কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি খুবই ভালো আছি। কারণ আজকে আমার আর্য্য র পরীক্ষা শেষ হলো। এইবার ও ওয়ান এ উঠবে। ছোট হলেও পড়াশোনার চাপ আছে ভালোই। আর আমি ই ওকে পড়াই। তাই এই কদিন সবকিছু মিলিয়ে ভালোই ব্যস্ত ছিলাম। আজ ওর পরীক্ষা শেষ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গতকাল সন্ধেয় থেকে ওর আবার সর্দি করেছে। কাঁচা সর্দি। ঠান্ডা , গরমে হয়েছে। কয়দিন তো থাকবেই। ভেবেছিলাম পরীক্ষা শেষে দিন সাত এর জন্য বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো। কিন্তু জ্বর , সর্দি হলে তো বাড়ির কেউই আর ওখানে পাঠাতে চাইবে না। আর আমিও অনেকদিন হলো ওখানে যায় নি। খুব মন কেমন করছে। মা, বাবাও বারবার আস্তে বলছে। সেই লাস্ট গেছি বাবার বাড়ি ভাইফোঁটার দিন। তাও একটা রাতের জন্য। মা, বাবার তো মন খারাপ হওয়া স্বভাবিক তাই না? আমি আমার মা , বাবার একমাত্র সন্তান । আমারও উচিত তাদের পাশে থাকা। কিন্তু সে আর হয় কোথায়? তবে দরকারে সপ্তাহে কিংবা দশ দিন ছাড়া আমার বর মশাই যান ওখানে দেখা করে আসেন। আমার আর্য্য ওর দাদুর বাড়ি মানে আমার মামার বাড়ি যেতে খুব পছন্দ করে।
সারামাসের আটা, ময়দা, বেসন
আমার শশুর বাড়ির পরিবার খুব ছোট। শশুর, শাশুড়ি আর বর মশাই, আমি আর আমার আর্য্য। এই আমাদের ছোট পরিবার। খুড়তুতো শশুর, শাশুড়ি রা অনেক টাই তফাৎ এ থাকে। আমার ছেলে তাই এখানে একা একা থাকে। এখানে ওর খেলার তেমন কোনো সঙ্গী নেই। ওর আমার বাবার বাড়ি গেলে খুব মজা হয়। আমি মা, বাবার এক মাত্র সন্তান হলে কি হবে, আমার বাবারা আট ভাই। মানে আমার জেঠু, কাকা অনেক গুলো। সবাই এর আলাদা আলাদা বাড়ি হলেও সবাই পাশাপাশি থাকি আমরা। আমার তিন জেঠুর ছেলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের ছেলে, মেয়ে রাও বড় হয়ে গেছে। এক জেঠুর মেয়ে আছে। তারও ছেলে আছে। দিদি চাকরি সূত্রে বর্তমানে বাবার বাড়ি থেকেই অফিস করছে। তাই দিদির ছেলে টাও এখানে থাকে। তাছাড়া আমার ছোট কাকার মেয়ে , আমার সেজ জেঠুর নাতনি, ওরা সবাই আমার আর্য্যর সমবয়সী। তাই ওখানে গেলে খুব হুড়োহুড়ি করে। বাড়ি আস্তে চায় না। অনেকদিন যায় নি। আর্য্যকে বলেছি পরীক্ষা শেষ হলে যাবো। তাই ও এখন থেকেই বায়না ধরেছে কবে যাবো দাদুর বাড়ি। আবার এখন সর্দি করেছে। সর্দি থেকে ওর আবার গা গরম হয়ে জ্বর আসে। এটাই চিন্তা। দেখা যাক কি কপাল এ আছে।
এই সর্ষে র তেল টা নিলাম
আজ ছেলের স্কুলে ড্রয়িং আর কারসিভ রাইটিং পরীক্ষা ছিল। ওদের একটা লোটাস আঁকতে দিয়েছিল। আর একটা নিজের মতো যা খুশি। ও শ্রীনারী এঁকেছে। আর্য্য গতকাল লোটাস আঁকা টা সন্ধেয় বেলা প্রাকটিস করেছিল। তার একটা ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ও যখন গতকাল সন্ধ্যে বেলায় আকছিল আমি তখন স্পোকেন ইংলিশ পড়ছিলাম। কাল সন্ধেয়টা এইভাবে কেটেছিল।
(এখানে আছে ছাতু, পাস্তা, আটার চাউমিন, আর আখরোট।)
আজকে সারামাসের মুদি খানার জিনিস পত্র এল। আমাদের অনলাইন থেকেই কিনি। কারণ এখানে সব কিছু পাওয়া যায় না। আমি সবরকম জিনিসপত্রের ছবি এখনে দিলাম।
(এখানে আছে ড্রাই ফ্রুট)
আজকে তো বৃহস্পতিবার। লক্ষহী বার। সব কিছু বাড়ির কাজ সেরে স্নান করে পুজো করতে আজ অনেক অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। পুজো করতে প্রায় বেলা সাড়ে ১১:৩০ টা বেজে গিয়েছিল। পুজো যতক্ষণ না হয়,ততক্ষণ তো কিছু খাই ও না। আর্য্য স্কুল বেরোলো ৯ টায় । তারপর বিছানা তুলে, ঘর দোর মুছে, বর মশাই, বাপি কে খেতে দিলাম। দেখলাম বাপি দুই বালতি জামা প্যান্ট সার্ফ জলে ভিজিয়ে ছে। সোয়েটার, চাদর এইসব ছিল। জল খাবার খেয়েই বাপি মাঠে চলে গিয়েছিল পেঁয়াজ গাছে জল ধরাতে। তাই জামা, সোয়েটার আমি ই কেচে দিলাম। মা বললো, তুমি তো জানো তোমার বাপি কারো হাতে কাঁচা পছন্দ করে না। বললাম, নাই করুক। একে মেঘলা ওয়েদার। বেলা দশটা বেজে গেছে। কখন মাঠ থেকে আসবে এসে কাছবে। শুকবে না। তার যে বরংচ আমি ই কেছে দিই। মা বললো তুমি তো এখনো খাও নি। স্নান করে পুজো করে নাও। আমি করে দিচ্ছি। আমি বললাম কতক্ষন আর লাগবে করে দিচ্ছি। অগত্যা আমি ই বাপির জামা প্যান্ট কাছ লাম।
তাও বাপি যখন বাড়ি এলো আমি তখন পুজো করছিলাম। শুনতে পেলাম বাপি জিজ্ঞাসা করছে কে জামা কাচল। মা বললো, বৌমাইই। জামার কলার গুলো রোগরে কেছেছে? মা বলছে হ্যা গো। আসলে বাপি খুব। নিখুঁত পরিপাটি একজন মানুষ যেমন তেমন কাজ তাঁর পছন্দ না । তাই নিজের কাজ তিনি নিজেই করতে চান।
( এখানে মসুর ডাল, বিউলির ডাল, মুগ ডাল, বিস্কুট , ডালিয়া আছে।)
( এই গুলো বিভিন্ন পুজোর ধূপ)
আমরা চাষি বাসী মানুষ। তাই আমাদের উঠোন জুড়ে সারাবছরই কিছু না কিছু ভোরে থাকে। এখন যেমন সর্ষের গাদা গুলো চারিয়ে রাখা আছে দেখুন। ছবি দিলাম। সর্ষে চাষ হয়েছিল। সর্ষে ঝাড়ার পর এইগুলো জ্বালানি হিসাবে কাজে লাগে। আমাদের দুপুরের রান্নাটা মাটির উনুন এ হয়। আজ এই সর্ষের গাদা গুলো তোলা হলো । এইসব টুকিটাকি করতে করতেই পুজো সারতে দেরি ।
১১:৩০ নাগাদ পুজো সেরে চললাম বরের সাথে কেনাকাটা করতে । কি কিনতে বলুন তো? আগামী কাল শিবরাত্রি সেই জন্য কিছু ফল কিনলাম। আপেল, আঙ্গুর, শাখালু, কলা, । শশা বাড়িতেই আছে। তাই সব কিছু মিলে ৫ ফল হলো। মাখা সন্দেশ নিলাম। বাড়ি আসার পথে রাস্তার ধারের আকন্দ ফুল এর গাছ থেকে আকন্দ ফুল তুলে নিলাম। বাড়ি ফিরে জল তুললাম।
( সর্ষের গাদা শুকচ্ছে উঠোনে। ছাদ থেকে তোলা ছবি)
আজ বাড়িতে রান্না হয়েছিল নোটে শাক এর তরকারি, আলুভাজা, নিরামিষ ঝোল। আগামীকাল শিবরাত্রি। তাই আগের দিন নিরামিষ খেলাম ।
আপনারা কি শিবরাত্রি করেন? করা করা করেন কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। তাহলে আমার ভালো লাগবে। আমার ছয় বছরের ছেলে আর্য্যর হাতের লেখার ছবি কাল দিলাম। কেউ একজনও কমেন্ট করে জানালেন না কেমন লাগলো। ও আমায় জিজ্ঞাসা করছিল। কেউ কিছু বলেছে কি না। আসলে আমি যখন ছবি তুলেছিলাম ও দেখেছিল। তাই জিজ্ঞাসা করছিল। আজ ওর আঁকার ছবি দিলাম। কেমন লাগলো জানাবেন সকলে।
![]() |
লোটাস টা আমার আর্য্য এঁকেছে।
( আর্য্যর আর একটা আঁকা আজ এঁকেছে)
আসলে আমি লিখে ব্লগ করি ইউটিউব এ ব্লগ করতে পারি না। তাই হয়তো কেউ কমেন্ট করে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ক্যামেরা র সামনে নিজেকে ঠিক সাচ্ছন্দ বোধ করি না। আর একা একা ভিডিও করতেও পারি না। আমি লিখতে ভালোবাসি। আমি এইভাবেই লিখে সব জানাব। অনেকেই তো পড়তে ভালোবাসেন। আসুন না, এই ভাবেই আপনারা আমাকে আপনাদের বন্ধু করে নেবেন। কোন এক অচেনা, অজানা, গ্রামের বধূ কে খুব কাছের করে নেবেন। তার জীবনধারা র ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তাকে একটু এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেন। আমি চাই এইভাবেই একটু একটু করে এগিয়ে যেতে। এভাবেও এগিয়ে যাওয়া যায়। আমি না হয় তার একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবো।
আজ এই পর্যন্ত ই। আবার কাল আসবো নতুন ব্লগ নিয়ে। সকল ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
0 মন্তব্যসমূহ