প্রেমিকার অতৃপ্ত আত্মা
[ গল্পের নাম, চরিত্র , কাহিনী, স্থান পুরোটাই কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। ]
আমি একজন বেসরকারি চাকরি জীবী মানুষ। অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত ই হয়ে যায়। হাওড়া থেকে রাত ৮:৪২ এর বর্ধমান কর্ডে র ট্রেনে উঠে গন্তব্য স্টেশন এ পৌঁছতে প্রায় ১০টা বেজে যায়। বসন্তপুরের মতো আধা শহুরে আধা গ্রাম্য জায়গায় রাত ১০টা মনে গভীর রাত।
স্টেশন সংলগ্ন দোকান পাঠ যেমন চায়ের দোকান, ফলের দোকান, সবজির দোকান তখন সমস্ত কিছুই বন্ধ থাকে।
যথারীতি আজও আমি অফিস শেষে বাস থেকে নেমে প্রায় ছুটতে ছুটতে এসে ট্রেনটা ধরলাম। জ্যৈষ্ঠ মাসের অসহ্য গরমে ঘামে সারা শরীর ভিজে ,জামা টাও গায়ের সাথে লেপটে গিয়ে চুপসে গেছে একেবারে।কোনোক্রমে ঠেলে ঠুলে ধারের সিটে একটা জায়গা ফাকা পেয়ে বসলাম। বসা মাত্রই টের পেয়ে গেলাম এই সিট টা এতক্ষণ খালি ছিল কেন। আসলে তিন জন পুরুষই হৃষ্টপুষ্ট , এতটাই জায়গা দখল করে আছে তাতে ধারে যে বসবে তার যে কি ভোগান্তি নিশ্চই বুঝতে পারছেন। আমার বরাবরই ছিপছিপে রোগাটে গঠন।যা হোক করে আধ ঝোলা করেই বসলাম। এইভাবে বেশিক্ষণ কষ্ট করতে অবশ্য হোল না।বেলানগর স্টেশনের পর থেকেই ট্রেনের প্যাসেঞ্জার খালি হতে শুরু করল।আমিও ভালোভাবেই বসলাম।বারুই পাড়া স্টেশন পাড় হতেই ট্রেন প্রায় খালিই হয়ে যায় বলা চলে।হাতে গোনা কয়েকটা প্যাসেঞ্জার। এ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আমার গন্তব্য স্টেশন পৌঁছতে মানে ট্রেন বসন্তপুর স্টেশন ঢুকতে এখনো কয়েকটা স্টেশন বাকি। ঠিক এইসময় থেকেই সারাদিনের ক্লান্তিতে একটা উৎফুল্লতার আমেজ অনুভব করি। বাড়ি গিয়ে গিন্নির হাতের তৈরি খাবার, সুসজ্জিত বিছানা এইসব ভাবতে ভাবতেই প্রতিদিন স্টেশন থেকে নেমে বাইক নিয়ে রওনা হয় ঘরের উদ্দেশে।
কিন্তু আজ বসন্তপুর স্টেশনে নামতেই অন্যরকম নিস্তব্ধতা অনুভব করলাম।স্টেশনে নামতেই ট্রেনটা ছেড়ে যাওয়ার পরেই অন্ধকারের গভীরতাটা যে কতটা প্রবল তা খেয়াল করলাম। চারিদিকে জনমানব শূন্য স্টেশন চত্বরে আমি ছাড়াও আমার পাশে অন্য একটি প্রানের উপস্থিতি বেশ বুঝতে পারছিলাম।একটা সুগন্ধ ময় সুরভী আমার চারপাশের পরিবেশটা যেন মাতিয়ে রেখেছে।আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি সামনের দিকে এগোতে চাইছি কিন্তু পারছি না।পা যেন সামনের দিকে একদম এগোতে চাইছে না। পকেটের ফোনটা বার করে যে আলোটা জ্বালাব সেটুকু শক্তিও যেন শরীর থেকে উধাও হয়ে গেছে।হটাৎ মনে হলো ঘাড় এর কাছে একটা ঠান্ডা নিঃশাস পড়ছে। এতটাই ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম যে পিছন ফিরে যে তাকাবো সেটুকু ও সাধ্যে কুললো না। কেউ যেন পিছন থেকে কানের কাছে বলে উঠলো "আমি এই বেশ আছি জানো অনিশ।তোমার এই ক্লান্ত শরীরে রাতে ফেরা, বউয়ের হাতের রাতের খাবারের জন্য দৌড়, বাড়ি ফিরে ঘুমন্ত বাচ্চার নিষ্পাপ মুখটা দেখাবার জন্য এত অধীর মন -এইসব কিছু এই সময় টা উপভোগ করি তোমায় দেখে।একদিন তো এই ঘর বাঁধার স্বপ্ন, পাশে থাকার শপথ, আমাদের মধ্যে তৃতীয় জনের আগমন আরো কত কত আশায় আমায় ভাসিয়ে ছিলে ভালোবাসার জোয়ারে মনে পড়ে অনিশ? সদ্য চাকরি পাওয়ার পর আমাদের বিয়েটা যাতে তাড়াতাড়ি হয়ে যায় সেজন্য কত চাপ দিতাম তোমায়।অফিসে থাকাকালীন বারবার ফোন করলে বিরক্ত হতে। সুইচ অফ করে দিতে। না! না! এটা শুধু কাজের প্রেসার যে ছিল না তা বুঝতে অসুবিধা হয় নি আমার। সম্পর্ক ভাগনের আভাস ও পেয়েছিলাম। মনে আছে ১৬ই মার্চের দিন টা। যেদিন অফিস থেকে ফোন করে বললে রাতেই বেড়িয়ে এস বাড়ি থেকে।অফিস থেকে ফিরে বসন্তপুর স্টেশনে অপেক্ষা করব। নতুন ঘরের আশায়, নতুন সুখের দিশায় নিদ্বিধায় বাবা, মায়ের মায়া ত্যাগ করে রাতের ট্রেন ধরেই বসন্তপুর স্টেশন এ নেমে ঠিক এইখানে ই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমনই অন্ধকার রাতে নতুন ঘরের আলোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন তো সত্যি হতে দিলে না। আচমকা হাত ধরে হ্যাচকা মেরে ফেলে দিলে রেললাইনে। দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা মালগাড়ি টা ছিন্নভিন্ন করে দিলো আমার শরীর, আমার স্বপ্ন, আমার আশা।
অনিশ তুমি আজ ও সমাজের চোখে ভদ্রলোক। কেউই আজ ও টের পেল না তোমার কুকর্মের কথা। ভোরের বেলা আমার নিথর শরীর টা নিয়ে চলে গেল রেলপুলিশ রা। আত্মহত্যা বলে ময়নাতদন্ত করে তুলে দিল মৃতদেহ টা আমার পরিবারের হাতে।
এইসব শুনতে শুনতে টলতে টলতে কখন যে জ্ঞান শুন্য হয়ে রেললাইন এ পরে গিয়েছিলাম জানি না। জ্ঞান ফিরল মায়ের কান্নায়। সবাই ভেবেছে আমি হয়তো আত্মহত্যা করতে এই কান্ড ঘটিয়েছে। মা এর কাছেই জানলাম একজন ছানা ব্যবসায়ী ওই ট্রেন থেকেই নেমেছিল তিনি ই আমায় উদ্ধার করেছেন।
সত্যি আজ ও কেউ জানে না টিনার মৃত্যুর আসল রহস্য।রহস্যের অন্তরালেই চিরকাল হয়তো থেকে যাবে টিনার অতৃপ্ত আত্মা।
2 মন্তব্যসমূহ
Khub sundor👏👏
উত্তরমুছুনdhonnobad bondhu
মুছুন