বাবা (সন্তান পালনে বাবার ভূমিকা) father....

 




কিছু কিছু আত্মত্যাগ এর কথা আমরা স্মরণ ই করি না। আমাদের চক্ষু গোচর হয় না। যেমন সন্তান পালন এ বাবার ভূমিকা। একটা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে বড় করা পর্যন্ত মায়েদের অবদান এর কথা আমরা যে ভাবে তুলে ধরি সেই ভাবে একজন বাবার কৃতিত্বের কথা আমরা বহর করে বলি না। কিন্তু একটা জন্মদাত্রী মা যেমন দশ মাস দশ দিন প্রসব যন্ত্রনা সহ্য করে একটি সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায় ঠিক তেমন ই কষ্ট করে তিল তিল করে  চব্বিশ টা বছর একজন বাবা একটা সন্তান এর পুরো ভার বহন করে। নিজে কষ্ট সহ্য করে পরিশ্রম করে সন্তান এর ভবিষ্যৎ টা একটু উজ্জ্বল করার জন্য। কিন্তু সন্তান মানুষ করার পিছনে সেই বাবার অবদান আমরা ভুলে যাই। 


আমি ওয়ার্কিং মায়েদের কথা বলছি না। অনেকে ভাবেন  সংসারে মায়েরা অনেক ত্যাগ করেন। অনেক কিছু মেনে নেয়। মানিয়ে নেয়। বিনা বেতনে সংসার এর সব কাজ করে যান। কিন্তু একজন বাবা বাইরে থেকে খেটে উপার্জন করে আনছে বলেই তো সংসার টা চলছে। কিন্তু সে কথা আমরা ভুলে যাই। বাবা দের ও একটা জীবন আছে। তাদের ও ভালো মন্দ শখ, আহ্লাদ থাকে। কিন্তু একটা সময় এর পর তারা তাদের সব কিছু মায়া ত্যাগ করে সংসারের জন্যই ভাবেন। সংসারে একটু ভালো মন্দ আনবে বলে নিজের শখের জিনিস গুলো আর কেনেন না। সেই টাকা বাঁচিয়ে সংসারের জন্যই সঞ্চয় করে রাখেন। দায় বিপদের জন্য বাঁচিয়ে চলেন। তবুও আমরা সংসারে তাদের ভূমিকার কথা ভাবতে ভুলে যাই। কিন্তু তারা মানুষ হয়েও পরিবারের জন্য যন্ত্রের মতো অবিরাম প্রাণপাত করে চলেছেন। 

Father



সন্তানকে বলতে শোনা যায় আমার মা পৃথিবীর বেস্ট মা। আমার মা আমায় খুব ভালোবাসে। আমি যা চাই তাই করে দেয়। আমি যখন যে রান্নাটা করে দিতে বলি মা তাই করে দেন। কিন্তু বাবা উপার্জন করে না এনে দিলে মা এর পক্ষে এটা করা সোজা হতো না ।  আমি আবারও বলছি ওয়ার্কিং মায়েদের কথা বলছি না। সাধারণ ঘরে যা হয় আর কি তাই বলছি। আমরা যারা গৃহ বধূ। কিছু উপার্জন করি না। সত্যিই তো সন্তান বললেই কি কথা মতো তা করে দিতে পারব? বাড়িতে জিনিসপত্র মজুত থাকলে তবেই তা সম্ভব। আর সে গুলি তো করেন বাবা। তিনি রোজকার না করলে এই সব রান্না করতেই পারতেন না মা। তবু এই ব্যাপার এও সন্তান এর কাছে মা ই এগিয়ে থাকে। 


আমরা সন্তানেরা অসময়ে , অসুস্থ তায় কষ্ট হলে আগে মায়ের স্নেহ পেতে চাই। আগে মায়ের সান্নিধ্য পেতে চাই। বাবাকেও চাই পাশে। কিন্তু তার জায়গা আমাদের মনে মা এর পরে। ফোন করে আগে মায়ের খোঁজ নেয় বেশিরভাগ সন্তানরা। পরে বাবার। এই দিক থেকেও বাবারা পিছিয়ে। 




আলমারি ভোরে যায় মায়ের রঙীন শাড়ি আর সন্তানের রাশি রাশি শাড়িতে। পুজোয় , পাববনে মা , সন্তান দের নতুন নতুন জামা কাপড় কিনে দেন বাবা। একটু দাম দিয়েই ভালো জামা কাপড় কিনে দিতে চেষ্টা কইরেন। কিন্তু নিজের জন্য কেনেন সস্তায় জামা। বউ, সন্তান খুশি থাকলেই যেন বাবা ভীষণ খুশি। তাই আলমারি ভর্তি মায়ের শাড়ি, সন্তানের জামা কাপড়। বাবা র গুটি কয়েক জামা প্যান্ট পরে থাকে আলমারির এক কোনে। 


বাবার শখ শৌখিনতা খুব কম। বিয়ের পর বাবার আর সেইভাবে নিজের জন্য গয়না কেনেন নি। ওই আশীর্বাদ এ পাওনা বাবদ এক খানি আংটি ই একমাত্র অলংকার তার। এই নিয়ে তার কোনো প্রতিবাদ নেই। কোনো চাহিদা নেই। কিন্তু মাকে মাঝে মাঝেই দেখা যায় গয়নার জন্য অভিমানী হয়ে থাকতে, মুখ বেজার করে থাকতে। বাবাও মায়ের মন রাখতে চেষ্টা করেন বিবাহবার্ষিকী তে প্রতি বছর একটা ছোট হলেও কিছু সোনার জিনিস দিতে। এটাই দেয়ার জন্য প্রত্যেক মাসের উপার্জন থেকে কিছু কিছু তাকে সরিয়ে রাখতে হয়। তবুও আমরা বাবাদের কদর করি না। তাদের এইসব আত্মত্যাগ এর কথা খুবই ঠুনকো মনে হয়। কিন্তু এই গুলোই তাদের অনেক পরিশ্রম এর দান। 





বাবা সারাজীবন একটা সংসারের জন্য কঠিন পরিশ্রম করেন। ছেলে মেয়ে তার বউ মা বাবার দেখভালের জন্য অনেক কাজ করেন। কিন্তু সংসারের উন্নতি, আয় বেশি হলে মায়ের পয় কেই ধরা হয়। মা কেই প্রতিমা স্বরূপ মনে করা হয়। বাবার পরিশ্রম এর কথা মাথায় আসে কৈ? সকলে বলে বাড়ির বউ বুঝদার, গুণবতী বলেই তো ওই রোজগারেও সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়েকে ভালো মানুষ করে ফেলল প্রতিষ্ঠিত করে তুলল। 


এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবা কাজ থেকে অবসর নেন। ছেলে মেয়েরা চোখের সামনে ছোট থেকে মা কেই কাছে পেয়েছে। তাকেই চোখের সামনে পরিশ্রম করতে দেখেছে। তাদের পড়াশোনা, স্কুল, গান বাজনা, রান্নাবান্না বাড়ির কাজ সবটাই মাকে একটা করতে দেখেছে। তাই তাদের চোখে সয়ে গেছে মা অনেক কাজ করে। অবসরে বাবা র সামনেই সন্তান বলে মা আগেও যেমন কাজ করতো এখন ও তেমন করেই চলেছে। কিন্তু বাবার কাজ, পরিশ্রম, আত্মত্যাগ এর কথা তাদের মনে আসে না। মা যদি একটা সংসারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে। বাবা একটা সংসারের মেরুদন্ড তিনি ছিলেন। বলেই সব কিছু এতটা সুন্দর ভাবে মা ম্যানেজ করতে পেরেছেন। সুতরাং একটি সংসারে মায়ের যতটা মূল্য ঠিক ততটাই অবদান আছে একজন বাবার। 


কিন্তু আমরা কেউই সেই ভাবে বাবার কদর করি না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে মা কে নিয়ে এত লেখালিখি কিন্তু বাবাকে নিয়ে খুব কম জনকেই লিখতে দেখি। আজ খুব ইচ্ছে হলো তাই লিখেই ফেললাম। আবার আমার লেখাটার সাথে একমত অনেকে নাও হতে পারে। অনেকেই আছে যারা মায়ের চেয়েও বাবাকে বেশি ভালোবাসে। ভালোবাসুন খুব খুব ভালোবাসুন। পৃথিবীতে মা, বাবা অপেক্ষা কেউই আপন নেই। মা, বাবাকে খুশি মরা মানেই তো ভগবান কে খুশি করা। মা, বাবার সেবা যত্ন করাই হলো ভগবানের পুজো করা। একটা সন্তানের কাছে তার সুস্থ তা, প্রতিষ্টিত হওয়ার পিছনে মা বাবার সমান অধিকার আছে। সন্তানের উচিত উভয়কেই সমান ভাবে ভালোবাসার।


শেষে বাবা নিয়ে দু চার লাইন না লিখলেই নয়...

বাবার সন্তানের প্রতি কড়া শাসন এর মাঝেই লুকিয়ে থাকে সন্তানের প্রতি তার অনাবিল ভালোবাসা।


বাবার দেয়া শিক্ষাই হোক প্রতিটা সন্তানের চলার পথের শক্তি। বাবার মতো বট গাছটি যেন প্রতি টা সন্তানের মাথার ওপর ছায়ার মতো সারা জীবন থাকুক। 


বাবার সন্মান থাকুক সবচেয়ে উপরে। কারণ পরিবারের জন্য যে মানুষটা সর্বস্ব ত্যাগ করে সকলকে আগলে রাখেন তিনি ই হলেন বাবা। 


বাবা র দেখানো সপ্ন গুলো সত্যি করার জন্য প্রতিটা সন্তানের উচিত কঠোর পরিশ্রম করা। তবেই বাবার আত্মত্যাগ হবে সার্থক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ