বিয়ের পর কি মেয়েদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়?

 


হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে


হরে রাম, হরে রাম , রাম রাম হরে হরে।




ভগবান এর নাম নিয়ে আজকের ব্লগ টা শুরু করলাম। সকলে কেমন আছেন? আমি ভালো আছি। শুরু করছি আজকের ব্লগের একটা ইন্টারেস্টিং আলোচনা নিয়ে। 


আচ্ছা, বিয়ের পর কি একটা মেয়ের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারে? জড়িয়ে যেতে পারে সে পুরোপুরি সংসারে? না কি ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়... কোনটা? আপনারাই বলুন। 


আমি তো বলবো দুটোই হয়। যারা বলেন ইচ্ছা থাকলে সবই হয় এটাও পুরোপুরি সঠিক নয়। সংসার সত্যি ই একটা মায়াজাল। এখানে দায়িত্ব পালনের বেড়া জালে একবার নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললে বেরোনো খুব মুশকিল। শুশুর, শাশুড়ি সন্তান , স্বামী, ঘর বাড়ি , সবাই এর জন্য কাজ করতে করতেই দিন ফুরিয়ে যায়। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় থাকে না। এইভাবেই যুগের পর যুগ কত মেয়ের সুপ্ত ইচ্ছে গুলো বিলুপ্ত হয়ে যায় সংসারের জাতা কোলে। তা বলে তারা যে জীবনে কিছুই করতে পারলো না এটা ভাবা একদম বোকামি, অশিক্ষিত দের পরিচয়। ওই বাড়ির বউ ই তো পারে ঠিক সময়ে স্বামীর টিফিন, খাবার রেডি করে অফিসে পাঠাতে । ওনার স্বামীর ই তো শরীর ফিট আছে ঠিক মতো টাইম মতো খাবার গুলো বউ দিয়ে দেয় বলে। বাইরের পাম্প তেল এ ভাজাভুজি জিনিস না খেয়ে দিব্বি অফিস থেকে ফিরে সুস্বাদু কম অয়েল এ ভাজা পকরা, তন্দুরি তিনি পেয়ে যান। কার জন্য?  তার বউ আছেন বলে। তিনি নিশ্চিন্তে অফিস যান মা , বাবাকে বাড়িতে রেখে কারণ জানেন বউ আছেন তো। ঠিক দেখে রাখবে। সময় মতো খেতে দেবে, ওষুধ দেবে, তাদের সাথে গল্প করবে। বাড়ির বউ টা বাড়িতে ছিল বলেই খোকা আজ প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে সসম্মানে। তার স্কুল, কলেজ পড়াশোনা সমস্ততাই তার মা সামলেছে। 



( ছবিতে : আমি)



তাহলে সেই বাড়ির বউ করে নি কি? শেফ হয়ে প্রতিদিন রান্না করেছেন। নার্স হয়ে শশুর শাশুড়ির সেবা করেছে। পরামর্শদাতা, শুভাকাঙ্খী হয়ে সৎ উপদেশ দিয়েছেন স্বামীকে। স্বামীর মন্দ সময়ে জমানো টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করেছে। সব কিছুই প্রাইভেট টিউশন দিয়ে দিলে হয় না। মা কে কড়া নজরে রাখতে হয়। রান্না বান্নার পাঠ তাড়াতাড়ি চুকিয়ে সন্ধেয় বেলায় পড়িয়েছে। একজন নিষ্ঠাপরায়ণ শিক্ষক হয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে সন্তানদের। 

তাহলে বাড়ির বউ এর কাজ কোনো অংশে কম বলুন তো? আসলে এই বউ এর কর্তব্য টা ও সকলের দ্বারা হয় না, হবে না। আর ঠিক তারাই বলেন আমার দ্বারা বাপু এত শত হবে না। 

শুধু নিজের দিকে টাই সবসময় ভাবলে চলে না, তোমার সাথে যারা জড়িত তাদের দিক টাও আমাদের ভাবতে হবে। তবেই না তারাও আমাদের প্রতি সহানুভূতি শীল হবে। আমাদের ও পাশে থাকবে।  


এরপরেও 24 ঘন্টার মধ্যে একটু সময় পাওয়া যেতে পারে। মানে যারা সংসারে থেকেও চাইছেন, সংসারের জন্যও আমি করবো, আর নিজের জন্য ও কিছু করবো। সে ক্ষেত্রে নিজেকেই রুটিন করে নিয়ে তার মধ্যে থেকে সময় বের করে নিতে হবে। আর ঠিক এটাকেই বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তো , ভাবছেন ছোট থেকেএত পড়াশোনা শিখেছেন এখন বাইরে বেরিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়, কি করবেন তাই তো? 

কি করবেন বলুন তো ? সত্যিই এটা খুবই একটা চিন্তার বিষয় কি করবেন। আসলে করার তো অনেক কিছুই আছে। সুতরাং নিজেকেই আগে প্রশ্ন করুন কি কাজ আপনি নিজে পছন্দ করছেন, সেটাই করতে পারেন। চাইলে আপনি অফলাইন/ অনলাইনে টিউশন করতে পারেন। চাইলে বাড়ি বসেই অনলাইনে কসমেটিকস বিক্রি করতে পারেন, শাড়ি, চুড়িদার অর্থাৎ গার্মেন্টস, কিংবা ফিন্যান্সিয়াল কাজ ও করতে পারেন

 । এ গুলো সম্ভব বাড়ির সব কাজ সামলে এগুলো করা যায়। কিন্তু তার জন্য নিজেকে খুব পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস টা রাখতে হবে। কেক তৈরির বিজনেস করতে পারেন, ব্লগিং করতে পারেন অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু হ্যা, একটা কথা অতিরিক্ত টাকার লোভে কেউ যেন কুরুচিপূর্ণ রিলস, ব্লগ করবেন না। ব্লগ অনেক ভালো ভালো ব্লগার আছে, তাদের ও অনেক সাবস্ক্রাইব আর আছে। তারাও অনেক টাকা ইনকাম করে। কিন্তু টাকার জন্য দৌড়ে নিজের আত্মসম্মান টা কে বিকিয়ে দিয়ে জীবনে কিছু না করাই ভালো। হয়তো কেউ কেউ অভাবে করছে কিন্তু সমাজের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখুন অনেক কাজ আছে মন থাকলেই করা যায়। রাতারাতি টাকার লোভে ওসব না করাই ভালো। এতে আপনার এই কুকর্মের দায় ভার আপনার সন্তান এর উপর পরতে পারে। স্কুলে, নানান জায়গায় অস্বস্তি কর পরিস্থিতি তে পড়তে পারে বাচ্চাটি। আপনিতো আপনার সন্তান এর ভবিষ্যতে র জন্যই কিছু করতে চাইছেন, সুতরাং একটু বুঝে শুনে কাজ করবেন। আশা করি সকলকে বোঝাতে পেরেছি, আমার বক্তব্য টা।


আমিও চেষ্টা করছি এই ব্লগের মাধ্যমেই কিছু করার। বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। তবু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সহযোগিতা বিশেষ কাম্য। আমি খুব একটা নিজের জন্য সময় পাই না। তবু যতটুকু পাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আপনারাও অবসরে নিজেকে সাজিয়ে নিন নিজের পছন্দের কাজে। আচ্ছা, কাজ টা শুধু ইনকামের জন্য করতে হবে এমনটাও নয়। মন ভালো করার জন্য ও কাজ করতে পারেন, যেমন কেউ যোগা করতে ভালোবাসেন, কেউ বা বাগান প্রেমী। সেরকম কাজ ও করতে পারেন। অর্থাৎ সারাদিনের একটু সময় নিজের সাথে নিজে একটু প্রেম করলেন, নিজেকে একটু ভালোবাসলেন, চর্চায় রাখলেন, দেখবেন হাজার কেন লক্ষ্য ব্যস্ততার মধ্যেও সব কিছু ভালো লাগছে। হাসি মুখে সবাই এর দায়িত্ব নিতে পারছেন। সুন্দর ভাবে সংসার টা ভালোবেসে করছেন


আজ এই পর্যন্তই আবার আগামী কাল আসবো, নতুন লেখা নিয়ে । সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ