( আজ বাজার থেকে ফেরার পথে মাছের ছবি তুলেছিলাম। ওটাই শেয়ার করলাম।।)
হাসির গল্প :
১
সারাজীবন আমাকে সেই হেঁসেল ঠেলতে ঠেলতেই মরতে হবে। সংসারের যাবতীয় সব কাজ সব আমার ঘাড়ে। মায়ের চিৎকারে বছর আঠারোর রিতা পড়া ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
--- আবার কি হলো মা? সকাল সকাল ক্যাসেড বাজিয়ে চলেছ? কি হয় তোমার থেকে থেকে?
রিতার মা একেই গরমে তেতে , পুড়ে রান্না করছিল। মেয়ের কথায় আরো অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলো।
--- কি আমার গলা ক্যাসেড এর মত? তা তো বলবি ই। করতে তো হয় না তোকে সংসারের একটা কাজ। ধীনগী মেয়েকে দিয়ে সংসারের একটা কাজ করাবো , শেখাবো তাও ওনার বাবার রাগ। বাবা.... মেয়েকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। মেয়ে কে এই বয়সে মন দিয়ে লেখাপড়া করতে দাও। সেই এক বুলি। ওতো পড়ে কি হবে শুনি। সেই তো শশুর বাড়ী গিয়ে সংসার এর ঘানি টানতে হবে। উল্টে ফালতু ফালতু সব বই এর পিছনে টাকা খরচ।
মায়ের গজ গজানি রিতার শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে। সে এখন আর কিছু মনে করে না। পরিমল বাবু এই সময়েই বাজার করে ফিরছিলেন। উনি হলেন রিতার বাবা। সদরের বাইরে থেকেই গিন্নির গলার আওয়াজ পেয়ে কেমন যেন নেতিয়ে পড়লেন। আহা মানুষটা বাজার করে আড্ডা দিয়ে আসছিলেন খোশ মেজাজে। কেমন যেন হটাৎ চুপসে গেলেন। গুটি গুটি পায়ে বাড়ি ঢুকে আস্তে করে বাজারের ব্যাগটা রান্না ঘরের সামনে রেখে পালাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গিন্নির চোখ এড়িয়ে যাবেন কোথায়।
--- কি বাসি শাক, পাতা নিয়ে এলে দেখি? কচু, গেচু ছাড়া তো ভালো জিনিস তুমি চোখে দেখতে পাও না বাজারে।
ভাগ্যক্রমে আজ পরিমল বাবু টাটকা সবজি ই কিনেছিলেন। সাথে কয়েক পিস পোনা মাছ। এই যাত্রায় রক্ষে। মনে মনে পরিমল বাবুর একটু শরীরে বল এল।
কিন্তু তাতেও গিন্নির মেজাজ গলল না।
ব্যাপার কি? পরিমল বাবু আস্তে করে গিন্নিকে জিজ্ঞাসা করলেন?
--- কি হয়েছে গিন্নি? সকাল সকাল মুখ ভার কেন?
--- পাশের বাড়ির মালতি দি কে ওর সোনা দিয়েছে। তুমি সোনার কিছুই দিলে না এত দিনে। আমার কপাল টাই খারাপ।
---ওহ, এই ব্যাপার !! ঠিক আছে । অফিস থেকে আসার পথে নিয়ে এসে দেব।
রিতার মা পরিমল বাবুর কথায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন কি হলো ব্যাপার টা। যে মানুষটা সাত কিপ্টার এক কিপটে সে এক কথাতেই সোনা কিনে দিতে রাজি হয়ে গেল!!! আমি কি কানে কিছু ভুল শুনলাম?? মাথাটা যেন ঠিক কাজ করছে না। যা ই হোক, সন্ধেয় বেলা অফিস থেকে ফিরলেই দেখা যাবে।
রিতার মা অধীর আগ্রহে সময় কাটাতে থাকলো। সারাদিন বার বার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছে। মন যেন টিকছে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো ভাত ঘুম হলো না। মনে অনেক উৎসাহ। সন্ধে হতেই সদর দরজার বালা নাড়ানোর আওয়াজ পাওয়ার জন্য টিভি পর্যন্ত চালালো না। পাছে খুলতে দেরি হয়। রিতা মায়ের আব ভাব দেখে মনে মনে খুব খুশি হচ্ছিল । তার মাকে এত উত্তেজিত হতে আগে কখনো দেখে নি। রিতা মনে মনে ভাবল দেখাই যাক না কি হয় শেষ পর্যন্ত।
--- কই রে রিতা দরজা খোল।
বালা নাড়ানোর আওয়াজ পেয়েই রিতা খুলতে যাচ্ছিল। প্রতিদিন রিতাই দরজা খোলে। আজ রিতা কে নিষেধ করে রিতার মা ই ছুটে গিয়ে দরজা খুলল।
পরিমল বাবুর ঘর্মাক্ত চেহারা। ঘরে ঢুকতেই গিন্নি জলের গ্লাস নিয়ে এসে হাজির।
--- কি হলো? আজ তুমি জল দিচ্ছ? রিতা নেই বাড়িতে।
--- হ্যা, আছে। পড়ছে। কেন ? আমি তোমায় জল দিতে পারি না?
--- পার না কেন? হাজার বার পারো। কিন্তু তুমি তো সচরাচর দাও না। তাই বলছি।
--- সকালে যেটা বলেছিলাম , এনেছো?
--- ওহ এই ব্যাপার তাহলে, হ্যাঁ এনেছি।
--- সত্যি বলছো এনেছ? রিতার মায়ের মুখে খুশির ঝিলিক।
--- হ্যা, আগে গা হাত পা টা ধুয়ে আসি । তারপ র দেখাচ্ছি।
পরিমল বাবু বাথরুমে ঢুকলেন। গিন্নির যে আর তোর সইছে না। পরিমল বাবু গা ধুতে ধুতে ভাবলেন , বাবা!!! ওই জিনিসটার প্রতি গিন্নির এত ইন্টারেস্ট??? কি জানি বাবা। এখনকার ছেলে, ছোকরা রা এই সব ব্যবহার করে রাস্তা ঘাটে দেখেছি। কি জানি বাবা...
বাথ রুম থেকে বেরিয়ে আসতে ই পরিমল বাবু দেখেন গিন্নি অধীর আগ্রহে বসে আছে। পাশে রিতাও। পরিমল বাবু গা মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ব্যাগের চেন খুলে একটা ছোট বাক্স গিন্নির হাতে দিলেন।
বাক্সটা দেখে গিন্নি তো খুব অবাক। রিতা হাসি আর চেপে না রাখতে পেরে পাশের ঘরে দিল ছুট।
--- এটা কি?
--- কেন তোমার হেডফোন
---হেডফোন নিয়ে আমি কি করবো? কানে গুঁজে বসে থাকব?
-- যা বাবা!!! তুমি ই তো বললে আমায় একটাও শোনার কিছু আজ পর্যন্ত কিনে দাও নি।তাই এনে দিলাম।
গিন্নির তো প্রায় জ্ঞান হারা অবস্থা।
পরিমল বাবু গিন্নির অবস্হা দেখে কিছুই বুঝতে পারলেন না। উল্টে জিজ্ঞাসা করলেন কেন এটা তোমার পছন্দ হয় নি?
--- আরে, আমি সোনার বলতে কানে শোনার বলি নি, গয়না সোনার কথা বলেছিলাম।
এরপরে ওদের বাড়ি তে কি হচ্ছিল তা আপনারাই ভেবে নিন। গল্পটা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্ত্ত।
সমাপ্ত
গল্প :২নতুন আরো একটি গল্প লিখছি। আমার লেখা গুলো কেমন লাগছে প্লিজ একটা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন।
সুনিতা উঠোনে তারে শুকোতে দেওয়া জামা কাপড় গুলো তুলছিল। প্রতিদিন বিকেল বেলা তে এটা ওর রুটিন। এমন সময় দেখলো ওর ভাই জোর ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। পিছনে মা ও । ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করলো সুনিতা।
--- কি হলো মা, তুমি ভাইকে লাঠি নিয়ে ওই ভাবে তাড়া করছো কেন? এমন ভাবে তাড়া করছ ওতো পরে যেত। আমি ধরলাম বলে তাই!!
--- কেন তাড়া করছি ওকেই জিগ্গেস কর না? তুই আয় এদিকে তোকে আজকে মেরেই শেষ করে ফেলবো।
--- আবার মা? সেই এক কথা। কি হয় তোমার ? ও তো ছোট । ওকে মারলে হবে... দোষ করলে বোঝাতে হবে।
ভাইকে আগলে রেখে মাকে কথা গুলো বলছিল সুনিতা।
--- ওকে আমি অনেকবার বলেছি সুনিতা। তুই আর তোর ভাই এর প্রতি আদিখ্যেতা দেখাস নি। ওকে ছেড়ে দে আমার হাতে। আমার আজ মাথায় আগুন চরে গেছে। বার বার বলি সেই এক ভুল এক ভুল। আজ ওকে মেরেই ছাড়বো।
--- আমি ভাইকে কিছুতেই মারতে দেব না। কেন , কি করেছে ও সেটা তো আগে বলবে।
--- কি করেছে? ওকেই জিজ্ঞাসা কর না।
সুনিতা ভাই এর দিকে তাকালো। ভাই এর মুখ টা আরো বিবর্ণ হয়ে গেল।
--- তুই আমায় বল ভাই আমি কিছুই বলবো না তোকে। একটুও মারবো না। বল, মা এত কেন তোর ওপর রেগে আছে? বল ভাই। বল তো?
---- ও বলবে না। আমি বলছি। এত বার করে রোজ বলি খেয়ে দিয়ে ভিজে হাত গামছায় মুছবি তা নয়। রোজ তোর জমায় হাত মোছে। আজ আবার তুই যে জামাটা পড়ে সন্ধে বেলা বিয়ে বাড়ি যাবি বলে বের করে রেখেছিস সেটায় হাত মুচেছে। রাগ ধরবে না বল।
সুনিতা তো এবার রেগে কাই...
এবার সুনিতার হাত থেকে বাঁচতে ভাই দে ছুট।
এবার আপনারাই বুঝে নিন ভাই এর এখন কি অবস্থা। দুটো গল্পই খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।
সমাপ্ত
এবার রোজগার জীবন ধারার একটু অংশ তুলে ধরবো। আজ চলে এসেছি শশুর বাড়িতে। বাড়ি এসে ই দেখলাম বাড়িতে একজন নতুন সদস্য আমাদের এসেছে। বর মশাই সারপ্রাইজ দিল। ঘরে ঢুকেই দেখলাম এসি বসানো হয়েছে ঘরে। আমি তো ভীষণ খুশি। এই প্রথম আমাদের এসি নেওয়া হলো। আগের বছর এখানে খুব গরম পড়েছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিল আমার ছেলেটা। এ বছর তাই নেওয়া হলো। জানেন তো মধ্যবিত্ত দের খুব হিসাব করে চলতে হয়। তাই ওই আর কি ।অনেক ভেবে চিন্তে নেওয়া। বাড়ি এসেছি সকাল ১০:৩০ । এসে পুজো করলাম। আজ সান ডে। তাই চিকেন রান্না করলাম। মনটা বেশ খারাপ। তবু কিছু করার নেই। মানিয়ে নিতে হবে। এটাই নিয়ম। বিকেল এর দিকটা একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। এই সময় টাই একটু বেশি ভালো লাগে। একদম গ্রাম্য এলাকা তো। সবুজের মাঝে হাঁটা। এর অনুভূতিই আলাদা। তারপর আর কি একঘেয়ে জীবন । রাতের রান্না করা। ছেলেকে পড়তে বসানো।রাতে আজ রুটি আর ওই চিকেন খেলাম। আজকের মত ব্লগ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আবার আগামী কাল। নতুন অনুভূতি র গল্প নিয়ে। আপনারা ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ