অন্ধকারের পথে


অন্ধকারের পথে On the way to darkness

অন্ধকারের পথে

আজ কের রাত টা কৃষ্ণার কাছে বেশ শান্তির ,সুখের রাত ।আজ ঘুমানোর সুযোগ থাকলেও সে ঘুমাতে চায় না। রাতের অন্ধকার  খোলা জানালার পাশে বসে কাটিয়ে দিতে চায়। এই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এমন ই একটা রাতের জন্য সে অপেক্ষা করেছিল । যে রাতে কোন কাস্টমার আসবে না,  যে রাতটা থাকবে সম্পন্ন তার অধিকারে। 


খোলা জানালার পাশে বসে সে ভাবতে থাকে তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলার কথা । আজ অতীত রা বড্ড ভিড় করে আসছে তার চোখের সামনে । তার মনে পড়ে যায় রিক্তা নদীর ধারে তাদের গ্রামে ঢোকার সেই লাল মাটির রাস্তা, ধানে-ভরা হলুদ ক্ষেত , আর টিনের ছাউনি দেয়া তাদের ছোট্ট ঘর টার কথা। সেখানে মা-বাবা  দাদার নয়নের মনি ছিল সে ।বাবার ছিল বিঘে তিনেক জমি ।সেই জমিতে তারা মরশুমে সোনার ধান ফলাতো। আবার ধান উঠলে সিজনের ওপর নির্ভর করে তারা নানাবিধ সবজি চাষ করতো। তার সেই সব দিনের কথা স্পষ্ট মনে পড়ে যায়। বিকেলবেলায় দুই দাদা ও মায়ের সাথে সেও যেত কাঁচা সবজি তুলতে। তারপর সেগুলো তুলে এনে দিয়ে ধুয়ে, গুছিয়ে সাজিয়ে রাখত। ভোরবেলায় তার বাবা সেগুলো হাটে নিয়ে যেত বিক্রি করতে । সংসারের বিলাসিতার অভাব  থাকলেও মানানসই খাওয়া-পরার অভাব ছিল না তাদের। 


 যেদিন দুর্ঘটনাটা ঘটেছে সে বছর কৃষ্ণা ক্লাস নাইনে উঠেছে ।স্কুলের ইউনিফর্ম  হিসাবে শাড়িতে তাকে বেশ বড়োসড়ো যুবতী-মেয়ে লাগছিল। দাদারা তো ঠাট্টা ক'রে বলেছিলো --"মা দেখো দেখো কৃষ্ণাকে শাড়িতে কত বড় লাগছে। এবার কৃষ্ণার  দেখাশোনার জন্য ছেলে খুঁজতে হবে দেখছি। সেদিন তাদের মা ও অবাক চোখে তাকিয়ে কৃষ্ণাকে দেখে বলেছিলো--" সত্যিই আমার মেয়েটা চোখের সামনে দেখতে দেখতে যে এতটা বড় হয়ে গেছে আগে লক্ষ্য করিনি তো। নতুন স্কুল ড্রেসের শাড়িটা পড়ে তোকে খুব ভালো মানিয়েছে কিনতু কৃষ্ণা।" খানিকটা লজ্জা আর দাদার প্রতি একটু নরম অভিমানী হয়ে কৃষ্ণা সেদিন সাইকেলটা নিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েছিল স্কুলের উদ্দেশ্যে।


 কিন্তু সেদিন স্কুলে যাওয়ার মাঝপথেই তার পথ আটকে দাঁড়ায় বাচ্চু দের দল। বাচ্চু ও তার সাগরেদরা পাড়ায় ছোট ছোট দোকানগুলিতে ও ভাগ চাষীদের নানাভাবে টাকা আদায় করার জন্য অত্যাচার করত। তাদের ভয়ে সারা গ্রাম একপ্রকার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতো। বার কয়েক  ছয় মাইল দূরে গিয়ে গ্রামের লোকেরা তার নামে ডায়েরি ও করেছিল থানায়। কিন্তু তাতে তেমন কোন সুবিধা হয়নি ।থানার দারোগার হুমকিতে তাদের উপদ্রব কিছুদিন কম থাকলেও কয়েকদিন পর আবার যেই কে সেই অবস্থা হতো। আর বেশ কয়েকদিন ধরে মেয়েদেরও নানাভাবে উত্যক্ত করা শুরু করেছিল এ কথা শুনে ছিল কৃষ্ণা তার স্কুলের বান্ধবীর থেকে। তাই হঠাৎ তার সাইকেলের সামনে তাদের উপস্থিতিতে সে স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে যায়।


 নির্জন গ্রামের রাস্তায় সে চিৎকার করতে গেলে তার মুখটা রুমাল দিয়ে পিছন থেকে বেঁধে দেয় জানোয়ারের দলগুলো। তারপর তার সাইকেলটা জমির ধারে ফেলে,  তাকে জোরপূর্বক  বাইকে চাপিয়ে দেয় । তারপর তার হাত বেঁধে দেয়। আবার বাইকের পিছনে আর একজন জানোয়ার বসে যাতে মাঝে কৃষ্ণার উপস্থিতি চট করে কেউ না বুঝতে পারে। তাছাড়া কৃষ্ণার শরীরটার উপর একটি খালি বস্তা চাপিয়ে দেয় এতে সন্দেহ অনেকটাই দূর হবে। তারপর তারা মোট তিনটে বাইকে করে সাতজন লম্পট স্পিডে গাড়ি চালিয়ে গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে পিচ রাস্তা ধরে শহরের দিকে এগোতে থাকে। মুখে রুমাল বাঁধা, পিছনে হাত বাধা, আবার মুখে বস্তা দেওয়া অবস্থায় কৃষ্ণার দম নিতে কষ্ট হয় তার শরীরের সমস্ত শক্তি কমে আসে, প্রথমদিকে ছটফট করতে থাকলেও শেষের দিকে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে ।এমন অবস্থায় ঘন্টাদুয়েক বাইক চালিয়ে তারা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে। তার সারা শরীররে তারা মদ ঢেলে দেয়। তার পরনের শাড়ি ছিন্নভিন্ন করে দেয়।  সাতজন জানোয়ার ই তাকে কুরেকুরে ছিঁড়ে খেয়ে ভোগ করতে থাকে। আঁচড়ানো, কামড়ানোতে তার শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। কৃষ্ণার কোনো সার থাকে না । তাই নির্দ্বিধায় তারা তাদের ক্ষুধা মেটাতে থাকে।


 তারপর তারা তাকে একপ্রকার চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যায় শহরের একটি নামকরা গলিতে। যে গলিতে মেয়েরা শরীর বেচে খায়, দিন যাপন করে। এই অবস্থায় কৃষ্ণাকে তারা ওখানকার মালকিনের হাতে তুলে দিয়ে নগদ 25 হাজার টাকা নিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেয়।


 জ্ঞান ফিরলে সে দেখতে পায় একটি ছোট ঘরের চৌকিতে শুয়ে আছে সে। তার পাশে তার বয়সী ও তার থেকে কিছু বড় মেয়ে বসে আছে। ধড়মড় করে উঠে সে জিজ্ঞাসা করে --"তোমরা কারা? আমি এখানে কি করে এলাম।" তাদের মধ্যে একজন কৃষ্ণার শরীরে মলম দিতে দিতে বলে--" আমরা এখানে থাকি ।আজ থেকে তুমিও আমাদের সাথে এখানেই থাকবে। তোমার মত আমরাও আকস্মিকভাবে কেউ প্রতারিত হয়ে ,কেউ বঞ্চিত হয়ে, কেউবা কুচক্রের জালে ফেঁসে এখানে পৌঁছেছি।


 সেই থেকেই এখানে পাঁচটা বছর কৃষ্ণার কেটে গেছে নিজের দেহটাকে রাতের অন্ধকারে বেঁচে। আজ এই নিশ্চুপ রাতে জানালা ধারে বসে সে ভাবতে থাকে দাদারা এখন কেমন আছে কি জানি? তার মা কি এখনও তার পথ চেয়ে বসে আছে ?
 আর বাবা হয়তো এখনও তাকে ফিরে পাওয়ার আশায় থানা ,মিসিং ডায়েরি, সংবাদপত্রের নিখোঁজ সংবাদ দিয়ে এখনো হয়তো তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।  হয়তো এভাবেই অন্ধকার জগতে থাকতে থাকতে তার জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। ফিরে যাওয়া হবে না আর তার সেই ছোট্ট ঘরে।

গল্পটি কেমন লাগলো বন্ধুরা কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমায় আগামী দিনের চলার পথ আরো সহজ করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ