প্রতারণার ফাঁদে ভালোবাসা


প্রতারণার ফাঁদে ভালোবাসা Love in the trap of deception cheat fraud


প্রতারণার ফাঁদে ভালোবাসা

অনিশের এইরকম লাগামছাড়া কথাবার্তা গুলো আর সহ্য করতে পারছে না  তৃষা। এই একটা মাস ধরে সে অনিশকে অনেক অনুরোধ করেছে, অনেক কান্নাকাটি, অতীত ভালোবাসার সুখের স্মৃতি রোমন্থন করেছে কিন্তু তার কোনো কথাই অনিশ পাত্তা দেয় নি। যখনই তৃষা ফোন করেছে বারবার ফোন কেটে দিয়েছে। আবার কখনো সুইচ অফ ও করে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই তৃষা মেসেজ করে নিজের সব অভিযোগ আর আসন্ন বিপদের কথা জানিয়েছে। তাতে অবশ্য কোনো লাভটাই হয় নি তৃষার। সব কিছু জেনেও অনিশ ফোন করে তৃষা কে বলে--

-- টাকা যত লাগে দিয়ে দেব। দূরে কোনো অচেনা নার্সিংহোম থেকে ওটা নামিয়ে এসো আগে। 

---কিন্তু অনিশ?

---কোনো কিন্তু না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওটা আগে নামিয়ে এসো।তারপর আমার সাথে যোগাযোগ করবে।তার আগে ফোন করবে না আমায়। আর যদি বেশি দেরি করে ফেলো তাহলে ফল তোমাকেই ভোগ করতে হবে।

-- তুমি এত বড় কথা টা  বলতে পারলে? এতদিনের ভালোবাসা, ভালোলাগা এইসবের কি কোনো দাম নেই তোমার কাছে? যে আসছে সে তো তোমার আর আমার ভালোবাসারই অংশ। তাকে তুমি এইভাবে নষ্ট করে দেয়ার কথা বলতে পারলে অনিশ?
---উফফ!! তৃষা আমি এক কথা বারবার বলতে পারবো না। আর তোমার ওইসব ঢপের সেন্টিমেন্টাল , কি যেন বলো - 'ভালোবাসা' এইসব ন্যাকামির কথা গুলো আমার সহ্য হয় না। প্লিজ আমাকে শোনাতে এস না। 

---এত গুলো মাস, এতগুলো বছর আমার সাথে কাটানোর পর তোমার এইগুলো ন্যাকামি মনে হলো অনিশ?তাহলে প্রথম প্রথম আমি যখন তোমায় পাত্তা দিতাম না  তখন কেন তুমি আমায় কলেজ যাওয়ার পথে বাসে না উঠতে দিয়ে বাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেদ ধরতে? কেন ঘন্টার পর ঘন্টা কোচিং ক্লাসের বাইরে আমার জন্য ওয়েট করতে? কেন বৃষ্টি জলে ভিজে ভিজে আমায় একটি বার দেখবার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে? বলো অনিশ। চুপ করে থেকো না। সব কিছুই কি তাহলে মিথ্যে ছিল? সব কিছুই কি তোমার অভিনয় ছিল?

--- তখন বয়স অনেকটাই কমে ছিল তাই তোমার মত গেঁয়ো, মিডিল ক্লাস মেয়ের জন্য অতটা উতলা হয়ে পরেছিলাম।এখন বুঝতে পারি তোমার সাথে আমার মিলমিশ টা কখনোই হবে না। আমায় একটু শান্তি দাও তৃষা। প্লিজ আমায় আর ফোন করো না। প্রাইভেট অফিস এখানে সব সময় কথা বলা সম্ভব নয়।

-- আমি তো তোমায় বিরক্ত করতে চাই না অনিশ। তোমার একটা চাকরির জন্যই তো আমরা এতদিন ওয়েট করেছি। তুমিই তো কথা দিয়েছিলে আগে একটা চাকরি পেয়ে যাই, তারপরেই তোমায় বিয়ে করে নেব । তবে আজ কেন এইভাবে আমায় কষ্ট দিচ্ছ তুমি? ঠাকুর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন । যে আসছে তার কথা ভেবেই আমাদের বিয়েটা শিঘ্রই করে নেয়া উচিত। 
--- স্টপ তৃষা, প্লিজ চুপ করো। একটা কথা মনে দিয়ে শুনে নাও তৃষা। আমার পক্ষে তোমায় কোনো দিন ও বিয়ে করা সম্ভব নয়। 
-- কি যা তা বলছো তুমি? তোমার কি মাথার ঠিক নেই নাকি? তুমি এই মুহূর্তে এসে এত বড় কথা টা আমায় বলতে পারলে? আমি তাহলে কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবো? তুমি একটা বার ও আমার কথা ভাবলে না? তুমি আমার জীবন থেকে সরে গেলে আমার কি হবে অনিশ?

--- আমি ওসব কিছু জানি না। আর জানতেও চাই না। আমার বাবার বন্ধু অমিত বাবুর সুপারিশে আজ এই এত বড় কমাপনিতে উঁচু পোস্টে চাকরি পেয়েছি আমি। তাই অমিত কাকুর মেয়ে সুহানার সাথেই সামনের অঘ্রানে আমাদের বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে। কথা টা তোমায় এতদিন বলতে পারছিলাম না। যাক, আজ এই সুযোগ টা তুমি ই করে দিলে। তাই বলে দিলাম। আর আমায় যদি সত্যি ই তুমি ভালোবেসে থাকো তাহলে আর কোনো দিন ও আমায় ফোন কিংবা মেসেজ করবে না। আর কোনোরকম ভাবে যোগাযোগের চেষ্টাও করবে না।
(চোখের জল মুছে)  এত উন্নতি হয়েছে তোমার এই কয়দিনে? তোমার জীবনে এত কিছু ঘটে গেছে এইসব কথা আমায় এতদিন জানাও নি কেন তুমি?তাছাড়া চাকরি পাওয়ার পরই তো তুমি আমার সাথে এইসব সম্পর্কে জড়িয়েছ। তাহলে তুমি জেনেশুনে আমায় ইউস করেছ?

---হ্যাঁ ঠিক তাই। আর তুই যদি ভদ্র ঘরের মেয়ে হতিস আমি শতবার বললেও তুই এটা করতে পারতিস না। তোর কর্মের ফল তুই ভোগ কর এবার। ফোনটা রাখ। আর হ্যা, থানা পুলিশ করলে করতেই পারিস, মুখ টা তোর ই আগে পুড়বে। 

--- না, না অনিশ থানা , পুলিশ আমি করবো না। আমি সত্যি ই গেঁয়ো, মিডিল ক্লাস ঘরের মেয়ে গো। আমি নিজের ভালোবাসার মানুষটার কেচ্ছা পাঁচ কান করতে পারবো না। যে আর কয়েকদিন পর পৃথিবীর মুখ দেখবে তার পিতৃদাতা জেলের ঘানি টানুক তা আমি চাই না। গেঁয়ো হতে পারি, তবে শিক্ষিত একটা মন একটা সত্ত্বা আমার আছে। আমি চলে যাবো নিজের পরিবার সমেত অনেক দূরে। ছোট্ট একটা সংসার হবে আমার। আমার পরিচয়েই বাঁচবে আমার ছোট্ট সোনা।
 কাঁদতে কাঁদতে ফোন টা কেটে দিয়ে তৃষা নিজেকে অনেকটাই অসহায় বোধ করছিল এই সময়। এতক্ষন ধরে ফোনে তৃষার কথোপকথন শুনে তৃষার মা বুঝে গেছে কি ঝড় টাই না বয়ে গেছে তৃষার উপর দিয়ে এই কয়েকদিনে। যা কাউকেই সে বুঝতে দেয় নি। তার এই হতাশার  দিনে তাকে তিরস্কার নয়, বুকে আগলে নিয়ে তৃষার মা বললেন " জানিস তো এইজন্যই সব মায়েরা বলে দিন কাল খুব খারাপ না বুঝে পা ফেললে বিপদ আসন্ন।এখন আর কি করবি । মানুষ তো ভুল পথে গিয়েই শুধরায়। এবার যে আসছে তাকে সঠিক ভাবে মানুষ করার জন্য নিজেকে শক্ত কর তৃষা মা আমার। আজই তোর বাবা কে ফোন করে অফিসের কাছাকাছি ঘর ভাড়া নিতে বলবো। আর সব কিছু বুঝিয়ে বলবো চিন্তা করিস না। এইসময় মন খারাপ করিস না। সামনে তোর অনেক বড় লড়াই। প্রস্তুত কর নিজেকে। যে আসছে তার যত্ন নিতে হবে তো। আর পড়াশোনাটা ও চালিয়ে যেতে হবে। আশীর্বাদ করি সমাজের বিধি ভেদ করে তুই একাই তোর সন্তানকে যেন মানুষ করতে পারিস। এই যুদ্ধে তুই জয়ী হোস তৃষা।

গল্প  টি  শুনতে  চাইলে  এখানে শুনতে  পারেন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ