লো কনিকার হৃদয়। কনিকা ভালোবেসে ফেললো তার বাবা প্রতাপ ঘোষ এর বিবাহিত বন্ধু তরুণ শাসমল কে।
বছর চৌত্রিশের তরুণ শাসমল তখন উঠতি ব্যবসাদার। পেশাগত কারণে প্রতাপ বাবুর বাড়িতে তার ছিল অবাধ যাতায়াত। ব্যবসায়িক কাজকর্ম ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানে ও দুই পরিবার একসঙ্গে সময় কাটাত। এই যাতায়াত সূত্রেই তরুণ বাবুর সাথে কণিকার পরিচয় হয়।
কনিকা মাধ্যমিক পাশ করে যে বছর, সেই বছর তরুণ শাসমল এরই বাড়ির অদূরে একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় । অবশ্য কণিকাকে যাতে ওই স্কুলেই ভর্তি করানো হয় সেই ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল তরুণ শাসমলই। তিনি ই প্রতাপ বাবু কে বলেছিলেন কণিকাকে ওই স্কুলে ভর্তি করাতে কারণ স্কুলটি বেশ নামকরা। তা শুনে কণিকার মা রাজি হয়ে যান। ভাবেন তরুণ বাবুর বাড়ির কাছাকাছি স্কুল তাই চিন্তার কিছু নেই । শেষমেশ কণিকাকে ওই স্কুলেই ভর্তি করানো হয়।
এরপর প্রায়ই সকালের দিকে তরুণ বাবু নানা কাজের ছুতো নিয়ে প্রতাপবাবুর বাড়ি আসতেন। এবং বাড়ি যাওয়ার পথে কণিকাকে স্কুলে পৌঁছে দেবেন বলে তাকে নিয়ে যেতেন। প্রথম প্রথম কনিকা তরুণ বাবুকে তরুণ কাকু বলেই ডাকতো।
স্কুল যাওয়ার পথে চারচাকা গাড়ির ভেতর তরুণ বাবুর হাতে স্পর্শ সদ্য যৌবনে পা রাখা কণিকা কে একটু অস্বস্তির মধ্যেই ফেলত। প্রথম দিকে কণিকা ভাবতো অসাবধানতাবশত হয়তো তরুণ কাকুর হাত তার শরীরে লেগেছে। কিন্তু মুহূর্তেই তরুণ বাবুর দিকে মুখ তুলে তাকাতেই কণিকার বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠতো। সে দেখত তরুণ কাকুর অদ্ভুৎ এক চাউনি। চোখে চোখ পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে কণিকা চোখ নামিয়ে নিত। কিছু বলতো না। এই ভাবেই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল তরুণ বাবুর সাথে কনিকার স্কুলে যাতায়াত ।ওদিকে প্রতাপ বাবু ও তাঁর স্ত্রী তরুণ বাবুর প্রাইভেট গাড়িতে মেয়েকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতেন।
তরুন বাবুর ওই নেশা লাগা চোখ, আলতো স্পর্শ কণিকার ও দিন দিন ভালো লাগতে শুরু করলো। স্কুল যাওয়ার পথে গাড়ির ভিতর তরুণ কাকুর আলগা পরশ তার শরীরে বিদ্যুতের ঝলক বইয়ে দিত। কণিকা দিন দিন তরুণ বাবুর প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকলো। স্কুলেও সারাদিন তরুণ কাকুর কথাই ভাবতো। তরুণ কাকুকে ঘিরে সে যখন এক অলীক স্বপ্নে মেতে থাকতো বার বার সেই দিবা স্বপ্নের মাঝে তরুণ বাবুর স্ত্রী ও তার ছেলের কথা কণিকার মনে পড়লে তার রাগ হতো, আবার মনেও হতো এই ভালোবাসা অবৈধ, এই ভিত্তিহীন ভালোবাসা কখনোই সমাজে মর্যাদা পাবে না। তার বাবা, মা ও মেনে নেবে না। কিনতু এত কিছু ভেবেও সে কিছুতেই তরুণ বাবু কে মন থেকে সরাতে পারছিল না।
ততদিনে সেই স্পর্শ, সেই চাউনি তার মনে দাগ কেটে গেছে। কনিকা এখন ভাবতেই পারেনা তরুণ বাবু তার থেকে বয়সে বড় এমনকি, সে বিবাহিত উপরন্তু তার বছর তিনেকের একটি ছেলেও আছে । তার মন প্রাণ এখন সব সময় তরুণ বাবুকে খোঁজে। বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও এমনকি তার বাবার বন্ধু হওয়া সত্বেও কনিকা তার অবুঝ মনটা তখন তরুণ বাবুকে দিয়ে ফেলেছে।
চলবে----
( ভালো লাগলে বন্ধু রা কমেন্ট করবেন, এবং আমায় ফলো করবেন।) পরবর্তী অংশ খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে।
to be continued...
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ