আমরা জীবনে সফল হতে সকলেই চাই। কিন্তু সবাই কি সফল হতে পারে? পারে না। কেউ কেউ কয়েক বছর পরিশ্রম করে শেষে হাল ছেড়ে দেয়। কেউ বা মনে করে এইসব আমার দ্বারা সম্ভব নয়। এই ভাবে ময়দান ছেড়ে চলে আসে। আবার কেউ কেউ সফল হওয়ার শুধু স্বপ্নই দেখে যায়। কাজ করে না। তাহলে সে সফল হবে কি করে তাই না? সফল হতে গেলে যে কয়েকটি কৌশল জানা অবশ্যই প্রয়োজন তা নিয়ে আজ আলোচনা করছি।
স্বাস্থ্যই সম্পদ : হ্যা, এটাই হলো জীবনে সফল হওয়ার কিংবা কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম চাবিকাঠি। স্বাস্থ্য ই হলো সম্পদ। জীবনে কোন কিছু পেতে গেলে নিজেকে আগে ঠিক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। শরীর ঠিক থাকলে তবেই আপনাদের মধ্যে কাজ করবার এনার্জি আসবে। ভিতর থেকে পোজিটিভিটি আসবে। পরিশ্রম করার মতো ইচ্ছে জাগবে। আত্মবিশ্বাস আসবে নিজেদের মধ্যে। তার জন্য ভোর বেলায় কিছুক্ষন। ব্যায়াম, ধ্যান, হাঁটাহাঁটি এই গুলোর মধ্যে যে কোনো একটি করা উচিত। ধ্যান আমাদের মানসিক আবেগ কে স্হির রাখে। ব্যায়াম আমাদের কর্মক্ষম বাড়াতে সাহায্য করে।
সময় :
জীবনে কোন কিছু অর্জন করতে চাইলে সময় কে গুরুত্ব দিতে হবে সবসময়। টাইম মত সমস্ত কাজ সেরে ফেলতে হবে। আগের দিন রাতে পরের দিনের জন্য একটা রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। সেই রুটিন মাফিক সব কাজ সারতে হবে। কোনো কাজ ফেলে রাখলে চলবে না। সময় এর গুরুত্ব অপরিসীম। ১ ঘন্টা সময় নষ্ট করা মানেই আপনার জীবন থেকে ১ ঘন্টা নষ্ট হয়ে গেল। বুদ্ধিমান মানুষরা যাতায়াত এর পথেও ট্রেনে , বাসে বসার জায়গা পেলে বসে কোনো কিছু শেখার চেষ্টা করে মোবাইল থেকে। এখন হলো মোবাইল এর যুগ।মোবাইল এ অনেক খারাপ জিনিস ও আছে। আবার শেখার মতো জিনিস ও আছে অনেক। আমরা এটাকে সৎ ভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমি একটা জাস্ট উদাহরণ দিয়ে বললাম।
প্রতিটি সকাল ই নতুন কিছু শেখায় :
প্রতিদিন ই সকাল হয়, নতুন সূর্যোদয় হয়। নতুন একটা দিনের সূচনা হয়। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠার। এটার ফলে কি হয় আমরা অনেকটা হাতে সময় পাই। তাই সময় মত কাজ করতে পারি। আর প্রতিদিনই চেষ্টা করবেন নতুন কিছু শেখার। আর পরচর্চা, পরনিন্দায় কান দেবেন না। এবং নিজেও অংশগ্রহণ করবেন না। এই চর্চা হলো খুব বাজে। এই গুলি যারা করে আমার মনে হয় তাদের নিজেদের কোনো একটা লক্ষ্য নেই। জীবন যেমন চলছে চলুক। কিন্তু সকলেরই জীবনে কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকা উচিত।
অনুপ্রেরণা মূলক গল্প শুনুন বা পড়ুন যা আপনার চলার পথে সহায়ক হবে :
নিজেকে মোটিভেটেডেট করতে অনুপ্রেরণা মূলক গল্প শুনুন বা পড়ুন। আগেকার মানুষ গুলোর কাছে এই সব অনুপ্রেরণা মূলক উক্তি শোনা এতটা সহজলভ্য ছিল না। তাদের বই কিনে পড়তে হত। এখন গুগল, ইউটিউব সার্চ করলেই নামিদামি উদ্যকতা দের বার্তা পাবেন। এই গুলি সত্যি ই আমাদের মনে পোজিটিভিটি আনে। বার বার ব্যর্থতার পর যদি মনে হয় আর আমার দ্বারা হবে না পারবো না, তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু মোটিভেশনাল বক্তব্য শুনুন। দেখবেন আবার আস্তে আস্তে আপনার মনে পোজিটিভিটি ফিরে এসেছে। পরবর্তী সকাল টা র জন্য আপনি নিজেই অপেক্ষা করবেন কিছু একটা করে দেখাতেই হবে এই মনের জোর নিয়ে। আমি একদম নিজের ভাষায় কথা গুলো বলছি। একবার মেনে দেখুন আপনি নিশ্চই সফল হতে পারবেন।
নিজেকে গুরুত্ব দিন :
সফল হতে গেলে আগে নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখতে হয়। অন্যেরা কি বলল , কি ভাবলো, আপনার কর্ম দেখে কুমন্তব্য করলো এতে ভেঙে পরলে চলবে না। নিজে যদি নিজের জায়গায় ঠিক থাকেন। সাফল্য থেকে কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না। নিজের মন যেটা সায় দেবে করবেন।
ভয় ভীতি দূরে সরান : ভয় , ভীতি থাকলে জীবনে সফল হওয়া যায় না। হ্যাঁ কে হ্যাঁ, না কে না বলতে শিখুন। এতে হয়তো কিছুজন আপনার ওপর রুষ্ট হতে পারেন। তাতে কিছু যায় আসে না। নিজেকে নিজের লক্ষ্যে অটল থাকতে হবে। প্রত্যেকটা কাজের মধ্যেয়েই চ্যালেঞ্জ থাকে। ভয় পেয়ে আমি পারবো না ভেবে সরে দাঁড়ালে হবে না। চ্যালেঞ্জ এর সাথে মোকাবিলা করে ভয় কে জয় করার মধ্যে যে কি পরিতৃপ্তি তা আপনি পরিশ্রম করে ওই জায়গাটা জয় করতে পারলে নিজেই বুঝবেন।
আত্মবিশ্বাস :
নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। নিজেকে ই নিজে অনুপ্রাণিত করুন। আজ পারেন নি তো কি হয়েছে, আজকের ব্যার্থতা থেকে ভুল ত্রুটি গুলো শুধরে নিয়ে আবার চেষ্টা করুন। মনে ভরসা রাখুন আপনি পারবেন, শুধু মাত্র এই কাজটা আপনার দ্বারাই সম্ভব। এই বিশ্বাস টা মনে রাখুন।
নিজের স্বপ্ন পূরণ :
আমাদের ছোটবেলা থেকে অনেক স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে এটা শিখব, ওটা হব। কিন্তু কালের প্রবাহে সেটা আর হয়ে ওঠে না। কিন্তু ইচ্ছে টা মনের গভীরে সুপ্ত হয়ে থাকে। আপনি হয়তো সেটা আজ পছন্দ করেন। তাহলে দেরি না করে নিজের ইচ্ছে টাও পূরণ করুন। সময় অজুহাত মাত্র। কোনো জিনিস ভালো লাগলে ঠিক ই তার জন্য সময় বের করে নেওয়া যায়। যেমন ধরুন কারো ছোট বেলায় গান শেখার ইচ্ছা ছিল, কারো নাচ , আঁকা। বড় হয়ে গেছেন তো কি হয়েছে। শেখার কি কোনো বয়স হয় নাকি ? আর্থিক প্রবলেম থাকলে ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়ায় শিখুন। এতে আপনার মন ভালো থাকবে। আর মন ভালো থাকলে কাজে মন ও বসবে ভালো।
সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে নরক বাস :
এটি একটি প্রচলিত বাক্য হলেও বাস্তবে একদম সত্যি। চেষ্টা করবেন প্রকৃত মানুষদের সংস্পর্শে থাকতে। ভালো মানুষদের থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়। যা চলার পথে কার্যকরী হবে। আর বন্ধুরূপী শত্রুর কাছ থেকে দূরে থাকুন। দশটা খারাপ, হেল্পলেস বন্ধুদের চেয়ে একটা হেল্প ফুল বন্ধু অনেক ভালো।
ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিন:
জীবনে কিছু পেতে গেলে ব্যর্থতা কে তো মেনে নিতে ই হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তা বলে আমাদের দমে গেলে চলবে না
আপনাকে সাহায্য করতে কেউ আসবে না, অপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে। ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
কিছু কিছু জিনিস থেকে দূরে থাকুন : আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে যারা আমাদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ আপনাকে তারা নিরুৎসাহিত করেন। যেমন বলতে পারে, বেকার খাটছিস তোর দ্বারা এই চাকরিটা পাওয়া সম্ভব নয়। তোর থেকে কত তবর তাবড় ছেলে মেয়ে আছে। তারা পেয়ে যাবে। তুই শুধু গাধার মতো খাটছিস। কিন্তু না। তাদের কথা শুনবেন না। বাজে কথা, বাজে লোক এর সাথে মিশবেন না। বাজে ছবি দেখবেন না। অতিরিক্ত মোবাইল, টিভিতে আসক্ত হবেন না।
স্বপ্ন দেখুন :
বড় স্বপ্ন দেখুন। সফলতার স্বপ্ন দেখুন। এই গুলি আপনার মধ্যে পোজিটিভিটি আনবে।
কাজ ফেলে রাখবেন না বা অজুহাত একদম নয় : যেদিন কার যে কাজ সেইদিনই সেটা করে ফেলার চেষ্টা করবেন। কাজ ফেলে রাখলে আবার পরবর্তী কাজ এসে কাজ এর প্রেসার বাড়বে। আর অজুহাত দেখাবেন না কোনো কিছু তে। সুপরিকল্পিত পরিশ্রম ই সাফল্যের চাবিকাঠি। অলসতা কে মনে জায়গা দেবেন না। আপনি এমন ভাবে নিজের কাজ নিয়ে মত্ত থাকুন যেখানে ঘুমের মধ্যেও আপনার ওই কাজের কথাই মনে আসে। সর্বোপরি আমরা মানুষ। একভাবে কর্ম করলে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। বিশ্রাম এর ও প্রয়োজন আছে। 24 ঘন্টায় অন্তত ৭ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
এলার্ম সেট করার পর টাইম অফ করে আরো ৫ মিনিট ঘুমাই আরো দশ মিনিট ঘুমাই এইরকম করা একদম উচিত নয়।
এই কয়েকটি কৌশল মেনে চললেই জীবনে সাফল্য আস্তে বাধ্য। সাফল্য আপনার জীবনে আসবেই।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ