হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে রাধে , ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায় ওম নমঃ শিবায়।)
7. 11. 2025 ( শনিবার)
কখনও ভেবেছো, কেন কেউ কেউ হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে যায়? কেন আগের মতো আর ভিড় পছন্দ করে না, কেন হাসি-মজার জায়গায়ও এখন চুপচাপ বসে থাকে? উত্তরটা খুব সরল — সে মানুষ চিনে ফেলেছে।
মানুষ চিনে ফেলা মানে শুধু বোঝা নয় কে ভালো, কে খারাপ; বরং এক গভীর উপলব্ধি—সবাই তোমার মতো ভাবেনা, তোমার মতো ভালোও না।
১. একা থাকা মানে একাকিত্ব নয়
যারা মানুষ চিনেছে, তারা জানে — একা থাকা মানেই একাকিত্ব নয়। একা থাকা মানে নিজের ভেতরের শান্তিকে বাঁচিয়ে রাখা।
যেখানে সম্পর্ক মানে আজকাল “কাজ থাকলেই কথা”, সেখানে একা থাকা মানে নিজের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক গড়া।
তারা জানে, সবসময় চারপাশে মানুষ থাকলেও মন একা থাকতে পারে। তাই তারা বেছে নেয় সেই একাকীত্ব, যেখানে কেউ আঘাত দেয় না, কেউ অভিনয় করে না।
২. বিশ্বাসের মূল্য বোঝে যারা ভেঙে পড়েছে
বিশ্বাস এমন এক জিনিস, যা একবার ভাঙলে কখনও পুরোপুরি জোড়া লাগে না।
যারা একসময় প্রাণ খুলে কাউকে বিশ্বাস করেছিল, আজ তারা একটু দূরত্বে থাকে।
তারা জানে — সব হাসির পেছনে আন্তরিকতা নেই, সব মিষ্টি কথার পেছনে ভালোবাসা নেই।
একা থাকার মধ্যে তাই এক ধরণের নিরাপত্তা আছে। কেউ ফাঁকি দেয় না, কেউ প্রতারণা করে না, কেউ মুখে মধু আর মনে বিষ নিয়ে আসে না।
৩. নীরবতার ভাষা তারা শিখে গেছে
যখন মানুষ বারবার ভুল বোঝে, তখন একসময় মানুষ কথা বলা ছেড়ে দেয়।
তারা বুঝে যায়, ব্যাখ্যা দেওয়া মানে নিজেকে ছোট করা।
তারা তাই চুপচাপ থেকে দেয়ালে, আকাশে, নিজের ডায়েরিতে কথা বলে।
নীরবতা তাদের ঢাল, আবার ওষুধও।
তারা জানে, নীরবতা অনেক সময় উত্তর দেয় যেভাবে হাজারটা যুক্তি দেয় না।
৪. তারা বুঝে গেছে, সবার মন ভালো করার দায় তাদের নয়
আগে তারা ভাবতো — সবাইকে খুশি রাখতে হবে, সবাই যেন মনে না করে, “ও বদলে গেছে।”
কিন্তু এখন তারা বোঝে — যে মানুষ নিজের মন ঠিক রাখতে পারে না, সে অন্যকে কীভাবে ভালো রাখবে?
তারা তাই থেমে গেছে — কারও মন জোগাতে, কারও খুশির জন্য নিজেকে হারাতে।
এখন তারা শিখেছে ‘না’ বলতে।
কারও অযৌক্তিক চাওয়া মানতে তারা আর বাধ্য নয়।
৫. মানুষ চিনে গেলে সম্পর্কের রঙ পাল্টে যায়
যে সম্পর্ক একসময় রোদ্দুরের মতো ছিল, এখন হয়তো কুয়াশায় ঢেকে গেছে।
তারা বোঝে, সম্পর্কের আসল রূপ সময়ই দেখায়।
তারা তাই এখন কম কথা বলে, বেশি দেখে।
তারা জানে — কারও সঙ্গে প্রতিদিন কথা না বলেও সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে,
আবার কারও সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলেও মন থেকে দূরত্ব বাড়তে পারে।
৬. একা থাকার আনন্দ তারা অনুভব করে
একসময় হয়তো তারা ভাবতো, একা থাকা মানেই দুঃখ।
কিন্তু এখন তারা জানে — নিজের সঙ্গে সময় কাটানো সবচেয়ে বড় বিলাসিতা।
তারা বই পড়ে, গান শোনে, নিজের সঙ্গে গল্প করে।
নিজের চা বানিয়ে একা বসে সূর্যাস্ত দেখে —
কোনও অভিনয় ছাড়াই, কোনও মুখোশ ছাড়া।
এই একাকীত্বে তারা খুঁজে পায় শান্তি, যেটা মানুষের ভিড়ে মিলত না কখনও।
৭. তারা আর কাউকে দোষ দেয় না
আগে হয়তো তারা বলতো — “ও আমায় কষ্ট দিয়েছে।”
কিন্তু এখন তারা বলে, “আমি নিজেই শিখেছি।”
মানুষ চিনে গেলে বোঝা যায়, প্রত্যেকেই তাদের জায়গা থেকে ঠিক আছে।
কেউ আসবে শেখাতে, কেউ আসবে ভালোবাসতে, কেউ আসবে কষ্ট দিতে —
সবাই কোনো না কোনো ভূমিকা নিয়েই আসে জীবনে।
তারা তাই কাউকে ঘৃণা করে না, শুধু দূরত্ব রাখে।
৮. এখন তারা শান্তি চায়, না যে প্রমাণ
মানুষ চিনে ফেলা মানুষরা কাউকে বোঝাতে চায় না যে তারা ভালো।
তারা জানে — যে বুঝবে, সে না বললেও বুঝবে।
তারা এখন ঝগড়া নয়, শান্তি খোঁজে।
প্রতিশোধ নয়, মুক্তি খোঁজে।
তারা জানে, কষ্ট থেকে মুক্তি আসে যখন তুমি ক্ষমা করতে শেখো —
অন্যকে নয়, নিজেকে।
৯. তাদের হাসি এখন গভীর, কথা এখন কম
মানুষ চিনে গেলে হাসিটা বদলে যায়।
এখন সেই হাসিতে অভিজ্ঞতা মেশানো, বোকামি নেই।
তারা কম কথা বলে, কারণ জানে—সবাই বোঝার মতো মন নিয়ে আসে না।
তারা নিরবতা ভালোবাসে, কারণ সেখানে অভিনয় নেই, প্রত্যাশা নেই, শুধু বাস্তবতা আছে।
১০. শেষমেশ তারা শিখে যায় — একা থাকাও ভালোবাসার এক রূপ
একা থাকা মানে কাউকে ঘৃণা করা নয়,
বরং নিজেকে ভালোবাসা শেখা।
তারা জানে — যেদিন নিজের সঙ্গেই ভালো থাকা শিখে ফেলবে,
সেদিন কেউ তোমার শান্তি কেড়ে নিতে পারবে না।
উপসংহার
জীবনের এক সময় আসে, যখন তুমি বুঝবে —
সবাই তোমার মনের মতো হবে না, সবাই তোমার সত্যিকারের নয়।
সেই সময়টায় কেউ কেউ ভেঙে পড়ে, কেউ আবার বেড়ে ওঠে।
যারা মানুষ চিনে গেছে, তারা চুপচাপ থেকেও জিতে যায় —
কারণ তারা বুঝে গেছে, শান্তিই আসল জয়।
(শেষে)
“একা থাকা মানে আমি হারিনি,
বরং আমি শিখে গেছি—নিজের সঙ্গই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।”
আজকের ব্লগ টা এত টুকুই। আবার ফিরবো পরের সপ্তাহে। মানে সোম বার। আমার লেখা যদি ভালো লেগে থাকে কমেন্টকরে জানাবেন। আজ তাহলে আসি। শুভ রাত্রি।

0 মন্তব্যসমূহ