আমাদের ছাদ থেকে তোলা প্রকৃতির দৃশ্য
কাজ ! কাজ! আর কাজ... হাউস ওয়াইফ দের আর কাজের শেষ নেই। কি বলেন আপনারা? কথাটা কি ঠিক বললাম? হমম.... একদম নয়। কি তাই তো? শুধু হাউস ওয়াইফ কেন কোনো মানুষ এর ই কাজের শেষ নেই। চব্বিশ ঘন্টা যে কি ভাবে কেটে যায় বোঝাই যায় না। বাচ্ছাদের ও এখন পড়াশোনা, একটিভিটি এইসব নিয়ে যা চাপ তারাও খুব একটা টাইম পায় না একটু ফ্রি হতে। আগে কার মানুষ দেখবেন তবু গাছ তলায়, চায়ের দোকান এ তাসের ঠেকে আড্ডা দিত। এখন মানুষ অবসর সময় টা কেও কাজে লাগাতে চায়। কেউ এক্সট্রা ইনকাম করে কেউ বা নিজের জন্য সময় টাকে ব্যয় করে। মানে নিজের মনের যা ইচ্ছে সেটা করে। কেউ ভালো মুভি দেখে, কেউ নেটে গেম খেলে, কেও বা অফিস থেকে ফিরে আরো ভালো চাকরির আশায় পড়াশোনা করে কেউ আবার নিজেকে আপডেট রাখার জন্য। তেমন আমারও একটা ভালো লাগার রসদ হলো এই লেখালিখি। কিন্তু কি বলুন তো ? ওই যে বললাম হাউস ওয়াইফ। হ্যা, আমি একজন গৃহ বধূ। সারাদিনের কাজ সেরে দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করে নিজের জন্য সময় মেলে কই?
তাহলে তো কথায় আছে , ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। কিন্তু আদপে কি তাই ? আমি কত দিন অন্তর ব্লগ দিই বলুন তো?
আসলে কি জানেন তো দায়িত্ব, কর্তব্য এর চাপে আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি না। কিছু নিয়ে লিখবো সংসার এর কথা মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়। আপনারা বলবেন সারাদিনের মধ্যে কি একটু টাইম বার করতে পারা যায় না? হমম , একটু পারি। দুপুর ৩ টে থেকে ৪টে। ওই সময় টা য় লিখতে বসলে আমার আবার সন্ধেয় বেলায় মাথা যন্ত্রনা হয়। আসলে ওই সময় টা একটু বিশ্রাম এর দরকার পড়ে আমার। আমার শরীর ঠিক সাধ দেয় না। তাহলে কি করি বলুন। কিন্তু লিখতে যে আমায় হবেই। গ্রামের দিকে বিয়ে হয়েছে আমার। এখনকার কাজ কর্ম আমার বাবার বাড়ির ওখানকার থেকে অনেক তফাৎ। এখানে আমাদের চাষী বাসী বাড়ি। সকাল থেকে উঠেই ধড়ফড় করে কাজ সারতে হয়। শুধু আমি কেন এখানকার সব লোকেরাই খুব পরিশ্রমী হয়। যে সকল বউ রা মাঠে খাটে জানেন ভোর তিনটের সময় উঠে বাসী ঘর দোর মুছে রান্না চাপিয়ে দেয়। সকাল সাত টার মধ্যে ভাত খেয়ে লোকের জমিতে কাজ করতে চলে আসে। আবার ১২ নাগাদ ছুটি করে বাড়ি গিয়ে আবার বাড়ির কাজ সারে। কাঠ কাটে, যাদের বাড়ি গরু বাছুর আছে তারা সকাল বেলা মাঠে গরু, ছাগল বেঁধে দিয়ে আসে। মাঠের কাজ শেষ করে তাদের নিয়ে আসে। হাঁস, মুরগি ও পোষে। সেই গরুর গোবর দিয়ে আবার ঘুটে দেয়। জ্বালানি হয় সেগুলো। আবার বিকাল এর দিকে খড় কাটে, যাব জল খেতে দিতে হয় গরু দের। আর আমরা সংসারের কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠছি। মাঝে মাঝে ভাবি ওরা পারলে আমিও পারবো কিন্তু ছেলেকে পড়িয়ে, সংসারের কাজ করে কিছু করার কথা ভাবা যায় না। আমরাও সংসারের কাজ একটু ডিফারেন্ট। যেমন ধরুন আমাদের যেহেতু জমি আছে। চাষ হই। সেইজন্য মাঠের কাজের জন্য প্রায় প্রতিদিনই ৩ / ৪ জন কিষেন হয়। তাদের জন্য জল খাবারের তরকারি করতে হয়। কখনো কখনো ৭/৮ জন কিশেণ ও হয়। সকাল ৭ টার মধ্যে তাদের খাবার রেডি করে দিতে হয়। একা হাতে কোটা ,বাটা। শুধু ৭ টার মধ্যেই আমায় মা, বাপির চা, বর মশাই অফিস যাবে তার টিফিন।আমার ছেলের স্কুলের আলাদা টিফিন, সব করতে হয়। বর মশাই অফিসে ভাত নিয়ে যায়। তার জন্য ডাল, তরকারি, ভাজা সেসবও ভাবুন ৭ টার মধ্যে করতে হয়। ছেলের আলাদা টিফিন । কোনদিন মালপোয়া, কোনদিন বাটার পরোটা, কোনদিন চাউমিন এইসব। সাত টার মধ্যে রেডি করে রান্না বর মশাইয়ের টিফিন গুছিয়ে দিই। বর মশাই ৭:১৫ নাগাদ বাড়ি থেকে অফিসেরজন্য বের হন। ফেরেন রাত ১০:৩০ টায়। কলকাতায় অফিস। আমাদের এখান থেকে ডিস্টেন্স অনেকটা। তাই অত রাত হয়। সুতরাং সারাদিনের সমস্ত টিফিন প্যাক করে দিই। সকাল ১০ টার ফল, দুপুরের লাঞ্চ, ২ টাইম চা খাওয়ার জন্য বিস্কুট, গ্রিন টি এর প্যাকেট। বিকালের হালকা চিড়ে ভাজা, ছোলা এইসব। আবার অফিস বেরোনোর তাড়াহুড়োয় উনি নিজে হাতে খেতে পারেন না। আমি ই খাইয়ে দিই। উনি বেরিয়ে পড়ার পরই ছেলেকে তুলে পড়তেবসাই। কখনো কখনো ও আগেও উঠে পরে। আমি আগের দিন রাতে ওর হোমওয়ার্ক লিখে রাখি। ও করে। তারপর ৮: ৩০ থেকে চলে ছেলেকে স্নান, খায়ানো।
আগের ব্লগেই বলেছি বরমশাই এর পায়ে চোট লেগেছে। তাই প্লাস্টার করা আছে পায়ে। তাই অফিস যাচ্ছেন না। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন । তাই একটু চাপ কম। তাই ভেবেছিলাম, ছেলেকে স্কুল পাঠিয়ে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে দুপুর ১ টা নাগাদ আজ ব্লগ লিখবো। তাড়াতাড়ি কাজ সারছিলাম। আর্য্য স্কুল বেরোনোর পর কম্বল গুলো ছাদে রোদে দিলাম।
কম্বল গুলো ছাদে রোদে দিলাম। সাথে কিছু ছবি তুললাম।
বিছানার চাদর , বালিশের ওয়ার কাচঁতে দিলাম। এইসব করছি আবার বর বলল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, একবার দোকান যাবো। বর মশাই পায়ে প্লাস্টার লাগানো অবস্থা তেই এক পায়ে জুতো পরে বাইক এ করে গিয়ে কাজ করছে টুকটাক। ওই আমায় চাপিয়ে নিয়ে গেল, অনাজ পাতি কিনে আনলাম। বাজারে ভিড় আস্তে ১২টা বেজে গেল। এদিকে ঠিক করেছি ১ টা থেকে ব্লগ লিখবো। বাজার থেকে এসে তাড়াতাড়ি ঘর দোর মুছে, স্নান করে, পুজো করে, বাপির দুপুরের রুটি করে ১ টার মধ্যে ব্লগ লিখতে বসলাম
ভুলেই গিয়েছিলাম আজ একাদশী। বাপি আজ ভাত খান না। আমার ঠাকুর শাশুড়ি মারা গেছেন।।তাই বাপিকে একবছর একাদশী পালন করতে হয়। উনি রুটি পরোটা খান না। তাই রুটি ই করে দিই। এক ঘন্টার মধ্যে ঘর মুছে, স্নান করে, পুজো করে, রুটি করে ব্লগ লিখতে বসেছি। তাই বলছি আর কি, জীবন টা কাজ কাজ করেই কেটে যাচ্ছে।
(ছাদ থেকে তোলা আমাদের গ্রামের রাস্তা। দেখুন কি সুন্দর আঁকা বাঁকা হয়ে গেছে। রাস্তার দুপাশে মাঠ। কয়েক বছর আগেও এটা লাল মাটির ছিল। )
আপনাদের আজকের দিনটা কেমন কাটলো অবশ্যই আমায় জানাতে ভুলবেন না। আগের দিন একটা ফুল এর ছবি দিয়ে বলেছিলাম এই ফুলের নাম কেউ জানেন কি না। কেউ ই তো কিছু লেখেন নি। একটু কমেন্টকরলে আমার ও ভালো লাগে
।
আজকের ছবি গুলো কেমন বলবেন প্লিজ। এইগুলো আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে তোলা। গ্রামের রাস্তা টা কত সুন্দর তাই না আঁকা বাঁকা...এইদিকে তাল গাছ আছে । আরো অনেক গাছ গাছালি। আর মাঠ গুলো দেখছেন পুরো ফাঁকা। এখন আলু উঠেছে । আলু চাষ হয়েছিল। ওগুলো তোলা হচ্ছে তো তাই মাঠ ফাঁকা। আর আমি ছাদে কম্বল রোদে দিতে এসে এই ছবি গুলো তুলেছিলাম।
আজ কের ব্লগটা এই পর্যন্তই। এবার সবাইকে দুপুরের খাবার খেতে দিতে যাচ্ছি। স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস টা সন্ধেয় বেলায় আমি আগে প্রাকটিস করি তারপর ব্লগে দেব।সকলে ভালো থাকবেন।
0 মন্তব্যসমূহ