বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই একাকিত্বে ভোগেন। কিংবা অনেকেই তাদের পরিবারের কাছে একজন খিটখিটে মেজাজহীন মানুষে পরিণত হন। পরিবারের অন্য সদস্যরা আপনাদের এড়িয়ে চলতে চান। এর ফলে নিজেকে অনেকটা অসহায় বোধ হয়। নিজেকে মনে হয় পরিবারের কেউ হয়তো আপনাকে ভালোবাসে না। আপন মনে করে না। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তা নয়। আপনি নিজের মতভেদ গুলো তাদের কাছে পেশ করেন। আর এখন কার নিউজেনারেশন এর কাছে সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আর আপনার কথা মত সেগুলো তারা না মানলেই আপনার মনে কষ্ট হয়। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে নিজেকে খুশি রাখতে গেলে নিজের মন ভালো রাখতে গেলে আপনি যদি কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। দেখবেন আপনিও সুখী আছেন। আর তারাও আপনার সাথে কোনো খারাপ মন্তব্য করবে না। আসলে আপনি যদি ভেবে থাকেন এখন কার ছেলেমেয়েরা বড় দের কথা শোনে না, উপদেশ নেয় না আমরা যখন ছোট ছিলাম মেনে চলতাম। কিন্তু এইসব কথা আপনার অতীত তারা মেনে নেবে না। যুগ এখন দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। আপনার ধ্যান ধারণা গুলো এ যুগে কার্যকরী হবে না। এটাই তারা আপনাকে বোঝাতে চায়। আর আপনি বুঝতে না রাজ। ফলে বাড়ে মতবিরোধ, বিতর্ক, দূরত্ব। তাই বৃদ্ধ বয়সে আপনি কি ভাবে নিজেকে হ্যাপি রাখবেন সে বিষয়ে কয়েকটি তথ্য দিলাম।
সন্তানদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করবেন না :
সন্তান বড় হয়েছে। তাকে তার মতো করে চলতে দিন। আক বাড়িয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়ার দরকার নেই। তারা এখনকার দিনের ছেলে - মেয়ে। নিজেদের মতো করে তারা তাদের সমস্যার সমাধান করবে। আপনি চাইলেও আপনার উপদেশ তাদের কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে না। অতএব এই সব ব্যাপারে নাক না গোলালেই ভালো। এতে আপনিও ভালো থাকবেন। ওরাও আপনাকে ভালোবাসবে।
নাতি, নাতনি দের লেখাপড়ার বিষয়ে তাদের মা, বাবা দের ই ভাবতে দিন :
এখনকার পড়াশোনা আরো বেশি উন্নত। তখনকার মতো এত সহজ ব্যাপারটা না। তাই সন্তানের পড়াশোনার ভালো মন্দ তাদের মা, বাবাই ভালো বুঝবে। নাতি , নাতনিদের স্কুল নির্বাচন থেকে শুরু করে কোন প্রাইভেটটিউটর দেবে তারাই সেটা ভালো বুঝবেন।
তবে অনেক গার্জেন রাই এখন ওয়ার্কিং। সে ক্ষেত্রে দাদু, ঠাকুমা রাও নাতি, নাতনি দের পড়াশোনার নজর রাখেন। তাতে তাদের মা, বাবার সায় থাকে। সে দিক থেকে হলে ঠিক আছে। এতে আপনার সময় টাও বেশ কেটে যাবে। এখনকার পড়াশোনা সম্পকে জ্ঞান ও অর্জন হবে। আর বিষয়ে অপনার কালচার ও থাকবে। আসলে শেখার তো বয়স হয় না। আর শেখার শেষও নেই।
নতুন সদস্য দের আপন করে নিন :
আপনার পুত্রবধূ ও জামাই কে আপন করে নিন। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। কারণ পুত্রবধূ আপনার ছেলের খুব পছন্দের একজন মানুষ। আর জামাই ও অপনার মেয়ের খুব পছন্দের। তাদের আপন করে নিতে পারলে সংসারে সুখ থাকবে। ফলে সংসারে কোনো ঝামেলা থাকবে না। আপনিও থাকবেন সুখে।
বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করবেন না
ছেলের , কিংবা মেয়ের কারোরই বৈবাহিক জীবন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। তাদের কে তাদের মতো থাকতে দিন। অহেতুক আপনি কেন তাদের চোখে শত্রু হতে যাবেন? যেমন আছেন নিজের মতো তেমনই থাকুন। সন্তানদের কাছে সবসময় ঘ্যানঘ্যান করবেন না। নিজের সমস্যা যদি নিজের আয়ত্তের মধ্যে থাকে সমাধান করার চেষ্টা করবেন। নাহলে সন্তানদের বলবেন।
পক্ষপাতিত্ব করবেন না :
আপনার যদি একাধিক সন্তান থাকে তাহলে সকলকেই সমান গুরুত্ব দিন । কাউকে একটু বিশেষ নজরে দেখবেন , কিংবা কাউকে গুরুত্ব কম দেবেন। এইরকম করবেন না। নাহলে আপনার শান্তির জীবনে অশান্তি আস্তে পারে। সকলকে সমান ভাবে ভালোবেসে আনন্দে হইহুল্লোড় করে জীবন কাটান। নতুন প্রজন্ম কে নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। তাদের ব্যক্তিগত জীবনে নাক না গোলালে দেখবেন তারা আপনাদের ঠিকই ভালোবাসবেন। ঠিক ই কেয়ার করবে।
নিজের অতীত তের সাথে বর্তমান কে তুলনা করবেন না :
আপনাদের সময় এই হতো, তাই হতো , এটা করতাম , ওটা করতাম না। অমুক জায়গায় যেতাম না, ওটা মেনে চলতাম এই সব টেনে আনলেই বিপদ। অতীত এর সাথে বর্তমান গুলিয়ে ফেললে বিস্তর ভুল হয়ে যাবে।
খবর রের কাগজ পড়ুন নিয়মিত। খবর শুনুন। এগুলি খুবই ভালো অভ্যাস । কিন্তু কোনো খবর নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়বেন না। রাজনীতি নিয়ে বাইরে আড্ডার আসরে কোনো বক্তব্য পেশ না করাই ভালো। যেমন আছেন আপনি ভালো আছেন। খামোকা ওসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে কি লাভ? বয়স হয়েছে নিজেকে সবসময় উৎফুল্ল রাখুন। জীবনের এত গুলো বছর তো চিন্তা করেছেন। সংসারের জন্য চিন্তা করেছেন, সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছেন। আর কেন এই বার আপনার চিন্তা মুক্ত হয়ে থাকার সময়। আপনার যদি উপার্জন কিছু থাকে তা থেকে সঞ্চয় করে রাখুন। অবসরে অন্যের ব্যাপারে নাক না গলিয়ে শখের বসে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করুন, গার্ডেনিং করুন। একটু বাজার করুন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিন। হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন সঙ্গিনী কে নিয়ে। মজায় থাকুন। সন্তানদের কাছে নিজের শরীর অসুস্থতা নিয়ে বারবার বলতে যাবেন না। নিজের শরীর এর প্রতি নিজেই একটু নজর দিন। হালকা ব্যায়াম করুন, নিয়মিত ফল, শাক সবজি খান। হাঁটুন। নিজের শরীর খারাপের জন্য কিছু সেভিংস করে রাখুন।
ভবিষ্যতে র জন্য পরিকল্পনা করুন। আপনার বয়স হলেও জীবন এখনো অনেক দূর। মনের আনন্দে গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। মোট কথা জীবন টা উপভোগ করুন। পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করুন। দেখা করুন। আড্ডা দিন। জীবন তো এটাই। হাসি খুশিতে সবসময় মেতে থাকুন। কিছু না করে চুপ করে বসে থাকা উচিত নয় । এতে জীবনে একঘেয়ে মি চলে আসে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সর্বদা নিজেকে কিছু না কিছু দিয়ে কর্মব্যস্ত রাখুন। আঁকা আকি করুন, ক্রাফট কিছু করুন। নিজের হাতের তৈরি জিনিস করে নিজের কাছের মানুষ গুলোকে উপহার দিন। তারা খুব খুশি হবে। আপনারও মন টা ভালো হয়ে যাবে। নিজেকে কারো দয়ার পাত্র মনে করবেন না। বয়স হচ্ছে সেটা মেনে নিন। আনন্দে ,খুশিতে জীবন কাটান। ভালো থাকুন। সুখে থাকুন। সুস্থ থাকুন।
সমাপ্ত ......................................................................
আজকের ব্লগে আরো একটি প্রতিবেদন নিয়ে আমি আলোচনা করবো।
আলোচনার বিষয়টি কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং। এই টিপস গুলি নিত্য নৈমিত্তিক দিনে আমাদের অনেকেরই কাজে লাগতে পারে। আজকের টপিক টা হলো : প্রথম আলাপেই কিংবা দেখাতেই আমরা কিভাবে একটা মানুষের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবো। তার জন্য আমাদের কয়টি অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
ফার্স্ট ইম্প্রেশন মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ আপনার প্রথম অভিব্যক্তি দ্বারাই আপনার বিপরীতে থাকা মানুষটি আপনার সম্পকে একটা ধারণা করে নেয়। আমরা নিজেদের খুব কনফিডেন্স, আত্মবিশ্বাসী, সাহসী, ও আকর্ষণীয় ভাবে নিজেদের তুলে ধরতে চাই। কিনতু কখনো কখনো নিজেদের স্বভাব দোষেই হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তাই যে অভ্যাস গুলো অবিলম্বে রোধ করা উচিত তা হলো :
প্রথম আলাপেই নিজেকে নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো :
আপনি যদি আলাপ এর পরপর ই নিজের গল্প, মতভেদ, জীবনের কাহানি বলতে শুরু করেন। অপর পক্ষকে কোন কথা বলার সুযোগ ই দেন না। তাহলে সে আপনার সুখ্যাতি র বদলে আপনার বদনামই করবে বেশি। মানুষ শোনে এবং আপনার মূল্যবান কথা গুলির মূল্যায়ন ও করে। কিন্তু আপ নি যদি সবসময় নিজের কথাই বলে যান অন্য জন তাতে বিরক্ত বোধ করবে।
অন্যব্যক্তি কে কথা বলার সুযোগ দিন। চিন্তাশীল , গুরুত্বপূর্ণ কথা আলোচনা করুন। অন্য ব্যক্তির বক্তব্য শুনুন ও তার কথা গুলো র যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে শুনুন।
চোখে চোখ রেখে কথা বলা আত্মবিশ্বাস, সততা, মনোযোগ ও আন্তরিকতার বার্তা বহন করে। এটি একে অপরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আলোচনায় প্রানবন্তটা লক্ষ্য করা যায়।
কথা বলার আগে আন্তরিকতা র সঙ্গে হ্যান্ডশেক করুন। এর ফলে অন্য দিকের মানুষটার আপনার প্রতি বিশ্বাস টা গভীর হবে। আর আপনি যদি থতমত খেয়ে অবনর্মাল এর মত হ্যান্ডশেক করেন আপনার প্রতি তার বিশ্বাস টা বিষণ্ণ তায় পরিণত হবে।
প্রথম আলাপের সময় ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির রেখা টানুন আপনার ঝলমলে মুখভঙ্গি আপনার কনফিডেন্স কে আরো স্ট্রং করবে অন্য জনের কাছে।
অযথা কথার মাঝখানে চুপ করিয়ে নিজে কথা বলতে শুরু করবেন না। এটা অনেকেই করে থাকে। খুব বিরক্তিকর ব্যাপার এটা। এইরকম করবেন না। এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব খারাপ লাগে। তাকে অভদ্র লাগে। কথা বলতে বলতে অহেতুক ফোন ঘাটবেন না। মুখ বেজার করে থাকবেন না। এই কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখলেই আপনি অনায়াসে একটি মানুষকে ইমপ্রেস করতে পারবেন।
প্রথম আলাপে কাউকে ইমপ্রেস করতে গেলে, ভাষা সংযত রাখতে হবে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। কথার মাঝখানে বিস্তর অঙ্গভঙ্গি হাত, পা নাড়াবেন না। ভদ্র রুচিসম্পন্ন পোশাক পরে যান। এর ফলে ওপর পক্ষের কাছে আপনার সম্পকে একটা রুচিশীল ধ্যান ধারণা জন্মাবে ।
0 মন্তব্যসমূহ