জামাই ষষ্ঠী ১৪২৭ (2020) কেমন পালিত হবে? - প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে বাঙালী মনে!

amai sosthi sekal ekal bartaman জামাই  ষষ্ঠী - সেকাল  একাল  বর্তমান

দেশ তথা সারা পৃথিবী জুড়ে জাতি,ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সকল মানুষ কে একত্রিত হওয়ার উদ্দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে মহা উৎফুল্লতার সহিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।ঠিক তেমনই সামাজিক মেলবন্ধন সুদৃঢ় ,ও সুদীর্ঘ করার সুবাদে অনুষ্ঠিত হয় সামাজিক অনুষ্ঠান।এবং এইরকমই 'বিবাহ' নামক সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবার এর সঙ্গে অন্য পরিবারের ঘটে আত্মীয়তা,মেলবন্ধন।এই সামাজিক অনুষ্ঠানের দ্বারা পরিবারের কন্যা পিতৃগৃহ থেকে শ্বাশুরালয়ে প্রবেশ করে।

আদি সমাজব্যবস্থা অনুসারে যতদিন না নববিবাহিতা স্ত্রী পুত্রবতী হন,ততদিন কন্যা র শ্বাশুরালয়ে তার মা,বাবার যাওয়া নিষিদ্ধ।এইদিকে সেইসময় প্রসূতি মৃত্যু,ও প্রসব মৃত্যুর ফলে অনিদিষ্ট কালের জন্য কন্যার অভিবাহকগণ চাতক পাখির ন্যায় মেয়ের পিতৃলয়ে আসার দিন গুনতে থাকেন।এমতা অবস্থায় সমাজের গুণী জন দের বিধানে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল ষষ্ঠী তে মেয়ে,জামাইকে নিমন্ত্রিত করে ঘরে আনার আদেশ দেন।এইভাবেই বাঙালির ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয় জামাই ষষ্ঠীর।অবশ্য আধুনিকতার ছোয়ায় এই রীতি এখন অনেকটাই রূপ পাল্টেছে ।

ওইদিন শ্বাশুড়ি মায়েরা উপোষ থেকে মা ষষ্ঠীর পুজো দেন জামাই ও কন্যা র মঙ্গলার্থে  ও কন্যার পুত্র লাভের আশায়।জামাই কে আসন পেতে বসিয়ে,হাত পাখার হওয়া দিয়ে শান্তির জল ছিটানো হয়।জামাই এর কপালে শ্বাশুড়ি মা দেন দই এর ফোটা।এবং তেল হলুদ মাখানো সুতো হাতে বেঁধে দেন।যা মা ষষ্ঠীর মঙ্গোলীয় ধাগা।

নববর্ষের দ্বিতীয় মাস হলো জ্যৈষ্ঠ মাস।গ্রীষ্ম মধ্যবর্তী ও বর্ষা অগ্রগামী এই মাসে থাকে বিভিন্ন ফল ,সবজির সমাহার।শাশুড়ি মায়েরা বিভিন্ন ফল,দই,সন্দেশ সহযোগে জামাই আয়োজনের ব্যবস্থা করেন।মাছে ভাতে বাঙালির দুপুরের ভোজে শোভা পায় ইলিশ,ভেটকি,পাবদা,রুই, পমফ্রেট , চিতল, চিংড়ি সহ কচি পাঠার মাংস।আধুনিক রন্ধন শিল্পে ইলিশ ভাপা,দৈকাতলা,ডাব চিংড়ি,ভেটকি পাথুরি এই সব খাবার হয়ে থাকে জামাই আপ্যায়নে।শ্বাশুড়ি মায়েরা মেয়ে,জামাইকে নতুন বস্ত্র দিয়ে আশীর্বাদ করেন।এবং মেয়ে জামাই ও শ্বাশুড়ি মায়ের জন্য উপহার আনেন।

এই বছর জামাই ষষ্ঠী বাংলা পঞ্জিকা মতে ১৪২৭ এর ১৪ ই জ্যৈষ্ঠ।অর্থাৎ ইং রাজির 28 শে মে 2020,বৃহস্পতিবার।বর্তমানে করোনা ভাইরাসের দাপটে বাঙালি 'জামাই ষষ্ঠী 'নামক এই পারিবারিক মেলবন্ধন উৎসবে কতটা সামিল থাকতে পারবে তা নিয়েই ঘোর অনিশ্চিয়তায় বাঙালি মন।উলেখ্য চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়ানক ভাইরাসের মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণের কারণে ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশে ও লোকডাউন এর জেরে বন্ধ প্রায় সমস্ত পরিষেবা। নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল,পরিবহন। বন্ধ রাখার নির্দেশ রাখা হয়েছে সামাজিক কাজকর্মও। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে কোরোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে ১৫০০ ছাপিয়ে গেছে । ও মৃত্যু ১৫০ ছাপিয়ে গেছে। উল্লেখ্য  কোলকাতা এখন  রেড  জোনে। সুতরাং লোকডাউন এর সময়সীমাও দীর্ঘমেয়াদি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। অন্যদিকে  অনেক বাঙালী জামাই ও আটকে আছে লোকডাউন এর জেরে প্রবাসে।

ফলত অনন্য বৎসরের ন্যায় এই বৎসর জামাই যত্ন কিংবা জামাই মেয়ে এর মঙ্গলার্থে  শ্বাশুড়ি মায়ের যে জামাইষষ্ঠীর আরাধনা,ভুরিভোজের আয়োজন সমস্ত কিছু অনুষ্ঠানে ই ব্যাঘাত ঘটতে চলেছে।বাঙালির নববর্ষের মতো,এই দিনটি তেও গৃহবন্দি থাকতে হবে। আশঙ্খা করা হচ্ছে এই বৎসরে রাজকীয় আহার,চিরন্তন শ্বাশুড়ি মায়ের রন্ধন ক্রিয়ার স্বাদ থেকে বাংলার জামাই রা বঞ্চিত থেকে যাবেন। মহাসমারোহে জামাইবরণ এই বছর হবে না।

তবে কোনো বিপদ ই দীর্ঘস্থায়ী নয়।সকল দেশ যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোরোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে তাতে কোরোনা কে হারিয়ে পৃথিবী আবার শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে।পুলিশ,প্রশাসন,চিকিৎসক,নার্স,অর্থাৎ বিপদকালীন পরিষেবার সাথে যারা যুক্ত তাদের যে অক্লান্ত পরিশ্রম তা বিফলে যাবে না।আমরা অবশ্যই মারণভাইরাসকে পরাজয় করে আবার পৃথিবীর সজীবতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব।আবার সেরে উঠবে পৃথিবী।জীবনযাত্রা হয়ে উঠবে স্বাভাবিক। আশা করা যায় এই বৎসরের জরা, গ্লানি সরিয়ে আসছে বছর পালিত হবে মহা সমারোহে ,উৎফুল্লতায় বাঙালির সকল উৎসব,আচার অনুষ্ঠান।বাঙালি শ্বাশুড়ি মায়ের দুঃখ মোচন এবং বাঙালি জামাইয়ের আদর এই বছরে থাক সঞ্চিত।আসছে বছর সুদে আসলে ভাগ করে নেবে সেই আনন্দ শ্বাশুড়ি,জামাই উভয়পক্ষ।

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ