ভালোবাসার অন্তরালে লোভ

Greed behind love ভালোবাসার অন্তরালে লোভ rapacity

ভালোবাসার অন্তরালে লোভ

ট্রেনের এনাউন্সমেন্ট  হয়ে গেছে। আর মাত্র কয়েকটা মিনিটের অপেক্ষা। ট্রেন টা স্টেশনে না ঢোকা পর্যন্ত চন্দনার বুকের ভিতর টা ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো। পাছে এই বুঝি ধরা পরে যায়। ট্রেনটা ঢোকা মাত্রই ফোনের সুইচ টা দিলো অফ করে। ভোরের ট্রেন অনেকটাই ভিড় কম। তাই কাঁধে একটা ঢাউস ব্যাগ,আর হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ট্রেনে উঠতে কোনো অসুবিধা হয় নি। ট্রেনটা স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পিকুর জন্য মনটা আবার ককিয়ে উঠলো চন্দনার। হাজার হোক নিজের পেটের সন্তান তো। হোক না যতই কয়েকটা দিনের দূরত্ব, স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার হাতছানি, মায়ের মন তো সন্তান সুখের চেয়ে বড় কিছুতেই সুখী নয়। চন্দনা ট্রেনে উঠেই বাঙ্কার এ ঢাউস ব্যাগ টা তুলে দেয়। ট্রলি ব্যাগ টা বসার সিটের পায়ের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখে। আর জানলার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে 'ক-দিন দিদুনের কাছে থাক মা পিকু। একমাস পরে এসে ঠিক তোকে আমরা নিয়ে যাবো দেখিস। '

চন্দনা ভাবতে থাকে বিমলের সাথে তার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। বড়ো জোর মাস ছয়েক এর হবে। এখনো সেই দিন টা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিমলের সাথে আকস্মিক ভাবেই ব্যারাকপুর স্টেশনে তার পরিচয় হয়।চন্দনা সেইদিন ও রোজকার মতো কারখানার কাজ সেরে ফিরছিল। বাড়ি ফেরার পথে ভিড় টা অসম্ভব রকম থাকে। আবার ট্রেন থেকে নেমেই অটো ধরার লম্বা লাইন। তাই নিত্য দিনের মতো সেদিন ও পড়িমরি করে ট্রেন থেকে নেমে অটো ধরার জন্য ছুটছিলো চন্দনা। আর ছুটতে গিয়েই প্লাটফর্ম এ মুখ থুবড়ে পড়ে পা টা গেল মুচকে। 
প্যাসেঞ্জার রা তখন যে যার গন্তব্য স্হানের উদ্দেশে ব্যাস্ত। হটাৎ ভিড়ের মাঝে বিমল ই তাকে লক্ষ্য করে ধোরে আস্তে আস্তে বসার সিটে বসায়। স্টেশনের স্টল থেকে কাঁচা বরফ নিয়ে এসে চন্দনার পায়ে দিতে সে কিছুটা স্বস্তিবোধ করে। সেই থেকে বিমল এর সাথে তার পরিচয়।
   নিজের বিবাহিত জীবনের বর্বর কাহিনী থেকে শুরু করে,  বিবাহবিচ্ছেদ, পাঁচ বছরের পিকুর কথা, তার বাপের বাড়ি থাকার কারণ, বিধবা মায়ের কথা, অভাবের তাড়নায় কারখানায় কাজ করতে আসা --সব কিছু অপকটে বলেছিল সে বিমল কে।

বিমল সম্পর্কে চন্দনা অবশ্য বেশি কিছু জানতে পারে নি। বিমলের বাবা মা, কেউ আর এখন বেঁচে নেই। আছে শুধু বারাসাত এ একটা একতলা ঘর। বউ ও ভেগেছে বছর দুয়েক হবে। বিমলের প্রেম নিবেদন আর তাকে বাস্তবে রূপ দিতেই মরিয়া তখন চন্দনার মন। বিমল তো ওকে বলেছে ও একটা নামি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে। মাইনেও নেহাত কম পায় না। অর্থের তেমন অভাব নেই। অভাব শুধু একটা ছোট্ট সংসারের। পিকু কে স্বাচ্ছন্দে মানুষ করার নতুন আলো যেন দেখতে পাচ্ছে তখন চন্দনা চোখের সামনে। তাই বিমলের বিয়ের প্রস্তাবে এক কথায় সে রাজি হয় যায়। বিমলের কথা মতোই সে পিকু কে রেখে আসে বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়েই।কথা ছিল নতুন সংসার টা একটু গুছিয়ে নিয়েই পিকুকে, মা কে নিয়ে যাবে বিমল আর ও দুজনে এসেই। 
এইসব ভাবতে ভাবতেই ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশন পৌঁছে গেল। চন্দনা ভাবলো ফোনের সুইচ টা এবার অন করতে হবে। আসলে চার্জ বেশি ছিল না। বিমল কে শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে কন্টাক্ট করার কথা ফোন অফ থাকলে তো খুব অসুবিধায় পড়তে হত।
স্টেশন পৌঁছতে প্রায় পাঁচ টা বেজে গেল। ট্রেন থেকে নেমেই ফোন করতেই চন্দনা অবাক হয়ে গেল। বিমল এসেছে ঠিক ই। ওর সাথে আরো দুজন এসেছে। চন্দনা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেও বিমলের ইশারায় আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে স্টেশন পেরিয়ে নিচু রাস্তায় এলো চন্দনা। সামনে আসতেই একটা তীব্র গন্ধ ওয়ালা রুমাল চেপে ধরে ওর মুখে বিমল। তারপর, তারপর- আর কিছু মনে নেই। ঘোর যখন কাটলো বুঝতে অসুবিধা হলো না সে এখন রেড লাইট এরিয়ায়। কানাঘুষায় শুনতে পেল বিমল তাকে বিক্রি করে গেছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে। 
চন্দনা পরকীয়ায় মেতে উঠেছিল নিজের বোহেমিয়ান জীবন, বিমলের সাথে তার প্রেম সাগরে নিজের জীবন টা কাটিয়ে দেয়ার উদ্দেশে নয়। একটু খানি সুখ, আর মেয়ে কে সেই সুখের আলোয় বিকশিত করার আশায়। কিন্তু অসুখী মানুষরা চিরকালই যে দুঃখেই দিন কাটায়। সেটা কিছুদিনের জন্য হলেও চন্দনা ভুলে গিয়েছিল। তার ই পরিণামে সে এখন পতিতা লয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ